স্পার্টা নগর রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য
Main Features of Sparta City State

নগর রাষ্ট্র : স্পার্টা City State: Sparta
প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় যে নগর রাষ্ট্রটি প্রথমেই সবার চোখে পড়ে তার নাম হলো স্পার্টা। গ্রিক ভাষায় স্পার্টা শব্দের অর্থ হচ্ছে কর্ধিত বা বোনা জমি। যেহেতু স্পার্টা নগর রাষ্ট্রের ভূমি ছিল উর্বর ও কর্ষণযোগ্য। এজন্য এই নগর রাষ্ট্রের নাম দেওয়া হয়েছিল স্পার্টা। স্পার্টানরা ছিল যোদ্ধা জাতি, তারা নিজেদের দেশকে রক্ষার জন্য জীবনদানে সদা প্রস্তুত ছিল। এজন্যই বলা হতো স্পার্টা ইটের বদলে মানুষের দেয়াল দিয়ে সুরক্ষিত। গ্রিসের অন্যান্য নগর রাষ্ট্র থেকে স্পার্টা ছিল ব্যতিক্রম। কারণ ডোরীয় বংশোদ্ভূত স্পার্টানরা ছিল গণতন্ত্র ও প্রগতি বিরোধী। তারা স্বৈরতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রের মিশ্রণ ঘটিয়ে এক ধরনের শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। তারা যুদ্ধকে এতবেশি প্রাধান্য দিত যে, স্পার্টার সকল নাগরিকই ছিল এক একজন যোদ্ধা ।
স্পার্টা নগর রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য Main Features of Sparta City State
স্পার্টা নগর রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক পর্যালোচনা করে নিম্নোক্ত প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো-
১. শ্রেণি ভাজন : গ্রিক নগর রাষ্ট্রের ক্রমবিকাশে একটি ব্যতিক্রমী সমাজ সংগঠন নিয়ে স্পার্টার উত্থান হয়েছিল। স্পার্টা
সমাজে জনগণ প্রধানত ৩টি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
ক. স্পার্টান : স্পার্টা এবং পেলোপনেসাসের প্রাচীনতম অধিবাসী ছিল সম্ভবত একিয়ানগণ। পরবর্তীতে ডোরিয়ানগণ তাদের পরাজিত করে লেকোনিয়ায় স্থায়ী বাসস্থান স্থাপন করে এবং কালক্রমে স্পার্টান বা স্পার্টাবাসী নামে পরিচিত হয়। তারা নিজেদেরকে প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসেবে মনে করতেন। স্পার্টানরা ছিল রাষ্ট্রের সকল জমির মালিক। তাই রাষ্ট্রের সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা তারা ভোগ করত এবং এরাই ছিল মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগের ১ ভাগেরও কম।
পেরিওসি : পেরিওসি শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হলো প্রতিবেশী, যারা পরবর্তীতে গ্রিসে বহিরাগত বাসিন্দা হিসেবে পরিচিতি। লাভ করে। স্পার্টার পার্শ্ববর্তী দ্বীপ থেকে আগত লোকজন উচ্চ মূল্যের কর প্রদান করার মাধ্যমে ভূমির মালিকানা লাভ করত এবং যুদ্ধকার্যে অংশগ্রহণ তাদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। শাসন কার্য পরিচালনায় সহযোগিতা ও বাণিলা
গ. হেলট : গ্রিসের বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রে যখন উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত তখন আধিপত্য স্থপানকারী স্পার্টানরা অস্ত্রের যুদ্ধে পরিচালনার কাজে স্পার্টান ও পেরিওসি ১ ঃ ৩ হারে নিযুক্ত হতো এবং এদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না।
ক্রমবর্ধমান স্থানীয় অধিবাসীদের পদানত করতে তৎপর হয়ে পড়ে। স্পার্টার আধিপত্যের বিরুদ্ধে এখানে ব্যাপক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। স্পার্টানরা বিদ্রোহ দমন করে বন্দী স্থানীয় অধিবাসীদের ভূমিদাসে পরিণত করে। এই ভূমি দাসদেরকে হেলট বলা হতো এবং এদেরকে রাষ্ট্রের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এদের কোনো অধিকার ছিল না। ২. শাসনব্যবস্থা : ডোরিয়ান জাতিভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও স্পার্টানরা তাদের দেশে গ্রিসের অন্যান্য অঞ্চলের মতো গণতান্ত্রিক শাসন
পদ্ধতি প্রবর্তন করতে পারেনি। স্পার্টায় প্রচলিত শাসন পদ্ধতি ছিল স্বৈরাচারী ও একনায়কত্বমূলক। স্পার্টা ছিল সব রকম প্রগতি ও পরিবর্তনের বিরোধী। স্পার্টার শাসনতন্ত্র কোনো একজনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে বলে মনে করা হয় না; এবং ধারাবাহিক বিবর্তন ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এ শাসনতন্ত্র গড়ে উঠেছে। স্পার্টার শাসন কাঠামো ছিল নিম্নরূপ- ক. যুগ্ম রাজা : স্পার্টায় শাসনতন্ত্র অনুযায়ী রাজাদের একক সেচ্ছাচারিতা রহিত করার জন্য রাজ্য থেকে ২ জন রাজা নির্বাচন করা হতো। রাজ্যের কোনো বিষয়ে কোনো রাজাই একক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। তাদেরকে যুগ্মভাবে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হতো ।
খ. সিনেট : সিনেট ছিল বয়স্কদের প্রতিষ্ঠান। এটি গঠিত হতো দুজন রাজা এবং ২৮ জন বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে। ৬০ বছরের আগে কেউ সিনেটের সদস্য হতে পারত না এবং অভিজাত শ্রেণি থেকে সিনেটরদের জনগণ দ্বারা নির্বাচন করা হতো। গ. সাধারণ পরিষদ : ৩০ বছর বয়স্ক রাষ্ট্রের সকল সাধারণ জনগণ নিয়ে সাধারণ পরিষদ গঠিত হতো। পরিষদ আইন
প্রণয়ন করত এবং শান্তি ও যুদ্ধের প্রশ্নটি মিমাংসা করত। তবে এর সবই হতো কোনো বিতর্ক ছাড়া ।
ঘ. এযার : স্পার্টার শাসনব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য একটি শাখা ছিল এযার বাহিনী। এযার বাহিনীর প্রতিনিধি সংখ্যা ছিল ৫ জন। তারা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হতেন। ৫টি গ্রাম নিয়ে স্পার্টা গঠিত হয়েছিল বলেই এবারের সংখ্যা ৫ জন। এযারগণ ছিলেন সাধারণ জনগণের প্রতিনিধি ।
৩. সংবিধান : স্পার্টার নিজস্ব একটি সংবিধান ছিল। খ্রিঃপূঃ ৯০০ অব্দে লাইকারগাস নামে একজন শিক্ষাবিদ ও আইন প্রণেতা স্পার্টানদের জন্য সংবিধানের কাঠামো প্রণয়ন করেন। এ সংবিধান হোমারীয় যুগের অনেক প্রশাসনিক ব্যবস্থা বজায় ছিল। সংবিধান অনুযায়ী স্পার্টার শাসন পরিচালনা করতেন ২ জন রাজা এবং একটি অভিজাত পরিষদ। এছাড়া নাগরিকদের একটি সাধারণ পরিষদ ছিল। তবে স্পার্টার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সংগঠন ছিল এযার বা এফোবেট যারা অভিজাত পরিষদ, সাধারণ পরিষদ, শিক্ষাব্যবস্থা, ভূ-সম্পত্তি বণ্টন ব্যবস্থা, আইন প্রণয়ন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করত। এ পরিষদ নাগরিকদের জীবন যাত্রার উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখত এবং নবজাতক শিশুদের ভাগ্য নির্ধারণ করত। অর্থাৎ শিশুটি রুগ্ন হলে তাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিত ।
৪. সমরবাদী নীতি : স্পার্টানরা ছিল রক্ষণশীল ও পশ্চাৎপদ। তাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত্তি হলো সমরবাদী নীতি। স্পার্টানদের জীবনের সমস্ত দিক তাদের সামরিক প্রয়োজন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। কারণ বিশাল ও বিরূপ এক জনগোষ্ঠীর উপর প্রভুত্ব করতে হতো বলে প্রতি মুহূর্তেই স্পার্টানদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হতো ।
সমগ্র স্পার্টা ছিল যেন যুদ্ধের বিরাট এক ক্যাম্প। এ জন্য প্রত্যেক স্পার্টানের প্রথমে সৈনিক জীবন যাপন বাধ্যতামূলক ছিল। শিশুদেরকে রাষ্ট্রের সম্পদ বলে মনে করা হতো। শিশুরা ৭ বছর পর্যন্ত পরিবারের সাথে থাকার সুযোগ পেত। পরে তাকে রাষ্ট্রের আওতায় নেয়া হতো এবং তাকে অন্যান্য সকল শিশুদের সাথে একজন সফল যোদ্ধা হিসেবে তৈরি করা হতো। ৩০ বছর বয়স হলে স্পার্টান পুরুষদের পূর্ণ বয়স্ক ধরা হতো এবং পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদান করা হতো। ৩০ বছর বয়সে সে সরকারি বিভিন্ন পদে সরাসরি যোগদান করতে পারত। কিন্তু সরকারি কাজে যোগদান করার পরেও তাড়া পরিবার-পরিজনের সাথে থাকতে পারত না ।
নৈতিক অবস্থা : স্পার্টানদের অর্থনীতি প্রধানত কৃষির ওপর নির্ভর । - বাণিজ্যের বিশেষ বিকাশ ঘটেনি। ছোটরাই ছিল কৃষি উৎপাদনের মূল শ্রমশক্তি। হেলটদের শ্রমের মর অর্থ ঠ ঠা পার্টীর নাগরিক জীবনকে উজ্জীবিত করে রাখত। বাণিজ্য ও শিল্প পরত বণিক শ্রেণির নিয়ণাধীনে ছিল। স্পার্টান শাসকরা মুদ্রার প্রচলন কতিপয় বিধি নিষেধ আরোপ করেছিলেন। স্পার্টায় লোহার দার প্রচলিত ছিল।
কঠোর নিয়মতান্ত্রিকতা : নাগরিকদের রাষ্ট্র ও শাসকদের প্রতি অনুগত রাখার জন্য শাসকগাষ্ঠী কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা ও বিধি নিষেধ চালু করে। পরাজিত স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে সকল শিশুর বাঁচার অধিকার ছিল না। অন্যের পর শিশুকে দিয়ে হাওয়া হতো রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে। শিশু স্বাস্থ্যবান বিবেচিত হলে তাকে লালন পালন করার জন্য একশত জমি দেওয়া হতো। আর যদি শিশুটা রুগ্ন বিবেচিত হতো তাহলে তাকে পাহাড়ের উপর থেকে খুঁড়ে হত্যা করা হতো। সকল মাগরিকদের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল। কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তাদেরকে যোদ্ধা হিসেবে তৈরি করা হতো। ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত প্রত্যেক নাগরিককে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো। মেয়েদেরকে ২০ বছর পর্যন্ত সামরিক ব্যারাকে রাখা হতো। তারপর কর্তৃপক্ষের আদেশে তাদের মুক্তি এবং বিয়ে করার জন্য অনু দেওয়া হতো। রাষ্ট্রীয় অধিনস্ত কোনো ব্যক্তিকে ৬০ বছর পর্যন্ত পারিবারিক জীবন যাপন করতে দেওয়া হতো না। এভাবে কঠোর নিয়মতান্ত্রিকতা পালনে স্পার্টায় ৫৪৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে একটি দক্ষ সামরিক বাহিনী গড়ে ওঠে যা দক্ষিণ গ্রিসের পেলোপনীশীয় উপত্যাকায় অবস্থিত নগর রাষ্ট্রসমূহের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
. প্রতিপালন ব্যবস্থা : যুদ্ধ শিক্ষা এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করতে হতো বলে পরিবার প্রতি পাপনের জন্য স্পার্টায় সামস্ত নাগরিকদেরকে বড় বড় জমিদারি দেয়া হতো। জমি উত্তরাধিকার সূত্রে পিতা থেকে পুরের ওপর বর্তাম কিন্তু বিক্রি করার অধিকার কারো ছিল না। হেলট বা ভূমি দাসরা জমি চাষ করত।
৮. প্রগতি ও পরিবর্তন বিরোধী : স্পার্টানরা সব ধরনের প্রগতি ও পরিবর্তন বিরোধী ছিল। কোনো রকম নতুন চিন্তা তাদের লৌহ কঠিন সমাজে ফাটল সৃষ্টি করবে, এ ধারণা থেকে স্পার্টানরা ছিল পরিবর্তন বিরোধী। একই কারণে স্পার্টার নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণ ও বিদেশের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে নিরুৎসাহিত করা হতো। স্পার্টায় কাব্যচর্চাকে ঘৃণা করা হতো, কিন্তু রণসংগীত প্রচলিত ছিল। মনের বদলে দেহকে তারা প্রাধান্য দিত। দৌড়-ঝাঁপ, কুস্তি, বর্ণা ছোঁড়া ইত্যাদিতে তারা ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের অনাড়ম্বর জীবন-যাপন প্রবাদ বাক্যে পরিণত হয়েছিল।
৯. শিক্ষাব্যবস্থা : ৭ বছর থেকে স্পার্টান বালকদের শিক্ষা শিবিরে রেখে শিক্ষা দেওয়া হতো। শিক্ষা বলতে প্রধানত সামরিক শিক্ষাকে বুঝানো হতো ।
তাদের সামান্য পরিমাণ পড়তে ও লিখতে শিখানো হতো। শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল স্পার্টানদের মধ্যে সাহস, শক্তি, উদ্যোম কষ্ট সহিষ্ণুতা প্রভৃতি সঞ্চার করে যোগ্য রূপে তাদের গড়ে তোলা। এ উদ্দেশ্যে তাদের খালি পায়ে চলতে বাধ্য করা হতো এবং নির্দয়ভাবে চাবুক মেরে তাদের শরীর শক্ত করা হতো। ২০ থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত সব স্পার্টানদের সামরিক দ্বায়িত্ব পালন করতে হতো।
সাতরাং বলা যায় যে, রাষ্ট্র কাঠামোর দিক থেকে স্পার্টা ছিল অভিজাততান্ত্রিক আবার কখনো স্বৈরতান্ত্রিক। স্পার্টা ছিল গ্রিসের অন্তর্গত লোকানিয়ার রাজধানী। জাতিগত দিক থেকেই মূলত স্পার্টানরা ছিল দুর্ধর্ষ যোদ্ধা।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]