নগর রাষ্ট্র এথেন্স
City State: Athens
মধ্য গ্রিসের এ্যাটিকায় এথেন্স নগর রাষ্ট্রটি গড়ে ওঠে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল বলে এখানকার পরিবেশে সমরবাদ দানা বাঁধতে পারেনি। এখানে কৃষির তেমন পৃষ্ঠপোষকতা ছিল না বলে ভূমি দাসদের প্রতি শাসনের কোনো নজির নেই।
মূলত এ্যাটিক অঞ্চলে জলপাই, আঙ্গুর, বিভিন্ন খনিজ সম্পদ, বন্দর, পোতাশ্রয়কে আশ্রয় করে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের মাধ্যমেই নগর সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল। যা ধীরে ধীরে শান্তিপূর্ণভাবে এ্যাটিকাতে গ্রিসদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। ফলে এখানে অত্যাচার নিপরীড়নের উদয় ঘটেনি, ঘটেনি কোনো শোষণের উন্মেষও।
এথেন্স নগর রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য
Main Features of City State of Athens
মধ্য গ্রিসে স্পার্টা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক ধরনের শাসনব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে এথেন্সের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। মধ্য গ্রিসের এ্যাটিকা নামক স্থানে পার্বত্য ও অনুর্বর ভূমির সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত নগর রাষ্ট্রটিই এথেন্স নগর রাষ্ট্র নামে পরিচিত।
নিম্নে এথেন্স নগর রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো-
১. সামাজিক অবস্থা : এথেন্সে যে শ্রেণিবিভক্ত সমাজ ছিল তা হচ্ছে-
ক. প্রথম শ্রেণি : ধনাঢ্য অভিজাত মানুষেরা ছিল প্রথম শ্রেণির নাগরিক। তারা রাজনৈতিক ও নাগারিক সুযোগ সুবিধা
পূর্ণভাবে পেত ।
খ. দ্বিতীয় শ্রেণি : সাধারণ পেশাজীবী যেমন কৃষক, বণিক, নাবিক, কারিগর, শিল্পী, ব্যবসায়ী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। এরা নাগরিক অধিকার ভোগ করলেও রাজনৈতিক কোনো অধিকারই ভোগ করতে পারত না। গ. তৃতীয় শ্রেণি : ক্রীতদাস, ভূমিদাস ছিল তৃতীয় শ্রেণির। এরা ছিল পরাধীন ও তাদের স্ব স্ব মনিবের অধীনে এর
একজন জীবন্ত পণ্যস্বরূপ ।
২. শিল্প ও বাণিজ্য নির্ভর অর্থনীতি : এ্যাটিকায় প্রধান সম্পদ ছিল খনিজ ধাতু এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু বন্দর ও পোতাশ্রয় । কৃষি সম্পদের মধ্যে জলপাই ও আঙ্গুরের বাগান ছিল প্রধান। এথেন্সে তাই শিল্প বাণিজ্য এবং নাগরিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের সাথে সাথে এথেন্স বাইর থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে বাধ্য হয়। কারণ পাবর্ত ও অনুর্বর ভূমির কারণে এ্যাটিকায় পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভব ছিল না। অথচ জনসংখ্যা ছিল ক্রমবর্ধমান। কিন্তু বিদেশ থেকে আমদানি করা খাদ্য শস্যের দাম খুব বেশি হওয়ার ফলে গরিব চাষিরা ধনী ভূ-স্বামীদের নিকট প্রথমে জমিজমা অতঃপর স্ত্রী পুত্র এবং পরিশেষে নিজেকে বন্ধক রাখতে বাধ্য হতো। শেষ পর্যন্ত ঋণের দায়ে এসব গরিব চাষিরা ঋণ দাসে পরিণত হতো ।
শাসনব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের বিকাশ : পৃথিবীর গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থার ইতিহাসে প্রাচীন গ্রিসে গণতন্ত্রের বিকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অবিস্মরণীয় এক অধ্যায়। রাজতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রের গণ্ডি পেরিয়ে এথেন্সে সবশেষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রেণিবিভক্ত এথেনীয় সমাজব্যবস্থায় দরিদ্র কৃষকসহ সাধারণ মানুষের জমির ওপর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক কোন অধিকার আদায় এবং ঋণ দাসত্ব বাতিলের দাবিতে সাধারণ জনগণ সংগঠিত হয়ে সংস্কারমূলক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে : এথেনীয় গণতন্ত্রের বিকাশ পর্যায়ে যারা নেতৃত্ব প্রদান করে তারা হলেন সেলেন, ক্লিসথেনিস, পেরিক্লিস প্রমুখ । ৪. অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা : এথেন্সে খ্রিঃপূঃ ৭০০ অব্দের শেষভাগে ব্যাপক সংখ্যক কৃষক কারিগর নিঃস্ব হয়ে পড়লে রাজনৈতিক অসন্তোষ ও বিরোধ বাড়তে থাকে এবং সারা দেশে বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখা দেয়। গরিব কৃষকরা জমি ফেরৎ পাওয়ার এবং ঋণদাসত্ব বাতিলের দাবি করে। এ অবস্থায় সকল দল মিলে ৪৯৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সোলন নামে একজন জনপ্রিয় নেতাকে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের ক্ষমতা দেয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় সকলেই বুঝতে পেরেছিল যে, ব্যাপক সংস্কার ছাড়া এ সমাজ আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সেলেন এথেন্সের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ব্যবস্থার অনেকগুলো সংস্কার সাধন করেন। তিনি সমস্ত বন্ধকী ঋণ বাতিল করেন। ঋণ দাসদের মুক্ত ঘোষণা করেন এবং ঋণের দায়ে দাস বানানো প্রথাকে নিষিদ্ধ করেন। তিনি এথেন্সের নাগরিকদের সম্পত্তির পরিমাণ অনুসারে ৪ শ্রেণিতে ভাগ করেন। এর ফলে অভিজাতদের বংশানুক্রমিক আধিপত্য খর্ব হয়। এতে করে নিম্ন শ্রেণি থেকে উদ্ভূত নব্য ধনীরাও সুবিধাভোগী শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়।
৫. স্বাধীন নাগরিকদের শ্রেণিবিভাজন : তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হতো এথেন্সের স্বাধীন নাগরিকদের।
ক. প্রথম শ্রেণিতে : ধনী অভিজাত শ্রেণির মানুষ ছিল, এরা পূর্ণ রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার ভোগ করতেন।
খ. দ্বিতীয় শ্রেণিতে : জনসাধারণ, কৃষক, কারিগর, ব্যবসায়ী বণিক, নাবিক প্রভৃতি শ্রেণি ছিল। তাদের নাগরিক অধিকার
থাকলেও রাজনৈতিক অধিকার ছিল না।
গ. তৃতীয় শ্রেণিতে : এখানে ভিনদেশ থেকে আগত মানুষরা ছিল। এরা সাধারণত শিল্প উৎপাদন এবং ব্যবসায়ে নিয়োজিত থাকত। এদের কোনো নাগরিক বা রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। স্বাধীন নাগরিক ছাড়াও এথেন্সে বহুসংখ্যক দাস ছিল। দাসরা মানুষ হিসেবেই গণ্য হতো। সঙ্গে দাসরা ছিল তাদের মনিবের সম্পত্তি।
৬. আইনের শাসন : এথেন্সে আইনের দৃষ্টিতে সবার সমান অধিকার নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা ছিল। আইনের চোখে অযোগ্য
হলে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানকে অপসারণ করার বিধান কার্যকর ছিল।
৭. সাহিত্য ও সংস্কৃতি : গ্রিক নগর রাষ্ট্র এথেন্সে সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। এই সময় এথেন্সে থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ছিল একটি মুক্তমঞ্চ। এ সময় এথেন্স দর্শনেও প্রভূত উন্নতি সাধান করে। ইতিহাস খ্যাত দার্শনিক, কবি,সাহিত্যিকদের পদ চারণায় এথেন্স মুখরিত ছিল। এ সময় থিয়েটার তহবিলও গঠন করা হয়েছিল। নাগরিকদের চিত্তবিনোদন, রাজনীতি, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বাৎসরিক উৎসব ইত্যাদি এথেন্স থিয়েটারে উৎসব- উদ্দীপনায় উদযাপিত হতো।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত