মিশরীয় সভ্যতার পতনের কারণ The Causes of Fall of Egyptian Civilization

মিশরীয় সভ্যতার পতন সম্পর্কে সর্বজন স্বীকৃত কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। রাজনীতিতে বিকেন্দ্রীকরণ এবং নৈরাজ্য বা যুদ্ধ বিজয়ের দ্বারা কোনো নির্দিষ্ট শাসন কর্তৃপক্ষকে স্থায়িত্ব দানের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা প্রভৃতিকে প্রফেসর ব্রেসটেড মিশরীয় সভ্যতা ধ্বংসের মূল কারণরূপে অভিহিত করেছেন। কালের বিবর্তনে এই মিশরীয় সভ্যতা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। মিশরীয় সভ্যতার পতনের কারণসমূহ-
মিশরীয় সভ্যতার পতনের কারণসমূহ প্রাচীন বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, মিশরীয় সমাজব্যবস্থার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে সেখানে দুটি ভাগ লক্ষ করা যায়। যথা- ক. প্রাক রাজবংশীয় যুগ এবং খ. রাজ বংশীয় যুগ। এখানে প্রাক রাজবংশীয় যুগের সময়কাল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ হতে খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ অব্দ পর্যন্ত। অন্যদিকে রাজবংশীয় যুগের সময়কাল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ অব্দ থেকে ২২৭০ অব্দ পর্যন্ত ছয়টি রাজবংশ মিশরে রাজত্ব করে। অতঃপর রাজতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মিশর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে যে, মিশর সফলতার সাথে নিজেকে
সাম্রাজ্য বিস্তার বা সাম্রাজ্য প্রশাসন ব্যবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনি। পুরোহিত শ্রেণির শক্তি ও মর্যাদা ধ্বংসাত্মক দুর্বলীকরণে সহায়ক উপাদান প্রথা ও ধর্মের সাথে যুক্ত হয়ে এমন এক নিশ্চল অবস্থার সৃষ্টি করে যা মিশরের পতনের এক উপাদান হিসেবে দেখা দেয়। রক্ষণশীলতা ও খণ্ডিত কৃষি ব্যবস্থাও মিশরীয় সভ্যতার পতনের জন্য দায়ী ছিল। এছাড়া শ্রেণিতে ও নিম্ন শ্রেণিকে শোষণ করাও কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। আবার মিশরীয় রাজতন্ত্রের ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, খ্রিষ্টপূর্ব ২০২৬ অব্দে সমগ্র মিশর আবার একটি কেন্দ্রীয় রাজতন্ত্রের অধীনে আসে। নতুন রাজ্যের রাজধানী স্থাপিত হয় নিবিতে। ১৭৮৫ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত এই মহারাজ্যের স্থিতিকাল ছিল। গৃহযুদ্ধের মাধমে মহারাজ্যের অবসান ঘটে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৮০ অব্দে মিশরীয় রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ পর্যায়ে সিরিয়া কোযেনিশিয়া, প্যালেস্টাইন, নুবিয়া, উত্তর সুদান, মিশরের কর্তৃত্বাধীনে আসে। ১০৪৫ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দে মিশরের পতন শুরু হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে এ্যাসিরীয় সম্রাট রাজধানী নিবি লুণ্ঠন এবং মিশর দখল করে নেয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৬৬৩ অব্দে ষষ্ঠ বিংশ রাজবংশ এ্যাসিরীয়দের বিতাড়িত করতে সক্ষম হলেও ৫২৫ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দে মিশর পারস্যের অধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। এর ২০০ বছর পর মহাবীর আলেকজান্ডার মিশর দখল করে নিলে খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ অব্দে ৩০টি রাজ বংশের ৩০০০ বছরের রাজত্বের পর মিশরীয় সভ্যতার পতন ঘটে। মিশরীয়দের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী এ্যাসেরীয়রা পারসিক, মেসিডোনীয় ও রোমানদের শত্রুতা ও তাদের পতনের জন্য দায়ী ছিল। এসব প্রতিবেশী যুদ্ধ বিদ্যায় খুবই দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ ছিল। তাদের হাতে মিশরের সামরিক পতন ও রাজনৈতিক সংযোজন ঘটে। এছাড়াও এ সভ্যতার পতনের পিছনে যে সকল উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল নিচের আলোচনায় তা আলোকপাত করা হলো-
১. ক্রমাগত বহিঃশত্রুর আক্রমণ : মিশরীয় সভ্যতায় প্রচুর পরিমাণে ধন সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠেছিল নদীকে কেন্দ্র করে। তাই ভিনদেশীয় লোকেরা মিশরীয়দের এই প্রচুর ধন সম্পদের লোভ সামলাতে না পেরে বার বার আক্রমণ করতে থাকে। যেমন হিক্স সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের হীন ও বর্বরতামূলক তৎপরতা চালিয়ে প্রায় দু'শত বছর সচল প্রশাসনকে অশান্ত করে রাখে। এক পর্যায়ে তারাও বিতাড়িত হয়। যিশু খ্রিস্টের জন্মের ১১০০ বছর পূর্ব থেকেই বহিঃশত্রুরা তাদের এ ভয়ংকর তাণ্ডব চালাতে সক্ষম হয়। ফলে ৬৭০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে এ্যাসেরীয়রা মিশরের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। মিশরকে কেন্দ্র করে এশিয়ার মাইনরের হিট্রাইট জঙ্গিরা বার বার আক্রমণ করে। খ্রিষ্টপূর্ব ৫২৫ অব্দে পারস্য অধিপতি মিশর জয় করেন এবং ৩৪০ অব্দ পর্যন্ত তিনি তার আধিপত্য বজায় রাখেন। পরবর্তীতে গ্রিক বীর আলেকজান্ডার প্রাচীন মিশরকে ম্যাসিডোনিয়ার সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
মিশরীয় ফারাওদের অদূরদর্শিতা : প্রাচীন মিশরীয় সমাজব্যবস্থায় প্রশাসন বলতে সাধারণত ফারাওদের দ্বারা পরিচালিত সকল ক্রিয়াকর্মকে বুঝানো হতো। কেননা এই ফারাওরা অধিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। প্রাচীন মিশরে এই ফারাওরা সকল সম্পদ এবং প্রাণের অধিশ্বর ছিলেন। নিজেদেরকে বিধাতা মনে করত এই ফারাওরা। এই সকল ফারাওদের অনুপ্রেরণায় সেখানকার সভাসদগণ অঢেল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদের মালিকে পরিণত হয়। অধিক সম্পত্তি থাকায় তারা নিজেদের সব থেকে শক্তিশালী ও বিত্তশালী মনে করত এবং এই ধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে তারা সিংহাসনলাভ করতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে।
৩. প্রশাসনিক শৈথিল্য : মিশরীয় সমাজ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় প্রাচীন মিশরীয় ফারাওদের এ উচ্চাভিলাসী ও উদাসী জীবন শৈথিল্য নিয়ে আসে। তদুপরি এই প্রশাসনিক শৈথিল্য সামন্ত যুগে (২১০০-১৭০০ খ্রিষ্টপূর্ব) প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এই বিশৃঙ্খলা দূরীভূত করার জন্য কোনো একজন প্রশাসক উদ্যোগ গ্রহণ করলেও সেখানে শান্তি স্থাপিত হয়নি।
পরিশেষে বলা যায় যে, সর্বপ্রথম মিশরীয় সাম্রাজ্যের উদ্ভব হয় খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে। দু'টি ভাগে এই সাম্রাজ্য বিভক্ত ছিল, যার একটি দক্ষিণ আর অপরটি উত্তর মিশরে। কিন্তু এই মিশরীয় সাম্রাজ্যের রাজাদের অদূরদর্শিতাই প্রাচীন মিশরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এছাড়াও রাজাদের অধীনস্ত কর্মকর্তারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে ক্ষমতার লোভে আভ্যন্তরীণ রাজা প্রশাসনকে দুর্বল করে দেয়। ফলশ্রুতিতে বাইরের শক্তিশালী ও ক্ষমতাশালী রাজারা মিশরের সমাজব্যবস্থায় তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে এবং মিশরের সোনালী সমাজব্যবস্থাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]