প্রাচীন সভ্যতাসমূহ নদীর তীরে গড়ে ওঠার কারণ Reasons of the Development of Ancient Civilization on the Bank of River.

সভ্যতার অগ্রযাত্রায় নবমাত্রা দান করে নব্য প্রস্তর যুগের সংস্কৃতি বিপ্লব ও নব নব আবিষ্কারের মাধ্যমে। পাশাপাশি লেখা আবিষ্কার, ধাতব দ্রব্য ও শিল্পকলার সৃষ্টি এই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং জীবন-যাপন প্রণালিকে করে তোলে জটিলতর। ঐতিহাসিকদের মতে, প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের অদম্য স্পৃহা ও প্রচেষ্টা সর্বপ্রথম নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। তাই বলা হয়, প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পৃহা মানুষকে সভ্যতা সহায়তা করেছে। সুতরাং পৃথিবীতে বিকাশমান সকল সভ্যতাই প্রায় নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। যেমন- নীলনদকে কেন্দ্র করে মিশরীয় সভ্যতা, হোয়াংহো নদীকে কেন্দ্র করে চৈনিক সভ্যতা, টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা এবং সিন্ধু নদের অববাহিকায় সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। যেহেতু নদীই ছিল সভ্যতার প্রধান উৎস, তাই এ সকল সভ্যতাকে নদীমাতৃক সভ্যতা বলা হয়। বিভিন্ন নদীর প্রবাহ এবং তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা কৃষি ব্যবস্থা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন মানব সমাজকে দিয়ে ছিল চরম উৎকর্যের সন্ধান। সেহেতু প্রাচীন সভ্যতাগুলো নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে ওঠার কারণ হিসেবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করা যেতে পারে --
১. নদীগুলোকে কেন্দ্র করে জনবসতি বেড়ে চলল। গ্রাম ও নগর গড়ে উঠল। কৃত্রিম খাল, বাঁধ দেওয়া ইত্যাদি সম্প্রদায়গত
উন্নয়ন কাজকর্ম শুরু হলো। এ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব ও আইনের সৃষ্টি হয়।
২. নদী তীরবর্তী অঞ্চলেই সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে ওঠে। শিল্প সাহিত্যের বিকাশ ও ব্যবসার প্রসার ঘটে। আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা এগিয়ে চলে। অক্ষর ও দিনপঞ্জি আবিষ্কৃত হয়। মানবিক আত্মিক চাহিদা মেটাতে ধর্ম ও দর্শনের সূত্রপাত হয় ।
৩. আদিম মানুষের প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতার অবসান, মানুষের ক্রমাগত প্রচেষ্টা এবং কর্মধারার ফল হিসেবেই বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সভ্যতা গড়ে উঠেছে। আর এ সব সভ্যতার প্রায় সকল অংশেই নদীর সাথে অতিমাত্রায় সম্পৃক্ত। কারণ নদী মানুষের বসবাসকে সৃজনশীল, প্রতিকূলতা মোকাবিলা এবং মানুষকে সৃষ্টিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ৪. নদীগুলোর প্রকৃতির নিয়ম দুই কূল ছাপিয়ে পড়ে যেত আর রেখে যেতে উর্বর পলিমাটি। উর্বর ভূমিতে প্রচুর ফসল উৎপাদন মানুষকে আকর্ষণ করতে লাগল এবং নদী তীরগুলোতে জনবসতি বেড়ে চলল। আর উদ্বৃত্ত ফসল ধনিক শ্রেণির পাশাপাশি বণিক শ্রেণির বিকাশসাধন করল। বণিক শ্রেণি তাদের পণ্য সামগ্রী নদী পথে আনা-নেওয়ার কাজ করতে লাগল এবং নদী তীরেই গড়ে উঠল বাণিজ্য কেন্দ্র ।
৫. নদী উপত্যকায় গড়ে ওঠে মানব সভ্যতার ভিত। নদী উপত্যকায় উর্বর ভূ-খণ্ড গড়ে তুলেছিল, আর সেখানে গড়ে উঠেছিল ঐশ্বর্যশালী নগর সভ্যতা। এভাবেই গড়ে ওঠে প্রাচীন সভ্যতাসমূহ ।
৬. কৃষি নির্ভর এ সভ্যতাগুলোতে তীর্থস্থান, ব্যবসায় কেন্দ্র ও প্রশাসনিক ইউনিটে আশ্রয় নগর জীবনের উন্মেষ ঘটে এবং ধর্ম সমাজ জীবনের সর্বাধিক নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে।
৭. উদ্বৃত্ত ফসল ব্যবসা-বাণিজ্যের সূচনা করণ। নদী পথে শুরু হয় পণ্য সামগ্রী আনা-নেওয়ার পালা। ব্যবসা-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জনপদের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান শুরু হয়। ব্যবসায়ীদের ব্যবসার ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে, পণ্য বোঝাই জাহাজ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়ত শুরু করে। তখন যাতায়াতের জন্য একমাত্র উপায় ছিল নদীপথ ।
পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষ যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে প্রকৃতির সাথে লড়াই করে অগ্রসর হচ্ছিল ঠিক তখনই নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলো তাদের উর্বর পলি মাটির প্রতি মানুষকে আকর্ষণ করছিল। যে মাটি মানুষকে তাদের যাযাবর বৃত্তি ত্যাগ করে তারই কোলে স্থায়ী আবাস গড়ার লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ করল, একদিন তারাই গড়ে তুলল নগর সভ্যতা। মূলত মানব সভ্যতার উৎপত্তি হয়েছিল বিশেষ বিশেষ নদীকে কেন্দ্র করে। তাই বলা যায়, সভ্যতার বিকাশে মানুষ অকৃপণ চিত্তে স্বীকার করবে এবং যুগ যুগ ধরে স্মরণ রাখবে নীল, টাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস, সিন্ধু, হোয়াংহো ও ইয়াংজেকিয়াং নদীর অবদানের কথা।
ওএ সভ্যতার উত্থান, বিকাশ ও পতন সম্পর্কিত তত্ত্ব
Different Theories Regarding Rise, Growth and Downfall of Civilization
সভ্যতা হচ্ছে সাংস্কৃতিক জীবনের একটি পরিণত স্তর। সমাজ সংস্কৃতির অপেক্ষাকৃত উন্নত অবস্থায় প্রতীক বা ফলই হলো সভ্যতা। মূলত সভ্যতা সৃষ্টি হয় সাংস্কৃতিক বিবর্তনের মাধ্যমে।
এ প্রসঙ্গে Arnold Green তাঁর Sociology নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “A culture becomes civilization only when it processes written language, science, philosophy a specialized division of labour and a complex technology and political system."
পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের পর থেকেই প্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে সমঝোতা করেই মানুষকে জীবন নির্বাহ করতে হয়েছে। ফলশ্রুতিতে প্রকৃতি নির্ভর শিকার ও সংগ্রহভিত্তিক জীবন-যাপন প্রণালি, যাযাবর জীবন, উদ্যান, কৃষি প্রভৃতি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মানুষ তার নিজস্ব পরিস্রবণ সৃষ্টি করতে পেরেছে। সেদিক থেকে অনুধাবন করলে অতি সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, প্রকৃতির ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণের ওপরই সংস্কৃতি ও সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছে।
বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন নির্ধারকের সাহায্যে সভ্যতার উৎপত্তি, বিকাশ ও পতনের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁদের প্রত্যেকের আলোচনাতেই সভ্যতার উৎপত্তি ও ধ্বংসের পেছনে দীর্ঘ সময়ের ক্রমবিবর্তনের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। সুতরাং পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতার ইতিবৃত্ত পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় প্রতিফলিত হয় যে, সভ্যতার উত্থান ঘটে অনুকূল পরিবেশ থেকে, বিকাশ ঘটে পারিপার্শ্বিকতার সহায়তায়, আর বিকাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছালে তা অবধারিতভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।
যাহোক, সমাজবিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক ও দার্শনিকেরা সভ্যতার উৎপত্তি সম্পর্কে যে সমস্ত তত্ত্ব প্রদান করেছেন, সেগুলোকে পাঁচভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
১. ভৌগোলিক মতবাদ (Geographical Theory) HE
২. মাটির অবক্ষয় জনিত মতবাদ (Soil-exhaustation Theory)
৩. ভূ-প্রাকৃতিক মতবাদ (Topographic Theory)
৪. যাযাবর মতবাদ (Normad Theory
৫. প্রতিকূলতা ও মোকাবিলা মতবাদ (Challenge and Response Theory)

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]