এথেন্সীয় গণতন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা কর । Discuss about democracy in alterns.

এথেন্সীয় গণতন্ত্র Democracy in Athens

নগর কেন্দ্রিক সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রাচীন গ্রিস ছিল কতগুলো ক্ষুদ্র নগররাষ্ট্রের সমষ্টি । ধীরে ধীরে এই ক্ষুদ্র নগর রাষ্ট্রগুলো একত্রিত হয়ে অপেক্ষাকৃত বৃহৎ নগর রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নগর রাষ্ট্র ছিল এথেন্স। গ্রিকরা দেবী ‘এলেনাকে' রাষ্ট্রের অধিবাসী দেবী হিসেবে মনে করতো। দেবী এলেনার নামে এই নগর রাষ্ট্রের নাম হয় এথেন্স। প্রাচীন গ্রিসে এই নগর রাষ্ট্রটিও ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও উন্নত। ঐতিহাসিকদের ধারণা অনুযায়ী এখানেই মূলত পৃথিবীর ইতিহাসে গণতন্ত্রের ভিত্তি রচিত হয়েছিল। আর তা মূলত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পেরিক্লিস যুগে। সেলেন, ক্লিসথিনিস, পেরিক্লিস প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ছিলেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রাণ পুরুষ। ঋণ দাসত্ব মোচনসহ জনজীবনের সুখ শান্তি প্রতিষ্ঠায় গণতন্ত্রকামীরা এগিয়ে আসেন। তাদের প্রচেষ্টায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনমত গড়ে ওঠে। এভাবে এথেন্স তথ্য প্রাচীন গ্রিসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়ে বিশ্ব ইতিহাসে যেন নব অধ্যায় সূচিত হতে থাকল। ঐতিহাসিকদের মতে, ৪৬১ হতে ৪২৯ খ্রিঃপূঃ অব্দে পেরিক্লিসের আমলেই উক্ত গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ ঘটে ।
সেলেনের সংস্কার : সেলেন ছিলেন এক অভিজাত পরিবারের সন্তান। তিনি তাঁর ক্ষমতার জন্য একসময় জনগণ কর্তৃক অধিনায়ক হতে সক্ষম হন। তিনি রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে এক আমূল সংস্কার সাধনে এগিয়ে আসেন। এতে গণতন্ত্র চর্চা ও বিকাশের পথ আরও সুগম হয়ে ওঠে। তার সংস্কারগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে নিম্নরূপ—
ক. ঋণ বন্ধন মোচন/ পুরোনো ঋণ বাতিল : সেলেনের সংস্করণের একটা দিক ছিল দেশের সকল প্রকার ঋণ গ্রহীতাকে ঋণ দাসত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া ।
খ. জমিদারির নির্দিষ্ট সীমানা বন্ধন : এ নীতির আওতায় জমির সিলিং নির্ধারণ করা হয়। ফলে ভূ-স্বামীদের শোষণমাত্রা কমে যেতে থাকে। এতে সম্পত্তির পরিমাণ অনুযায়ী রাষ্ট্রের জনগণ চার শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে সুবিধাভোগী হিসেবে নিম্নশ্রেণি এবং নব্য ধনী শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে।
গ. অর্থনৈতিক সংস্কার : দেশের উৎপাদিত কৃষি পণ্য কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে রফতানির মাধ্যমে গম ও অপরাপর খাদ্যশস্য আমদানির মাধ্যমে চাহিদা মাফিক খাদ্য দ্রব্যের যোগান দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় ।
ঘ. প্রশাসনিক সংস্কার : সেলেন অভিজাতদের একচেটিয়া ক্ষমতা হ্রাস করার জন্য প্রশাসনে এক আমূল পরিবর্তন আনায়নে উদ্যোগ নেন। যেমন-
i. ৪০০ সদস্যের পরিষদ গঠন।
ii. বাউল নামক পরিষদ গঠন অর্থাৎ রাষ্ট্রের প্রচলিত চার সম্প্রদায় বা জাতি হতে প্রত্যেকের জন্য ১০
লটারীর মাধ্যমে মনোনীত ও নির্ধারণ করা হয়।
iii. জনগণ তাদের পছন্দমত ব্যক্তিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচিরপতি নির্বাচন করার অধিকার ভোগ করবে এতে সাধা নাগরিকেরা সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হওয়ার সুযোগ লাভ করে।
স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বসবাসরত বিদেশিদের নাগরিক অধিকার প্রদান।
৫. শিক্ষা ও নিঃসন্তান ব্যক্তির উত্তরাধিকার মনোনয়ন সংস্কার : দেশের উদীয়মান তরুণদের জন্য কতগুলো বিষয় যেমন শিক্ষা
বাধ্যতামূলক করা হয়। সে বিষয়গুলো হচ্ছে- i. শরীর চর্চা, ii. সংগীত চর্চা, iii. কাব্য শিক্ষা।
শুধু এসব বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়নি। সাথে সাথে এ নীতিও চালু করা হয় যে, যেসব অভিভাবক তাদের সন্তানদের এসব শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারতেন না তারা পরবর্তীকালে তার সন্তানদের কাছ থেকে বৃদ্ধ বয়সে কোনো প্রকার ভরণ- পোশনেরও অধিকার ভোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। নিঃসন্তানগণ তার নিজ ইচ্ছানুসারেই তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করার অধিকার ভোগ করতে পারবেন।
সালোনের উপরোক্ত সংস্কারসমূহে কিছুটা ত্রুটিও লক্ষ করা যায়। তিনি ঋণগ্রস্তদের মুক্ত করতে চাইলেও পূর্বে ঋণের দায়ে ক্রীতদাস রূপান্তরিত নাগরিকদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে পারেননি। খাজনার হার না কমানোয় দরিদ্র চাষিদের বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
ক্লিস থেনিসের সংস্কার : খ্রিঃপূঃ ৫১০ অব্দে গণতন্ত্রমনা জনপ্রিয় শাসক ক্লিসথেনিস ক্ষমতায় আসেন। তিনি তার প্রশাসনে নিম্নবর্ণিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে তৎপর হন। তার বাস্তবায়িত সংস্কারগুলো হচ্ছে—
১. রাজ্যের সকল স্বাধীন নাগরিকদের যাবতীয় নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ।
২. সেলেন প্রবর্তিত নাগরিকদের ৪টি শ্রেণির স্থলে আরো ১টি শ্রেণি বর্ধিতকরণ।
৩. উক্ত শ্রেণি (২ং এ বর্ণিত) হতে প্রতি শ্রেণি পিছু ৫০ জন সদস্য মনোনীত করে ৫০০ সদস্যের পরিষদ গঠন ।
৪. প্রতিটি জাতির একজন নেতৃত্বে স্থানীয় সেনা প্রতিনিধিকে নিয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন।
পেরিক্লিসের সংস্কার : খ্রিঃপূঃ ৪৬১ থেকে ৪২৯ খ্রিঃপূঃ সময়কাল হচ্ছে শাসক পেরিক্লিসের আমল। তিনি ক্ষমতায় আসার
পর রাজ্যের শাসনব্যবস্থায় সংস্কার আনয়নপূর্বক তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হন। তার গৃহীত সংস্কারগুলো হচ্ছে—
১. স্বাধীন গণপরিষদ গঠন। জনগণের সংস্কার হিসেবে গণপরিষদ দশদিন পর পর অধিবেশনে মিলিত হয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ
ও বৈদেশিক বিষয়ে সকল প্রকার সিদ্ধান্ত নেয়ার বিধান বাস্তবায়ন করেন।
২. রাষ্ট্রীয় উচ্চ পদে সকল নাগরিকের প্রার্থী হবার অধিকার বাস্তবায়ন ।
৩. ৫০০ সদস্যের রাষ্ট্রীয় তদারকী পরিষদ গঠন। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ৫০০ জন সদস্য নিয়োগ করতঃ তাদের ওপর
রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত কাজকর্ম তদারকের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়।
৪. গণতান্ত্রিক পন্থায় আদালত গঠন ও সংখ্যাগরিষ্ঠের মতানুসারে বিচারের রায় প্রদান বাস্তবায়ন ।
৫. গণপরিষদ কর্তৃক ১০ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাবান জেনারেল পরিষদ গঠন ।
উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রে বসবাসকারী এথেনীয় নাগরিকেরাই কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারত। দাস, বিদেশি ও নারীরা এসব অধিকার ভোগ থেকে বঞ্চিত থাকলেও গণতান্ত্রিক উক্ত বিকাশ এ যুগের শিক্ষা-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান- প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে সৃজনশীল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]