গ্রিক সভ্যতার অবদান Contribution of Greek Civilization

বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে গ্রিক সভ্যতা সর্বশ্রেষ্ঠ। গ্রিকদের দর্শন, চিন্তা, রাষ্ট্র ভাষা, ধর্মীয় বিশ্বাস বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আধুনিক সমাজ ও সভ্যতার ভিত্তিমূলে রয়েছে তাদের চিন্তা-চেতনা। গ্রিক সভ্যতা জ্ঞান গরিমায়, শৌর্য বীর্যে মানবিক উৎকর্ষে ইউরোপীয় যেকোনো দেশকে ছাড়িয়ে যায় এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে নন্দিত হয়। বর্তমান বিশ্ব যে, রাষ্ট্র চিন্তার উত্তরাধিকারী তা মূলত প্রাচীন গ্রিসের নগর রাষ্ট্রের চিন্তা চেতনাকে ভিত্তি করেই সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। বস্তুত গ্রিক সভ্যতা আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি। এ সভ্যতার মৌলিকতা সব কিছুকেই ছাড়িয়ে গেছে। নিম্নের আলোচনায় গ্রিক সভ্যতার অবদান তুলে ধরা হলো- ১. কৃষি ব্যবস্থা : কৃষিই ছিল গ্রিক সমাজের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায়। গ্রিক সমাজ দাস নির্ভর হওয়ায় দাসরাই উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। কৃষিজীবী সম্প্রদায় ছিল যুক্ত মানুষ। সমাজের রাজনৈতকি অধিকার ভোগ করত কৃষকরা। রাজনৈতিক কোনো অধিকার ছিল না দাসদের। এরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে প্রভুদের জমিতে ফসল ফলাত। ২. আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য : পেশাগতভাবে ব্যবসাকে জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছিল প্রাচীন গ্রিসের অনেকেই। তারা প্রয়োজনের তাগিদে যেমন অনেক পণ্য আমদানি করত, তেমনি উদ্বৃত্ত পণ্য দ্রব্যও রপ্তানি করত। কৃষি জমির স্বল্পতা এবং নিকটবর্তী স্থানে সমুদ্রের উপস্থিতি ও প্রোডাশ্রয়ের সুবিধার জন্য গ্রিকরা সমুদ্র পথে বাণিজ্য পারদর্শিতা অর্জন করে।
৩. ধর্মীয় ক্ষেত্র : গ্রিকরা মনে করত স্রষ্টার নৈকট্য লাভের জন্য একটি অনন্য পন্থা হলো ধর্ম। তারা বহুদেব দেবীতে বিশ্বাসী ছিল। প্রাকৃতিক বিভিন্ন শক্তিকে পূজার পাশাপাশি দেশ ও জাতির জন্য যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন সেসব বীরদেরও তারা শ্রদ্ধার সাথে পূজা করত। তাদের কাছে দেবতা এপোলো ও দেবী এথেনাও ছিলেন পরম পূজনীয়। গ্রিকদের প্রধান দেবতা ছিলেন জিউস। গ্রিসে দেব দেবীর আরাধনার জন্য চমৎকার মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। এসব মন্দিরের ভিতর দেবী মূর্তি রাখা হতো। উৎসবের সময় এসব দেবী মূর্তিকে পরিষ্কার করে নতুন নতুন কাপড় চোপড় পরানো হতো। ধর্মীয় আরাধনার মধ্যে শোভাযাত্রা প্রার্থনা বিভিন্ন দ্রব্য উৎসর্গ, ভোজের ব্যবস্থা প্রকৃতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডোলাস দ্বীপে অবস্থিত ডেলফির মন্দির ছিল গ্রিসের গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত মন্দির।
৪. সংগীত চর্চা : শিল্পমনা গ্রিক জাতি সংগীত চর্চাতেও অসামান্য অবদান রাখে। সংগীতের চর্চা করতে গিয়ে তারা নানা রকম বাদ্যযন্ত্র আবিষ্কার করে। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে গান গাওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকেই প্রাচীন গ্রিসে সংগীত ও বাদ্য যন্ত্রের বিকাশ ঘটে ৷
৫. খেলাধুলা বিনোদনের একটি অন্যতম মাধ্যম হলো খেলাধুলা। খেলাধুলার ক্ষেত্রে গ্রিকদের অবদান অপরীসীম। বিশ্ব অলিম্পিক খেলার অনন্য রূপকার গ্রিক জাতি। তারা দেবতাদের সন্তুষ্টি লাভ এবং গ্রিক নগর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে খ্রিঃপূঃ ৭৭৬ অব্দে প্রথম অলিম্পিক খেলার আয়োজন করে। আজো বিশ্বে খেলাধুলার সবচেয়ে বড় আসর হলো অলিম্পিক খেলা। অলিম্পাস পর্বতমালার নামানুসারে এ খেলার নামকরণ করা হয় অলিম্পিক।
৬. লিপি আবিষ্কার : গ্রিকরা ফিনিশীয়দের কাছ থেকে লিখন পদ্ধতি আয়ত্ত করে। ফিনিশীয়রা ২২টি বর্ণমালা উদ্ভাবন করেছিল। গ্রিকরা এর সাথে আরো ৪টি (e, i, o, u) যোগ করে। এভাবে গ্রিকরা মিলিতভাবে ২৬ বর্ণের বর্ণমালা তৈরি করে, যা আধুনিক ইংরেজি ভাষায় গৃহীত বর্ণমালা।
৭. শিক্ষা-সংস্কৃতি : শিক্ষা সংস্কৃতির দিক থেকে গ্রিস ছিল খুবই উন্নত। এথেন্স ছিল গ্রিসের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রধান পীঠস্থান। স্পার্টার শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল সামরিক বিষয়ভিত্তিক। তাছাড়া ব্যাকরণ, সংগীত, ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কেও তারা জ্ঞানার্জন করত। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তারা যে, গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছে তা আজ অম্লান। এখানকার চারণকবিরা বীরত্বপূর্ণ কাহিনি কাব্য রচনা করে সারা দেশে তা প্রচার করতেন ।
৮. বিজ্ঞান : হেলন্সিক যুগে সর্বাধিক বিকাশ সাধিত হয় বিজ্ঞান চর্চায়। এ যুগে আলেকজান্দ্রিয়া নগরী কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়। জ্যামিতি, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসা বিদ্যাসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
ক. গণিত শাস্ত্র : থেলিসের অধিবাসী মাইসেটাস ছিলেন গ্রিক গণিত শাস্ত্রের উদ্ভাবক। মাইসেটাস এমন কতকগুলো সূত্র আবিষ্কার করেন, যা পরবর্তীতে ইউক্লিড, তার জ্যামিতিতে অন্তর্ভুক্ত করেন। বিখ্যাত গণিতজ্ঞ পিথাগোরাস জ্যামিতি শাস্ত্রে অসাধারণ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি গাণিতিকভাবে প্রমাণ করেন যে, পৃথিবী গোলাকার এবং ৩৬০ ডিগ্রি । তার জ্যামিতিক সূত্র আজও ব্যবহৃত হচ্ছে ।
খ. প্রাণী বিজ্ঞান : প্রাণী বিজ্ঞানেও গ্রিকদের অবদান অসামান্য। গ্রিক দার্শনিক এনাক্সিমেন্ডার প্রথম প্রাণিবিদ্যার প্রতি আগ্রহ দেখান। তিনি মূল জৈব সূত্রের উন্নতি সাধন কল্পে তার গবেষণা অব্যাহত রাখেন। এছাড়া এরিস্টটল উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণিবিদ্যায় বিশেষ বুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী প্রচুর বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব উপাত্ত সংগ্রহ করেন। এগুলোর সাহায্যে এরিস্টটল জীববিজ্ঞান বিষয়ে একটি বিশ্বকোষ তৈরি করেন। যা আধুনিক ধারায় প্রাচীন বিশ্বে বিশ্বকোষ তৈরিতে এটাই ছিল প্রথম পদক্ষেপ ।
গ. ইতিহাস ও ভূগোল শাস্ত্র : ভূগোল শাস্ত্রের প্রথম পণ্ডিত হলেন হরপালুস। তিনি মৌসুমী বায়ুর সামরিক গতি প্রকৃতি নির্ণয় করেন। বৈজ্ঞানিক ভূগোলের স্রষ্টা হলেন এরাটুস থিনিস। তিনি পৃথিবীর পরিধি সম্বন্ধে মূল্যবান গবেষণা চালান। তার অনুসারী স্টলে ছিলেন প্রখ্যাত ভূগোল শাস্ত্রবিদ। কিন্তু টলেমি হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাচীন ভূগোল জান্তা। তাঁর গ্রন্থ 'আল-সাজেস্ট' প্রাচীন বিজ্ঞানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অলংকার।
হিরোডেটাস ছিলেন ইতিহাসের জনক। তার গ্রন্থ ভূগোল নৃ-তত্ত্ব ও সমাজবিজ্ঞানের উপাদান মিশ্রিত প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস ।
ঘ. পদার্থ বিদ্যা : সাইরাফিউসের বিখ্যাত বিজ্ঞান আর্কিমিডিস সর্বপ্রথম পদার্থ বিদ্যাকে বিজ্ঞানের নিজস্ব শাখা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি ভাসমান পদার্থের নিয়ম ও স্থিতিবিদ্যার কয়েকটি সূত্র আবিষ্কার করেন।
ঙ. চিকিৎসা বিজ্ঞান : চিকিৎসা শাস্ত্রবিদ ডিসকোরাইডস গাছ-গাছড়া ও এর ভেষজ প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে মূল্যবান তত্ত্ব ও তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞান, শরীর ব্যবচ্ছেদ ও শল্যবিদ্যার যাবতীয় জ্ঞান গ্যালেন তার বিখ্যাত পুস্তিকায় লিপিবদ্ধ করেন, যা আধুনিক যুগ পর্যন্ত অত্যুৎকৃষ্ট প্রামাণিক গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে আসছে। জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ফলিত জ্যোতিষ শাস্ত্র : জ্যোতির্বিজ্ঞানে গ্রিকদের অবদান সৃষ্টি ধর্মী। লিথিসের সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ সম্বন্ধে উৎকৃষ্ট ধারণা ছিল। আবিষ্টার চন্দ্র ও সূর্যের সম্পর্ক নির্ণয় করেন। হিপার সৌর বছরের দৈর্ঘ্য নির্ণয় করেন। টলেমির 'আল-মাজেস্ট' জ্যোতির্বিজ্ঞানের অমূল্য গ্রন্থ। টলেমির পদ্ধতি ষোড়শ শতাব্দীতে কোপার নিকাসের ১ যুগান্তকারী আবিষ্কারের পূর্ব পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিক দিশারী রূপে পরিগণিত ছিল।
৯. সাহিত্য : সাহিত্য চর্চায় গ্রিকদের অবদান ছিল অপরিসীম। প্রাচীন গ্রিকরা ছিল ভাব ও কল্পনা বিলাসী জাতি এবং তাদের বীরযোদ্ধাদের জীবন কাহিনির প্রতি শ্রদ্ধাশীল যা তাদের সাহিত্যকর্মকে সমৃদ্ধ করেছিল। তাদের উল্লেখযোগ্য সাহিত্য কর্ম সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হলো—
ক. মহাকাব্য : নবম শতকে গ্রিক কবি হোমার তাঁর বিখ্যাত মহাকাব্য ইলিয়ড (Illiod) ও ওডিসি (Odyse) এর মাধ্যমে এশিয়া মাইনরের ট্রয় নগরী কীভাবে গ্রিক জাতিগোষ্ঠী দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় সে কাহিনি লিপিবদ্ধ করেন। হোমার তার এ মহাকাব্যে বিভিন্ন দেব-দেবীর কাহিনি ও অন্তর্ভুক্ত করেন।
খ. শোক সংগীত : দেশপ্রেমিক কোনো বীরের উদ্দেশ্যে গ্রিক শোকগীতি রচিত হয় অথবা সমাজ সংস্কারককে লক্ষ্য করে। শোকগাঁথার চেয়ে বাদ্যযন্ত্র সহকারে শোক সংগীত বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে। এসব শোকগীতি রচয়িতার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আইনজ্ঞ সোলান মিসনারমাস এবং থিওগণিস ।
গ. গীত কবিতা : খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ও পঞ্চম শতকে বার্ণস ও রালফ যথার্থই বলেছিলেন, গীত কবিতায় (Lyric Poetry) আবির্ভাবে শোকগাঁধা (Elegy) ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে। গীতকবিতাকে বিশেষ ধরনের তারের বীণার সাহায্যে প্রকাশ করা হতো।
ঘ. বিয়োগান্তক নাটক : বিয়োগান্তক নাটক (Tragic drama) হচ্ছে গ্রিকদের সর্বোৎকৃষ্ট সাহিত্যিক কৃতিত্ব। তাদের অন্যান্য
সাহিত্য কর্মের মতো এর জন্ম হয় দর্শনকে ভিত্তি করে। গ্রিক বিয়োগান্তক নাটকের জন্মদাতা ছিলেন এছিলাস (Aeschylus)। ১০. বস্তুবাদী দর্শন : দর্শনের ক্ষেত্রে গ্রিকদের অবদান ছিল অপরিসীম। জীবন ও জগৎ সম্পর্কিত একটি যৌক্তিক ধারণার নাম দর্শন। গ্রিকরা ছিল বস্তুবাদী/ যুক্তিবাদী দর্শনের পথিকৃৎ। যুক্তিবাদীদের দর্শনের অনুসন্ধানের মূল বিষয় ছিল প্রাকৃতিক জগতের চরিত্র নিরূপণ এবং তারা বিশ্বাস করত যে, জগতের সব কিছুর মূলে আছে একটি আদি বস্তু। বিশ্ব জগৎ গ্রহ, নক্ষত্র, পশু, প্রাণী সব কিছু একটি মাত্র বস্তু থেকে গঠিত হয়েছে। নিম্নে কয়েকজন আইওনীয় দার্শনিক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো— ক. Theles : আইওনীয় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা থেলিস বলেছেন, সব কিছুই সৃষ্টি হয়েছে পানি থেকে। তিনি সর্বপ্রথম ৫৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সূর্যগ্রহণ সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন ।
খ. Pythagoras : প্রথম ব্যক্তি পিথাগোরাসই যিনি বিজ্ঞান ও দর্শনকে ঘনিষ্ঠভাবে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত করে দেখে পৃথিবী সম্পর্কে একটি গাণিতিক ব্যাখ্যা ও তত্ত্ব দেন, যার নাম ট্রাকটিস অব ডিকেড' ।
গ. Heraclitus : পরিবর্তনই একমাত্র চিরন্তন সত্য, জগতে চিরস্থায়ী বলে কিছু নেই মর্মে মত দেন হেরাক্লিটাস। তিনি 'Theory of Relativity' প্রবর্তন করে দেখাতে চেষ্টা করেন যে, আমাদের দেহ মন সব সময়ই পরিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু জীবন নামক প্রত্যয়টির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। তাঁর মতে সব কিছুই পরিবর্তন হয় কিন্তু পরিবর্তন নীতির কোনো পরিবর্তন হয় না ।
ঘ. Democretus : ডেমোক্রিটাস এর মতে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরি হয়েছে এটম দিয়ে, যা দেখা যায় না এবং এ এটম হচ্ছে সব সময় গতিশীল। তবে এ এটমগুলোর মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা গুণগত নয় বরং তাদের মধ্যে আকৃতিগত, আকারগত, বিন্যাসগত ও অবস্থানগত পার্থক্য রয়েছে। তিনিই হচ্ছেন পৃথিবীর টেকনিক্যাল বিজ্ঞানী।
3. Shopists: এ সকল চিন্তাবিদদের সফিস্ট নামেও আখ্যায়িত করা হয়। যারা মানুষ ও পৃথিবীর উৎস ও বিকাশ সম্পর্কিত চিন্তার ক্ষেত্রে প্রাচীন গ্রিসে এক শ্রেণির যুক্তিবাদী দর্শন চিন্তার বিকাশ ঘটায়, তাদের মতে, কোনো বক্ত্যবই চূড়ান্ত বা চিরন্তন সত্য নয়। তারা দার্শনিক বক্তব্যকে যুক্তির সাহায্যে প্রমাণ করে চলতেন বলে সফিস্ট চিন্তা নায়করা - ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের যুক্তিবাদী শিক্ষক এবং তাঁরাই গ্রিসের দর্শন চিন্তার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। এথেনীয় বা ভাববাদী যুগের দর্শন : পারসিকদের বিরুদ্ধে ৪৭৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জয় লাভের মাধ্যমে এথেন্সের অভ্যূদয় ও সমৃদ্ধি ঘটে এবং এ যুগকে বলা হয় এথেনীয় যুগ। কিন্তু পেলোপনেসীয় যুদ্ধের ফলে এথেন্সের অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের ফলে গ্রিসের দার্শনিক চিন্তার প্রকৃতি বস্তুবাদী স্তর থেকে ভাববাদী স্তরে উন্নীত হয়। নিম্নে এদের সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
ক. সক্রেটিস : সোফিস্ট চিন্তাধারার অন্যতম অনুসারী ছিলেন গ্রিসের প্রখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস। তিনি ছিলেন মধ্য যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক এবং তার দার্শনিক মতবাদ পরবর্তীকালে গ্রিসেই শুধু অনুভূত হয়নি অদ্যবধি এর প্রভাব পৃথিবীতে প্রবাহমান। সক্রেটিসকে সত্যের পূজারী বলা হয়ে থাকে। তিনি সত্যের সন্ধানে ব্রতী হন এবং সত্যকে উপলব্ধি করতে হলে প্রয়োজন জ্ঞান। এ জন্য তার প্রবচন ছিল 'Knowledge is truth', অর্থাৎ জ্ঞানই সত্য এবং Know themself, অর্থাৎ ‘নিজেকে জান'। মানুেেষর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে প্রত্যেকটি বস্তুই যাচাই করা এবং চিন্তার ক্ষেত্রে আবেগ অর্জন করাই ছিল তার শিক্ষার মূল কথা। শুধু কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মান্য করত নিজের বিবেকের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করা কোনো সৎ নাগরিকের উচিত নয় বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। যা হোক সক্রেটিসের শিক্ষা তৎকালীন শাসক বর্গের চোখে ছিল বিদ্রোহের সমতুল্য। তাই খ্রিষ্টপূর্ব ৩৯৯ অব্দে মহামতি সক্রেটিস সুবিধাভোগী শাসকগোষ্ঠীর কোপানলে পড়ে দণ্ডিত হন। খ. প্লেটো : সক্রেটিসের দার্শনিক মতবাদ প্রচারে ব্রতী হন তাঁর সুযোগ্য ও প্রিয় শিষ্য প্লেটো। যেহেতু প্লেটো ছিলেন সক্রেটিসের ছাত্র। বার্ণস ও রালফ বলেন, "By for the most distinguished of sochrates pupils was plato." অর্থাৎ সক্রেটিসের শিষ্যদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা নামকরা ছিলেন প্লেটো। প্লেটোর নীতি ও ধর্মীয় দর্শন পরস্পর সম্পর্কিত । সক্রেটিসের মতো তিনিও বিশ্বাস করতেন যে, জ্ঞানই নৈতিক উৎকর্ষের চাবিকাঠি। রাষ্ট্র বিজ্ঞানে প্লেটো অসামান্য অবদান রাখেন তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থ The Republic এর মাধ্যমে। প্লেটো তাঁর “The Republic" গ্রন্থে রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ইত্যাদি সরকার ব্যবস্থার বিবরণ দিয়েছেন। তিনি ছিলেন মূলত একজন প্রকৃত রাজনৈতিক দার্শনিক। তিনি মনে করতেন যে, রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এবং স্বার্থান্বেষী মানুষের প্রভাব থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করতে হবে। প্লেটোর অপর বিখ্যাত গ্রন্থ হচ্ছে “Dialogues of Socrates." তিনি মোট ৩৬টি দর্শন বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
গ. · এরিস্টটল : এরিস্টটল মূলত সক্রেটিস ও প্লেটোর দার্শনিক চিন্তাকে এগিয়ে নিয়ে যান। তাই বার্ণস ও রালফ যথার্থই বলেন, “The last of the great champions of scorates tradition was Aristotle." অর্থাৎ সক্রেটিসের দর্শনের ঐতিহ্যের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন এরিস্টটল। তিনি ছিলেন প্লেটোর ছাত্র। এরিস্টটলের মতবাদ ছিল উদার ও নিগুঢ় । তিনি মনে করতেন যে, আকার ও বস্তু উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ এবং পরস্পর নির্ভরশীল। এ দুটির মিলনেই সৃষ্ট হয়েছে বিশ্ব জগৎ । তার অন্যতম প্রধান অবদান ‘Politics' গ্রন্থটি।
এটিতে তিনি তাঁর সূচিন্তিত রাজনৈতিক দর্শনকে ব্যাখ্যা করেন। তিনি একটি সুন্দর ও জনমঙ্গলকর রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও বিকাশ সন্বন্ধে চিন্তা ভাবনা করেন। তার জনপ্রিয় বচন হচ্ছে— Man is by nature a political animal. অর্থাৎ স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ রাজনৈতিক জীব 1
ঘ. জেনো : তিনি একজন স্টোয়িক দার্শনিক হিসেবে তাঁর মতবাদের স্বপক্ষে এক স্কুল গড়ে তুলেছিলেন এবং তাঁর মতে, বিশ্ব
জগৎ মূলত সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও মাঝে মাঝে এতে অসংগতি দেখা দেয় এবং এর সমাধানের মধ্য দিয়েই পরম মঙ্গল সাধন সম্ভব। স্টোয়িক স্কুল ক্রমে জেনোর দর্শন শিক্ষার কেন্দ্রে পরিণত হয় যেখানে শেখানো হয় ‘আত্ম শাসন' ও কর্তব্য পালনই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট গুণ।
এপিকিউরাস (৪৭০-৩১৪ খ্রিঃ পূঃ) : এপিকিউরাসের মতে, চূড়ান্ত মঙ্গল লাভ করা যায় আনন্দ লাভের মধ্য দিয়ে কিন্তু ইন্দ্রিয় পরায়ণতা একটি স্বাভাবিক মঙ্গলজনক কর্ম হলেও তার মতে মানসিক ও সৎচিন্তার আনন্দই প্রকৃত আনন্দ। সুতরাং বলা যায় যে, গ্রিক বা হেলেনীয় সংস্কৃতির নিকট আধুনিক বিশ্ব বিভিন্নভাবে ঋণী। বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, স্থাপত্য, সংগীত, খেলাধুলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এখনও বিশ্বব্যাপী প্রাচীন গ্রিক সংস্কৃতির গুরুত্ব অনেক ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]