সংস্কৃতি ও সভ্যতার পারস্পরিক সম্পর্ক Relation between Culture and Civilization Sen

অনেকে সভ্যতা বলতে সংস্কৃতির বস্তুগত উপাদানকে বুঝিয়েছেন। কোনো দেশ বা জাতির দৃশ্যমান ও স্পষ্ট বাহ্যিক চাকচিক্য দেখেই তার সভ্যতা অনুমান করা যায়। কোনো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্থাপত্য, বাসস্থান, পোশাক-পরিচ্ছদ, শিল্পকারখানা, উৎপাদনযন্ত্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সভ্যতার নিদর্শন হতে পারে।
এক মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা যেকোনো অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে এবং নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে মানুষ যেসব চিন্তা-ভাবনা করেছে এবং যা কিছু উদ্ভাবন করেছে তার সবটাকেই একত্রে সংস্কৃতি বলা হয়। সংস্কৃতি ও সভ্যতা দু'টি পৃথক প্রত্যয় হলেও এদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই নিবিড় এবং তাৎপর্যপূর্ণ । নিম্নে সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যকার সম্পর্ক তুলে ধরা হলো-
১. সংস্কৃতি হলো সভ্যতার ভিত্তি বা প্রাণ আর সভ্যতা হলো সংস্কৃতির ফল বা ফসল। এককথায় বলা যায় বস্তুগত সংস্কৃতির চরম বিকাশ‍ই সভ্যতা।
২. সংস্কৃতি ও সভ্যতা অভিন্ন উৎস হতে উদ্ভূত। এই কারণে সংস্কৃতি ও সভ্যতা একে অন্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পর্কযুক্ত।
চূড়ান্ত বিচারে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি ও প্রতিভা হলো সংস্কৃতি ও সভ্যতার উৎস ।
৩. সমাজ জীবনকে সুস্থ, সার্থক ও সাবলীল করার স্বার্থে সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। সংস্কৃতি হলো সভ্যতার ভিত্তি আর সভ্যতা হলো সংস্কৃতির ফসল।
৪. সভ্যতা মানুষের বাহ্যিক আচরণ, আর সংস্কৃতি হলো মানুষের ভিতরের দিক।
৫. সভ্যতাকে পরিমাণ করা যায়, যেমন- ট্রাক বা বাস, গরুর গাড়ি অপেক্ষা দ্রুতগামী ও শক্তিশালী। অপরদিকে সংস্কৃতি পরিমাপযোগ্য নয়, এর জন্য বিমূর্ত কৌশল, চেতনা বা মূল্যবোধ প্রয়োজন, যেমন- রবীন্দ্র সংগীত বনাম ব্যান্ড সংগীত, ইসলাম ধর্ম বনাম খ্রিষ্টান ধর্ম ।
৬. সভ্যতা ও সংস্কৃতি পরস্পরকে প্রভাবিত করে। সভ্যতা হলো সমাজের চালিকা শক্তি এবং সংস্কৃতি হলো এই চালিকা শক্তির নিয়ামক ৭. সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক বিদ্যমান। বর্তমানে সভ্যতা সংস্কৃতির শুধুমাত্র বহিরাঙ্গ নয়, সংস্কৃতির বাহনও বটে। ৮. সভ্যতা সংস্কৃতির বিকাশ ও বিস্তারের ক্ষেত্রে সহায়ক ও পরিপূরক ভূমিকা পালন করে থাকে। সভ্যতা যত সমৃদ্ধ হয়
সংস্কৃতির অগ্রগতির সম্ভাবনা তত বৃদ্ধি পায় ।
পরিশেষে বলা যায় যে, অনেকেই সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে একই অর্থে ব্যবহার করলেও সংস্কৃতি ও সভ্যতা এক নয়। সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করতে গিয়ে ম্যাকাইভার তাঁর "The Modern State" গ্রন্থে বলেছেন, "Culture is what we are and civilization is what we use or have." অর্থাৎ সংস্কৃতি হলো আমরা যা তাই এবং আমাদের যা আছে বা আমরা যা ব্যবহার করি তাই হলো আমাদের সভ্যতা। সভ্যতা সহজে গ্রহণ করা গেলেও সংস্কৃতি সহজে গ্রহণযোগ্য নয়।
সভ্যতার জন্মস্থানসমূহ Birth Places of Civilization
সাড়ে তিন হাজার বছর খ্রিষ্টপূর্বাব্দে নবোপলীয় যুগে মানব সভ্যতার প্রথম উন্মেষ ঘটেছিল এবং প্রাথমিক অবস্থায় মানব সভ্যতা নদীর কূলেই গড়ে উঠেছিল।
মানুষের ক্রমাগত প্রচেষ্টা ও কর্মধারার ফল হিসেবেই বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সভ্যতা গড়ে উঠেছে। এর ফলে বিভিন্ন অঞ্চলে সভ্যতার ধারক হিসেবে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ, রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও আচরণ এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক কাঠামো ।
পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের পরপরই প্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে সমঝোতা এবং সমাজের আদিপর্ব থেকে সে তার নিজস্ব পরিমণ্ডল সৃষ্টি করেছে। তাই স্পষ্টতই বলা যায় যে, প্রকৃতির ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণের উপরই সংস্কৃতি ও সভ্যতার উন্মেষ
ভৌগোলিক অবস্থা ও জলবায়ুকে অনেক পণ্ডিত ও দার্শনিক সভ্যতার উত্থান-পতনের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁদের মধ্যে ইবনে খালদুন, এরিস্টটল, মন্টেস্কু ও হান্টিংটন সভ্যতা বিকাশে ভৌগোলিক পরিবেশের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। মানুষ স্বভাবতই প্রতিকূল অবস্থার সাথে লড়তে গিয়ে সাহসী ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হয়েছে। অভাব, প্রয়োজন ও তাগিদ সভ্যতা উন্মেষের জন্যেও ভূমিকা পালন করেছে।
নব্য প্রস্তর যুগের সংস্কৃতি বিপ্লবের মাধ্যমেই নব নব আবিষ্কার, সভ্যতার অগ্রযাত্রার নব যাত্রা দান করে। আবার কোনো কোনো ধর্মতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবেত্তা মনে করেন কতিপয় অদৃশ্য ও অজানা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এবং সভ্যতার সৃষ্টি যাবতীয় বিষয়সমূহ বিভিন্ন প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে তৈরি হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, পৃথিবীতে বিকাশমান প্রায় সকল সভ্যতাই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা। যেমন— নীলনদকে কেন্দ্র করে মিশরীয় সভ্যতা, হোয়াংহো নদীকে কেন্দ্র করে চৈনিক সভ্যতা, টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা এবং সিন্ধু নদের অববাহিকায় সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]