গ্রিক সভ্যতার সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি,ধর্মীয় ব্যবস্থা Social,Economy, Riligions System of Greek Civilization

এথেন্স হলো গ্রিক সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিদ্যাপীঠ। এ যুগেই গ্রিক সভ্যতার সমাজ জীবন ও সামাজিক ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয় ।
গ্রিক সভ্যতার সমাজব্যবস্থায় প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল শ্রেণি বিভক্ত সমাজব্যবস্থা। গ্রিক নগর রাষ্ট্রের শ্রেণিবিভাজন নিয়ে নিচে আলোকপাত করা হলো-
ক. স্পার্টান : স্পার্টান এবং পেলোপনেসাসের প্রাচীনতম অধিবাসী ছিল সম্ভবত একিয়ানগণ। পরবর্তীতে পেরিয়ানগণ তাদের পরাজিত করে লোকানিয়ায় স্থায়ী বাসস্থান স্থাপন করে এবং কালক্রমে স্পার্টান বা স্পার্টাবাসী নামে পরিচিত হয়। তারা নিজেদেরকে প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসেবে মনে করত। স্পার্টানরা ছিল রাষ্ট্রের সকল জমির মালিক। তাই রাষ্ট্রের সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা তারা ভোগ করত এবং এরাই ছিল মোট সংখ্যার ২০ ভাগের ১ ভাগেরও কম।
খ. পেরিওসি : পেরিওসি শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হলো প্রতিবেশী। যারা পরবর্তীতে গ্রিসে বহিরাগত বাসিন্দা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। স্পার্টার পার্শ্ববর্তী দ্বীপ থেকে আগত লোকজন উচ্চ মূল্যের কর প্রদান করার মাধ্যমে ভূমির মালিকানা লাভ করত এবং যুদ্ধ কার্যে অংশগ্রহণ তাদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। শাসনকার্য পরিচালনায় সহযোগিতা ও বাণিজ্য পরিচালনার কাজে স্পার্টান ও পেরিওসি ১ : ৩ হারে নিযুক্ত হতো এবং এদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না।
গ. হেলট : গ্রিসের বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রে যখন উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত তখন আধিপত্য স্থাপনকারী স্পার্টানরা অস্ত্রের যুদ্ধে ক্রমবর্ধমান স্থানীয় অধিবাসীদের পদানত করতে তৎপর হয়ে পড়ে। স্পার্টার আধিপত্যের বিরুদ্ধে এখানে ব্যাপক বিদ্রোহ সংগঠিত হয়েছিল। স্পার্টানরা বিদ্রোহ দমন করে বন্দী স্থানীয় অধিবাসীদের ভূমিদাসে পরিণত করে। এই ভূমিদাসদেরকে হেলট বলা হতো এবং এদেরকে রাষ্ট্রের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এদের কোনো অধিকার ছিল না। উল্লিখিত তিন শ্রেণি ছাড়াও স্পার্টায় আরও এক শ্রেণির মানুষের পরিচয় পাওয়া যায়। এরা না ছিল হেলট, না ছিল স্বাধীন নাগরিক। সম্ভবত স্পার্টান পুরুষ ও হেলট নারীদের অবৈধ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে তাদের জন্য।
প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার সমাজ জীবন ও সমাজ কাঠামোর ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে আলোকপাত করা হলো-
১. কৃষি ব্যবস্থা : গ্রিক সমাজে জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায় ছিল কৃষি। তবে গ্রিক সমাজ দাস নির্ভর হওয়ায় দাসরাই কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। গম, বার্লি, জলপাই ও ডুমুর ছিল গ্রিসের কৃষি উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ ফসল। কৃষকরা মুক্ত নাগরিক হিসেবে সমাজে রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করত। তবে ভূমিদাসদের গ্রিক সমাজে কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। এরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে প্রভুদের জমিতে ফসল ফলাত।
২. পশু পালন : প্রাচীন গ্রিক সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পশুপালন। সমাজের অধিকাংশ জনগণ পশুপালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। পশু পালনের কাজে পশুমালিক দাসদেরকে নিয়োজিত করত। গ্রিক সমাজের লোকেরা কৃষি গত ব্যবহার করত। কাছে
৩. দাস প্রথা : দাস প্রথা ছিল প্রাচীন গ্রিক সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। গ্রিকদের আগে কোনো সমাজই দাসত্বের বুনিয়াদের উপর গড়ে ওঠেনি। গ্রিক সমাজে দাস প্রথা একটা স্বীকৃত প্রথা ছিল। গৃহ, খনিজ শিল্প, বাণিজ্যিক নৌবহর, কারখানার শ্রমিক এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির বিকল্প হিসেবে দাসদের ব্যবহার করা হতো। এ সমাজে দাসরাই ছিল খাবতীর অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের চালিকা শক্তি ।
৪. পিতৃতান্ত্রিক পরিবার : গ্রিসের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সংগঠন ছিল পরিবার। পরিবার ছিল পিতৃতান্ত্রিক। প্রত্যেক পরিবার
সন্তান চায়, তবে তৎকালীন গ্রিক সমাজে অবাঞ্ছিত সন্তান হত্যা করতে আইনগত কোনো বাধা ছিল না। আবার পরিবারের আয়তন সীমিত রাখার জন্য সন্তান হত্যায় উৎসাহিত করা হতো। এক্ষেত্রে কন্যা সন্তান হত্যা করা হতো। পরিবারে পিতার প্রবল প্রতাপ ছিল। পিতা নবজাত শিশুকে মেরে ফেলতে পারত, পুত্র কন্যাদের শ্রম ভাড়া দিয়ে অর্থাৎ উপার্জন করতে পারত। এমন কি স্বামী মৃত্যুর আগে বিধবা স্ত্রীর ভাবী স্বামী নিযুক্ত করে যেতে পারত ।
৫. নারীর অমর্যাদা : প্রাচীন গ্রিসে নারীর কোনো মর্যাদা ছিল না। কন্যা পক্ষকে বিয়েতে যৌতুক দিতে হতো। বিয়ের পরও
নারীরা যথাযোগ্য স্ত্রীর মর্যাদা পেত না। পুরুষদের জন্য উপ-পত্নী রাখা বিবাহের অবাধ যৌনাচার সমাজ স্বীকৃত ছিল। গ্রিসে নারীকে গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হতো। তাদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার বা স্বাধীনতা ছিল না। নারীরা আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করা থেকেও বঞ্চিত ছিল। নারীর এরূপ চরম অমর্যাদা ও অবমূল্যায়নের কারণে গ্রিসের অগ্রগতিতে তাদের কোনো অবদান ছিল না ।
৬. শিক্ষা-সংস্কৃতি : শিক্ষা সংস্কৃতির দিক দিয়ে গ্রিস ছিল খুবই উন্নত। এথেন্স ছিল গ্রিসের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রধান পীঠস্থান। স্পার্টার শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল সামরিক বিষয়ভিত্তিক। তাছাড়া ব্যাকরণ, সংগীত, ধর্মতত্ত্ব, সম্পর্কেও তারা জ্ঞানার্জন করত। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তারা যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছে তা আজো অম্লান ।
এখানকার চারণ কবিরা বীরত্বপূর্ণ কাহিনি কাব্য আকারে রচনা করে সারাদেশে তা প্রচার করতেন।
৭. সাহিত্য ও নাট্য চর্চা : প্রাচীন গ্রিস ছিল সাহিত্য ও নাট্যচর্চার লীলাক্ষেত্র। গ্রিক কবি হোমার রচনা করেন বিখ্যাত মহাকাব্য ইলিয়ড ও ওডিসি যা গ্রিক সাহিত্যাঙ্গনকে উজ্জ্বলতায় ভাস্বর করে দিয়েছে। এছাড়া ধর্মকে কেন্দ্র করে গ্রিসে বার্ষিক নাটক অনুষ্ঠিত হতো। তৎকালীন বিখ্যাত ট্র্যাজিক নাট্যকার হিসেবে এস্কিলাস, সফোক্লিস ও ইউরিপাইডিসের নাম প্রণিধানযোগ্য। সফোক্লিসের কিং ইডিপাস ছিল বিশ্বখ্যাত নাটক।
খেলাধুলা : গ্রিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল খেলাধুলা। গ্রিকরা বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রের মধ্যে সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার খ্রিঃপূঃ ৭৭৬ অব্দে অলিম্পিক খেলার প্রবর্তন করে। এর মাধ্যমে গ্রিক জাতিসত্তার পূর্ণ রূপায়ণ ঘটে এবং সাংস্কৃতিক ঐক বিকশিত হয়। গ্রিকদের কাছ থেকে আধুনিক বিশ্ব অলিম্পিক খেলা গ্রহণ করেছে।
গণিকাবৃত্তি : গ্রিসে গণিকাবৃত্তি আইন সিদ্ধ ছিল। গণিকাদের উপর বিশেষ কর ধার্য করা হয়েছিল।
ছিলেন, আমাদের মনোরঞ্জনের জন্য বার নারী আছে, দৈহিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য উপপত্নী আছে এবং আইনগত সন্তানের জননী রূপে স্ত্রী আছে।
2. সামাজিক বৈষম্য : গ্রিক সমাজব্যবস্থায় ব্যাপক সামাজিক বৈষম্য ছিল। ধনীর তুলনায় দরিদ্রের সংখ্যা ছিল অধিক। গ্রিসের সাম্যের গতি ছিল খুব সীমাবদ্ধ। সমান অধিকার এবং যৌথ মালিকানা ছিল নাগরিকদের সম্পত্তি ও জীবন প্রণালিতে কিন্তু দাসদের ক্ষেত্রে তা ছিল হাস্যকর। এ সমাজে দাসের পরিশ্রমকে অবলম্বন করে নাগরিক শ্রেণি বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিত।
১১. বিজ্ঞান চর্চা : বিজ্ঞান চর্চা হলো গ্রিক সভ্যতার অনন্য চরিত্র। গ্রিকদের বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে ডেমোক্রিটাস, হিরাক্লিটাস,
হিপোক্রেটিস, পীথাগোরাস ও লিউসিপাস এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
উদ্যান কৃষি : প্রাচীন গ্রিসে মাঝে মাঝে কৃষি উৎপাদনের স্বাভাবিক গতি হ্রাস পেতে এবং কৃষি উদ্যানের ঘাটতি দেখা দিত। কৃষির এই অস্বাভাবিক অবস্থায় প্রভাব থেকে সমাজ জীবনকে মুক্ত রাখার জন্য প্রাচীন গ্রিসে উদ্যান কৃষির বিকাশ লাভ ঘটেছিল। এই উদ্যান কৃষিতে দাস শ্রম বাধ্যতামূলক ছিল।

গ্রিক সভ্যতার অর্থনীতি Economy of Greek Civilization

গ্রিকদের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো ছিল কৃষি কাজ ব্যবসা, পশুপালন, হস্তশিল্প, কুটির শিল্প, দাস ব্যবসা, আমদানি, রপ্তানি, নির্মাণ শিল্প ইত্যাদি। গ্রিকদের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল অভিজাত ও বণিকদের হাতে। দাস ক্রয় বিক্রয় ছিল গ্রিকদের অন্যতম অর্থনৈতিক কাজ। গ্রিসের কৃষকরা যব বার্লি, পীচ, ডাল, আঙ্গুর, জলপাই ডুমুর প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন করত। প্রাচীন গ্রিসে মদ ও জলপাই তেলের উৎপাদন হতো প্রচুর পরিমাণে। নিজেদের প্রয়োজনীয় পোশাক পরিচ্ছদ নিজেরাই তৈরি করত। গ্রিসের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো-
১. কৃষি অর্থনীতি : দাস নির্ভর কৃষি অর্থনীতির কৃষককুল ছিল দরিদ্র শ্রেণিভুক্ত। নাগরিক পরিচিতি ও রাজনৈতিক অধিকার ছিল কৃষকদের। কোনো অধিকারই ছিল না ভূমি দাসদের। তারা ন্যূনতম ভরণ পোষণের বিনিময়ে প্রভুর জমিতে ফসল ফলাতো। জলপাই, যব, ডুমুর, বার্লি ছিল কৃষি উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ কৃষিজ
২. হস্ত ও কুটির শিল্প : গ্রিসের অর্থনীতিকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে হস্ত ও কুটির শিল্প। গ্রিসরা কুটির শিল্পে জুতা, অলঙ্কার, মৃৎপাত্র প্রভৃতি বস্তু তৈরি করত। এ ছাড়াও গ্রিসরা নিজেদের পোশাক নিজেরাই তৈরি করত। বস্ত্র তৈরিতে গ্রিসরা খুবই পারদর্শী ছিল।
৩. আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য : কৃষি, হস্তশিল্প ও কুটির শিল্প ছাড়াও গ্রিসরা আমদানি ব্যবসা-বাণিজ্যকে জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছিল। গ্রিকরা যোগাযোগের সুবিধা থাকার জন্য, সমুদ্র পথেই আমদানি, রপ্তানি, বাণিজ্য করত। গ্রিকদের দ্বীপ অঞ্চলের অধিবাসী হিসেবে পোতাশ্রয় খুব কাছে ছিল। সুতরাং গ্রিকরা এভাবেই সমুদ্র পথে আমদানি রপ্তানিতে পারদর্শী ছিল।
৪. দাস ব্যবসা : গ্রিকদের অন্যতম ব্যবসা ছিল দাস ব্যবসা। দাস বেচা-কেনা ও দাস ভাড়া দিয়ে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করত দাস মালিকরা। তাই ক্রীতদাস ছিল গ্রিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এছাড়াও কৃষি শিল্পসহ অন্যান্য ভারী কাজের জন্য দাস শ্রমের প্রাধান্য ছিল এবং বহুলাংশেই যাবতীয় কর্মগুলো দাস শ্রমের ওপর নির্ভরশীল ছিল।
৫. ক্রীতদাস ক্রয় বিক্রয় : নিছক পণ্য রূপে গণ্য করা হতো প্রাচীন গ্রিসের দাসকে। কারণ তখন অঢেল কৃতদাস পাওয়া যেত এবং তাদের ভরণপোষণের খরচও ছিল কম। সস্তা অথচ পরিশ্রমী কৃতদাস ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা সহজে প্রচুর-বিত্ত অর্জন করত। বহু এথেনিয়ান নাগরিক ধনবান হয়েছিল মূলত ক্রীত দাসদের ভাড়া খাটিয়ে।
খনিজ শিল্প : রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে মূল্যায়িত ছিল খনিজ সম্পদ। খনিগুলোকে নাগরিকদের কাছে ইজারা দিত রাষ্ট্র কিছু খনি থেকে আকরিক উত্তোলন করত ক্রীতদাস। খনিতে কর্মরত দাসদের জীবন ছিল দুর্বিসহ। কারণ পনির কাে যন্ত্রপাতি ব্যবহার ছিল না। বাধ্যতামুলকভাবে দশ ঘণ্টা খনিতে দাসদের কাজ করতে হতো। কেউ তা করতে অধ জানালে তাকে অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হতে হতো। তাছাড়া যাতে পালাতে না পারে সেজন্য তাদের পায়ে শিল্প পরিয়ে রাখা হতো।

গ্রিক সভ্যতার ধর্মীয় ব্যবস্থা Riligions System of Greek Civilization

হেলনীয় যুগের গ্রিকরা সৃষ্টি কর্তার আরাধনা করত বিভিন্ন দেব-দেবী আর প্রকৃতিকে প্রতীক হিসেবে গণ্য করে। তার আঞ্চলিক দেবতার পূজা করত। অর্থাৎ অঞ্চলভেদে গ্রিকদের দেব-দেবীর পৃথক ও স্বতন্ত্র ছিল।
এ যুগেই গ্রিক সভ্যতার ধর্মীয় ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। গ্রিকদের ধর্মীয় ব্যবস্থার প্রধ প্রধান দিকগুলো নিচে আলোকপাত করা হলো-
১. বহু ঈশ্বরবাদ : গ্রিকরা বহু ঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিল। জনসাধারণের ধর্ম বিশ্বাস হতেই গ্রিক ধর্মের উৎপত্তি ঘ
শুরুতেই সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাসী ছিল এবং প্রেতাত্মার পূজা করত। পরে প্রেতাত্মাগুলো দেব-দেবীর রূপ নেয় এবং বহু ঈশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত গ্রিকদের এ বহু ঈশ্বরবাদী বিশ্বাসের ভিত্তিতেই গ্রিক ধর্ম তৎকালীন গ্রিসে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পূজা-পার্বন : পূজা-পার্বণ ছিল ধর্ম পালনের অন্যতম মাধ্যম। গ্রিসে পুরোহিত শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল না। তাই পারিবারি প্রধানগণ, পারিবারিক পূজাসমূহে এবং রাষ্ট্রীয় পূজায় স্থানীয় নগর ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রশাসকগণ পুরোহিতের দ্বায়িত্ব পালন করত। বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রের মানুষ একসাথে ডেলফিন মন্দিরে এপোলো দেবতার পূজা করত, সকীনা ডেলোস দ্বীপে অবস্থিত। তখন মন্দিরে বাদ্য বাজানো হতো। গ্রিকরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির পাশাপাশি বড় বড় বীর যোদ্ধাদেরও পূজা করত। ৩. প্রকৃতি ও দেব-দেবীকে বিশ্বাস : প্রকৃতি পূজারি ও দেব-দেবিতে বিশ্বাসী ছিলেন, প্রাচীন গ্রিকরা। প্রতিটি নগর ও অঞ্চলের ছিল নিজস্ব দেবতা। জিউস ছিলেন প্রধান দেবতা। তিনি কখনো বজ্র ও বৃষ্টির দেবতা, কখনো আকাশের দেবতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রেমের দেবী ছিলেন অ্যাপ্রোডাইট। তাদের সূর্য দেবতা ছিলেন অ্যাপোলো। এছাড়াও পসিডন ছিলেন সমুদ্রের দেবতা এবং জ্ঞান ও বায়ুর দেবী ছিলেন চিরকুমারী এথেনা।
৪. ক্রীড়া অনুষ্ঠান : গ্রিকরা প্রতি বছর ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজন করত দেব-দেবীর আশির্বাদ লাভের জন্য। গ্রিকদের ধারণা মতে, দেবতারা বসবাস করতেন অলিম্পাস পর্বতচূড়ায়, এসব দেবতার ইচ্ছায় সৃষ্টি হতো নব উত্থান, প্রলয়, ঝড়, বৃষ্টি ..প্রভৃতি। এজন্যই তারা দেবতাদের সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রতিবছর অলিম্পিক খেলার আয়োজন করত।
৫. ধর্মীয় আরাধনা : গ্রিকরা দেব-দেবীদের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধর্মীয় আরাধনা হিসেবে ধর্ম শোভাযাত্রা, প্রার্থনা বিভিন্ন দ্রব্য উৎসর্গ ভোগের ব্যবস্থা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত করতো।
৬. নৈতিক অনুশাসনের অভাব: ধর্ম মানুষকে পাপ থেকে রক্ষা করে বা মানুষের আধ্যাত্মিক কল্যাণ বিধান করে এমন ধারণা গ্রিসে অনুপস্থিত। তাই বলা যায় গ্রিসের ধর্ম কোনো নৈতিক ব্যবস্থা নয়। তাই গ্রিক ধর্মে কোনো নৈতিক অনুশাসন নেই, অপবাক্য নেই, নেই আচার পদ্ধতির জটিলতা ।
৭. দেবতা ও অর্চনাকারীর মধ্যকার পারস্পরিক সমঝোতার ধর্ম : গ্রিকরা দেবতা ও মানুষের মধ্যে খুব একটা ব্যবধান সৃষ্টি করেনি। তাদের ধারণা দেব-দেবীর আচার-আচরণ মানুষের মতোই এবং তারা ঘড়রিপুর বশ। দেবতারা আরও অতিপ্রাকৃত শক্তির অধিকারী ছিল, কিন্তু মানুষ তা নয়।
৮. দৈব বাণীতে বিশ্বাস : গ্রিকদের ধারণা ঘটনা প্রবাহ দেবতাদের ইচ্ছায় চালিত হয়। গ্রিকরা সব সময়ই ভবিষ্যৎ বাণীতে বিশ্বাসী ছিল। তাই তারা প্রতিটি কাজে দেবতার দৈব বাণী কামনা করত এবং দ্বৈববাণী দ্বারা প্রভাবিত হতো।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]