সিন্ধু সভ্যতায় নগর পরিকল্পনার বর্ণনা দাও । Describe the urban planning of indus valley civilization.

সভ্যতা ও সংস্কৃতির একমাত্র উদ্ভাবক মানুষ। পৃথিবীর মাটিতে মানুষ যেদিন প্রথম বিচরণ করেছিল, সভ্যতার বীজ রোপিয় হয়েছিল সেদিনই। নানা প্রতিকূলতা, সংগ্রাম ও সীমাবদ্ধতার মধ্যদিয়ে মানুষ, সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর এ সময়েই আমরা বাস করছি। বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির অতিউন্নত এক সভ্যতায়। বিদ্যুৎ এখানে শক্তির উৎস। কিন্তু পৃথিবীকে এখানে আসতে সময় লেগেছে কয়েক হাজার বছর। এটিকে বিবেচনা করা যেতে পারে সভ্যতার শীর্ষ ধাপ (Pick Stage) হিসেবে। কিন্তু এ আগে মানব সভ্যতার আরও অনেক ধাপ বা স্তর অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রথমেই পাথরের যুগ, পুরো-পলীয় ও নব পলীয় যুগের অবসানে উদ্যানচাষ (Horticulture), পশুপালন এবং কৃষির উদ্ভব ও বিকাশে সমাজ ও সভ্যতার বৈপ্লবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, কিছু ফসল এবং পশু পাখিদের লালন পালনকে কেন্দ্র করে মানব বসতি স্থায়িত্ব লাভ করে। এর ফসলসমূহের মধ্যে 'গম' আর 'যব' উল্লেখযোগ্য। আর গৃহপালিত পশুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ছাগল, ভেড়া, শূদ ইত্যাদি । সে সময় এসব জীবজন্তুদের বিচরণ দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া হতে আরম্ভ করে এশিয়ার পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
ভৌগোলিকভাবে বসবাসের নিমিত্তে মানব সভ্যতাকে প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানকাল অবধি তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন— নদী তীরবর্তী সভ্যতা, সাগর তীরবর্তী সভ্যতা, মহাসাগরীয়-মহাদেশীয় সভ্যতা ।
মূলত নদ-নদীর অববাহিকায় যেসব সভ্যতা গড়ে ওঠেছিল, তাদেরকে নদীর তীরবর্তী সভ্যতা বলা হয়। ঐতিহাসিকদের তথ্যমতে, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার জর্ডান নদীর তীরবর্তী 'জেরিকা' নামক স্থানে সর্বপ্রথম শহরের গোড়া পত্তন ঘটে। জায়গাটি বর্তমানে ইসরাইলের অংশ বিশেষ। সাগর তীরবর্তী সভ্যতার কথা উল্লেখ করলে ভূমধ্যসাগরের নাম চলে আসে। এই ভূমধ্যসাগরকে কেন্দ্র করে যেসব সভ্যতা গড়ে ওঠেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ফিনিশীয় ও কার্তেজ সভ্যতা, এজিয়ান সভ্যতা, গ্রিক সভ্যতা ও রোমান সভ্যতা ইত্যাদি ।
এছাড়াও টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর অববাহিকায় সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয়, এসেরীয় ও ক্যালিভীয় সভ্যতা; সিন্ধু নদের অববাহিকায় সিন্ধু সভ্যতা, হুয়াংহু ও ইয়াংসিকিয়াং এর তীরে চৈনিক সভ্যতা ইত্যাদি নদী তীরবর্তী সভ্যতা হিসেবে বিশ্বের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য।
যাইহোক সাতটি মহাদেশ আরও পাঁচটি মহাসাগর দিয়ে বর্তমানের এই মহাদেশীয় সভ্যতাগুলোকে 'অ্যান্ড্রয়েড সভ্যতা' হিসেবে অভিহিত করা যায়। সভ্যতার এই বিস্তৃতি যে কতদূর পর্যন্ত এগিয়ে যাবে তা বলা কঠিন।
সুতরাং বলা যায়, কৃষির আশীর্বাদে গড়ে ওঠা কয়েক হাজার বছর পূর্বের নদী তীরবর্তী সভ্যতাসমূহকে একত্রে প্রাচীনসভ্যতা বলে উল্লেখ করা হয়। সিন্ধু, মেসোপটেমিয়া, মিশরীয়, চৈনিক, ব্যাবিলনীয়, আজটেক ইত্যাদি সভ্যতাসমূহ সামাজিক ইতিহাস অধ্যয়নে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে।
সিন্ধু সভ্যতা Indus-Valley Civilization
ভারত একটা বৈচিত্র্যময় দেশ। বৈচিত্র্যের প্রতি ইঙ্গিত করেই ঐতিহাসিকগণ ভারতকে বিশ্বের সারাংশ বলে বর্ণনা করেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের ইতিহাস অতিপ্রাচীনকাল পর্যন্ত বিস্তৃত।
পণ্ডিতদের মতে, নবোপলীয় যুগে খাদ্য অন্বেষণের তাগিদে মানুষ একস্থান হতে অন্যস্থানে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। এসব জনপদ নদীর তীরে গড়ে ওঠে। নদীর সাথে মানুষের জীবন যাপনের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের কারণে সিন্ধু নদের তীরে সৃজনশীল এক জনগোষ্ঠীর বসতি গড়ে উঠেছিল। সিন্ধু নদের তীরে এ অধিবাসীরা যে সভ্যতা গড়ে তোলে তা-ই হচ্ছে সিন্ধু সভ্যতা। ১৯২১ খ্রিঃ এ সভ্যতা প্রথম আবিষ্কৃত হয়। ১৯২২ খ্রিঃ আরো একটি সভ্যতার খোঁজ পাওয়া যায় ৷
বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক জন মার্শাল সিন্ধু সভ্যতাকে “প্রাচীনতম সভ্যতা" (The oldest of all civilizations known) বলে অভিহিত করেছেন।
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক Will Durant সিন্ধু সভ্যতার বর্ণনায় বলেছেন, "The Indus Valley civilization was older than that which flowered of the mud of the nile." অর্থাৎ নীলনদের মৃত্তিকা হতে উদ্ভূত মিশরীয় সভ্যতা অপেক্ষা সিন্ধু সভ্যতা অধিক প্রাচীন ৷
অনেক ঐতিহাসিকই বলেছেন, "India is an eption of the world." হিমালয় পর্বত হতে উৎপত্তি হয়ে ইরাবতীর ধারে হরপ্পা বর্তমানে পাকিস্তানের লাহোর থেকে একশো মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে পাঞ্জাবের মনোগোমারী জেলায় ও সিন্ধু প্রদেশের সিন্ধু নদের ধারে মাহেঞ্জোদারো বর্তমানে করাচি থেকে দু'শত মাইল উত্তরে লারকানা জেলার প্রায় ৪০০ মাইল দুটি অঞ্চলকে নিয়ে প্রায় ১৫০০ মাইল জুড়ে তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছে। অঞ্চল তিনটি হচ্ছে মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা ও চানহুন্দারো। বস্তুত সিন্ধু উপত্যকা হওয়ার কারণেই এ সভ্যতাকে সিন্ধু সভ্যতা বলা হয়। সিন্ধু সভ্যতার স্থায়িত্বকাল চার হাজার থেকে আড়াই হাজার অব্দ। কিন্তু ১৯২৪ সালে হরপ্পা মহেঞ্জোদারো তথা সিন্ধু সভ্যতায় খনন কাজে প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষ ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত আবিষ্কৃত হলে সিন্ধু সভ্যতা তথা ভারতীয় সভ্যতা সম্পর্কে বিশ্ববাসীর ধারণা পাল্টে যায় এবং এটাকে বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা হিসেবে অবহিত করা হয় ৷
সুতরাং সিন্ধু সভ্যতার ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায় এ সভ্যতা ইউরোপীয়দের সমসাময়িক আর্য নামে পরিচিত জনগোষ্ঠীর দ্বারাই সিন্ধু সভ্যতার সৃষ্টি বলে মনে করা হয়। অনেকে একে সিন্ধু উপত্যকাবাসী সুমেরু জাতীয় সভ্যতা আবার অনেকে একে দ্রাবিড় সভ্যতার নিদর্শন বলে মনে করেন। অর্থাৎ দ্রাবিড়রাই ভারতে নাগরিক জীবনের সূত্রপাতের মাধ্যমেই এই স্বর্ণসভ্যতার সূত্রপাত করেছিল এ মতবাদটিই সমসাময়িকভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
সিন্ধু সভ্যতার প্রধান নিদর্শনসমূহ Major Archaeological Site of Indus-valley Civilization
প্রখ্যাত ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ্যার অন্যতম প্রাণপুরুষ স্যার জন মার্শালের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৫০ থেকে ২৭৫০ অব্দ পর্যন্ত সিন্ধু সভ্যতার কাল ছিল।
মেসোপটেমিয়ায় শহরগুলোতে খননকার্য পরিচালনায় প্রাপ্ত প্রমাণাদির সূত্রমতে খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ থেকে ১৮০০ অব্দ পর্যন্ত এ সময়কাল অনুমিত হয় ।
অধুনা পণ্ডিতেরা কালিবাঙায় অবস্থিত হরপ্পা যুগের প্রাথমিক সংস্কৃতির স্তরগুলো খ্রিষ্টপূর্ব ২২০০ অব্দে উদ্ভূত বলে ধারণা করেছেন। যতদূর জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ২২০০ থেকে ১৯০০ অব্দের মধ্যে এ সভ্যতার পূর্ণ পরিণতি সূচিত হয়েছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিক 'ডেনড্রোনকোলজি'-এর মতে, প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় যে, এ সভ্যতার ফলে আরও কয়েক শতাব্দী পর্য বিদ্যমান ছিল। বিভিন্ন খনন কার্যের ফলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে-
১. তুলার চাষ : সিন্ধু সভ্যতায় প্রথম তুলার চাষ শুরু হয়। হরপ্পায় মাটি খুঁড়ে সত্যিকারের সুতি কাপড়ের একটি টুকরা পাওয়া গিয়েছে। হরপ্পা থেকে প্রচুর পরিমাণে সুতি কাপড় রপ্তানির পাশাপাশি সিন্ধু সভ্যতার অঞ্চলে আধুনিক জাতের অনেক তুলা চাষ হতো।
২. সিলমোহর : প্রায় শতাধিক বণিক পরিবারেই একটি করে সিলমোহর ছিল। আবার হরপ্পা রাজ্য থেকেই দু'হাজারেরও বেশি সিল মোহর পাওয়া গিয়েছে। সিল মোহর দু'ভাবে ব্যবহার হতো। যথা- সম্পত্তির মালিকানা চিহ্ন হিসেবে এবং রক্ষাকব্য হিসেবে। তাই বলা হয়, চৌকোনার নরম পাথরের উপর ছবি ও লেখা খোদাই করে তৈরি হতো সিল মোহর।
৩. পশুপালন : সিন্ধু সভ্যতার অঞ্চলসমূহে গৃহপালিত পশু বলতে প্রধানত ষাঁড়, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও শুকুরকে বোঝানো হতো। মোটকথা, চাষের সাথে সাথে শুরু হয়েছিল পশুপালন।
৪. সুরক্ষিত নগরী : সিন্ধু সভ্যতা প্রায় ১৩ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। সিন্ধু সভ্যতা ছিল নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। হরপ্পা শহরের পশ্চিমে সুরক্ষিত নগর। পূর্ব ও দক্ষিণাংশে নিম্ন শহর, সুরক্ষিত নগরের উত্তরে রাভী নদী। সুরক্ষি নগরী ও প্রাচীন নগরীর মধ্যবর্তী স্থানে অনেকগুলো ইমারত ছিল। মহেঞ্জোদারো নগরটি অন্তত নয়বার নতুন করে গড়ে তুলতে হয়েছিল। কিন্তু রাস্তাঘাট ও বাড়ি ঘরের সীমানা বরাবরই একই রকম থেকেছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, সময়ের সাথে সকল কিছু পরিবর্তন ঘটলেও নগর পরিকল্পনা কখনো পাল্টায়নি ।
৫. শিল্পকলা : সিন্ধুবাসীর শিল্প কর্মের বহু নিদর্শন পাওয়া গেছে। তাদের শিল্প ও চিত্র অঙ্কন প্রণালিতে পশুর ছবি এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সেখানে ষাঁড়, হাতি, বাঘ, হরিণ, গণ্ডার, কুমির, ঘড়িয়াল ইত্যাদির ছবি সম্বলিত অনেক সিল মোহর আবিষ্কৃত হয়েছে। হাড় ও হাতির দাঁতের চিরুনি ও সুচ, তামা ও ব্রোঞ্জের তৈরি কুঠার, কাস্তে, ছুরি, কারুকার্যখচিত সুন্দর ডিজাইনের মৃৎপাত্র, পোড়া মাটির খেলনা, নৃত্যরত নারী ও পুরুষের মূর্তি, মাস্তুল বিহীন জাহাজের চিত্র, স্বর্ণ, রৌপ্য, তন্ত্র ব্রোঞ্জ ও ঝিনুকের অলংকার সিন্ধুবাসীর উন্নত শিল্পকলা কারুশিল্প ইত্যাদি নিদর্শন দৃশ্যমান।
৬. পোশাক পরিচ্ছদ : সিন্ধু সভ্যতার যুগে পুরুষেরা ঢিলেঢালা পোশাক ব্যবহার করত এবং মেয়েদের মতো লম্বা চুল রাখত। মেয়েরা লম্বা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করত।
৭. বাণিজ্য : সিন্ধু অঞ্চলসমূহে ঝিনুক ও কয়েক ধরনের পাথর আসত কাথিয়াওড়া ও দক্ষিণাড়ী থেকে রুপা, নীল কাঞ্চন ও ল্যাপিউ ল্যাজিলাই আসত পারস্য ও আফগানিস্তান থেকে রাজস্থান ও পারস্য থেকে আসত তামা। মূল্যবান ধাতু ও পাথরের জন্য দূর-দূরাঞ্চলের সাথে হরপ্পা বণিকদের ব্যাপক যোগাযোগ ছিল। মোটকথা, স্থলপথে বাণিজ্য চলত ।
৮. ধর্মীয় বিশ্বাস : সিন্ধু অঞ্চলসমূহে প্রত্যেকটি পরিবারে পূজোর জায়গাতেই একটি করে দেবী মাতৃকার আসন ছিল। সিলমোহরের উপরে যেসব ছবি আঁকা হয়েছিল- আর যেসব কথা লেখা ছিল তার সাথে সিন্ধু সভ্যতায় ধর্মীয় বিশ্বাস জড়িত ছিল।
এ সভ্যতায় ধর্মীয় ভাবাসনের জন্য মহেঞ্জোদারো নগরের পশ্চিমে দুর্গ প্রাচীরের উঁচু ঢিবির পার্শ্বে একটি বাপি বা স্থানের জায়গা ছিল। আসলে উঁচু ঢিবিটি একটি ধর্মানুষ্ঠানের জায়গা আর বাপি বা স্নানের জায়গাটি পুন্য স্থানের জায়গা। সুতরাং উঁচু ঢিবির তিন দিকের কক্ষেই পুরোহিতরা বসবাস করত।
৯. লিপি : ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সিন্ধু সভ্যতার ২৫০০টি সিলে চিত্রধর্মী লিপি পাওয়া গেছে। কিন্তু উক্ত লিপির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গবেষকদের মতে সিন্ধু সভ্যতার প্রথমদিকে লেখার জন্য ৩৬০টি চিহ্ন ব্যবহার করা হতো। শেষ হরপ্পা যুগে (২৭০ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দ) চিহ্ন সংখ্যা কমে কুড়িটিতে দাঁড়ায়।
১০. পরিমাপ পদ্ধতি : সঠিক পরিমাপের উদ্দেশ্যে সিন্ধুবাসীরা ওজন ও পরিমাপ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছিল। এক্ষেত্রে বিভিন্ন আকৃতির ও ওজনের বাটখারা ব্যবহৃত হতো। সবচেয়ে ছোট বাটখারার ওজন ছিল ০.৮৭৫ গ্রাম এবং সর্ববৃহৎটির ওজন ছিল ১০,৯৭০ গ্রাম। বড় বড় দ্রব্য ওজনের জন্য ব্রোঞ্জের খোল ব্যবহার করা হতো। কোনো জিনিসের দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য স্কেল ব্যবহার করা হতো। তাদের স্কেলের দৈর্ঘ্য ছিল ২০.৬২ ইঞ্চি।
সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনা Urban Planing of Indus-valley Civilization
সিন্ধু সভ্যতায় নগরের রাস্তাগুলো ছিল সোজা ও প্রশস্ত। রাস্তাগুলো ১০ ফুট থেকে ৩৫ ফুট পর্যন্ত চওড়া করে নির্মিত হয়েছিল। ছোট ছোট অসংখ্য গলিপথ ছিল- যা ছিল ৫ ফুট চওড়া। পানি সরবরাহের জন্য শাসকবৃন্দের উদ্যোগে রাস্তার ধারে কৃপ খনন করা হয়েছিল। নগর পরিকল্পনাবিদরা নগর জীবনকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মাটির নিচে সুরক্ষিত পয়ঃপ্রণালি গড়ে তুলেছিল। এ সভ্যতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সুশৃঙ্খল ও স্বাস্থ্যসম্মত নগর জীবন। নিয়ে নগর পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হলো-
ডাস্টবিনের ব্যবস্থা : নগর পরিখায় রাখার জন্য হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোতে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা ছিল। এ ডাস্টবিনগুলো চারকোনা ইটের তৈরি। ডাস্টবিনগুলো পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই কর্তৃপক্ষ এগুলোকে পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করত। তাছাড়া রাস্তার পাশে গণসৌচাগারের ব্যবস্থাও ছিল।
২. সড়ক বাতি : সিন্ধু অঞ্চলসমূহের এলাকাগুলোতে নাগরিক সুবিধা প্রদানের জন্য নগর কর্তৃপক্ষ রাজপথের ধারে সমান দূরত্বে ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করেছিল। এতে নগরবাসীদের চলাচলের সুবিধাসমূহ নগরে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই, প্রভৃতি অপরাধ কমে গিয়েছে ।
৩. পয়ঃপ্রণালি : সিন্ধু অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের সাহায্যে পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা পরিচালিত হতো। নগর জীবনকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। নগরের প্রতিটি বাড়ির পাশে ড্রেন ছিল। ড্রেনগুলো ছিল ইটের তৈরি এবং ঢাকনাযুক্ত। নদীর সাথে ড্রেনগুলো যুক্ত ছিল। বাড়ি থেকে পানি বের করার জন্য পোড়া ইটের নল ব্যবহার করা হতো। সময়মত ড্রেন ও নল পরিষ্কার করার ব্যবস্থা ছিল।
৪. পানি সরবরাহ : প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর বিভিন্ন অঞ্চলে পানি সরবরাহের জন্য কূপের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। শাসকগণ নগরবাসীদের জন্য রাস্তার ধারে কূপ খনন করত। কূপগুলোর চারপাশে ইটের উঁচু গাঁথুনি দেওয়া হতো। নগরবাসী উক্ত কূপসমূহের পানি গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করত।
৫. নগর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা : হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর নগরের পশ্চিম দিক ঘেঁষে দুর্গ প্রাচীর ছিল। দুর্গ প্রাচীরেই উভয় নগরীর শাসকবর্গের বাসস্থান ও প্রশাসন বিভাগীয় ভবন অবস্থিত ছিল। চারপাশে নজর রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছিল সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ ঘর। দুর্গের সীমানায় শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানের উপযোগী বা সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ করার জন্য বিশেষ এক ধরনের রাজপথ ছিল। হরপ্পা নগরীর দূর্গটি ৬.১০ মিটার থেকে ৭.৬২ মিটার চার স্তর বিশিষ্ট মাটির প্রলেপসহ পোড়া ইটের তৈরি ইমারত নির্মিত ছিল ।
৬. সাধারণ বাড়িঘর : সিন্ধু সভ্যতার প্রতিটি বাড়িঘরে তিনটি কক্ষ ও একটি চত্বর ছিল। এ সভ্যতার সাধারণ বাড়ির প্রবেশ দ্বার ছিল সড়কমুখী। তখনকার কক্ষগুলি এমনভাবে তৈরি ছিল যে, আলো বাতাস অতি সহজেই ঢুকতে পারত এবং আলো বাতাসের কখনো স্বল্পতা ছিল না। এখানে দু'একটি দ্বিতল বাড়িও দেখা গেছে। কাঠ, নলখাগড়া ও কাদামাটির প্লাস্টার দিয়ে এসব দ্বিতল বাড়ির ছাদ তৈরি করা হতো।
৭. রাস্তা : হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগর দুটির রাস্তা ছিল। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগর দুটি ছিল সোজা প্রশস্ত ও সরলরেখার মতো। উভয় নগরের রাস্তাগুলো একই মাপের ছিল। রাস্তাগুলো এমনভাবে নির্মাণ করার অন্যতম কারণ ছিল প্রবল বাতাসে ঘরগুলো ক্ষতিসাধন না হওয়া। প্রধান সড়ক ১০.৬৭ মিটার চওড়া এবং ছোট গলিপথে ১.৫২ মিটার রাস্তাগুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হতো যাতে উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমে পরস্পরকে ছেদ করে। সড়ক দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য রাস্তায় প্রান্তসীমায় বাড়িগুলো বৃত্তাকারে তৈরি করা হতো। রাস্তার ওপর বাড়ি তৈরি করতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। পরিশেষে বলা যায় যে, সিন্ধু সভ্যতায় নগরবাসীরা বিলাসবহুল, পরিচ্ছন্ন, পরিকল্পিত ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবন-যাপন করত। রোমানদের পূর্বে কোনে। প্রাচীন সভ্যতায় সিন্ধুবাসীদের পৌর সংস্থার ন্যায় উন্নত সংস্থা ছিল বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না । তাই এ প্রসঙ্গে Gordon Child উল্লেখ করেছেন যে, “সিন্ধু সভ্যতায় হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো, আমাদের নিকট একটি পদ্ধতি সম্মত পৌর সরকারের অস্তিত্বকে প্রকাশ করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]