সামাজিক ইতিহাসের সংজ্ঞা Definition of Social History

সামাজিক ইতিহাসের ধারণা
অতীত সমাজের সামাজিক ঘটনা, প্রপঞ্চ, সম্পর্ক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বিষয়ে সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক আলোচনার জন্য সমাজ বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে সামাজিক ইতিহাস। সমাজ একটি গতিশীল প্রত্যয়। আর এই সমাজেই বাস করে মানুষ । মানুষের সামাজিক জীবন এক প্রবহমান স্রোতধারা। সহজ কথায়, সামাজিক ইতিহাস হলো সমাজের ইতিহাস। "Social history is the history of the society." তাই বলা হয় "Social history is a discipline which will try to understand the social life of the cross section of the people in the country." অর্থাৎ, সামাজিক ইতিহাস হচ্ছে কোনো দেশের আপামর জনসাধারণের সামাজিক জীবন, জীবনযাত্রাকে জানবার-বুঝবার ও অনুধাবনের প্রচেষ্টা। )
সাধারণত সামাজিক ইতিহাস হচ্ছে কোনো একটি জাতি বা সম্প্রদায়ের সামাজিক জীবনযাত্রার অতীত বর্ণনা যা সামাজিক অনুষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গড়ে উঠেছিল। সমাজ সভ্যতার ক্রমবিকাশের যাবতীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয়াদিই হে সামাজিক ইতিহাসের প্রধান উপজীব্য। সৃষ্টির আদি থেকে অদ্যাবধি সমাজবদ্ধ মানুষের আচার-আচরণ ও জীবন-প্রণালির মূর্ত প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে সামাজিক ইতিহাসে।
সামাজিক ইতিহাস হলো কোনো একটি জাতি বা সম্প্রদায়ের জীবন যাত্রার বর্ণনা যা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের দ্বারা গড়ে ওঠে। মূলত সামাজিক ইতিহাস মানুষের সামাজিক সম্পর্কের বিভিন্ন পরিবর্তন, মূল্যবোধের রূপ বৈচিত্র্য ও সমাজের পরিবর্তিত বিভিন্ন কার্যক্রম আলোচনা করে। সুতরাং সামাজিক ইতিহাস হলো সমাজবদ্ধ মানুষের অতীত সামাজিক জীবনযাত্রার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। বিভিন্ন সমাজ দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী সামাজিক ইতিহাসের সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। নিচে তাঁদের সংজ্ঞাগুলো উল্লেখ করা হলো-
প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ভিকো (Vico) তাঁর The New Science' গ্রন্থে সামাজিক ইতিহাসের গোড়াপত্তন করে বলেন, “সামাজিক ইতিহাস হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন ঘটনা যেমন- প্রথা, আচার, জীবন-যাপন প্রণালি, অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত ইতিহাস। তাঁর মতে, শুধু রাষ্ট্র বা রাজা-বাদশাদের যুদ্ধ-বিগ্রহের কাহিনিই নয় বরং সামাজিক আইন, প্রথা, সমাজস্থ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা, ধর্ম, ভাষা, শিল্পকলা ইত্যাদি সবই ইতিহাসের আলোচ্য বিষয় ।
সমাজবিজ্ঞানী J.R. Green তাঁর A Short History of the English People' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, সামাজিক ইতিহাস হচ্ছে মানুষের আর্থ-সামাজিক ইতিহাস ।
বিখ্যাত পণ্ডিত G.M. Trevelyon তাঁর English Social History শীর্ষক গ্রন্থে বলেন, "Social history is the history of people with the politics left out.” অর্থাৎ সামাজিক ইতিহাস হচ্ছে কোনো জনগোষ্ঠীর রাজনীতি বিবর্জিত ইতিহাস।
ডি.ডি. কোসাম্বীর মতে, সামাজিক ইতিহাস হলো উৎপাদন, উপকরণ ও উৎপাদন সম্পর্কের ক্রমোন্নতির ধারাবাহিক উপস্থাপন ।
ব্যাপক T.B. Bottomore এর মতে, সামাজিক ইতিহাস হলো সামাজিক শক্তি ও সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার পর্যালোচনা । বিজ্ঞানী Gould and Kolb তাঁদের সম্পাদিত 'A Dictionary of Social Science' গ্রন্থে বলেন, “সামাজিক ইতিহাস পরিবর্তনশীল সামাজিক সম্পর্ক, সামাজিক অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ও সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তনের ধারা নিয়ে আলোচনা করে।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ প্রফেসর ড. এফ আর খান তাঁর 'Social History' গ্রন্থে বলেছেন, “সামাজিক ইতিহাস সামাজিক শিক্ষার এক স্বীকৃত অংশ যার মাধ্যমে আমরা আমাদের বর্তমান ও অতীত অবস্থা, পরিবেশ ও পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত হতে প্রচারিত
এক পথ ধরে ড. মাহমুদা ইসলাম বলেন, “সামাজিক ইতিহাস হলো মানুষ ও তার সমাজের সম্পর্কের ধারাবাহিক বর্ণনা। " Encyclopedia Britanica অনুযায়ী বলা যায় যে, "Social history of the past experience of society." অর্থাৎ সামাজিক ইতিহাস হচ্ছে অতীত সমাজের অভিজ্ঞতা।
সামাজিক ইতিহাসের ধারণা
ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, “ইতিহাস হলো বর্তমান ও অতীতের মধ্যে অন্তহীন সংলাপ।"
বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কস বলেন, "পুরোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার একটিমাত্র রীতি ইতিহাসের আছে, সে হচ্ছে নতুন কতগুলো প্রশ্ন করা।"
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক R.G. Colling Wood তাঁর The Idea of History গ্রন্থে বলেন, "History is a kind of research or inquiry." তিনি ইতিহাসের ৪টি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, ইতিহাস হলো বিজ্ঞানভিত্তিক (Scientific), মানবিক (IHumanistic), যুক্তিশীল (Rational) এবং স্বপ্রকাশিত (Self explanatory).
পি.কে. হিট্টি (P.K. Hitti)-এর মতে, সমালোচনাময় দৃষ্টিভঙ্গিতে অতীতের যে কাহিনি দাঁড় করানো হয়, তাই ইতিহাস।” বি.ডি, মেটে (B.D. Ghate)-এর মতে, "History is a scientific study and a record of our complete past." অর্থাৎ ইতিহাস হলো বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ এবং আমাদের অতীতের সম্পূর্ণ দলিল।
Encyclopedia Britanica অনুযায়ী বলা যায় যে, "History includes all that has happend of even thing that is subject to change. History is the past experience of society." অর্থাৎ ইতিহাস বলতে সেসব কিছুকে বোঝানো হয় যা ঘটে থাকে পরিবর্তনের মাধ্যমে। সমাজের অতীত অভিজ্ঞতাই হচ্ছে ইতিহাস। যা হোক, সুস্পষ্টভাবে ইতিহাসের কোনো সংজ্ঞাই সার্বজনীন স্বীকৃত সংজ্ঞা নয়। তবে সকল সংজ্ঞারই কমবেশি গুরুত্ব রয়েছে সংজ্ঞাগত বৈচিত্র্যতার কারণে। সর্বোপরি ইতিহাসের সংজ্ঞায় আমরা বলতে পারি ইতিহাস হচ্ছে এমন জ্ঞান, তত্ত্ব এবং তথ্য যা সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দ্বারা স্বীকৃত এবং যার গ্রহণযোগ্যতা স্বীকৃত। অর্থাৎ সময়ের আবর্তে পেছনে ফেলে আসা সত্য উদ্ঘাটনের প্রচেষ্টাই হলো ইতিহাস ।
D.M. Sturley-4, "Social history is the study of man in this past and of man in past societies" সামাজিক ইতিহাস হচ্ছে, মানুষের অতীত সত্তা অধ্যয়ন করা এবং অতীত সমাজবদ্ধ মানুষের অব্য পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক ইতিহাস বর্তমান প্রজনকে অতীতের পূর্ণ " করে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দেয়। মোটকথা, সামাজিক ইতিহাস MD, সমাজ মানুষের - বার্স রাজনৈতিক ক্রিয়াকর্ম এবং পরিবর্তনশীল সমাজের বিজ্ঞান ভিত্তিক অধ্যয়ন। এক সামাজিক ইতিহাসের পরিধি
Scope of Social History
আধুনিককালে ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে। আজও অবশ্য ইতিহাস বলতে অতীতের ঘটনা বা কর্মের বর্ণনা ও বিশ্লেষণকেই বুঝায়। সমাজকে নিয়ে সামাজিক ইতিহাসের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। সমাজের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সমগ্র সমাজকে ঘিরেই সামাজিক ইতিহাস আলোচনা ও গবেষণা করে থাকে। তাই সামাজিক ইতিহাসের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। সামাজিক ইতিহাসের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি আলোচনার মধ্যে সামাজিক ইতিহাসের পরিধি নিহিত রয়েছে। নিম্নে সামাজিক ইতিহাসের পরিধি আলোচনা করা হলো-
১. সামাজিক পরিবর্তন : সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক কার্যক্রম, সমাজ সংগঠন, মানুষের আচার-আচরণ, রীতিনীতি তথা
জীবনধারায় সকল পরিবর্তনশীল বিষয় নিয়ে সামাজিক ইতিহাস আলোচনা করে থাকে। তাই সমাজব্যবস্থা সদা পরিবর্তনশীল । ২. সামাজিক বিবর্তন : বস্তুতপক্ষে অতীতের সমাজ কীভাবে গড়ে উঠেছিল, সে সমাজ কেমন ছিল, কেনইবা সমাজের উৎপত্তি হলো, সামাজিক রীতিনীতি কীভাবে মানুষের মধ্যে প্রয়োগ হলো ইত্যাদি বিষয় আমরা সামাজিক ইতিহাসের মাধ্যমে অবগত হতে পারি। যেহেতু সমাজের অন্যতম ধর্ম হলো বিবর্তন। সেহেতু বিবর্তনের মধ্যদিয়ে মানব সমাজ কীভাবে উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করল, কীভাবেই বা সামাজিক রীতিনীতির ধারা বিবর্তিত হলো। মানব সমাজের বিভিন্ন স্তরের এরূপ সামাজিক বিবর্তন সামাজিক ইতিহাসের পরিধিভুক্ত। অতএব দেখা যায় যে, সামাজিক ইতিহাসের পরিধি অনেক বেশি । ৩. সামাজিক অবস্থা : সামাজিক ইতিহাস, অতীত সমাজের বিভিন্ন চিত্র যেমন— অতীত সমাজ কীভাবে গড়ে উঠেছিল, কীভাবেই-বা সেই সমাজ পরিচালিত হতো ইত্যাদি দিকগুলো নিখুঁতভাবে বর্ণনা করে। সুতরাং সামাজিক অবস্থা সামাজিক ইতিহাসের অন্যতম পরিধি।
৪. সামাজিক গবেষণা (Social Research) : সামাজিক গবেষণা সামাজিক ইতিহাসের পরিধিভুক্ত। সামাজিক ইতিহাস ও সামাজিক গবেষণা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। সুতরাং সমাজের সার্বিক দিক বিবেচনা করেই সামাজিক গবেষণা পরিচালিত হয় যার বিভিন্ন দিক সামাজিক ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত।
৫. ঐতিহাসিক ধারা বিবর্তন : ইতিহাসের ধারাকে অবলম্বন করেই মানুষ উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে পারে। ইতিহাসের চিরন্তন ধারা, কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না, তা প্রতিনিয়তই এক গোষ্ঠী থেকে অপর গোষ্ঠীর মাঝে সংক্রমিত হয়ে থাকে। কারণ ইতিহাস মানুষকে সর্বদা বাস্তব শিক্ষা দিয়ে থাকে। এসব ঐতিহাসিক বিষয়সমূহ কেবল সামাজিক ইতিহাসের মাধ্যমেই জানা সম্ভব হয়।
৬. প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন : পৃথিবীর সবদেশেই কিছু না কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে। তাই সামাজিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ অংশ হলো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে আলোচনা করা। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ কালের বিবর্তনে, বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। যেমন- কুমিল্লার ময়নামতি, পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহার, বগুড়ার মহাস্থানগড়, নরসিংদীর উয়ারি বটেশ্বর, মিশরের পিরামিড প্রভৃতি নিদর্শন সম্পর্কে সামাজিক ইতিহাসের মাধ্যমে বিস্তারিত জানা যায় । ৭. সমাজের সার্বিক চিত্র : সামাজিক ইতিহাসে অতীত সমাজের সার্বিক চিত্র প্রতিফলিত হয়। তাই বলা যায়, সমাজের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা সামাজিক ইতিহাসের পরিধিভুক্ত। সুতরাং সমাজের সকল সম্পর্ক, প্রথা, অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান, আইন, আর্থসামাজিক সংগঠন, ভাষা, শিল্পকলা সবকিছুই সামাজিক ইতিহাসের পরিধিভুক্ত ।
৮. সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন : নতুনদের কাছে সমাজের দায়িত্বভার তুলে দিয়ে পুরাতনরা বিদায় নিচ্ছে। নবাগতরা পুরাতন ও বর্তমান সমাজের সামাজিক রীতিনীতি, মূলবোধ ও ধর্ম বিশ্বাসের আলোকে সুখী ও সুষ্ঠু ভবিষ্যৎ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। সুতরাং সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তনসমূহ সামাজিক ইতিহাসের পরিধিভুক্ত।
৯. সমাজের বর্ণ বৈষম্যের ইতিহাস : বিভিন্ন কারণে মানুষ একে অপর থেকে উঁচু-নিচু। সকলেই সমান অধিকার পাবার দাবি রাখে। বর্ণ বৈষম্যের যত কারণ আছে তার মধ্যে পশ্চিমা দেশগুলোতে সাদা-কালোয় পার্থক্য মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছে। সকল প্রকার বর্ণ বৈষম্যসমূহ সামাজিক ইতিহাস পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে ।
১০. সামাজিক রীতিনীতি ও প্রথা পদ্ধতি : সময়ের ব্যবধানে মানুষের প্রথা, অভ্যাস, ভাষা, খাদ্য ও সামাজিক রীতিনীতি ছিল ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। মূলত অতীত সমাজের এসব কিছুর ধারণা সামাজিক ইতিহাসই অবগত করিয়ে দিয়ে থাকে। অতীত সমাজের উৎপাদন পদ্ধতি, উৎপাদনের উপায় ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক ধারণা দিয়ে থাকে ৷
১১. মানব ইতিহাস : সামাজিক ইতিহাস মানব ইতিহাস অনুসন্ধান, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে। মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, দল গঠন, প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রয়োজন মিটানোর ক্ষেত্রে সামাজিক ইতিহাস ব্যাপক অবদান রাখে ।
১২. সামাজিক শিক্ষার ইতিহাস : শিক্ষার উদ্দেশ্য, শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, শিক্ষার ক্রমবিকাশ প্রভৃতিই মূলত সামাজিক ইতিহাসের বিশেষ দিক। প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগের শিক্ষা ব্যবস্থার সঠিক চিত্র আমরা সামাজিক ইতিহাস থেকে পেয়ে থাকি। কারিগরি, তথ্য প্রযুক্তি, তুলনামূলক শিক্ষা মূলত সামাজিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে ।
১৩. ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ : পরিবর্তনশীল সমাজে মানুষের যেমন পরিবর্তন হচ্ছে, তেমনি আবর্তন, বিবর্তন ও পরিবর্তনের সাথে সমাজের রূপও পরিবর্তিত হচ্ছে। সুতরাং সামাজিক ইতিহাস স্থান ও কাল ভেদে সমাজ, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী, উপজাতির সামাজিক মূল্যবোধ, ধর্ম বিশ্বাস, আইন-কানুন ইত্যাদি আলোচনা করে ।
১৪. মাতৃতান্ত্রিক ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজের ইতিহাস : নব পলীয় যুগে সমাজ ছিল প্রধানত মাতৃতান্ত্রিক। তখন মাতা তথা নারীরা ছিলেন সমাজের কর্তা ব্যক্তি। মোটকথা, সামাজিক ইতিহাস অধ্যয়নের এক পর্যায়ে পরিবার ছিল মাতৃতান্ত্রিক, তখন মাতার ধরেই ক্ষমতা নির্ধারিত হতো। কিন্তু প্লেটোর ঐতিহাসিক যুগে ধাতুর ব্যবহার শুরু হওয়ায় আগুনে ধাতু গলানো এবং অন্যান্য কাজে পুরুষরা ব্যাপক আগ্রহী হন। যার ফলশ্রুতিতে সামাজিক ইতিহাস পরিবর্তিত হয়ে পিতৃতান্ত্রিক রূপ ধারণ করে । ১৫. নারী জাতির ইতিহাস : সমাজের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হওয়ায়, নারী জাতির কর্তব্য পরায়ণতা, অবমাননা, অধিকার আদায় প্রভৃতি বিষয়ে সামাজিক ইতিহাস আলোচনা করে। অনেক গুণিজন নারী, আমাদের সামনে তাপসী রাবেয়া বসরী, বেগম রোকেয়া, মাদার তেরেসা প্রমুখ মহীয়সীদের সামাজিক ইতিহাস আলোচনা করে এবং তাঁদের অবদানকে বিশ্লেষণ করে সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখে ।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক ইতিহাসের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। এ পরিধি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট জাতি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এর পরিধি পৃথিবীর সমগ্র মানব জাতির জীবন প্রণালি নিয়ে। সুতরাং মানুষ, সমাজ ও সামাজিক ইতিহাস পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
সামাজিক ইতিহাসের ধারণা
১০. সমাজের অতীতকে জানা : সামাজিক ইতিহাসের মাধ্যমে অতীত সমাজকে জানা যায়। সামাজিক ইতিহাস হচ্ছে অতীতের
দর্পণস্বরূপ। আগামীর সুন্দর সমাজের প্রত্যাশা পাওয়া যায় মূলত সামাজিক ইতিহাস থেকেই। সুতরাং সামাজিক ইতিহাস সমাজে বসবাসকারী মানুষের অতীত জীবনের স্মৃতিকথা ।
১১. মানব সভ্যতার উত্থান ও বিকাশ সম্পর্কিত আলোচনা : সভ্যতার উৎপত্তি, বিকাশ ও পতন ঘটেছে মূলত সময়ের পরিবর্তনের ফলেই। মানুষ তার জ্ঞান বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে মানব সমাজের উৎকর্ষ সাধন করে, মানুষ লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার করে জন্ম দেয় সামাজিক ইতিহাস। যার ফলশ্রুতিতে গড়ে ওঠে পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাসমূহ। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যুগে যুগে মানুষের সমাজ সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কেমন ছিল তার ইতিহাস তুলে ধরে প্রাচীন সভ্যতা।
উল্লেখিত আলোচনা হতে বলা যায়, সামাজিক ইতিহাস সামগ্রিকভাবে মানুষের ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়াস পায় । নিছক তত্ত্ব নয় বরং সমাজের সবকিছুর একটি বিবরণ সামাজিক ইতিহাসের প্রতিপাদ্য। তাই দেখা যায়, সামাজিক ইতিহাসের প্রকৃতি অত্যন্ত সুন্দর ও সংগঠিত। এটি মানব সমাজের সকল অতীত বিষয়ের ধারক ও বাহক।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]