সভ্যতার উত্থান, বিকাশ ও পতন সম্পর্কিত ভৌগোলিক মতবাদ Geographical Theory Regarding Rise, Growth and Downfall of Civilization

ভৌগোলিক অবস্থা বা জলবায়ুকে অনেক পণ্ডিত ও দার্শনিক সভ্যতার উত্থান-পতনের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। জগদ্বিখ্যাত পণ্ডিত ও দার্শনিক এরিস্টটল ও মন্টেস্কু সভ্যতা বিকাশে ভৌগোলিক কারণ বা জলবায়ুর প্রভাবকে স্বীকার করেছেন। ভৌগোলিক মতবাদটি সর্বাধিক পরিচিতি পায় মার্কিন ভূগোলবিদ Eiswarth Huntington এর রচনার মাধ্যমে। পৃথিবীর শুরুতে মানুষ অতিমাত্রায় প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল থেকেছে। যেখানে ফলমূল ও শিকার বেশি পাওয়া গিয়েছে সেখানেই মানুষ বসবাস করেছে। এ বসবাসের মূল কারণ হিসেবে ভৌগোলিক ও জলবায়ুর প্রভাবকেই চিহ্নিত করা যায় ।
ভৌগোলিক তত্ত্ব সম্পর্কে (Ellswarth Huntington)-এর মূল বক্তব্য হলো প্রচীন বা আধুনিক কোনো সভ্যতাই জলবায়ুর আনুকূল্য বা উদ্দীপনা ছাড়া উন্নত বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে পারেনি। তিনি বলেছেন ভৌগোলিক কারণেই সভ্যতার উত্থানে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে।
এ প্রসঙ্গে এলসওয়ার্থ হান্টিংটন বলেছেন, "No nation ancient or modern rose to the highest cultural status except under the influence of a climate stimulus." অর্থাৎ প্রাচীন কিংবা আধুনিক কোনো সভ্যতাই ভৌগোলিক সুবিধা ছাড়া উন্নত সংস্কৃতির মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি ।
এলসওয়ার্থ হান্টিংটন তাঁর “Main Spring of Civilization” এবং “Climate and civilization" শীর্ষক গ্রন্থে সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশের ভৌগোলিক কারণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, “The progress and the decay of civilization rests upon the failure and approval of climate on man. The climate determines the growth and decay of civilization, its distribution on the earth. The chainging condition of the climate is responsible for the chainging shift in the scene of civilization.” অর্থাৎ সভ্যতার বিকাশ ও পতন মানুষের ওপর জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব ও প্রতিকূলতা বা ব্যর্থতা এবং উপযোগিতার ওপর নির্ভরশীল। আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব পৃথিবীতে সভ্যতার বিকাশ, বিস্তার ও পতনের নির্ণায়ক। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সভ্যতার দৃশ্যপটেরও পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ হান্টিংটন মনে করেন, ভৌগোলিক পরিবেশের বিভিন্নতা অনুসারে সভ্যতা বিকাশে বৈচিত্র্য দেখা দিয়েছে যা সভ্যতার সংস্করণশীলতাকে অনিবার্য করে তুলেছে। সভ্যতা বিকাশে বায়ুর গড় পড়তা ৭৫% আর্দ্রতা কাম্য। হান্টিংটনের ধারণায়
য় সারা বছর অনুরূপ আবহাওয়া সভ্যতা বিকাশে অন্তরায় সৃষ্টি করে। বরং ঘন ঘন পরিবর্তিত জলবায়ু, মাঝে মধ্যে ঝড়ো হাওয়া, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি তাৎক্ষণিকভাবে পরিবেশকে পরিষ্কারকরণের পাশাপাশি মানুষের জীবনী শক্তি উজ্জীবিত হতে সহায়তা করে ।
তারা এ প্রসঙ্গে হান্টিংটন আরও বলেন, “Finally the weather must not be uniform cycolonic storms or ordinary storm resulting in weather changes from day to day, must have sufficient frequency and intensity to clear the atmosphere every once in a while and produce those sudden variations in temperature which seem to be necessary to exhilarate and rivitalize man."
এলসওয়ার্থ হান্টিংটন (Ellswarth Huntington) ভৌগোলিক মতবাদে আবুও যেসব বিষয় উল্লেখ করেছেন নিয়ে তা আলোচনা করা হলো-
১. তাপমাত্রা : হান্টিংটন মনে করেন যে, অনুকূল তাপমাত্রা মানুষের জীবনী শক্তিকে উজ্জীবিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। অধিক উত্তপ্ত অঞ্চল ও খুব ঠাণ্ডা অঞ্চলের কোনোটিই সংস্কৃতির উন্নয়ন করতে সক্ষময়। হান্টিংটনের মতে, ৩৮° F থেকে ৬৮° F পর্যন্ত তাপমাত্রা হলো অনুকূল তাপমাত্রা। তাই পৃথিবীতে যতগুলো সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে, সকল সভ্যতাই এই তাপমাত্রার অঞ্চলে হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
২. আবহাওয়ার বিচিত্রতা : সারা বছর একই রকম আবহাওয়া সভ্যতা বিকাশের জন্য অন্তরায়। জলবায়ুর ঘন ঘন পরিবর্তন হতে হবে এবং তা হলেই মানুষের জীবনী শক্তি উজ্জীবিত হবে।
৩. আর্দ্রতা : অনুকূল তাপমাত্রার সাথে বায়ুর আর্দ্রতাও সভ্যতার বিকাশে মানুষের জীবনী শক্তির বিকাশ ও উজ্জীবিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রসঙ্গে হান্টিংটন উল্লেখ করেছেন, শুধু তাপমাত্রাই এককভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং আর্দ্রতাও আরেকটি প্রয়োজনীয় উপাদান। এর পরিমাণ হবে গড়ে ৭৫%।
৪. পরিবেশ : জলবায়ুর পরিবর্তন, মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়া ঘূর্ণিঝড় তাৎক্ষণিকভাবে পরিবেশকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে মানুষের জীবনী শক্তি উজ্জীবিত হতে সহায়তা করে ।
পরিশেষে বলা যায় যে, এ সভ্যতা ধ্বংসের বিভিন্ন কারণ থাকলেও আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশে ভৌগোলিক মতবাদের সপক্ষে অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন- দক্ষিণ আমেরিকায় মায়া সভ্যতা। কেননা অনুকূল আবহাওয়ার কারণে খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০-১৫০০ অব্দে গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস ও মেক্সিকোর যুকাতাম অঞ্চলে এ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।
৪.৭.ক.১ সভ্যতার উত্থান, বিকাশ ও পতন সম্পর্কিত ভৌগোলিক মতবাদের সমালোচনা
Criticism of Geographical Theory Regarding Rise, Growth and Downfall of Civilization সভ্যতা বিকাশের অন্যতম তত্ত্ব বা মতবাদ হিসেবে "ভৌগোলিক তত্ত্ব জলবায়ু অনুমিতি" সমালোচিত হয়েছে। সমালোচনায় বলা হয়েছে যে, আবহাওয়ার পরিবর্তনের তথ্য উপস্থাপন করে এ তত্ত্বটিকে চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করা যায় না। তাছাড়া প্রাচীন গ্রি ও রোমান সভ্যতা বিকাশে আবহাওয়া আনুকূল্য প্রশ্নাতীত হলেও আবহাওয়ার কোনোরূপ পরিবর্তন ছাড়াই এ সভ্যতার পতন ঘটেছে। অন্যদিকে আবার মিশরীয় ও মেসোপটেমীয় সভ্যতা মাংসের জন্য জলবায়ুর পরিবর্তনকে একান্তভাবে দায়ী করা যায় না। বরং আর্থ-সামাজিক বিষয়াদি, দাস প্রথার উদ্ভব, সম্পদ নিঃশেষিত হওয়া, শ্রম বিমুখতা ইত্যাদি কারণগুলোকেও সভ্যতার পতনের জন্য দায়ী করা যায়।
আবার অনেক ঐতিহাসিক সমাজতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, আবহাওয়া ও জলবায়ুরে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাচীন সভ্যতার উদয় ও বিকাশে ভৌগোলিক অবস্থাকে একটি শর্তরূপে দেখা যায়, কিন্তু সভ্যতার উৎপত্তির কারণ হিসেবে দেখা যায় না। যেমন প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতা বিকাশে প্রধান কারণ ছিল আবহাওয়া।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]