সিন্ধু সভ্যতার অর্থনৈতিক- রাজনৈতিক ধর্মীয় অবস্থা Economical Political-Religious Condition of Indus-valley Civilization

সিন্ধু সভ্যতার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ছিল কৃষিজীবী এবং তারা গ্রামাঞ্চলে বসবাস করত। আবিষ্কৃত শস্যগুলো তাদের শক্ত কৃষি অর্থনীতির সাক্ষ্য বহন করে। সিন্ধু সভ্যতা শক্তিশালী আর্থিক বুনিয়াদের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। কৃষি এবং ব্যবসা ছিল এ সভ্যতার ভিত। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে সিন্ধু সভ্যতার কৃষি শিল্প ও বাণিজ্যের পরিচয় পাওয়া যায় ।
কৃষিজ পণ্য সামগ্রীর ক্রয়-বিক্রয় ও আদান-প্রদানের উপর ভিত্তি করে সিন্ধু সভ্যতায় একটি শক্তিশালী বণিক শ্রেণির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল।
সিন্ধু সভ্যতা খনন কার্যের ফলে প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষ এবং অন্যান্য উপাত্ত থেকে প্রাপ্ত নিদর্শন থেকে অর্থনৈতিক অবস্থায় যে চিত্র পাওয়া যায় তা নিয়ে আলোকপাত করা হলো-
১. কৃষি : সিন্ধু সভ্যতায় জনগণ প্রধানত ছিল কৃষিজীবী। কৃষি নির্ভর সিন্ধু সভ্যতার জনগোষ্ঠী গম, বার্লি, ধান, খেজুর ইত্যাদি উৎপাদন করত। কৃষি কাজে ষাঁড় ব্যবহার করা হতো। উর্বর উপত্যকায় যে ফসল উৎপাদন করা হতো তা থেকে অনুর্বর এলাকাতেও সরবরাহ করারও ব্যবস্থা ছিল ।
২. পশুপালন : সিন্ধু সভ্যতায় বিভিন্ন স্থান দখল করে আছে নানা প্রজাতির পশু। কুকুর, গরু, মেষ, ছাগল, হাতি, ইত্যাদি ছিল গৃহপালিত পশু। বন্য জীবজন্তুর মধ্যে বাঘ, বানর, ভল্লুক, বনবিড়াল ও গন্ডার প্রভৃতি প্রাণীর সাথে ভেড় সভ্যতার অধিবাসীরা পরিচিত ছিল।
৩. পরিমাপন ব্যবস্থা : সিন্ধু সভ্যতায় বিভিন্ন দ্রব্যাদির আদান-প্রদান ও ক্রয়-বিক্রয়ের সঠিক পরিমাপের জন্য হরপ্পা মহেঞ্জোদারো নগরের অধিবাসীরা পরিমাপ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছিল। তাদের উদ্ভাবিত পরিমাপ পদ্ধতিগুলো হলো- ক. ওজোন: সিন্ধু সভ্যতায় বাটখারাগুলো বিভিন্ন আকার, আকৃতির ছিল। কেননা, হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর অধিবাসীরা দ্রব্যাদির ওজন পরিমাপের জন্য বাটখারার ব্যবহার করত। সবচেয়ে ছোট বাটখারার ওজন ছিল ০.৮৭ গ্রাম, আর সবচেয়ে বড় বাটখারার ওজন ছিল ১০.৯৭ গ্রাম। বাটখারাগুলো তৈরি করা হতো শক্ত পাথর দিয়ে। ব্যবহারের সুবিধার্থে এগুলোর আকার আকৃতিতে কিছুটা বৈচিত্র্য ছিল। কোনোটির আকার ছিল চৌকোনা, কোনোটা ত্রিকোনা, আবার কোনোটি গোলাকার এগুলো খুব সাবধানে মসৃণ করা হতো। খুব ভারী কিছু ওজনের জন্য কাঠের খঙ্গে ব্যবহার ছিল এবং বড় দ্রব্যাদি মাপার জন্য স্কেলের ব্যবহার হতো।
খ. পরিমাপ : সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা পরিমাপের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক ছিল। তারা দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য স্কেল ব্যবহার করত। তাদের স্কেলের দৈর্ঘ্য ছিল ০.৫২ মিটার, যা আধুনিক স্কেলের ২০.২৬ ইঞ্চির সমান পরিমাণ দণ্ডে নির্দিষ্ট ইঞ্চির ঘর কাটা থাকত।
৪. শস্যাগার : শস্যাগারটি হরপ্পার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। অর্থাৎ হরপ্পা সভ্যতার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপত্য হলো শাস্যাগার। শস্যাগারটির আয়তন ছিল ৪৫ মিটার × ১৭ মিটার। শস্য গুদামজাত করার জন্য সম্পূর্ণ শস্যাগারটিকে ৫০ ফুট X ২০ ফুট আয়তনের কক্ষে বিভক্ত করা হয়েছিল। শস্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভেনটিলেশনের ব্যবস্থাও ছিল।
৫. শিল্প : সিন্ধু সভ্যতার কারিগরগণ বিভিন্ন দ্রব্য প্রস্তুত করতে পারত। তামা ও ব্রোঞ্জের সাহায্যে প্রস্তুত করা হতো অস্ত্র ও বিভিন্ন ব্যবহার উপযোগী দ্রব্যাদি। এ সভ্যতায় লোহার ব্যবহারের প্রচলন ছিল না। এ সময় বয়ন শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। তারা তুলা ও পশম দিয়ে কাপড় তৈরি করতে পারত। বিভিন্ন নির্মাণ কার্যে কাঁচা এবং আগুনে পোড়া উভয় ধরনের ইটই ব্যবহার করা হতো। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোতে অনেক ইটের ভাটা গড়ে উঠেছিল বলে ধারণা করা হয়। এসব ছাড়াও এ সভ্যতায় হাতির দাঁতের চিরুনি, হাতির দাঁতের সুচ, কাঠের হাতল বিশিষ্ট তামা ও ব্রোঞ্জের আয়না, মৃৎপাত্র, সিল প্রভৃতি তৈরির ক্ষুদ্র শিল্পও গড়ে উঠেছিল।
৬. ব্যবসা-বাণিজ্য : সিন্ধু সভ্যতার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তা হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। সিন্ধুর তৎকালীন অধিবাসীরা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপনে সচেষ্ট ছিল বলে মনে করা হয়। এখানে অসংখ্য কারিগররা পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী প্রস্তুত করত। শুধু ভারতেই নয়, অন্যান্য দেশের চাহিদাও মেটাতে সক্ষম হয়েছিল । সিন্ধু সভ্যতার নাগরিকদের তৈরি দ্রব্য সামগ্রি বাহিরের দেশ গ্রহণ করেছে। এ কারণেই বহির্দেশের সাথে বাণিজ্যিক সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিভিন্ন আবিষ্কৃত তথ্যাদিতে যেসব আভাস পাওয়া যায় তা নিম্নরূপ—
ক. কড়ি, মালার গুটিকা, সিল ইত্যাদি পণ্যগুলোর গড়ন ও ধাচ অনুযায়ী এক দেশের পণ্য অন্য দেশে পাওয়া গেছে। মেসোপটেমিয়ায় পাওয়া গেছে সিন্ধু অঞ্চলের উক্ত পণ্য। অপরপক্ষে সিন্ধু অঞ্চলেও মেসোপটেমিয়ার বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া গেছে।
খ. সুমেরীয় অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে হরপ্পার সিলের ছাপ দেওয়া এক টুকরা কাপড়ও আবিষ্কৃত হয়েছে। এতে অনুমান করা যায় অঞ্চল দুটিতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল।
গ. আক্কড়ে দেশের পুঁথিতে যে, “মেলুহহা” দেশে বণিকদের পাড়ি জমাবার উল্লেখ রয়েছে তা হয়তো মহেঞ্জোদারোর কথাই হয়ে থাকবে। সিন্ধু অঞ্চলের তৎকালীন অধিবাসীদের জীবন ও জীবিকা সম্পর্কে সঠিক করে কিছু বলা না গেলেও মোটামুটি বলা যায় যে, তারা কৃষি কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশা অবলম্বনে যেমন করে থেকেছে অনুরূপ ব্যবসায়-বাণিজ্যেও নিজেদের বঞ্চিত করে রাখতে চায়নি।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সিন্ধু সভ্যতা শক্ত অর্থনৈতিক বুনিয়াদের ওপর দণ্ডায়মান ছিল।
সিন্ধু সভ্যতার রাজনৈতিক অবস্থা Political Condition of Indus-valley Civilization
সিন্ধু সভ্যতার মূল কেন্দ্র হরপ্পা ও মহেনজোদারোর নগর পরিকল্পনা, ঘরবাড়ি ও অট্টালিকা নির্মাণ কৌশলের মধ্যে মিল লক্ষ করে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, উভয় এলাকাতেই এক শক্তিশালী কেন্দ্রীয় প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। অনেকে আবার ঐ শহর দুটিকে দুটি পৃথক রাজধানী বলে ধারণা করেন। সিন্ধু সভ্যতায় সুবৃহৎ প্রাসাদ, অট্টালিকা, দুর্গ, শ্য হাখার জন্য শস্যাগার ইত্যাদি নিদর্শন থেকে সিন্ধু সভ্যতার রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সিন্ধু সভ্যতার রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে নিচে আলোকপাত করা হলো--
১. দুর্গ নগরী : হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগরীর পশ্চিম দিক ঘেঁষে দুর্গ প্রাচীর ছিল। উভয় নগরীর বহিরাক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য উভয় নগরীতেই পুরু ও উঁচু প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল। দুর্গ প্রাচীরেই উভয় নগরীর শাসকবর্গের বাসস্থান ও প্রশাসন বিভাগীয় ভবন অবস্থিত ছিল। হরপ্পা নগরীর দুর্গটি ৬.১০ মিটার থেকে ৭.৬২ মিটার চার স্তরবিশিষ্ট মাটির প্রলেপসহ পোড়া ইটের তৈরি ইমারত নির্মিত ছিল। দুর্গের বাইরের অংশে ১.২০ মিটার পুরু পোড়ানো ইটের আরেকটি অতিরিক্ত দেয়াল ছিল । দুর্গের সীমানায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানের উপযোগী বা সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ করার জন্য বিশেষ এক ধরনের রাজপথ ছিল। দুর্গের চারপাশে নজর রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছিল সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ ঘর। এগুলো সিন্ধু সভ্যতার জনগণের রাজনৈতিক জীবনের ধারণাকে সম্প্রসারিত করেছে বলে ইতিহাসবিদগণ মত প্রকাশ করেছেন।
২. উন্নত নগরকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা : হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগরের অভ্যন্তরে বড় বড় দালান, স্নানাগার, শস্যাগার, ল্যাম্পপোস্ট, সুপ্রশস্ত ও পরিকল্পিত রাস্তা প্রভৃতিই সিন্ধু সভ্যতার জনগণের উন্নত রাজনৈতিক জীবনের সুস্পষ্ট প্রমাণ বলে ইতিহাসবিদরা মনে করেছেন। এ সভ্যতা খনন কার্যের ফলে আবিষ্কৃত হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর নগর বিন্যাস দেখে এটি অতিসহজেই বোঝা যায় যে, দুটি শহরের নকশা একই ধরনের এবং শক্তিশালী নগর শাসকের অধীনে নগর দুটি পরিচালিত হয়েছিল। ৩. কেন্দ্রীয় শাসন : প্রখ্যাত ঐতিহাসিক এস.কে. সরস্বতী উল্লেখ করেন যে, “সিন্ধু উপত্যাকার নগরগুলোর সংগঠন দেখে মনে হয় যে, সেখানে একই ধরনের শক্তিশালী ও কেন্দ্রীভূত প্রশাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল এবং প্রশাসন জনগণের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করত। সুতরাং বলা যায়, সিন্ধু সভ্যতার রাজনৈতিক জীবনের মূলভিত্তি ছিল শালী কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা । ৪. ধর্মাশ্রয়ী শাসন ব্যবস্থা : বিভিন্ন ঐতিহাসিকেরা মন্তব্য করেছেন যে, সিন্ধু সভ্যতার শাসন ব্যবস্থা ছিল মূলত ধর্মকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক হুইলার উল্লেখ করেছেন যে, প্রাচীন সুমের ও আক্কাদে যেমন- রাজার মাধ্যমে দেবতারা রাজ্য শাসন করতেন বলে সে যুগের লোকেরা বিশ্বাস করত, তেমনি পুরোহিতদের মাধ্যমে প্পার দেবতারা নগর শাসন করতেন।
৫. শাসকশ্রেণি : সিন্ধু সভ্যতায় রাষ্ট্রীয় আধিপত্য পুরোহিত শ্রেণির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। অর্থাৎ সামাজিক শ্রেণির বিভাজনে শিক্ষিত শ্রেণি সমাজের উঁচুস্তরে আসীন থাকে এবং এ স্তরের নেতৃত্বে দেখা যায় পুরোহিতদেরকে। তাই বলা হয়, পুরোহিতরা একদিকে যেমন ধর্মীয় নেতা ছিলেন আবার অন্যদিকে সমাজের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকেও পুরোহিতরাই পরিচালনা করত। পুরোহিতরা বাজার প্রতিনিধি হিসেবে শাসনকার্য পরিচালনা করত।
সিন্ধু সভ্যতার ধর্মীয় অবস্থা Religious Condition of Indus-valley civilization
সিন্ধু সভ্যতায় মানুষদের ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে কোনো কিছু নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কেননা, এখানে কোনো ধর্ম মন্দির বা উপাসনালয় আবিষ্কৃত হয়নি। তবে আবিষ্কৃত অসংখ্য নারীমূর্তি ও পশু বেষ্টিত পুরুষ মূর্তি দেখে মনে হয় যে, এখানকার মানুষ জগৎ মাতা দেবী এবং জগৎ পিতা পশুপতি শিবের পূজা করত। বিভিন্ন পণ্ডিতদের মতে, অধিবাসীরা শুভ ও অশুভ দুটো শক্তিকে বিশ্বাস করত। মৃতদের সমাহিত করত এবং তাতে সংযুক্ত করত বিভিন্ন ব্যবহার্য দ্রব্যাদি- যা উক্ত বসতি তাদের জীবদ্দশায় ব্যবহার করেছেন। অধিবাসীরা হয়তো পরজন্মেরও বিশ্বাস করে থাকবে। সমাহিত করা ছাড়াও মৃতদেহ পশু পাখির ভোগে
নিবেদিত হতো। এছাড়াও সিন্ধু অধিবাসীদের শিল্পকলা ও ভাস্কর্য থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে ও ধর্মীয় দর্শনের একটা ধারণা পাওয় যায়। সিন্ধু সভ্যতার ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো-
১. ধর্ম বিশ্বাস : সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যের ফলে প্রাপ্ত বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি থেকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা প্রাকৃতিক শক্তিকে দেব-দেবী জ্ঞানে পূজা অর্চনা করত।
২. পরলোকে বিশ্বাস : সিন্ধু সভ্যতার হরপ্পায় একটি বিশাল সমাধিক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, যেখানে মৃত মানুষের ব্যবহার জিনিসপত্র, দ্রব্যাদি ও অলংকারাদি পাওয়া গিয়েছে। এ সভ্যতার বিভিন্ন খনন কার্যে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে দেখা যায় যে, সিন্ধুবাসীদের মৃত্যুর পরে সমাহিত করার প্রবণতা দেখা যায় ।
৩. ধর্মাশ্রয়ী : সিন্ধু সভ্যতায় শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে ইতিহাসবিদ হুইলার উল্লেখ করেছেন যে, প্রাচীন সুমের ও আব্বাদে যেমন- রাজার মাধ্যমে দেবতারা রাজ্য শাসন করতেন বলে সে যুগের লোকেরা বিশ্বাস করত, তেমনি পুরোহিতদের মাধ্যমে হরপ্পায় দেবতারা নগর শাসন করতেন। তাই পুরোহিত প্রাধান্য ও রাজার প্রতি স্মৃতি হিসেবে পুরোহিত এসব দেখে ইতিহাসবিদরা মন্তব্য করেছেন যে, সিন্ধু সভ্যতার শাসনব্যবস্থা ছিল ধর্মকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা ।
৪. মাতৃকাদেবী ও অন্যান্য মূর্তির পূজা : সিন্ধু সভ্যতায় সবচেয়ে নারী মূর্তি বেশি ছিল। তাই বলা হয়ে থাকে যে, সিন্ধু অধিবাসীদের মধ্যে মাতৃকাদেবীর পূজাই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিল। এছাড়াও সিন্ধুবাসীদের মধ্যে পশুর পূজা পরিচালিত হতো। নিচে মাতৃকাদেবীর উল্লেখযোগ্য মূর্তিগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
আবক্ষ মূর্তি : আবক্ষ মূর্তিগুলো দেখতে অনেক নান্দনিক ভাস্কর্য তৈরি করা নিপুণ হাতের দক্ষতায় দাড়ি, চোখ, কান, নাক দিয়ে এসব মূর্তি তৈরি করেছিল। এ মূর্তিগুলো দেখতে নরম প্রকৃতির ।
মানুষের মূর্তি : মাংসল চিবুক, লম্বা নাক এবং দাড়ি গোঁফহীন মুখমণ্ডল সমৃদ্ধ পোড়ামাটির মূর্তিটি সিন্ধু সভ্যতার ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে স্বাতন্ত্রিকতার নিদর্শন রয়েছে। তাই মূর্তিটিকে অলংকার পরিয়ে শিল্প নিপুণতার পরিচয় দিয়েছিল সিন্ধুসভ্যতার ভাস্কর্যের ধারক ও বাহকগণ।
পশুমূর্তি : সিন্ধু সভ্যতার ইতিহাসে পশু একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। উল্লেখযোগ্য পশু মূর্তিগুলো হলো- ষাঁড়, হাতি, বাঘ, হরিণ, ছাগল, গন্ডার, মহিষ ও কুমিরের মূর্তিগুলো উল্লেখযোগ্য। পশু মূর্তিগুলো সবই প্রায় ব্রোঞ্জের তৈরি ছিল। মহেঞ্জোদারোতেও বেশ কিছু পশু মূর্তি পাওয়া গিয়েছে।
* চুনাপাথরের মূর্তি : চুনাপাথরের মূর্তিটি হচ্ছে সমৃদ্ধ খাজ কাটা কান ও নিপুণতার ছাপ দৃষ্ট চোখ দিয়ে মূর্তিটিকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ পাথর দ্বারা তৈরি মূর্তিটি নিখুঁতভাবে তৈরিকৃত মাথা ও ঢেউ খেলানো চুল সমৃদ্ধ মূর্তি। * নৃত্যরত মেয়ের মূর্তি : সিন্ধু সভ্যতার নৃত্যরত মূর্তিটির চোখ, নাক, কোঁকড়ানো চুল এবং নাচের ভঙ্গিমায় অলংকার পরানো ছিল। এ মূর্তিগুলো ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি ছিল। পরিহিত অলংকারগুলোর মধ্যে গলার হার, পায়ে মল এবং হাতে বালা পরানো ছিল। সুতরাং সিন্ধু সভ্যতার প্রাপ্ত মূর্তিগুলোর মধ্যে মেয়ে মূর্তির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি ছিল ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]