প্রায় দশ লক্ষ বছর পূর্ব থেকে পৃথিবীতে মানুষ বসবাস করে আসছে বলে অনুমান করা হলেও আমরা মাত্র সাত হাজার বছরের ইতিহাস জানতে পেরেছি। এর পূর্বের সময়টিকে অনক্ষর বা প্রাগৈতিহাসিককাল বলেই ধরা হয়। এ সভ্যতায় কৃষির প্রয়োজনে নবোপলীয় যুগের মানবরা নদীর তীরবর্তী উর্বর অঞ্চলের বসতি গড়ে তোলে। পরবর্তীতে তারা জীবনযাত্রার বিভিন্ন প্রয়োজনের তাগিদে লিখন পদ্ধতি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে সভ্যতায় পদার্পণ করে। নিম্নে সিন্ধু সভ্যতার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো— ১. ভৌগোলিক অবস্থা : হিমালয় পর্বতে উৎপত্তি হয়ে ইরাবতীর ধারে হরপ্পা বর্তমানে পাকিস্তানের লাহোর থেকে একশো মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে পাঞ্জাবের মাল্টো গোমারী জেলায় ও সিন্ধু প্রদেশে সিন্ধু নগরের ধারে মহেঞ্জোদারো বর্তমান করাচি থেকে দুশত মাইল উত্তরে লারকানা জেলায় প্রায় ৪০০ মাইল দুটি অঞ্চলকে নিয়ে প্রায় ১,৫০০ মাইল জুড়ে তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছে। অঞ্চল তিনটি হচ্ছে মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা ও চানহুন্দারো ।
2. সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল প্রায় ২,৫০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দের পূর্বে কয়েকশো বছর ব্যাপী সিন্ধু সভ্যতা ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে। এ সভ্যতার সর্বাধিক সমৃদ্ধির ফলে ছিল ২,৫০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ থেকে ২,৩০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ পর্যন্ত। অপরপক্ষে ২,৩০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দের পরে ক্রমশ সিন্ধু সভ্যতার অবক্ষয় হতে থাকে। সর্বশেষ ১,৫০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দের মধ্যেই বহিরাগত আর্যদের আক্রমণে সিন্ধু সভ্যতা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
৩. নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা : সিন্ধু সভ্যতার নগরগুলো ছিল সুষ্ঠু পরিকল্পনা মাফিক এবং অনেক দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। নগরের রাস্তাগুলো ছিল বেশ প্রশস্ত ও পরিকল্পিতভাবে তৈরি। রাস্তায় ল্যাম্প পোস্টের ব্যবস্থা ছিল। সেখানে একটি পৌরসভার অস্তিত্ব ছিল যা একটি উন্নতমানের প্রশাসন, রুচিবোধ, সাংস্কৃতিক তথা নগর সমাজজীবনের ইঙ্গিত বহন করে। নগরের ভবনগুলো ছিল পোড়ানো শক্ত ইটের তৈরি। প্রত্যেকটি আবাসিক বাড়িতে প্রশস্ত বারান্দা, দরজা, জানালা, কূপ, নর্দমা ও গোসলখানায় অপূর্ব সমাবেশ ঘটেছিল। নগরের অন্যতম আকর্ষণীয় বস্তু হচ্ছে ১৮০ X ১৮০ ফুট আয়তনের গ্রেট বার্থ। এর অভ্যন্তরে একটি সুইমিংপুল ছিল- যার দৈর্ঘ্য ছিল ৩৯ ফুট, প্রস্থ ২৩ ফুট এবং গভীরতা ৮ ফুট। এছাড়াও মহেঞ্জোদারো নগর কেন্দ্রে বড় একটি শস্যাগার ছিল। শস্যাগার সংলগ্ন কক্ষগুলো দেখলে মনে হয় এখানে শ্রমিক বা ক্রীতদাসরা বাস করত।
৪. ব্রোঞ্জ যুগীয় সিন্ধু সভ্যতা : সিন্ধু সভ্যতার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ সভ্যতা ছিল মূলত ব্রোঞ্জ যুগীয়। এ সভ্যতার অধিবাসীদের ব্যবহৃত নিত্য প্রয়োজনীয় হাতিয়ার অস্ত্রশস্ত্র ছিল মূলত ব্রোঞ্জ দ্বারা তৈরি। তারা লোহার ব্যবহার জানত না । ৫. সিন্ধু সভ্যতার বিস্তৃতি : বিশাল এলাকা জুড়ে সিন্ধু সভ্যতার বিস্তার এ সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এসব এলাকাগুলোর মধ্যে সিন্ধু, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান, রাজপুতনা, গুজরাট এবং কাশ্মীর ও উত্তর প্রদেশের অংশবিশেষ জুড়ে সিন্ধু সভ্যতা বিস্তৃত ছিল।
৬. উন্নত রাস্তাঘাট : মহেঞ্জোদারোতে ৯ ফুট হতে ৩৪ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত রাস্তা আবিষ্কার হয়েছে। সিন্ধু সভ্যতার যুগে শহরের রাস্তাঘাটগুলো ছিল পাকা, সোজা ও চওড়া। এ সভ্যতায় রাস্তার দু'পাশে সারিবদ্ধভাবে নির্মিত হয়েছিল ইটের তৈরি দালান।
৭. সিল মোহর : প্রায় ২,০০০ সিল মোহর এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে, যাদের অধিকাংশের গায়ে ছোট ছোট লিপি খোদাই করা ছিল । ৮. চিত্রলিপি : ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সিন্ধু সভ্যতার ২,৫০০টি সিলে চিত্রধর্মী লিপি পাওয়া গেছে। কিন্তু উক্ত লিপির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গবেষকদের মতে, সিন্ধু সভ্যতার প্রথম দিকে লেখার জন্য ৩৬০টি চিহ্ন ব্যবহার করা হতো। শেষ হরপ্পা যুগে (২৭০ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দ) চিহ্ন সংখ্যা কমে কুড়িটিতে দাঁড়ায়। শ্রী এস.আর. রাও (Shri SR. Rao) এই লিপির কিছুটা পাঠোদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন আধুনিককালে। তিনি ৩৬০টি শব্দ থেকে ৩০টি শব্দ বের করে দেখিয়েছেন যে, সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসী এক বড় অংশ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং অপর অংশ ভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীভুক্ত ছিল । সিন্ধু সভ্যতার প্রথমদিকে লেখার জন্য ৩৬০টি চিহ্ন ব্যবহার করা হতো এটি গবেষণার প্রথম দিকে লেখার জন্য ৩৬০টি চিহ্ন ব্যবহার করা হতো, এটি গবেষণার প্রথম পর্যায়ের ধারণা করা হতো ।
৯. শস্যাগার : সিন্ধু সভ্যতার হরপ্পা দুর্গের উত্তরে প্রতিষ্ঠিত বিরাট শস্যাগার ছিল। আয়তন (১৬৯ × ১৩৫) বর্গফুট। পাথরের ওপর তৈরি উঁচু মঞ্চ থেকে বোঝা যায় যে, এখানে শস্য মাড়াই করা হতো। ঐতিহাসিক বাসাম একে রাষ্ট্রীয় গুদাম ঘরের সাথে তুলনা করেছেন। ঐতিহাসিক হুইলার বলেছেন, কি পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য কি বিস্ময়কর উৎকর্ষ সিন্ধু সভ্যতায় ৷ শস্যাগারগুলোর সাথে তুলনীয় কোনো শস্যাগার খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর পূর্বে পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায়নি ।
১০. সিন্ধু সভ্যতার জাতি : এ সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর লোক একত্রে মিলিত হয়ে এ সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। যেমন— অস্ট্রিক, ভূমধ্যসাগরীয়, মঙ্গোলীয় ও আলপাইন জাতির মানুষ এখানে বাস করত। তাদের মধ্যে দ্রাবিড় ও সুমেরীয় জাতিগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য বেশি মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়।
১১. ভাস্কর্য : সিন্ধু সভ্যতায় পাথর ও ব্রোঞ্জের তৈরি প্রচুর ভাস্কর্য পাওয়া গেছে। তাদের পাথুরে ভাস্কর্যগুলো হলো চুনা পাথরের
মূর্তি, শ্মশ্রুমণ্ডিত আবক্ষ মূর্তি, নৃত্যরত নারীমূর্তি, পণ্ডমূর্তি বা জীবজন্তুর মূর্তি ইত্যাদি।
১২. জ্ঞান-বিজ্ঞান : সিন্ধু সভ্যতার মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানে কতটুকু পারদর্শিতা অর্জন করেছিল সেটি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ প্রাপ্তির অভ বলা কঠিন। তবে পণ্ডিতেরা মনে করেন যে, তারা পাটিগণিত, জ্যামিতি, ধাতুবিদ্যা ও রসায়ন বিজ্ঞানে আনার্জন করেছিল। ওজনের বাটখারা তাদের গাণিতিক জ্ঞানের পরিচায়ক। নগর পরিকল্পনা, রাস্তা, ট্রেন, বহুতল অট্টালিকা, নির্দিষ্ট ব্যবস লাইট পোস্ট ইত্যাদি তাদের জ্যামিতিক জ্ঞানের প্রমাণ দেয়। বোধ ও ইলেক্ট্রাম (স্বর্ণ-রৌপ্যের মিশ্রণে তৈরি তৈ দক্ষতা তাদের ধাতু শিল্পে অ্যাপতির পরিচায়ক। বিটুমিনের ব্যবহার এবং স্বর্ণ-রৌপ্যের সকল পুতি তৈরির কৌশল আয়ত সিন্ধুবাসীর রসায়ন বিজ্ঞানে ব্যুৎপত্তি অর্জনের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়।
১৩. আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। ঐতিহাসিকেরা মনে করেন যে, যথেষ্ট কেন্দ্রীভূত আমলাতান্ত্রিক সরকারের মাধ্যমে নগর দুটিতে শাসন কাজ পরিচালনা করা হতো এবং নিঃসন্দেহে একজন পুরোহিত রাজ আমলাতান্ত্রিক সরকারের প্রধান ছি
বলে অনুমান করা হয়।
১৪. ধর্মীয় বিশ্বাস : সিন্ধু সভ্যতার প্রকৃত ধর্মীয় অবস্থা ধর্ম দর্শন সম্পর্কে সঠিক তথ্য তেমন পাওয়া যায় না। তবে প্রত্নতাত্ত্বি গবেষণায় প্রাপ্ত নিদর্শন থেকে অনুমান করা হয় যে, সিন্ধু সভ্যতার ধর্মীয় বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। খনন কার্যের ফলে অসংখ্য টেরাকোটায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মূর্তির অধিকাংশ ছিল মহিলা। এ থেকে ধারণা করা হয় যে, সিন্ধুবাসীরা মাতৃপুজা করত প্রাপ্ত সিলগুলোর উপর গবেষণা চালিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ পুরুষের দেবতা শিবের অস্তিত্ব খুঁজে পান। বাথ, মহিষ, পরিবেষ্টিত উলঙ্গ ত্রিমুখী, শিংধারী, ধ্যানরত পুরুষ দেবতার যে মূর্তি পাওয়া গেছে তা দেখে মনে হয় যে, এগুলোকে তারা পূজা করত। এছাড়াও সিন্ধু সভ্যতায় বৃক্ষ ও পাখি পূজাও প্রচলিত ছিল।
১৫. খাদ্য : গম ছিল সিন্ধুবাসীর প্রধান খাদ্য। তারা ছাগল, গরু, শূকর, হাঁস, মুরগি, কচ্ছপ ইত্যাদির মাংস খেত। মাছ ছিল তাদের সাধারণ খাবার। খেজুর ও যব ছিল তাদের প্রিয় খাবার। অনুমান করা হয় যে, সিন্ধুবাসীরা বিভিন্ন ধরনের সর্ব
ফল খেত ৷
১৬. শিল্পকলা : শিল্প ও চিত্রকর্মে সিন্ধু সভ্যতা বেশ অগ্রসর ছিল। সে সময় ষাঁড়, হাতি, বাঘ, গন্ডার, কুমির, হরিণ ইত্যাদির ছবি সংবলিত অনেক সিল মোহর আবিষ্কৃত হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সিন্ধু সভ্যতার সুরম্য কারুকার্যখচিত অট্টালিকা। তাছাড়া সোনা রুপার বিভিন্ন অলংকার তৈরিতেও তারা পারদর্শী ছিল। সিন্ধু সভ্যতার বিভিন্ন ধরনের ও বর্ণের মৃৎপাত্র তৈরি হতো। তাদের মৃৎপাত্রগুলো ছিল দুই প্রকারের। যথা- ক. পারিবারিক তৈজসপত্র, খ. সমাধিপত্র। ১৭. পরিমাপ পদ্ধতি : দ্রব্যাদি সঠিকভাবে ওজনের জন্য সিন্ধুবাসীরা বিভিন্ন ধরনের বাটখারা ব্যবহার করত। সবচেয়ে বড় বাটখারার ওজন ছিল ১০.৭০ গ্রাম এবং ক্ষুদ্রতম বাটখারার ওজন ছিল ০.৮৭ গ্রাম। বড় বাটখারাগুলো ছিল গোল এব কিছুটা কৌণিক। ছোট বাটখারা ছিল চতুষ্কোণাকৃতির। খুব ভারী জিনিস ওজন করার জন্য তারা কাঠ ব্যবহার করত। কা খণ্ডের এক প্রান্তে দ্রব্য বেঁধে ওজন করা হতো। কোনো জিনিসের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করার জন্য সিন্ধুবাসীরা স্কেল ব্যবহার করত। তাদের স্কেলের দৈর্ঘ্য ছিল আধুনিক স্কেলের ২০.২৬ ইঞ্চির সমান। পরিমাপ স্কেলের নির্দিষ্ট ইঞ্চির ঘর কাটা থাকত। এ ধরনের স্কেল হরপ্পাতে পাওয়া গেছে ।
১৮. কৃষি ও ব্যবসা কেন্দ্রিক অর্থনীতি : সিন্ধু সভ্যতার কারিগরগণ বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী তৈরি করত, যার চাহিদা ভারতের উ প্রাপ্ত, রাজস্থান, গুজরাট প্রভৃতি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সিন্ধু সভ্যতার গৌরবম দিনগুলোতে কাথিযাওয়া ও দাক্ষিণাত্য থেকে কয়েক প্রকার পাথর এবং ঝিনুক, পারস্য ও আফগানিস্তান থেকে রূপ পারস্য থেকে তামা, মধ্য এশিয়া থেকে জেড পাথর আনা হতো। তিলমুন দ্বীপ ও মেসোপটেমীয়ায় বন্দরগুলো দিয়ে ময়ূ গজদণ্ড, মূসা ও সিন্ধু নামে পরিচিত সুতির কাপড় রপ্তানি করা হতো আর ঐ জায়গা থেকে রুপা, সুগন্ধি দ্রব্য, কার্পাস মূল্যবান পাথর ও অন্যান্য জিনিস আমদানি করা হতো।
১৯. শাসনব্যবস্থা : প্রত্নতাত্ত্বিকগণ মনে করেন যে, যথেষ্ট কেন্দ্রীভূত আমলাতান্ত্রিক সরকারের মাধ্যমে সিন্ধু উপত্যকায় নগ দুটিতে শাসন কাজ পরিচালনা করা হতো এবং নিঃসন্দেহে একজন পুরোহিত রাজ আমলাতান্ত্রিক সরকারের প্রধান ছিলেন
অবস্থা : সিন্ধু সভ্যতার মূল কেন্দ্র হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর নগর পরিকল্পনা, ঘরবাড়ি ও অট্টালিকা নিৰ্মাণ কৌশলের মধ্যে মিল লক্ষ করে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, উভয় এলাকাতেই এক শক্তিশালী কেন্দ্রীয় প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। অনেকে আবার ঐ শহর দুটিকে দুটি পৃথক রাজধানী বলে ধারণা করেন। সম্ভবত সিন্ধু সভ্যতার প্রশাসনের শীর্ষে ছিলেন পুরোহিত রাজা। হুইলার বলেন, প্রাচীন সুমের ও আব্বাদে যেমন রাজার মাধ্যমে দেবতারা রাজ্য শাসন করতেন বলে সে যুগের লোকেরা বিশ্বাস করত, তেমনি পুরোহিতদের হরপ্পার দেবতার নগর শাসন করতেন। শ্রেণিবিভক্ত সমাজ : প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজের ফলে মহেঞ্জোদারোতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে আমরা জানতে পারি যে, এখানে বসবাসরত মানুষ ৪টি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। যথা-
:
ক. শিক্ষিত শ্রেণি : পুরোহিত, চিকিৎসক, জ্যোতিষী ও জাদুকর গোষ্ঠী ছিল শিক্ষিত শ্রেণি। বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদান ও
নিয়ম-কানুন প্রণয়ন ও শ্রেণির দ্বারাই সম্পন্ন হতো। পরবর্তীতে বৈদিক সমাজে ব্রাহ্মণরা সেই কাজ করত।
খ. ব্যবসায়ী ও কারিগর : ব্যবসায়ী ও কারিগর শ্রেণিতে বিভিন্ন পেশার লোক ছিল। যেমন- রাজমিস্ত্রি, লিপিকর, শাঁখারি,
স্বর্ণকার, তাঁতি, ছুতার প্রভৃতি।
শ্রমজীবী শ্রেণি : শ্রমিক, চর্মকার, জেলে, কুটির শিল্পের শ্রমিক, কৃষক প্রভৃতি ছিল মূলত শ্রমজীবী শ্রেণির মধ্যে।
ঘ. যোদ্ধা : রাষ্ট্র ও জনসাধারণকে রক্ষা করাই ছিল যোদ্ধা শ্রেণির প্রধান কাজ। যোদ্ধা শ্রেণির মধ্যে ছিল দুর্গের দ্বার রক্ষী,
যুদ্ধের সৈনিকগণ ইত্যাদি। এরাই আবার পরবর্তীতে বৈদিক যুগে চতুর্থ বা শুদ্র বর্ণে রূপান্তরিত হয়।
২২. বৃহৎ প্রাসাদসমূহ : প্রাচীন হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোতে বেশ কিছু বৃহৎ প্রাসাদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে . মহেঞ্জোদারোতে আবিষ্কৃত বৃহৎ হলঘরটি অন্যতম। এটি ২৩০ × ৭৮ ফুট জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছিল। বিশেষজ্ঞগণের ধারণা সম্ভবত কোনো রাজকর্মচারীর বাসস্থান অথবা পুরোহিতের আবাসস্থল অথবা ধর্মীয় শিক্ষায়তন হিসেবে এ ইমারতটি নির্মিত হয়। মহেঞ্জোদারোতে বৃহৎ স্নানাগার ছিল। এ স্নানাগারটি ছিল ১৮০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১০৮ ফুট প্রশস্ত। সাঁতারের জন্য চৌবাচ্চা ছিল। হরপ্পার সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় ইমারত হচ্ছে বৃহদকায় শস্যাগার। সমগ্র শস্যাগারটিতে ৯,০০০ বর্গফুট স্থলে ছিল। যেখানে সারা বছরের জন্য শস্য মজুদ করা হতো।
২৩. বিচিত্র সমাজব্যবস্থা : বিচিত্র রকমের সমাজব্যবস্থা ছিল সিন্ধু সভ্যতায়। এখানে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রকার মূল্যবান অলংকার যেমন— স্বর্ণ, রৌপ্য প্রভৃতি মূল্যবান ধাতু এবং অপেক্ষাকৃত কম মূল্যবান ধাতু যেমন— ব্রোঞ্জ, তামা ইত্যাদি দ্রব্য এবং উন্নত মানের মুদ্রা প্রমাণ করে যে, সিন্ধু সভ্যতার জনসাধারণ বিভিন্ন অর্থনৈতিক পেশা ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল। প্রাপ্ত নিদর্শন তাদের কৃষি, বয়ন শিল্প, মৃৎপাত্র, ইট তৈরি, স্বর্ণকার, কর্মকার, কুমার প্রভৃতি পেশায় নিয়োজিত থাকার প্রমাণ দেয় । ২৪. ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা : সিন্ধু সভ্যতার মহেঞ্জোদারোতে কোনো পাথরের তৈরি ঘরবাড়ি পাওয়া যায়নি। সর্বত্রই পোড়া ইটের ব্যবহার দেখা যায়। ফলে সময় সময় অট্টালিকাগুলো মাটির নিচে ধসে গেলে সে স্থানে অনুরূপ অট্টালিকা তৈরি করার প্রথা ... মহেঞ্জোদারোতে বিদ্যমান ছিল।
২৫. পোশাক-পরিচ্ছদ : হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর মানুষ পোশাক-পরিচ্ছদ তৈরিতে প্রধানত সুতা ও পশম ব্যবহার করত। দুই পার্ট বিশিষ্ট পোশাকের প্রচলন ছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যে অলংকার ব্যবহারের যথেষ্ট প্রচলন ছিল। নারীদের প্রধান অলংকার ছিল কান পাশা, কোমরবন্ধ, হার ও নূপুর
২৬. নগর পরিকল্পনা : নগর পরিকল্পনা ছিল সিন্ধু সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সিন্ধু সভ্যতায় নগরগুলো বিশেষত হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগর দুটি ইটের ভিত্তিভূমির উপর নির্মিত ছিল। উভয় নগরের একাংশ ছিল প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। অপর অংশ ছিল সাধারণ নগরী। এছাড়া সমষ্টিক স্নানাগার, বিশাল শস্যাগার, ব্যাংক কোষাগার ইত্যাদি নাগরিক সভ্যতার উপকরণগুলোই পরিকল্পিতভাবে তৈরি হয়েছিল।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত