নবোপলীয় যুগেই মিশর একটি কৃষি প্রধান দেশে পরিণত হয় এবং কৃষিভিত্তিক এ সমাজ থেকেই সেখানে সংস্কৃতি এবং সেই সাথে সভ্যতার বিকাশ ঘটে। নীল নদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা এ সভ্যতার শহর ও ধর্ম মন্দিরগুলো নীল নদের তীরবর্তী অঞ্চলেই গড়ে ওঠে। প্রধানত দুটি জিনিস মিশরীয়দের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে এবং এগুলো হলো সূর্য ও নীলনদ। নিম্নে মিশরীয় সভ্যতার গুরুত্ব/ অবদান আলোচনা করা হলো-
১. সেচ পদ্ধতির প্রবর্তন : শুকনো মৌসুমে জমি চাষ ও ফসল ফলানোর জন্য সেচ অপরিহার্য। একটি পরিকল্পিত সেচব্যবস্থা প্রত্যাশিত ফসল উৎপাদনে সহায়ক। প্রাচীন মিশরীয়রা প্রাথমিকভাবে নীল নদের তীরে পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থার প্রচলন করে, যা শুকনো মৌসুমে কৃষিকার্য পরিচালনায় সহায়ক হয়। মিশরীয়রা যে সেচ বচ্যবস্থার প্রবর্তন করে তা সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সেচব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে যে উদ্বৃত্ত উৎপাদন আসে তার দ্বারা মানব সমাজ ও সভ্যতার গতি আরো ত্বরান্বিত হয়। তাছাড়া সেচ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে মানুষ যেভাবে একত্রিত হওয়ার সুযোগ পায় তাতে তাদের মধ্যে পারস্পরিক ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
২. ধর্মীয় ক্ষেত্রে : ধর্মীয় ধারণা মিশরবাসীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব। তারা মানবজাতিকে একটি সমৃদ্ধ ধর্মীয় ধারণা উপহার দেয়। মিশরীয় ফারাও ইখনাটন যে একেশ্বরবাদের ধারণা প্রদান করেন তা আজো বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। এ সময় ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা ও দর্শন মিশরীয় সমাজ ও জীবনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতো। মিশরীয় স্থাপত্য ভাস্কর্যের সর্বত্রই ধর্মীয় বিশ্বাসের ছোঁয়া পরিলক্ষিত হয়। মিশরীয় নগর রাষ্ট্র পরিচালিত হতো ধর্মীয় বিধান ও অনুশাসন দ্বারা। ধর্ম মন্দিরে যেসব প্রশাসনিক ইউনিট গড়ে উঠত সেগুলোই দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো। মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যে, মৃত মানুষ কবরে গেলে তার দেহে আবার আত্মা ফিরে আসে। তাদের পাপ-পুণ্যের বিচার করেন দেবতা ও সিরিস। তারা যে ধর্মীয় ধারণা লিপিবদ্ধ করে তা মানব সমাজের গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দান করে। পারসীয়দের পূর্বে মিসরীয়রা প্রথম ব্যক্তির অমরত্বের সত্যকে উপস্থাপন করে একটি জাতীয় ধর্মীয় কাঠামো গড়ে তুলতে সহায়তা করে ।
৩. রাজনৈতিক চিন্তার বিকাশে সহায়তা : নগররাষ্ট্র পরিচালনার স্বার্থে মিশরে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক ধারণার বিকাশ ঘটে। রাষ্ট্রের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য তারা সুস্পষ্ট প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ফলশ্রুতিতে এ সভ্যতার সমাজতাত্ত্বিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিশরীয় রাষ্ট্রচিন্তায় ধর্মের প্রভাবকে কোনোমতেই অস্বীকার করা যায় না। মিশরীয় রাষ্ট্র ধর্মীয় বিধান অনুসারে পরিচালিত হতো । ৪. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে : কৃষিই ছিল প্রাচীন মিশরীয় অর্থনীতির প্রধান উৎস। এখানে উৎপাদন হতো মূলত সামন্ত পদ্ধতিতে। অর্থাৎ দাসরা কৃষি কাজ করত এবং মনিবগণ উৎপাদিত ফসল ভোগ করত। এমনকি মনিবগণ দাসদের উপর অমানবিক অত্যাচারও করত। নদীর তীরবর্তী মিশরের ভূমি বেশ উর্বর ছিল। তার কারণ হলো নীল নদের বন্যার পলি জমেছিল। এজন্য সেখানে প্রচুর পরিমাণে, গম, যব, জোয়ার, পিয়াজ, শাক-সবজি ইত্যাদি উৎপন্ন হতো। জমির মালিকগণ ছিলেন মিশরের রাজা বা শাসক । তবে তাদের শস্য মাড়াই কৌশল ও বর্তমানে আমাদের দেশের শস্য মাড়াই কৌশল প্রায় একই রকম ছিল।
৫. লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন : মানুষের মনের ভাব প্রকাশের বিশিষ্ট মাধ্যম ভাষা। কতকগুলো প্রতীক, বর্ণ বা অক্ষরের মাধ্যমে মানুষ তাদের মনের ভাব লিখে প্রকাশ করে। একটি সুস্পষ্ট লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবনে মিসরীয়দের অবদান অনন্য । প্রাথমিকভাবে মিশরীয়রা ছবি এঁকে মনের ভাব প্রকাশ করতো। এক একটি ছবি ছিল এক একটি অক্ষরের প্রতীক। এই লেখার নাম ছিল চিত্রলিপি। অক্ষরভিত্তিক মিশরীয় এ লিপিকে বলা হতো হায়ারোগ্লিফিক। পরবর্তীতে মিসরীয় লিপির অনেক উৎকর্ষ সাধিত হয়। লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবনের মাধ্যমে মিশরীয়রা মানব সভ্যতা বিকাশের পথকে প্রশস্ত করে । ৬. লিখন দ্রব্যাদি হিসেবে প্যাপিরাসের উদ্ভাবন : প্রথমদিকে মিশরীয়রা পাথর ও কাঠে লেখা উৎকণ্ঠিত করে রাখত। পরবর্তীতে তারা লেখার জন্য কাগজ আবিষ্কার করে। তাদের তৈরি কাগজ প্যাপিরাস নামে পরিচিত ছিল। এটি নলখাগড়া নামক একজাতীয় গাছ থেকে তৈরি হতো। প্যাপিরাসের গুরুত্ব ছড়িয়ে রয়েছে কাগজ ও বাইবেল শব্দের মধ্যে। কাগজ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মিশরীয়রা সমাজ ও সভ্যতায় শিক্ষা দীক্ষার বিস্তারে অনন্য অবদান রাখে।
৭. সামাজিক ক্ষেত্রে : মিশরীয় সভ্যতার সামাজিক শ্রেণি গড়ে উঠেছিল ধর্ম, ক্ষমতা, কৃষক, আমলা, শ্রমজীবী ও দাসদের উপর ভিত্তি করে। রাজ পরিবার ছিল সমাজের ভিত্তি। তার নিচে ছিল পুরোহিত এবং সামন্ত নৃপতি। তার নিচে ছিল লিপিকার, বণিক, কারিগর ও কৃষক এবং সর্বনিম্নে ছিল ভূমিদাস এবং শ্রমজীবী মানুষ। ভূমিদাসরা ছিল সমাজের পরাধীন শ্রেণি এবং অন্যান্য শ্রেণি ছিল স্বাধীন। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ছিল আকাশ পাতল ব্যবধান। দাস শ্রেণিকে সকলেই ঘৃণা করত এবং তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হতো।
৮. ক্ষুদ্র শিল্প : মিশরীয়রা তাদের ব্যবহৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস পত্রের অতি চমৎকার শিল্প নৈপুণ্য ফুটিয়ে তুলত। আসবাবপত্র, মৃৎপাত্র,
কম্বল, পর্দা, কুশন প্রভৃতিকে তারা বাহারি রকমের নকশা ও চিত্রের সাহায্যে অতি আকর্ষণীয় করে তুলত। চকৎকার ডিজাইনের রত্নপাত্র; সুগন্ধি রাখার পাত্র, কৌটা ও রূপার দ্রব্যাদির প্রমাণ পাওয়া যায়। কারিগরদের বিভিন্ন কর্মের মাধ্যমে। তারা মূল্যবান অলংকার, আংটি, নেকলেস, মুকুট, বাজুবন্ধু প্রভৃতি অতীত চমৎকার শৈল্পিক নিপুণতার সাথে তৈরি করতে পারত ।
৯. সাহিত্য : সাহিত্য চর্চার ব্যাপক বিকাশ ঘটেছিল প্রাচীন মিশরীয়দের মধ্যে। প্রাচীন মিশরীয়দের সাহিত্যের উপজীব্য ছিল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, পৌরাণিক কাহিনি রূপকথা জাদুবিদ্যা ইত্যাদি। এছাড়াও তাদের ধর্মভিত্তিক সাহিত্য চর্চারও নিদর্শন রয়েছে। ১০. নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা : প্রাচীন মিশরীয় সমাজে নারীদের মর্যাদা বেশ স্বীকৃত ছিল। যদিও সেখানে মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে শিল্প, ব্যবসা, সামাজিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারত। মিশরের স্ত্রীরা স্বাধীন স্বত্তা নিয়ে বসবাস কত। স্ত্রীর উত্তরাধিকার হওয়ার ক্ষমতা ছিল। তাই রাজার মৃত্যুর পর রানী ক্ষমতা গ্রহণ করতেন এবং পরে রানি উপর্যুক্ত ছেলের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতেন ।
১১. স্থাপত্য শিল্প : শিল্পকর্মের চরম বিকাশ ঘটেছিল প্রাচীন মিশরে। মিশরীয় সভ্যতার স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের যে চরম বিকাশ ঘটে তার নিদর্শন হলো প্রাচীন মিশরের পিরামিড ও মন্দির। সুদৃশ্য কারুকার্য খচিত সুবিশাল আকৃতি বিশিষ্ট একেকটি মন্দির ছিল। কারেনাকের মন্দিরের দৈর্ঘ্য ছিল ১,৩০০ ফুট। এছাড়াও তারা কাঠের আসবাবপত্র এবং ধাতব বস্তুর জিনিস তৈরিতেও পারদর্শী ছিল।
১২. পারিবারিক ও বৈবাহিক ক্ষেত্রে : মিশরীয় সভ্যতার ক্ষুদ্রতম একক ছিল বিবাহ নির্ভর পরিবার। মিশরীয়দের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ কমই হতো মূলত যুগল বিবাহভিত্তিক পারিবারিক জীবনে। আপন ভাই-বোনদের মধ্যে বিবাহ প্রচলিত ছিল মিশরের রাজ পরিবারের রক্তের বিশুদ্ধতার জন্যই। মিশরীয় সমাজে একাধিক স্ত্রী গ্রহণে কোনো বাধা ছিল না। তবু এক বিবাহই অধিক প্রচলিত ছিল। তবে উপপত্নী রাখার প্রথাও বিদ্যমান ছিল।
১৩. ব্যবসা-বাণিজ্য : প্রাচীন মিশরীয়দের একটি বড় আয়ের উৎস ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য। এ সময়ে গ্রীস, সিরিয়া, নুবিয়ায়, ইন্ডিয়ান দ্বীপ, সুদান, ফিনিশিয়া ইত্যাদির সাথে মিশরের বাণিজ্য চলত। মিশরীয়রা গম, চামড়া, লিলেন কাপড় ও মৃৎপাত্র এবং প্যাপিরাস রপ্তানি করত। হাতির দাঁত, আবলুস, রৌপ্য, কাঠ ইত্যাদি আমদানি করত। নৃবিজ্ঞানী ওয়ালব্যাঙ্ক ও ইবি টেইলরের মতে, এ সময় মিশরীয় ব্যবসায়ীদের এ্যাকাউন্টিং ও বুককিপিং সম্পর্কে জ্ঞান ছিল এবং বিনিময় প্রথার মাধ্যমে সকল প্রকার লেনদেন চলত। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য মূলত তারা ৩টি পথ ব্যবহার করত। যথা— ক. ভূ-মধ্যসাগর থেকে উত্তরদিকে, খ, নুবিয়ার ও লোহিত সাগর থেকে দক্ষিণ দিকে এবং গ. লোহিত সাগর থেকে পূর্ব দিকে ।
১৪. পিরামিড নির্মাণ : মিশরীয় সভ্যতার সবচেয়ে বড় অবদান হলো পিরামিড নির্মাণ। পিরামিড হলো আকাশচুম্বী সমাধিসৌধ। প্রায় ২৩ লক্ষ পাথর খণ্ড লেগেছিল মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিড তৈরি করতে। গড়পড়তায় এক একটি পাথরের ওজন প্রায় ৬৮ মন এবং কোনো কোনোটির ওজন ৮,৪০০ মনেরও বেশি। চারকোণা ভিত্তির উপর নির্মিত পিরামিডটির ভিত্তির পরিধি ছিল প্রায় ১৩ একর এবং ৪৮১ ফুট উঁচু। প্রায় ৯ লক্ষ লোকের ২০ বছর সময় লেগেছিল। অনন্য স্থাপত্য কীর্তির এ পিরামিডটি তৈরি করতে। মিশরের পিরামিডগুলো আজও তাদের সভ্যতার চিহ্ন বহন করে দাঁড়িয়ে আছে।
১৫. মমি : রসায়ন শাস্ত্রে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিল প্রাচীন মিশরীয়রা। মৃতদেহকে মমি করে রাখত পরকালে বিশ্বাসী মিশরীয়রাই। তারা মৃতদেহ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে রাখার চেষ্টা করত। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল যে, আত্মা দেহ থেকে বিদায় নিয়েছে। পরকালে ঐ আত্মা এই দেহেই আবার অবস্থান করবে। এই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে প্রাচীন মিশরীয়রা মৃতদহেকে পচন ক্রিয়া থেকে রক্ষার জন্য রাসায়নিক পদ্ধতিতে মমি করত। নতুন রাজ্যের রাজধানী 'নিবসে শোব নগরী' নামে পরিচিত উঁচু চুনা পাহাড়ে ২,০০০ বছর ধরে ৭০ পুরুষ পর্যন্ত মিশরীয়দের পথিকৃত দেহ স্থান পেয়েছে।
বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যা জ্যামিতি, গণিত, ত্রিকোণোমিতি, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসা শাস্ত্রে বেশ পারদর্শী ছিল মিশরীয়রা। তারা পিরামিড ও মন্দির নির্মাণের জন্য প্রকৌশল বিদ্যা আরও করেছিল। তারা মাস গণনা করত মূলত চন্দ্রমাস হিসেবে। কিন্তু পরে সৌর
মাস হিসেবে বছর গণনা শুরু করে। তারা সূর্যের আলোর ছায়া দেখে সময় নির্ধারণের জন্য ছায়া ঘড়ি বা সূর্যঘড়ি ব্যবহার করত।
১৭. দর্শন শাস্ত্র : প্রাচীন মিশরীয়রা দর্শন শাস্ত্রে যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিল। রাজনীতি ও নৈতিক আচরণ ছিল তাঁদের
দর্শনের মূলভিত্তি। এ সময়ে মিশরে জড়বাদী মতবাদের উর্ধ্বে অতিন্দ্রিয় চিন্তাধারার উন্যেষ হয়। এর ফলে মিশরীয়রা অবিনশ্বর ও চিরন্তন পৃথিবী, ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে মিশরীয়রা এ ধরনের নৈতিকতা ভিত্তিক দর্শনের উদ্ভাবন করে। পঞ্চম রাজ বংশের ফারাও এর মন্ত্রী বা ভিজিয়ার পাতাই হোটেপ তার ম্যাক্সিমস (Maxims) গ্রন্থে মন্দের বিচার ও পরিণতি সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দেন।
গণিত শাস্ত্র : গণিত শাস্ত্রে অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছিলেন প্রাচীন মিশরীয়রা। প্রাচীন মিশরীয়দের বাস্তব প্রয়োজনের তাগিদেই এ শাখার উৎপত্তি ও বিকাশ সাধিত হয়েছে। তারাই প্রথম গণিত শাস্ত্রের দু'টি অপরিহার্য শাখা পাটিগণিত ও জ্যামিতির প্রচলন করে। তারা যোগ, বিয়োগ ও ভাগ পদ্ধতির আয়ত্ত করে মূলত পাটিগণিতের ক্ষেত্রে। তবে তারা গুণিতকের ব্যবহার না জানলেও তাদের গুণের পদ্ধতি ছিল একটু আলাদা। দশমিকের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে মিশরীয়দের গণিত শাস্ত্র। তারাই এক, দশ, শত সহস্র প্রভৃতি সংখ্যার সাথে পরিচিত থাকলেও 'শূন্য' '০' সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিল না। তবে ভগ্নাংশ সম্বন্ধে জ্ঞান ছিল।
১৯. চিকিৎসা বিজ্ঞান : টোটকা, জাদুবিদ্যা, লৌকিক চিকিৎসা প্রভৃতি কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল মূলত মিশরীয় সভ্যতার আগের চিকিৎসা বিজ্ঞান। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছিল প্রাচীন মিশরীয়রা। খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০ অব্দে প্রাপ্ত একটি উৎস থেকে জানা যায় যে, সে সময় মিশরীয়রা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা বিদ্যায় যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করে। তৃতীয় রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা ফারাও জোসারের উজির ইসি হোটেপ ছিলেন একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক। চতুর্থ রাজবংশের হাতে মিশরীয়দের দত্ত চিকিৎসায় দক্ষতার পরিচয় পাওয়া গেছে। ষষ্ঠ রাজবংশের একজন চিকিৎসক একাধারে দত্ত বিশেষজ্ঞজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসক এবং পাকস্থলীর অস্ত্রের চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন। মিশরীয় চিকিৎসকগণ এ সময় থেকেই চক্ষুরোগ, দাঁতের রোগ, শল্য বিদ্যা, পেটের পীড়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে মূল্যবান ঔষধ আবিষ্কার করেছিলেন। হৃৎপিণ্ড ও নাড়ীর স্পন্দন নির্ণয় করতে পারতেন মিশরীয় চিকিৎসকগণ। এছাড়াও মিশরীয় চিচিৎসকগণ হাড় ভেঙ্গে গেলে শল্য চিকিৎসা দ্বারা জোড়া লাগাতে পারতেন। পরিশেষে বলা যায় যে, মিশরীয় সভ্যতা ছিল প্রাচীন সভ্যতাসমূহের মধ্যে অন্যতম। জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, সভ্যতা এবং নব নব আবিষ্কারে মিশর ছিল বিশ্ব সভ্যতার কান্ডারী। মিশরীয় সভ্যতার পেছনে নীল নদের অবদান ছিল অপরিসীম এটা ধ্রুব সত্য। নীল নদের অববাহিকায় কৃষি ব্যবস্থা চরম উন্নতি লাভ করেছিল বলেই প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে এতটা
অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত