সিন্ধু সভ্যতার স্থাপত্য সম্পর্কে লেখ। Write arts and sculpture of indus valley civilization.

হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর নগরবাসীদের চাহিদা পুরণের তাগিদেই এ সকল স্থাপত্যের সৃষ্টি হয়েছিল। তাই বলা হয়, স্থাপত্যের দিক থেকে সিন্ধু সভ্যতার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নিম্নে সিন্ধু সভ্যতার স্থাপত্যের আলোচনা করা হলো- ১. বৃহৎ প্রাসাদসমূহ : প্রাচীন হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগরীতে বেশ কিছু বৃহৎ প্রাসাদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে মহেঞ্জোদারোতে আবিষ্কৃত বৃহৎ হলঘরটি অন্যতম। এটি ২৩০২৭৮ ফুট জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা- সম্ভবত কোনো রাজ কর্মচারীর বাসস্থানে অথবা পুরোহিতের আবাসস্থল অথবা ধর্মীয় শিক্ষায়তন হিসেবে ইমারতটি নির্মিত হয়। এছাড়া হরপ্পা ও মহেগোদারোতে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পশ্চিম দিক ঘেঁষে দুর্গ প্রাচীর ছিল। দুর্গ প্রাচীরেই উভয় নগরীর শাসকবর্গের বাসস্থান ও প্রশাসন বিভাগীয় ভবন অবস্থিত ছিল।
২. শস্যাগার : হরপ্পার সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় ইমারত হচ্ছে বৃহদাকার শস্যাগার। সমগ্র শস্যাগারটিতে ৯,০০০ বর্গফুট স্থান ছিল, যেখানে সারা বছরের জন্য শস্য মজুদ করা হতো। শস্যাগারটির আয়তন ছিল ৪৫ মিটার x ১৭ মিটার। শস্য গুদামজাত করার জন্য সম্পূর্ণ শস্যাগারটিকে ৫০ ফুট x ২০ ফুট আয়তনের কক্ষে বিভক্ত করা হয়েছিল। শস্য সংরক্ষণের জন্য আলো-বাতাসের পর্যাপ্ততার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভেনটিলেশনের ব্যবস্থাও ছিল।
৩. স্নানাগার : মহেঞ্জোদারোতে বৃহৎ স্নানাগার ছিল। এ স্নানাগারটি ছিল সিন্ধু সভ্যতার স্থাপত্যের এক উল্লেখযোগ্য অবদান। বিশাল আকৃতির স্নানাগারটির আয়তন ছিল ৫০ মিটার x ৩২ মিটার এবং এর মধ্যে ১২ মিটার x ৭ মিটার x ২.৫ মিটার আয়তনের একটি সুইমিংপুল আবিষ্কৃত হয়েছিল। সুইমিংপুলটি সংযুক্ত ছিল একটি কূপের সাথে। স্নানাগারের চারপাশে বারান্দা ছিল। স্নানাগারের দেয়ালে ছিল চমৎকার ইট দিয়ে তৈরি এবং দেয়ালের গায়ে সুরকি ও বিটুমিন মিশিয়ে পানি নিরোধের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্নানাগারের বিদ্যমান বারান্দায় তিন দিকে ছিল স্নানার্থীদের কক্ষ ও গ্যালারি।
৪. সাধারণ বাড়ি-ঘর : সিন্ধু সভ্যতায় প্রায় বাড়িই ছিল দ্বিতল প্রকৃতির। কাঠ, নলখাগড়া ও কাদামাটির প্লাস্টার দিয়ে এসব দ্বিতল বাড়ির ছাদ তৈরি করা হতো। সিন্ধু সভ্যতায় সাধারণ বাড়ির প্রবেশ দ্বার ছিল সড়কমুখী। প্রতিটি গৃহে তিনটি কক্ষ ও একটি চতুর ছিল। কক্ষগুলো এমনভাবে তৈরি যে, আলো বাতাস অতি সহজেই ঢুকতে পারত এবং আলো-বাতাসের কখনো স্বল্পতা ছিল না। চত্বরটি ছিল উন্মুক্ত এবং এই উন্মুক্ত চত্বরের চারদিকে কুঠুরি নির্মিত হতো।
তাই পরিশেষে বলা যায় যে, স্থাপত্যের জন্যই বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে সিন্ধু সভ্যতা স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে আছে।
সিন্ধু সভ্যতার সামাজিক অবস্থা Social Condition of Indus-valley Civilization
বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, সিন্ধু সভ্যতায় নাগরিকদের সমাজ জীবন যতটা না ছিল আড়ম্বরপূর্ণ, তার চেয়ে বরং বেশি ছিল সুসংগঠিত। কিন্তু সঠিক প্রমাণ ছাড়া সমাজ জীবনের গভীরতা বিশ্লেষণ করা খুব কষ্টকর ব্যাপার। সিন্ধু সভ্যতার সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করা হলো-
১. সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস : সিন্ধু উপত্যকায় সমাজ বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। সংঘবদ্ধ কাঠামোর মধ্যে শান্তিপ্রিয় হয়েই সিন্ধু সভ্যতার জনসাধারণ বসবাস করত। বিভিন্ন বিভক্ত শ্রেণির মধ্যে ধনী পুরোহিত, মধ্যবিত্ত, বণিক, কারিগর ও শ্রমিক শ্রেণি। সমাজের অপর সমৃদ্ধশালী শ্রেণি ছিল মধ্যবিত্ত ও বণিক শ্রেণির। সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালীর ভূমিকা পালন করত ধনী পুরোহিত শ্রেণি। শ্রমিক ও কারিগররা পুরোহিত, মধ্যবিত্ত ও বণিক শ্রেণির ক্রীতদাস ।
২. সামাজিক শ্রেণি : খনন কার্যের ফলে মহেঞ্জোদারোতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে আমরা জানতে পারি যে, এখানকার বসবাসরত মানুষ ৪টি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। যথা-
ক. শিক্ষিত শ্রেণি : শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে ছিল পুরোহিত, চিকিৎসক, জ্যোতিষী এবং জাদুকর গোষ্ঠী। বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদান এবং নিয়ম-কানুন প্রণয়ন এ শ্রেণির দ্বারাই সম্পন্ন হতো। পরবর্তীতে বৈদিক সমাজে ব্রাহ্মণরা সেই কাজ করত। খ. যোদ্ধা শ্রেণি : যোদ্ধা শ্রেণির মধ্যে ছিল দুর্গের দ্বাররক্ষী, যুদ্ধের সৈনিকগণ। রাষ্ট্র ও জনসাধারণকে রক্ষা করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। এরা পরবর্তীতে ভারতীয় সমাজে ক্ষত্রিয় নামে পরিচিতি লাভ করে।
গ. ব্যবসায়ী ও কারিগর : ব্যবসায়ী ও কারিগর শ্রেণিতে বিভিন্ন পেশার লোক ছিল। যেমন- রাজমিস্ত্রি লিপিকার, শাখারী,
স্বর্ণকার, তাঁতি, ছুতার প্রভৃতি ।
ঘ. শ্রমজীবী শ্রেণি : শ্রমজীবী শ্রেণির মধ্যে ছিল গৃহকর্মে নিয়োজিত শ্রমিক, চর্মকার, জেলে, কুটির শিল্পের শ্রমিক, কৃষক, মজুরি প্রভৃতি। এই শ্রেণির মানুষ পরবর্তীতে বৈদিক যুগে চতুর্বর্ণ বা ভদ্রবর্ণে রূপান্তরিত হয়।
৩. রুচিশীল খাদ্য : সিন্ধুবাসীদের প্রধান খাদ্য ছিল গম। রমনীয় খাবারের প্রতি সিন্ধু সভ্যতার জনগণের বেশ ঝোঁক ছিল। তাদের অন্যান্য খাদ্যের তালিকায় যব, বার্লি, খেজুর, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও নানা জাতীয় ফলমূল ছিল উল্লেখযোগ্য । তারা গরু, ছাগল, শুকর, হাঁস, মুরগি, কচ্ছপ ইত্যাদির মাংস খেত। মাছ ছিল তাদের সাধারণ খাবার। অনুমান করা হয় যে, সিন্ধুবাসীরা বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফল ও মুরগির রুচিশীল মাংস তাদের দৈনন্দিন খাবার তালিকায় থাকত।
৪. শিকার ও খেলাধুলা : সিন্ধু সভ্যতার খনন কার্য হতে তামার তৈরি অনেক বড়শি পাওয়া গিয়েছে। প্রাচীন সিন্ধুর অধিবাসীরা অবকাশ যাপন ও চিত্ত বিনোদনের জন্য শিকারে বের হতো। সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের একটি শখ ছিল মাছ ধরা। খেলাধুলার মধ্যে পাশা ও দাবার প্রচলন ছিল বলে ধারণা করা হয়।
৫. ভাস্কর্য : সিন্ধু সভ্যতায় পাথর ব্রোঞ্জের তৈরি প্রচুর ভাস্কর্য পাওয়া গেছে। তাদের পাথুরে ভাস্কর্যগুলো হলো চুনা পাথরের
মূর্তি, শ্মশ্রুমণ্ডিত আবক্ষ মূর্তি, নৃত্যরত নারীমূর্তি, পণ্ডমূর্তি বা জীবজন্তুর মূর্তি ইত্যাদি ।
৬. বিলাস দ্রব্যের ব্যবহার : প্রাচীন সিন্ধু সমাজে বিলাস দ্রব্য হিসেবে সোনা, রুপা ও তামার গহনা এবং হাতির দাঁতের চিরুনির প্রচলন ছিল। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য দ্রব্যাদির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মৃৎপাত্র ও তৈজসপত্র চিনা-মাটির বাসন-কোসন, তামা ও রুপার তৈরির জিনিসপত্রের প্রচলন ছিল।
৭. শালীন পোশাক-পরিচ্ছদ ও অলংকারপ্রিয়তা : সিন্ধু সভ্যতায় পোশাক-পরিচ্ছদ ও অলংকারপ্রিয়তা ছিল বেশ ব্যাপক। দেহের উপরিভাগ এবং দেহের নিম্নভাগের জন্য আলাদা আলাদা পোশাক ব্যবহার করত। এ যুগে নারী ও পুরুষ উভয়ই অলংকার ব্যবহার করত। নারীদের জন্য প্রধানত স্বর্ণ, রৌপ্য ও মূল্যবান পাথর দ্বারা হার, বাজু, কান পাশা, নোলক ও অঙ্গুরি নির্মাণ করা হতো।
৮. শিল্পকলা : শিল্প ও চিত্রকর্মে সিন্ধু সভ্যতা বেশ অগ্রসর ছিল। সে সময়ে ষাঁড়, হাতি, বাঘ, গন্ডার, কুমির, হরিণ ইত্যাদির
ছবি সংবলিত অনেক সিলমোহর আবিষ্কৃত হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- সিন্ধু সভ্যতায় সুরম্য ও কারুকার্য খচিত অট্টালিকা। তাছাড়া সোনা, রুপার বিভিন্ন অলংকার তৈরিতেও তারা পারদর্শী ছিল।
সিন্ধু সভ্যতায় বিভিন্ন ধরনের ও বর্ণের মৃৎপাত্র তৈরি হতো। তাদের মৃৎপাত্রগুলো ছিল দুই প্রকারের যথা— ক. পারিবারিক তৈজসপত্র ও খ. সমাধিপত্ৰ ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]