রোমে প্যাট্রিসিয়ান প্লেবিয়ান দ্বন্দ্বের কারণগুলো আলোচনা কর। Discuss the causes of the conflict between the Patrician-Plebian in Rome.

পেট্রিসিয়ান- প্রেবিয়ান দ্বন্দ্ব Conflict of Patrician- Plebian
একদিকে এট্রাস্কানদের রাজনৈতিক আধিপত্য আবার অন্যদিকে এক ব্যক্তির শাসনের চরম অত্যাচার থেকে মুক্তি রোমানদেরকে ভীত ও আতঙ্কিত করে তোলে। রোমানরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের আশায় এক ব্যক্তির শাসনকে ঘৃণার চোখে দেখতে শুরু করে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য ও পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য অভিজাত থেকে কন্সলে নামক দু'জন শাসক নির্বাচন করে। এ দু'জন শাসককেই নির্বাচন করে সিনেট।
সিনেট গণপরিষদ কর্তৃক প্রণীত আইন অনুমোদনের পাশাপাশি রাষ্ট্র কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তিসমূহের অনুমোদন করার কাজগুলো করত।
অভিজাতদের স্থান ছিল রোমের সামাজিক ব্যবস্থার উঁচুতে এবং তারা উচ্চ পদসমূহের অধিকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেতেন ৷ আর নিচু স্তরে স্থান ছিল সাধারণ নাগরিকদের। তারা ছোট খাটো পদে নিয়োগ পেতেন। কখনোই তাদেরকে উঁচু পদে নিয়োগ করা হতো না। অভিজাতদের হাতে সম্পূর্ণ ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল। এই ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে এমনরূপ ধারণ করেছিল যা স্বৈরাচারী ক্ষমতাকেও হার মানিয়েছে। এরূপ অবস্থায় সাধারণ জনগণ অভিজাততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং ধীরে ধীরে আন্দোলন শুরু করে। এ অবস্থায় সমাজে দু'টি শ্রেণির অবস্থান সুস্পষ্ট হয়। যারা সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতা বেশি ভোগ করেছে তারা হচ্ছেন প্যাট্রিসিয়ান আর যারা ক্ষমতা বলয়ের বাইরে অবস্থান করছেন তারা প্লেবিয়ান হিসেবেই রোমান সভ্যতার ইতিহাসে পরিচিতি পায়। প্যাট্রিসিয়ানরা শাসন ব্যবস্থায় সিনেটের সকল সদস্যপদ একচেটিয়াভাবে দখল করে নেয়। ফলে প্লেরিয়ানরা, প্যাট্রিসিয়ানদের উপর আরও অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং তাদের নির্দেশ, আদেশ বিনা বাক্যে পালন করতে থাকে। প্লেরিয়ানরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্যাট্রিসিয়ানদের হয়ে সমর্থন দান করে বিনিময়ে প্যাট্রিসিয়ানরা প্লেবিয়ানদের নিরাপত্তা দান করে। এভাবে রোমে সেবা রক্ষা চুক্তির মাধ্যমে সামন্ত প্রথার উদ্ভব হয়েছে বলে অনেকেই ধারণা করেছেন।'
গ্লেবিয়ানরা সেবা রক্ষা চুক্তির মাধ্যমে তাদের অধিকার হারায় এবং অতিমাত্রায় শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হতে থাকে । অত্যাচারিত গ্লেবিয়ানরা ধীরে ধীরে সংগঠিত হয় এবং প্যাট্রিসিয়ানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যা প্যাট্রিসিয়ান- প্রেবিয়ান দ্বন্দ্ব পরিচিতি লাভ করে।

৫২৬ প্যাট্রিসিয়ান ও প্লেবিয়ান দ্বন্দ্বের কারণ Causes of Patrician Plebian conflict

প্রাচীন রোমের প্রজাতান্ত্রিক যুগে প্যাট্রিসিয়ান ও প্লেথিয়ান নামে দু'টি শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল। প্যাট্রিসিয়ানরা ছিল প্রাচীন
রোমের ভূ-স্বামী ও অভিজাতরা। এরা ছিল সমাজের সবচেয়ে ক্ষমতাধর শ্রেণি। অপরদিকে অধিক ক্ষমতা পুঞ্জিভূত হওয়ায় রোমে ধীরে ধীরে এই দুই শ্রেণির মধ্যে আন্দোলন শুরু হয়। যা প্যাট্রিসিয়ান ও প্লেবিয়ান সংঘর্ষ নামে পরিচিত ছিল। প্রাচীন প্রজাতান্ত্রিক রোমে প্যাট্রিসিয়ান ও গ্লেবিয়ানদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো-
১. সামাজিক কারণ : প্রাচীন রোমের প্রজাতান্ত্রিক সমাজে দুটি শ্রেণি বিদ্যমান ছিল। একটি পেট্রিসিয়ান ও অপরটি প্লেবিয়ান । প্যাট্রিসিয়ানরা ছিল সমাজের ভূ-স্বামী ও অভিজাত শ্রেণি। তারা সমাজের ক্ষমতাবান বা সুবিধা ভোগী শ্রেণি। অপর পক্ষে গ্লেবিয়ানরা ছিল সমাজের কৃষক, কারিগর ও বণিক শ্রেণি। এদের সমাজে কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। বিভিন্ন কারণে প্যাট্রিসিয়ানরা প্লেবিয়ানদের উপর নির্যাতন করত।
২. রাজনৈতিক কারণ : রোমের প্যাট্রিসিয়ানরা ছিল যেহেতু ক্ষমতাবান শ্রেণি তাই তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করত। বিভিন্ন কারণে তারা সমাজের অধিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করত। কিন্তু এত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পরও তারা প্লেবিয়ানদের নির্যাতন ও শোষণ করত। প্লেবিয়ানদের বিভিন্ন কারণে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করত।
৩. সরকারি চাকরিতে বৈষম্য : রাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় প্যাট্রিসিয়ানরা নিয়োগ পেত। কিন্তু প্লেবিয়ানদেরকে সরকারি ব্যবস্থায় কোনো উচ্চ পদে নিয়োগ দেওয়া হতো না। শুধুমাত্র সেন্টুরিয়া সভাতে কিছু সংখ্যক আসন প্লেবিয়ানরা লাভ করত। এতে করে এই দুই শ্রেণির দ্বন্দ্ব, সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে।
৪. অর্থনৈতিক কারণ : প্রাচীন রোমের উৎপাদন ব্যবস্থা প্যাট্রিসিয়ানরা, প্লেবিয়ানদের উপর অত্যধিক শ্রম আরোপ করত। এছাড়া প্যাট্রিসিয়ানরা বাধ্যতামূলকভাবে প্লেবিয়ানদের উপর উচ্চ হারে কর আরোপ করত এবং অন্যায় অত্যাচারের মাধ্যমে তারা এই কর আদায় করে নিত। এতে করে প্লেবিয়ানদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
৫. দাস প্রথা প্রাচীন রোমের প্রজাতান্ত্রিক যুগে প্লেবিয়ানদের উপর নানা রকম কার্য ধার্য করত। তাদেরকে দাস রূপে
বিবেচনা করা হতো। প্যাট্রিসিয়ানরা প্লেবিয়ানদের দাস হিসেবে বিক্রি করতে পারত।
৬. বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগদান : প্লেবিয়ানদের বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে হতো। প্লেবিয়ানদের সাধারণ এসেম্বলির সদস্যভুক্তি ছাড়া রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না।
৭. বিচার ব্যবস্থায় বৈষম্য : প্রাচীন রোমের প্রজাতান্ত্রিক যুগে আইন লিপিবদ্ধ না হওয়ায় প্যাটিসিয়ানরা রাজনৈতিক ক্ষমতার উচ্চ স্তরে অবস্থান করত। তারা কথিত প্রথা অনুসারে বিচার কার্য সম্পাদন করত। এতে করে আইনের অপব্যবহার করে প্রেবিয়ানদের বিনা কারণে দোষী প্রমাণিত করত ও শাস্তি প্রদান করত। তাই বলা যায় যে, এ দীর্ঘকাল দ্বন্দ্বের ফলে প্যাট্রিসিয়ানদের বিরুদ্ধে প্লেরিয়ানদের বিজয়কে এক বিশেষ মহা বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। কারণ এর ফলে প্রেবিয়ানরা রাজনৈতিক সামাজিক, অর্থনৈতিক বিবিধ ক্ষেত্রে সুদীর্ঘ শোষণ নীপিড়নের হাত থেকে রক্ষা পায় এবং বিশেষ ধরনের কিছু সুযোগ সুবিধা লাভ করতে শুরু করে।
প্লেবিয়ানদের বিজয় Victory of Plebian
সংগ্রাম মুখোর প্লেবিয়ানদের চাপের মুখে প্যাট্রিসিয়ানরা তাদের কিছু কিছু দাবি মেনে নেয়। ৪৫০ খ্রিঃপূঃ এ বিষয়ে সিনেটে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। সিনেটে দশজন প্রতিনিধি পাঠানোর অধিকার লাভ করেছিল প্লেবিয়ানরা। এ সকল প্রতিনিধিরে বলা হতো ট্রিবিউন (Tribune) বা ম্যাজিস্টেট।
অভিজাত শ্রেণির হাতে অধিক ক্ষমতা পুঞ্জীভূত হওয়ায় রোমে ধীরে ধীরে প্যাট্রিসিয়ানরা ও প্লেবিয়ানদের মধ্যে সংঘাত শুর হয় এবং এ সংঘাতে প্লেবিয়ানদের বিজয় আসে।
নিচে প্লেবিয়ানদের বিজয়ের বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো-
১. সিনেটর প্রতিনিধি : ৪৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সিনেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্লেবিয়ানদের জন্য দশ জন প্রতিনিধি প্রেরণ করার অধিকার লাভ করে। এটি ছিল মূলত প্লেবিয়ানদের বিজয়ের অন্যতম দিক। এসব প্রতিনিধিকে ট্রিবিউন বা ম্যাজিস্ট্রেট বলা হতো। এদের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা ছিল।
২. মানব কল্যাণ নিশ্চিত : মানব কল্রাণ নিশ্চিত হয়েছিল প্যাট্রিশিয়ান ও প্লেরিয়ান যুদ্ধে। সিনেটে প্রেরিত প্লেবিয়ানদের প্রতিনিধিরা সাধারণত মানুষের কল্যাণ বিরোধী সিদ্ধান্তের ভেটো প্রয়োগ করা হতো। এতে করে সাধারণ মানুষের কল্যাণ বিরোধী কোনো আইন পাস করা যেত না ।
৩. মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত : হেবিয়াস, করপাস (আইন সংকলনের মাধ্যমে পরিচিত) আইনে সাধারণ মানুষের নিরাপত্ত নিশ্চিত করা হয়েছিল। এভাবেই রোমান সাম্রাজ্যে প্রজাতন্ত্রে অভিজাততন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ক্রমেই লোপ পায় এবং সাধারণ মানুষের অবস্থার উন্নতি হয়।
৪. অ্যাসেম্বলির ক্ষমতা বৃদ্ধি : প্যাট্রিসিয়ান ও প্লেবিয়ান যুদ্ধের পূর্বে অ্যাসেম্বলি শুধু আইন ও ফর্মান অনুমোদন করার সংস্থা ছিল। কিন্তু এ যুদ্ধের ফলে সাধারণ জনগণের সভা অ্যাসেম্বলী আইন ও ফর্মান প্রণয়নের অধিকার লাভ করে ।
৫. আইন সংকলন : রোমান আইন সংকলন ছিল প্লেবিয়ানদের অন্যতম সাফল্য। রোমান আইন সংকলনের এ পর্যয়ে ১২টি ব্রোঞ্জপাতে মুখে মুখে প্রচলিত আইনসমুহকে লিখা হতো। হেবিয়াস করপাস (Habeas corpus) নামে পরিচিতি লাভ করত এ সকল আইন। আর এ সকল আইনই মূলত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, রোমান প্রজাতন্ত্র সাধারণ মানুষের সহযোগিতার ইটুস্কান, গ্রিক ও ইতালির অন্যান্য প্রতিবেশী অঞ্চলসমূহ দখল করে নেয়। খ্রিঃপূঃ ২৬৪ অব্দের মধ্যে রোমান প্রজাতন্ত্র সমগ্র ইতালির প্রভু হয়ে বসে। প্রজাতন্ত্র বিজীত অধিবাসীদের প্রতি সম্মানজনক ব্যবহার করত। এমনিভাবে সকল শ্রেণির মানুষ মর্যাদা লাভ করতে থাকে। অভিজাত শ্রেণির দাপট কমে যায়। মানুষ পায় তাদের মৌলিক অধিকার ৷

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]