ব্যাবিলনীয় সভ্যতার গুরুত্ব/ অবদান Contribution/Importance of Babilian Civilization

ব্যাবিলনীয় সভ্যতাকে প্রথম সভ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী নবপলীয় যুগে মেসোপটেমিয়া নামক স্থানে ব্যাবিলনীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০-১৫০০ অব্দে এ সভ্যতার ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়। সুমেরীয় রাজা ডুঙ্গির মৃত্যুর পর অ্যামোরাইটরা ব্যাবিলনীয় সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করেন। এ বংশের সর্বশেষ নরপতি হাম্বুরাবি (২১২৩-২০৮১ খ্রিঃপূঃ) সুদক্ষ আইনবিদ ও বিজ্ঞশাসক হিসেবে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার উন্মেষ ও ক্রমবিকাশে অপরিসীম অবদান বিশ্বের ইতিহাসে অম্লান স্বাক্ষর রেখেছেন। বিশ্ব সভ্যতার অগ্রগতিতে ব্যাবিলনীয় সভ্যতা যেসকল অবদান রেখেছে, তা নিম্নে আলোকপাত করা হলো-
১. আইন প্রণয়ন : সম্রাট হাম্বুরাবির রাজত্বকালের শেষদিকে নির্দেশিত বিধানমালা প্রস্তর খণ্ডে খোদাই করে রাখা হয়। পরবর্তীতে তা হাম্বুরাবি আইন নামে পরিচিতি লাভ করে। হাম্বুরাবিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি একটি মানবাধিকার সম্পন্ন বৈষম্যহীন সত্য নিষ্ঠার উপর আইনকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে, বিবাহ, পরিবার সম্পত্তি, বৃত্তিধারী লোকদের পারিশ্রমিক ও দায়িত্ব, ভাড়ার হার এবং পরিমাণ ও ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত প্রভৃতি ক্ষেত্রে তিনি বিধি নিষেধ আইন উল্লেখ করেন।
শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা : ব্যাবিলনীয়তে হাম্বুরাবি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার গড়ে তোলেন। রাজাই ছিলেন রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের শীর্ষে। রাজা নিজেকে দেবতার প্রতিনিধি হিসেবে মনে করেন। বেসামরিক, সামরিক, আইন, ধর্ম, রাজনীতি সকল কিছুরই প্রধান ছিলেন রাজা। শাসনকার্য পরিচালনার জন্য রাজাকে মন্ত্রীবর্গ, বিচারপতিগণ, রাজকর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সাহায্য সহযোগিতা ও পরামর্শ দান করতেন।
প্রশাসনের অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হতো পুরোহিত শ্রেণির লোকেরা। তারা ধর্মীয় দিক থেকে সরকার ও বিচারকদের পক্ষে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিতেন। রাজা সর্বদাই রাষ্ট্র পরিচালনাকে সন্তান লালন পালনের দায়িত্ব মনে করতেন। ৩. সরকার ব্যবস্থা : ব্যাবিলনীয় সভ্যতার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হাম্বুরাবি মেসোপটেমিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এক শক্তিশালী সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। আর সেখানে আদর্শবাদী সম্রাট হিসেবে হাম্বুরাবিকে বিবেচনা করা হয়। হাম্বুরাবি সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সুষ্ঠুভাবে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, নতুন ভেদাভেদ দূর করে সত্য সুন্দর সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করেন।
৪. বিচার ব্যবস্থা : হাম্বুরাবি আইন প্রয়োগ করে এ বিচার কাজ পরিচালনা করা হতো। রাজা ছিলেন এ বিচার ব্যবস্থার প্রধান আর পুরোহিতরা এই বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা করতেন। বিচারব্যবস্থা দেশে আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য দুষ্ট এবং অসং লোকদের ধ্বংস করার জন্য দুর্বলকে রক্ষা করার প্রয়োজনে যেন সূর্যের মতো আবির্ভূত হতো।
৫. সাহিত্য ও শিক্ষাব্যবস্থা : প্রাচীন ব্যাবিলনীয় শিক্ষা ও সাহিত্য বেশ এগিয়ে গিয়েছিল। ব্যাবিলনীয়রা সুমেরীয়দের অমর সাহিত্য গিলগামেশ উপাখ্যান অধ্যয়ন করে। 'Book of Job' অনুসরণ করে ব্যাবিলনীয় সাহিত্যিকগণ তাদের অনবদ্য সাহিত্য কর্ম রচনা করতেন।
৬. চিত্র ও অঙ্কনবিদ্যায় অবদান : নিত্য ব্যবহার্য মৃৎপাত্র ও প্রস্তর নির্মিত পাত্রের গায়ে নানা প্রকার অলংকার এঁকে কারুশিল্পের দক্ষতা দেখিয়েছে। অশরীরি প্রেতাত্মার ভয়-ভীতি হতে দূরে থাকতে কোনো কিছু হতে রক্ষা পাবার আশায় তারা কবচ ব্যবহার করত। সেসব কবচ, অলংকার মোহর ইত্যাদিতেও তারা শৈল্পিক প্রতিভার সাক্ষর রেখেছে।
৭. কৃষি ব্যবস্থায় অবদান : কৃষিই ছিল ব্যাবিলনীয়দের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস। কৃষি কাজে জলসেচ ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করা হতো। জলসেচের জন্য নিকটবর্তী নদী খাল ও জলাশয়ের উপর নির্ভর করতে হতো। ভূমি ছিল কৃষির মূল ভিত্তি। ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় ভূমির মালিক ছিল রাজা বা সম্রাট। রাজা সকল ভূমি বিভিন্ন উপায়ে চাষাবাদের জন্য প্রদান করতেন। রাজা কিছু জমি প্রদান করতেন, রাজকীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরকে তাদের পারিশ্রমিক শ্রী হিসেবে। এভাবেই মূলত রাজকীয় কর্মকর্তারা এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ধীরে ধীরে জমির বড় মালিকে পরিণত হয়। ৮. ব্যবসা-বাণিজ্যে অবদান : ব্যবসায়-বাণিজ্যে প্রাচীন ব্যাবিলনীয়রা সচ্ছতার পরিচয় বহন করত। সরকারের নির্দেশ মোতাবেক তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অসাধুতা এবং অত্যধিক মুনাফা অর্জন করত না। বর্তমান যুগের মতো তারা ত্রুটি মুক্ত হিসাব পদ্ধতির প্রচলনে এগিয়ে আসে। সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল সকল প্রকার ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, ব্যাংক ইত্যাদি ।
৯. ধর্মীয় ব্যবস্থার অবদান : ব্যাবিলনীয় সভ্যতায়, ভাগ্য গণনা, অতিপ্রাকৃত শক্তির উপর বিশ্বাস, জাদু মন্ত্র ইত্যাদির বিস্তার ছিল। তাই ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় ধর্মের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। মাতৃদেবী, ইস্টার গাছপালা, পশুপাখি ও মানুষের জন্মকে নিয়ন্ত্রণ করত বলে ব্যাবিলনীয়রা বিশ্বাস করত। প্রধান দেবতার আসনে ছিল মারডুক বা মারদুক। ব্যাবিলনীয়রা পুনর্জন্ম বা পরকালে বিশ্বাস করত না। তাদের ধারণা ছিল দেবতারা স্বর্গে বসবাস করে, সেখানে মানুষের প্রবেশাধিকার নেই । তবে পাপ-পুণ্যের ধারণা ছিল। এছাড়াও প্রণয়নের দেবী-ইসতার, বায়ুর দেবতা মারুত্তম এবং অসংখ্যক দেব-দেবীর পূজা করত। ১০. পরিবার ও বিবাহ : লিখিত চুক্তি ব্যতীত বিবাহ সিদ্ধ হয় না। কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন দ্বারা পরিবার ও বিবাহ নিয়ন্ত্রিত হতো। বিয়ের সময় বরের বাবা কনের বাবাকে যৌতুক দিত। স্ত্রী বন্ধ্যা হলে বা স্ত্রী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকলে উপপত্নী গ্রহণ করতে পারত। স্বামী স্ত্রীর বন্ধন অটুট ছিল। স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে অবহেলা করলে দোষী পক্ষকে শাস্তি পেতে হতো। স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারত কিন্তু স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারত না । তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে ভরণপোষণের জন্য অর্থ দিতে হতো।
১১. ব্যাবিলনীয় সমাজব্যবস্থা। বিশ্বসভ্যতায় ব্যাপিনীরসের সম
সমাজব্যবস্থা তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল, উচ্চশ্রেণি, , পরিত পুরোহিত এবং সৈন্যরাও এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর মধ্যম শ্রেণির মধ্যে শিল্পপতি
কৃষক, সাধারণ শ্রমিক এবং যুদ্ধবন্দি তথা দাস-দানীগণ এ শ্রেণির অন্ত
১২. স্থাপত্য শিল্প : ব্যাবিলনীয়রা স্থাপত্য শিল্প নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে সক্ষম হন। ব্যাবিলনীয় ধর্মমন্দির
১৩ শিল্পীদের অনুকরণে নির্মিত ছিল। সাতটি ধাপে নির্মিত ধর্মমন্দির সৌরমণ্ডলের সাতটি বার।
লিখন পদ্ধতি : ব্যাবিলনীয়নদের লিখন পদ্ধতি বলতে 'কিডনি' লিপি ছিল। পরে
কোনা কাঠি দিয়ে লেখা হতো। ৫০০ অক্ষর ব্যবহার হতো। এ লিপি পশ্চিম 000 পরবর্তী খ্রিষ্টীয় শতাব্দী পর্যন্ত অবলীলায় চালু ছিল। কবিরা এ উপাখ্যান নিজেদের হৃদয়গ্রাহী করে তোলে। সাহিত্য কর্মে ব্যবিলনীয় কবিরা ভাষায় গদ্যরীতি পদ তাদের লেখনীতে পৌরাণিক কাহিনি অপূর্ব সাহিত্য রসে সুসমৃদ্ধ হয়ে উঠে।
১৪. গণিতে অবদান : গণিত শাস্ত্রে ব্যাবিলনীয়রা বিভিন্ন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেন। তারা ফল, ভাগের নামতা, বীজগণিতের সমীকরণ করা, বৃত্তকে ৩৬৫ ডিগ্রিতে ভাগ করে গণিত শাস্ত্রে ব্যবহার করা, দার্শনিকের ব্যবহার, ব্যাপ করেন। তারাই প্রথম শূন্যের ধারণা দেন।
১৫. জ্যোতিষ শাস্ত্রে অবদান : জ্যোতিষ শাস্ত্রের ক্ষেত্রে ব্যাবিলনীয়রা ব্যাপক অবদान | বানী সূর্য, এসবের ব্যবহার চালু করে। তারা মাস বছর দিন ইত্যাদির ক্ষেত্রে সময় নিরূপণ ও বণ্টনের দা গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে তারা সঠিক ধারণা দিতে পেরেছিল।
১৬. বর্ষ পঞ্জিকা প্রণয়ন ও ঘণ্টা ঘড়ির আবিষ্কার: ব্যাবিলনীয়রা সর্বপ্রথম বর্ষ কি কৃতিত্ব দাবি করতে পারে। তা বছরকে ৩৬৫ দিনে এবং একটি বছরকে চন্দ্র মাসের হিসেবে বিভক্ত করে তারা একটি পত্রিকা প্র ব্যাবিলনীয়রা দিনকে ঘণ্টায় বিভক্ত করে ঘন্টা ধ্বনির উদ্ভাবন করেন।
১৭. চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদান : ব্যাবিলনীয়রা চিকিৎসা বিজ্ঞান চর্চায় এগিয়ে আসে। ব্যাবিলনীয়রা দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে সূর্যমুখী ফুলের বীজ ব্যবহার করত। পেটের পীড়ায় ব্যবহার করত দুধ। কেশহীন মাথার তেলের স্যাম্পু আর মদ ব্যবহার করত। এ সভ্যতায় ব্যাবিলনীয়রা গাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ তৈরি করে চিকিৎসা শাস্ত্রে স্বর্ণহিমায় উত্তাপিত আছে। সে সময়ে প্রায় ৫০০ রকমের ঔষধের প্রচলন ছিল। এসব ঔষধের অধিকাংশই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের অন্তর্গত ছিল। পরিশেষে বলা যায় যে, আইন, লিপি, সরকার ব্যবস্থায়, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসাবিদ্যা প্রভৃতির ক্ষেত্রে ব্যবিলনীয়রা ব্যাপক অবদান রেখেছে। পরবর্তীতে তা নানা বিবর্তনবাদ ও ব্যাপ্তিবাদের মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রবেশ করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]