গ্রিক সভ্যতার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ / হেলনীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক Main Features of Greek Civilization/ Various Elements of Hellenic Culture

গ্রিক সভ্যতা শিক্ষা ও রাষ্ট্রীয় বিধি-ব্যবস্থায় যেমন সুসংগঠিত ছিল তেমনি অর্থনৈতিক দিক দিয়েও সমৃদ্ধ ছিল। ধর্ম, দর্শন, চিত্র শিল্প, শিল্প, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ে গ্রিকরা এমন সমৃদ্ধির অধিকারী ছিল যে, গ্রিক সভ্যতা, মানব সভ্যতার ইতিহাসকে চির অম্লান করে রেখেছে। গ্রিক সভ্যতার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে আলোকপাত করা হলো-
১. ভৌগোলিক অবস্থান : ইউরোপ মহাদেশের বলকান উপদ্বীপের দক্ষিণাংশে অবস্থিত একটি পার্বত্যময় দ্বীপ রাষ্ট্র হলো গ্রিস।
গ্রিসের আয়তন ৪৫,০০০ বর্গ মাইল ।
সাধারণভাবে গ্রিস ভূখণ্ড নির্দেশ করতে বলা যায়। ইজিয়ান সাগর পূর্ব দিকে গ্রিসকে এশিয়া মাইনর থেকে পৃথক করেছে। এড্রিয়াটিক ও আয়োনীয় সাগর পশ্চিম দিকে ইটালী ও সিসিলি থেকে পৃথক করেছে। আবার দুটি উপসাগর দ্বারা অভ্যস্তরে গ্রিস ভূখণ্ড দুই অংশে বিভক্ত হয়েছে। যেমন- পশ্চিম দিকে কেরিস্ত উপসাগর এবং পূর্বদিকে সারণিক উপসাগর।
২. সামাজিক অবস্থা : গ্রিক সমাজে সকল শ্রেণির মানুষের বসবাস ছিল। সেখানে অভিজাত, কৃষক, শ্রমিক, বণিক ভূমিদাস ও কৃতদাসের সমন্বয়ে গ্রিক সমাজ গঠিত হয়েছিল। তবে সমাজে শ্রেণি বিন্যাস ছিল। সমাজের উচ্চতর স্থানে ছিল অভিজাত শ্রেণি। তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হতো। তারা সমাজের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত। অপর পক্ষে কৃষক শ্রমিক শ্রেণিরা ছিল সমাজের নিম্নতম স্থানে। তাদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। তবে সমাজের বণিক শ্রেণিরা বেশ সুযোগ-সুবিধা পেত ।
৩. অর্থনৈতিক অবস্থা : গ্রিসের মূল অর্থনীতি ছিল কৃষি। কৃষির পাশপাশি পশুপালনও করা হতো। কৃষি চাষের পাশাপাশি এরা বাণিজ্য সম্পর্কেও আগ্রহী ছিল। গ্রিক সভ্যতায় ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতি হয়েছিল। গ্রিকদের জমি ছিল অনুর্বর। ফলে জমিতে খাদ্য উৎপাদন হতো না ।
৪. সরকার ব্যবস্থা : গ্রিসে এক সময় সরকার ব্যবস্থা ছিল রাজতান্ত্রিক। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার ব্যবস্থা রাজতান্ত্রিকতার পরিবর্তে অভিজাত তান্ত্রিকতায় রূপ লাভ করে। এতে করে গ্রিস গণতন্ত্র বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা লাভ করে। ৩০ সদস্য বিশিষ্ট কাউন্সিলর রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করত। তবে গ্রিসের বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রে সরকার ব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন রকম ছিল ।
৫. গ্রিক লিপি : গ্রিকদের লিপি সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। তারা ফিনিশীয়দের কাছ থেকে লিখন বিদ্যা আয়ত্ত করেছিল।
ফিনিশীয়রা ২২টি বর্ণমালা উদ্ভাবন করেছিল। গ্রিকরা এর সাথে আরও বর্ণ যোগ করে। যেগুলো ছিল ইংরেজি।
৬. গ্রিক ভাস্কর্য শিল্প : গ্রিক ইতিহাসে ভাস্কর্যের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। গ্রিসের ভাস্করগণদের অনেক সম্মান করা হতো। ভাস্করগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন, মাইনর ফিদিয়াস এবং প্রাক্সিটেলেস। ফিদিরাস ৭০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট দেবী এথেনীয় মূর্তি তৈরি করেছিলেন। যা ছিল গ্রিক ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য কীর্তি ।
৭. গ্রিক সাহিত্য : খ্রিষ্টপূর্ব নবম শতকে মহাকবি হোমার তার মহাকাব্য ইলিয়ড ও ওডেসি রচনা করেছিলেন। হোমার গ্রিক সাহিত্যকে একটি সমৃদ্ধ সাহিত্যে পরিণত করেন। সাহিত্য ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কৃতিত্ব দেখান হোসিওড। তিনি দেবতা ও বিশ্বভ্রমাণ্ডের মানুষের জীবন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন ।
৮. গ্রিক স্থাপত্য : গ্রিক স্থাপত্য রীতিতে তিনটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা— ক. ডোরীয় রীতি, খ. আয়োনীয় রীতি ও গ. কারিন্থীয় রীতি। গ্রিকরা স্থাপত্য শিল্পে ব্যাপক বিকশিত হয়েছিল, তাদের শিল্পের মননশীলতা ও শিল্পকলা ছিল অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তারা এক্সোকালিস এর মতো বিখ্যাত শিল্পকর্মের স্রষ্টা ছিলেন ।
৯. গ্রিকদের খেলাধুলা : গ্রিস প্রথমে অলিম্পিক খেলার প্রবর্তন করে। যেহেতু গ্রিস হচ্ছে অনেক চিন্তাবিদের জন্মভূমি। সেহেতু
তারা সমগ্র বিশ্বকে একটি বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য ৭৭৬ খ্রিঃপূঃ এই অলিম্পিক খেলার প্রচলন করেছিল।
১০. গ্রিক দর্শন শাস্ত্র : গ্রিককে বলা হয় দার্শনিকদের লীলাভূমি। বিখ্যাত দার্শনিক থেলিস গ্রিসে অন্যগ্রহণ করেন এবং তিনি
দর্শন শাস্ত্রে ব্যাপক পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। গ্রিক দার্শনিকরা মানুষ এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের উদ্ভব ও বিষয়াবলি আলোচনা করতে গিয়ে সমৃদ্ধ দর্শন উপহার দেন।
১১. ধর্মীয় সংগঠন : গ্রিকরা বিভিন্ন দেব-দেবীকে বিশ্বাস করত। তাদের মধ্যে পূর্ব পুরুষদের পূজা করার প্রচলন ছিল। তবে
খ্যাতিমান পূর্ব-পুরুষদের পূজার সময় তারা নানা রকম উৎসব ও আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করত।
১২. গ্রিক বিজ্ঞান : বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গ্রিকরা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। কারণ গ্রিককে বলা হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের মিলন ক্ষেত্র। সেখানে অনেক বিজ্ঞানী জন্মগ্রহণ করেছেন। বিজ্ঞানী থেলিস সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। এই সময় তারা পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেছিলেন। বিজ্ঞানী পীতাগোরাস জ্যামিতি সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছিলেন। হিপোক্রিটাস চিকিৎসা শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য দেখিয়েছিলেন।
১৩. সামরিক ব্যবস্থা : গ্রিকরা সামরিক ক্ষেত্রে কঠোর নিয়মতান্ত্রিকতা পালন করেছিল। তারা হেলটদের সন্তানদের
সেনাবাহিনীতে যাওয়া বাধ্যতামূলক করেছিল। সাত বছর বয়সের সময় তাদের সেনা ছাউনিতে যেতে হতো।
১৪. পিতৃতান্ত্রিক পরিবার : গ্রিক সভ্যতার সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক সংগঠন ছিল পরিবার। গ্রিক সমাজের পরিবার ছিল মূলত
পিতৃতান্ত্রিক। পরিবারের আয়তন ঠিক রাখতে সন্তান হত্যায় উৎসাহিত করা হতো। এক্ষেত্রে কন্যা সন্তানদের হত্যা করা হতো। ১৫. পতিতা বৃত্তি : গ্রিসে পতিতা বৃত্তি আইনসিদ্ধ করা হয়েছিল। পুরুষদের উপপত্নী রাখার সামাজিক স্বীকৃতি পতিতাবৃত্তিকে উৎসাহিত করত।
১৬. নারীর মর্যাদা : গ্রিক সমাজে নারীদেরকে মর্যাদা দেওয়া হতো না। বিয়েতে কন্যাপক্ষের যৌতুক প্রদান বাধ্যতামূলক ছিল। বিয়ের পর নারীরা স্ত্রীর মর্যাদা পেতনা। পুরুষদের জন্য উপপত্নী রাখা সমাজ স্বীকৃত বিষয় ছিল।
১৭. দাস প্রথা : দাস প্রথা হলো গ্রিক সভ্যতার আরেকটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এ সময়ে খনিতে, শিল্প কারখানায় ও বড় বড় কৃষি খামারে দাস শ্রম নিয়োগ ব্যাপকভাবে শুরু হয়। এতে দাস প্রথার ব্যাপক প্রসার ঘটে। এথেন্সের দাস ব্যবসায়ীরা এশিয়া, মাইনর, সিরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে দাস আমদানি করত। তাছাড়া পারস্য যুদ্ধের পর অনেক যুদ্ধবন্দীকে দাস হিসেবে নিয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে এথেন্স দাস নির্ভর রাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক সমাজব্যবস্থায় পরিণত হয় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]