সভ্যতা কী? What is Civilization?

বিশ্ব সভ্যতার সামগ্রিক ইতিহাসে মানুষ প্রথম পৃথিবীতে আগমন করে ঠিক সেদিনই রচিত হয় মানব সভ্যতা বিকাশের প্রথম পর্যায়ের। তারপর হাজার হাজার বছরের ঐতিহাসিক পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্ব সভ্যতা বর্তমান সময়ের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে ।
আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত এ পৃথিবীতে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে জর্জরিত হয়েই মানুষকে চলতে হয়েছে জীবন পথে, নিতে হয়েছে প্রতিকূলতাকে জয়ের চ্যালেঞ্জ। আর তা করতে গিয়ে মানুষের চিন্তা-চেতনা ও জীবন-যাপন পদ্ধতিতে এসেছে নানা রকমের ভিন্নতা। গড়ে উঠেছে ভিন্ন ভিন্ন সমাজ ও জাতিসত্তা। তারপর থেকেই শুরু হলো মানুষের অগ্রগতির অভিযান । মানুষ খাদ্য সংগ্রহের পরিবর্তে উৎপাদন, কৌশল ও পাথরের হাতিয়ারকে ঘষে মেজে ধারাল করল। ফলশ্রুতিতে খাদ্য উৎপাদন অর্থনীতির মাধ্যমে খাদ্যের উদ্বৃত্ত উৎপাদনের সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ এ উৎপাদনকে প্রক্রিয়াজাতকরণের দিকে ধাবিত হলো। পাথরের প মানব ইতিহাসের ধারাবাহিক ক্রমবিবর্তনে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সমৃদ্ধ সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল। এসব সভ্যতার উদ্ভব-এর বিকাশ কেন হয়েছিল তা নিয়ে সমাজতত্ত্ববিদদের এবং ইতিহাসবিদদের মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। এর প্রধান কারণ হলো একেকটি সভ্যতার উদ্ভব ঘটেছিল কতগুলো বিশেষ কারণ ও অবস্থার প্রেক্ষিতে। বিভিন্ন আবিষ্কার উদ্ভাবনের ফলে মানুষের জীবন-জীবিকার পথ অনেকটা সুগম হয়েছিল। ফলে জীবন-যাপনের উন্নততর পদ্ধতি, মনের বিকাশ, জ্ঞানের প্রসার ঘটানোর পথ হলো প্রশস্ত। এভাবেই গ্রাম সমাজ থেকে নগর কেন্দ্রিক সমাজের উদ্ভব হলো।
সভ্যতা প্রসঙ্গে CC. Lambery - Karlovsky উল্লেখ করেছেন যে, “The term civilization designates a condition of human society characterized by a high level of cultural and technological achievement and complex social and political development.” অর্থাৎ সভ্যতা শব্দটি মানব সমাজের এমন একটি অবস্থার নির্দেশ করে, যে সমাজব্যবস্থায় উঁচু মানের সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত সফলতা অর্জন করেছে এবং যেখানে একটি জটিল সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিকাশ হয়েছে।
সভ্যতা
Civilization
আপেক্ষিক অর্থে সভ্যতা হচ্ছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জোটবদ্ধতার সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম পর্যায়ে। সাধারণত কোনো ব্যক্তির মধ্যে অগ্রসরমান, কল্যাণকর, রুচিশীল, সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন সংস্কৃতির পর্যাপ্ত উপস্থিতি দেখা গেলে মানুষ তাকে ‘ভদ্র/সভ্য' (Civil) বলে মনে করে। Civil প্রত্যয় থেকেই Civilization শব্দটির উদ্ভব- যার অর্থ দাঁড়ায় সুসভ্য মানব সমাজ, যাদের মধ্যে উন্নত সংস্কৃতির সমাবেশ ঘটেছে ।
অর্থাৎ যে অবস্থায় মানুষের সামাজিক জীবন প্রতিভাত হয়, তার বিকাশ বা উন্নতি হয় তাই সভ্যতা। সভ্যতা বলতে অনেক বস্তুগত সংস্কৃতিকেও বুঝায়। এ অর্থে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সব বস্তুগত আবিষ্কারের ফলকে একত্রে সভ্যতা বলা হয় ।
মানুষ যেদিন থেকে দলবদ্ধভাবে খাদ্যসংগ্রহ, শিকার ও অন্যান্য প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের সূচনা করেছে সেদিন থেকেই সভ্যতার উৎপত্তি হয়েছে। এ জন্যে অনেক মনীষী সামাজিক সম্পর্ককে সভ্যতা বলে উল্লেখ করেছেন। ‘সভ্যতা' শব্দটি সর্বপ্রথম দার্শনিক ভলতেয়ার ব্যবহার করেন ।
সুতরাং বলা যায় যে, মানুষ তার সৃজনশীল প্রয়াস দ্বারা এবং বিজ্ঞানের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে যে সামগ্রিক সমাজ জীবন গড়ে তোলে তার বাহ্যিক বস্তুগত প্রতিফলন হলো সভ্যতা। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিতে সভ্যতার সংজ্ঞাসমূহ নিচে বর্ণনা করা হলো-
প্রখ্যাত দার্শনিক Spenglar বলেছেন, “উৎকর্ষ সাধিত কৃষ্টির চূড়ান্ত রূপই সভ্যতা।" তিনি আরও মনে করেন, কোনো দেশ বা জাতির মধ্যে সংস্কৃতি বিকশিত হতে হতে এমন একটি স্তরে পৌঁছে যেখান থেকে সংস্কৃতির আর বিকাশ সম্ভব নয়। এ অবস্থাটিই সভ্যতা।”
আলফ্রেড ভেবার বলেন, “By civilization meant primarily scientific and technical knowledge and the command which we give over natural resources.” অর্থাৎ সভ্যতা বলতে বোঝায় বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি বিদ্যার জ্ঞান এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর অধিকার বা কর্তৃত্ব।
সভ্যতা সম্পর্কে “Oxford Advanced Learner's Dictionary”-তে বলা হয়েছে, “সভ্যতা হচ্ছে মানব সমাজের এমন একটি পর্যায় যা খুব উন্নত এবং সংগঠিত অবস্থাকে নির্দেশ করে। এটি নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী সংস্কৃতি এবং জীবনব্যবস্থা সম্বলিত সমাজব্যবস্থাকেও নির্দেশ করে। সভ্যতা বিশ্বের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে গড়ে ওঠতে পারে।” যেমন— গ্রিক সভ্যতা, রোম সভ্যতা ইত্যাদি
প্যাসকুয়াল জিসবার্ট বলেন, "Civilization is supposed to be a stage of culture reached by a more envolved an complex society in which those large aggregations of peoples, called cities, come into existence." সংস্কৃতির সে স্তরকেই সভ্যতা বলা যায় যে স্তরে একটি অপেক্ষাকৃত উন্নত ও মিশ্র সমাজ বহু সংখ্যক জনমানবের সমাবেশ সৃ করে যাদেরকে আমরা নগর আখ্যা দিয়ে থাকি । রিবর্তে হাতিয়ার তৈরিতে ধাতুর ব্যবহার শুরু হলো।
প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ও পেজ (Maciver & Page) তাঁদের 'Society' নামক গ্রন্থে বলেন, "By civilization we mean the whole mechanism and organization which man has devised in his rendezvous to control the conditions of his life. It would include not only your systems of social organization but also our technique and our material instruments." অর্থাৎ, সভ্যতা বলতে আমরা বুঝি মানুষ তার জীবন ধারণের ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকল্পে যে যান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সংগঠন সৃষ্টি করেছে তারই সামগ্রিক রূপ। কেবল যে আমাদের সামাজিক সংগঠনের নানা রূপরীতি এর অন্তর্গত হয়েছে তা নয়, নানাবিধ কারিগরি কলা-কৌশল ও বাস্তব যন্ত্রপাতিও এর অন্তর্ভুক্ত।
সমাজবিজ্ঞানী B. Bhushan বলেছেন, “নৈতিকতা এবং ধর্মীয় বিষয়াদি ও আদর্শ ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের একটি রূপ হচ্ছে সভ্যতা, যা একটি সমাজ বা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সমাজ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। "
ঐতিহাসিক Walter Wall Bank তাঁর 'Civilization Past and Present' শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, "Civilization... may be defined as a type of advanced human life based usually on city living and involved pastern of activities made up of such forces as writing, law, government, commerce and refined concepts of religion.” অর্থাৎ সভ্যতাকে এমন এক উন্নত জীবন পদ্ধতি রূপে ব্যাখ্যা করা যায় যা সাধারণত নগর জীবনের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া লিখন পদ্ধতি, আইন, সরকার, বাণিজ্য ও ধর্মের পরিশুদ্ধ ধারণার অন্তর্নিহিত কর্মকাণ্ডের শক্তির ওপর নির্ভরশীল।
অধ্যাপক টি.বি. বটোমর বলেন, "By a civilization we mean a cultural complex formed by the identical major cultural because of member of particular societies." অর্থাৎ কতগুলো বিশেষ মনুষ্য গোষ্ঠীর বা সমাজের একই প্রকারের প্রধান প্রধান সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণে যে সাংস্কৃতিক সমন্বয় সংগঠিত হয় তাকেই আমরা সভ্যতা বলে বুঝব ।
পরিশেষে বলা যায় যে, কোথাও সভ্যতার উন্মেষ ঘটলে তাকে লুকিয়ে রাখা যায় না। যেমন- সিন্ধু, মিশরীয়, চৈনিক, মেসোপটেমীয়সহ অসংখ্য সভ্যতার কথা আমরা জানি। এ প্রসঙ্গে এডগার সোয়েন বলেছেন, “সভ্যতা কোনো দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। আরও বলা যায় যে, প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময়ে প্রবেশ করেছে পৃথিবীর আজকের প্রযুক্তি আবিষ্কার ও এর ব্যবহার এবং এগুলো থেকে সুফল ভোগ করার বিষয়টিই হচ্ছে আজকের সভ্যতা।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]