ব্যাবিলনীয় সভ্যতা Babilian Civilization

আমোরাইটরা সুমেরু ও আকাদকে একত্রিত করে ব্যাবিলনীয় সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। এ সভ্যতার শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন হাম্বুরাধী। ২৮২ টি ধারাবিশিষ্ট হামারাবির আইন হলো এ সভ্যতার উল্লেখযোগ্য দিক। এ সভ্যতায় মেয়েদেরকে সম্মানের চোখে দেখা হতো। গণিতে উন্নতি লাভ ও জিওরাত নামক ধর্ম মন্দির স্থাপন তাদের অন্যতম অবদান। ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য বিদ্যমান না থাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য পরস্পর সংগ্রামে লিপ্ত থাকত। এ প্রসঙ্গে মায়ার্স উল্লেখ করেছেন যে, "ব্যাবিলনীয়রা একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার গৌরব অর্জন করেন এবং তাদের বাহুবল পড়ন্ত সূর্যের দেশ পর্যন্ত বহন করেন।
এ সভ্যতার অধিবাসীরা ইতিহাসের ধারায় সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তার লাভ করলে সেমিটিক জাতির একটা অংশ সিরিয়া থেকে অগ্রসর হয়ে সুমেরীয় অঞ্চলে আকাদ সাম্রাজ্য অধিকার করে নেয়। এদেরকেই ঐতিহাসিকভাবে অ্যামোরাইট বলা হয়ে থাকে। এসময় এ গোষ্ঠীভুক্ত সমু- অবস এর নাম জানা যায়। তখন সমগ্র মেসোপটেমিয়া বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জাতিতে খণ্ড খণ্ড রাজ্যে বিভক্ত ছিল। হাম্মুরাবি ক্ষমতা গ্রহণের আগে এমনি পরিস্থিতিতে অ্যামোরাইটরা নিজেদেরকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলে, নগর রাষ্ট্র। কিন্তু হাম্বুরাবি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে এই খণ্ড বিখণ্ড নগর রাষ্ট্রকে একত্রিত করেন। হাম্বুরাবি প্রায় ৪২ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার রাজত্বকালে শুধু বিজয় নয় বরং শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন, আইনসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ইতিহাসে "স্বর্ণযুগ” হিসেবে পরিচিত।
সুমেরীয় রাজা ডুঙ্গির মৃত্যুর পর অ্যামোরাইটরাই ব্যাবলিয়ন সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ বংশের সর্বশেষ নরপতি হাম্বুরাবি (২১২৩-২০৮১ খ্রিঃপূঃ) সুদক্ষ আইনবিদ ও বিজ্ঞ শাসক হিসেবে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার উন্মেষ ও ক্রমবিকাশে অপরিসীম অবদান রেখে বিশ্বের ইতিহাসে অম্লান স্বাক্ষর রেখেছেন। এসব বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, হাম্বুরাবির মৃত্যুর পর ব্যবিলনীয় সাম্রাজ্য নামেমাত্র টিকে ছিল। তাঁর পুত্র সামসু-ইলুনার এর রাজত্বকালে ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য সংকুচিত হয়ে পড়ে। তার রাজত্বকালেই উত্থান ঘটে ক্যাসাইটদের। পরবর্তী উত্তরাধিকারী আবিরেগুখ, আম্মিদিতানা, আম্মি-মাদুক এবং সামসু -দিতানা ছিলেন দুর্বল শাসক। তাঁদের দুর্বলতার সুযোগে ব্যাবিলন ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ভৌগোলিক অবস্থা Geographical Condition of Babilian Civilization
সমগ্র মেসোপটেমিয়া ছিল ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জাতির প্রাধান্যসহ বহু খণ্ড খণ্ড রাজ্যে বিভক্ত। সুমের ও আক্কাদ অঞ্চলের মধ্যবর্তী এলাকা হচ্ছে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার লীলাভূমি। সুমেরীয় রাজা দুঙ্গির মৃত্যুর পর অ্যামোরাইটরাই ব্যাবিলনীয় সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে সেমেটিক গোষ্ঠীও স্থানীয় অসেমেটিক লোকেরা গড়ে তুলে ছিল ব্যাবিলনীয় সভ্যতা। হাম্মুরাবি ক্ষমতা গ্রহণের আগে এমনি পরিস্থিতিতে অ্যামোরাইটরাই নিজেদেরকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলে, গড়ে তোলে নগর রাষ্ট্র। তাই বলা হয়, এ সভ্যতার সর্বশেষ নৃপতি হাম্বুিরাবি ব্যাবিলনীয় সভ্যতার উন্মেষ ও ক্রমবিকাশে অপরিসীম অবদান রেখেছিলেন। হাম্বুরাবি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে এই খণ্ড বিখণ্ড নগর রাষ্ট্রসমূহকে একত্রিত করেন। হাম্বুরাবির রাজত্বকালে শুধু বিজয় নয় বরং শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন, আইনসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ইতিহাসে “স্বর্ণযুগ” হিসেবে পরিচিত। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যভাগে অবস্থিত এ প্রাচীন সভ্যতা ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সুতরাং বলা হয় যে, প্রায় ৪২ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে হাম্বুরাবি সমগ্র মোসোপটেমিয়া-ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত পশ্চিম এশিয়ার উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে “সর্বাধিপতি" উপাধি ধারণ করেছিলেন।
ব্যাবিলনীয় সভ্যতার সরকার ব্যবস্থা Government System of Babilian Civilization
ঐতিহাসিকদের মতে, ব্যাবিলনীয় সভ্যতার যুগের আবিষ্কৃত কিছু কিউনিফর্ম লিপিতে ব্যাবিলনীয়দের সরকার ব্যবস্থার বিভিন্ন দিকের বর্ণনা উল্লেখ রয়েছে। ব্যাবিলনীয়রা মূলত স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করেছিলেন। এই স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু থাকার সুযোগে হাম্বুরাবি রাজ্যসীমাকে উত্তরে এসেরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। এ জন্য হাম্বুরাবির সময়কালকে স্বর্ণযুগ বলা হতো। ব্যাবিলনীয় সরকার সম্পর্কে প্রায় ৫৫ চিঠিতে অ্যামোরাইট বংশের সর্বশেষ নরপতি হাম্বুরাবি তাঁর সরকার সম্বন্ধে বিশদ বর্ণনা প্রদান করেছেন।
ব্যাবিলনীয় রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের শীর্ষে ছিলেন রাজা। রাজা নিজেকে দেবতার প্রতিনিধি হিসেবে মনে করতেন। রাজা চিলেন বেসামরিক, সামরিক, আইন, ধর্ম, রাজনীতির অর্থাৎ সকল কিছুর প্রধান।
তাই বলা হতো হাম্বুরাবি ব্যাবিলনীয়তে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার গড়ে তুলেছিলেন।
এছাড়াও শাসনকার্য পরিচালনার জন্য রাজাকে মন্ত্রীবর্গ রাজকর্মকার্তা, কর্মচারী ও বিচারপতিগণ সাহায্য-সহযোগিতা ও পরামর্শ দান করতেন। এ শাসন ব্যবস্থায় পুরোহিতরা প্রশাসনের অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হতো। এ ব্যবস্থায় রাজা-রাষ্ট্র পরিচালনাকে সান-লালন পালনের দায়িত্ব মনে করতেন। তাই বলা যায় যে, তারা ধর্মীয় দিক থেকেও সরকার ও বিচারকদের পক্ষে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতেন।

ব্যাবিলনীয় সভ্যতার সমাজব্যবস্থা Social System of Babilian Civilization


বিশ্বসভ্যতায় ব্যাবিলনীয়দের সমাজব্যবস্থা ছিল অন্যরকম এবং অভিনব এক নতুন সংযোজন। ব্যাবিলনীয় এ সমাজব্যবস্থা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। যথা-
১. উচ্চ শ্রেণি : রাজা, পণ্ডিত, পুরোহিত এবং সৈন্যরা এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল, যারা স্বাধীনভাবে নিজস্ব জমি ভোগ করতে পারত। ২. মধ্যম শ্রেণি : সাম্রাজ্যের বড় বড় শিল্পপতি ও স্বাধীন ব্যবসায়ীগণ এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
৩. নিম্নশ্রেণি : কৃষক, সাধারণ শ্রমিক এবং যুদ্ধ বন্দি তথা দাস-দাসীগণ এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ব্যাবিলনীয় সমাজব্যবস্থায় যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই থাকত। যুদ্ধে পরাজিতদেরকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে দাসে পরিণত করা হতো। এছাড়াও ঋণের দায়ে অভিযুক্তদেরকেও দাসে পরিণত করা হতো।

ব্যাবিলনীয় অর্থনৈতিক অবস্থা Economical System of Babilian Civilization


ব্যাবিলনীয়রা কাজের প্রতি যেমন শ্রদ্ধাশীল ছিল তেমনি অর্থের প্রতিও তারা শ্রদ্ধাশীল ছিল। ব্যবসায়, ব্যাংকিং ও শিল্প অর্থনীতিতে ব্যাবিলন এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এ সভ্যতায় কোনো লিখিত চুক্তি বা প্রকাশ্য সাক্ষী ছাড়া ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পাদিত হলে মৃত্যু দণ্ডের বিধান ছিল। এমনকি কোনো ব্যক্তি আবাদি জমি অনাবাদি রেখে দিলে কিংবা নালা কেটে সেচের মাধ্যমে আবাদ না করলে শাস্তির বিধান ছিল। কৃষিযোগ্য সরকারি বা বেসরকারি জমিতে প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করলে ভূমিস্বত্বে ভোগকারী কৃষক জমির উৎপাদিত ফসলের দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকত। সুতরাং বলা যায় যে, ব্যাবিলনীয় সভ্যতার মূলভিত্তি ছিল পরিবার। পরিবারে ও সমাজে মহিলারা পুরুষদের সমপরিমাণ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত। মহিদের ব্যক্তিত্বের আইনগত স্বীকৃতি ছিল।
মহিলারা সম্পত্তির মালিক হতে পারত এবং স্বামীকে তালাক দেওয়ার রীতিও প্রচলিত ছিল। তবে স্বামীর জন্য স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ব্যবস্থাও প্রচলিত ছিল। স্বামীরাও একাধিক স্ত্রী রাখতে পারত না, উপপত্নী রাখতে পারত। কেউ যদি উপপত্নী রাখত তবে সেখানে প্রথম স্ত্রী প্রাধান্য পেত। উপপত্নী রাখা কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর উপপত্নী স্বাধীন হয়ে যেত।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]