আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রোমের দাস প্রথা Socio-economical Institution of Roman Slavery

রোমান সভ্যতায় দাস প্রথা Slavery in Roman Civilization
· সভ্যতার ইতিহাসে রোমান সভ্যতায় দাস প্রথা একটি কালজয়ী ঘটনা। পিউনিক যুদ্ধের মাধ্যমে কার্থেজরা পরাজিত হলে গ্রিক সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রগুলো একটির পর একটি রোম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে। ফলে সেখানকার পরাজিত লোকদের ও সৈন্যদের রোমে ধরে এনে দাসে পরিণত করা হয় এবং তাদের সমাজের বিভিন্ন নিম্ন পর্যায়ের কাজে নিয়োজিত করা হয়। এভাবেই রোমে দাস প্রথার প্রচলন হয়। সমাজের সবচেয়ে নীচু স্তরে যাদের অবস্থান ছিল তাদেরকে দাসরূপে চিহ্নিত করা হতো।
সকল প্রাচীন সভ্যতার ক্ষেত্রে দাসপ্রথা প্রচলিত থাকলেও রোমের ক্ষেত্রে তা ছিল কিছুটা ভিন্নতর। রোমের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নেপথ্যে মূলত দাস শ্রেণিই শক্তি যোগায়। যে দাসদের শ্রম ও ঘামে রোমের অর্থনীতির চাকা সচল ছিল সে দাসদের অবস্থা ছিল মূলত খুবই শোচনীয়। দাসরা ছিল চাষাবাদসহ উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রের প্রধান হাতিয়ার। এ প্রসঙ্গে হব হাউস উল্লেখ করেন যে, প্রাচীন রোমে দাসদের ব্যবহার করা হতো উৎপাদনের হাতিয়ার হিসেবে।
আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রোমের দাস প্রথা Socio-economical Institution of Roman Slavery
অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, রোমানরা বিভিন্ন সাম্রাজ্য গড়ে তোলার পিছনে মূল কারণ ছিল সাম্রাজ্য দখল করে দাস শ্রমের উপর ভিত্তি করে সাম্রাজ্য তৈরি করা। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন- ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি কাজ ও শিল্প কারখানার উৎপাদনের অন্যতম হাতিয়ার রূপে দাসদের ব্যবহার ছিল অতুলনীয়। এভাবেই দাসরা রোমান সমাজে আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠান রূপে পরিগ্রহ করেছে। তাই রেমান সভ্যতার মূল ভিত্তি হিসেবে দাস শ্রমের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাসদের ভূমিকা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-
১. কৃষিক্ষেত্রে দাস : একমাত্র প্রাচীন রোমেই কৃষি শ্রমিক ছিল দাস। খামারের মালিকরা নিজ হাতে কৃষিকাজ করা তো দূরের কথা তারা কদাচিৎ জমি তদারকিতেও আসত না। ফলে ক্রীতদাস ও অন্যান্য কর্মচারীর উপর চাষের ভার ন্যস্ত হয় এবং কৃষি উৎপাদন হয়ে পড়ে ক্রীতদাস নির্ভর ।
২. পণ্য রূপে দাস : প্রাচীন রোমে কোনো আইনগত ও সামাজিক মর্যাদা ছিল না ক্রীতদাসদের। দাস মালিকরা মনে করেন ক্রীতদাসরা মানুষ নয়, তারা হচ্ছেন বিক্রয়যোগ্য পণ্য। রোম সমাজে দাসদের পণ্য দ্রব্যের মতো-কেনা বেচা হতো। এমনকি পিতা ইচ্ছা করলে নিজের সন্তানকে দাস রূপে বিক্রয় করতে পারত।
৩. খনির কাজে দাস : খনির কাজে ক্রীতদাসদেরকে নিয়োগ করা হতো, একমাত্র গৃহকার্যে দাসদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য। প্রতিদিন দাসকে নির্দিষ্ট পরিমাণ শ্রম দিতে হতো। যদি কাজের পরিমাণ কম মনে হতো তবে খনির ক্রীতদাসদেরকে বেত মারার ব্যবস্থা ছিল।
৪. গৃহস্থালির কাজে দাস : দাসদেরকে মূলত গ্রাম, নগর, বন্দর সকল ক্ষেত্রেই সর্বত্র এমনকি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হতো। অভিজাত শ্রেণিরা আরাম আয়েশের জন্য দলে দলে ক্রীত দাস নিয়োগ করত। ধনীদের প্রাসাদে বয়- বাবুর্চি, গৃহভৃত্য, খানসামা, ডাক হরকরা, মুন্সি, নায়েব, সরকার, সাইয়ে, গোমস্তা, ভাড় ও বিদুষক সবাই ছিল ক্রীতদাস। অভিজাতদের মনোরঞ্জনের জন্য ক্রীতদাসী ব্যবহার করা হতো ।
৫. ব্যবসা-বাণিজ্য : খুবই জম জমাট দাস ব্যবস্থা ছিল প্রাচীন রোমে। প্রতিদিন কমপক্ষে দশ হাজার পর্যন্ত দাস কেনা বেচা হতো। উৎপাদকেরা যন্ত্রপাতির বদলে কমমূল্যে ক্রীতদাস ক্রয় করত। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০ অব্দে ইতিহাস বেত্তা লোক প্ৰায় এক লাখের মতো ক্রীতদাসের সংখ্যা নিরূপণ করেছিলেন, যা রোমের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। চাষা ছাড়াও উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে যেমন— শিল্পকারখানা, খনি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বত্রই ক্রীতদাস ছিল উৎপাদনের প্রধান হাতিয়ার। উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে সহজ প্রাপ্য ক্রীতদাস নিয়োগের ফলে স্বাধীন শ্রমিকের মজুরি এত হ্রাস পেয়ে ছিল যে, এমন স্বল্প মজুরিতে কাজ করলে যে আয় হতো ভিক্ষা করলে তার চেয়ে বেশি আয় হতো।
৬. সার্কাস : অভিজাত ও রাজাদের চিত্ত বিনোদনের জন্য প্রাচীন রোমে দাসদের দ্বারা সার্কাস খেলার আয়োজন করা হতো। দাসদেরকে সার্কাসে, বাঘ, সিংহ ও অন্যান্য হিংস্র জীব জন্তুর সাথে লড়াই করতে হতো। যেসব দাসদেরকে এসব সর্বনাশা মরণ খেলায় যোগ দিতে বাধ্য করা হতো তারা স্ল্যাডিয়েটরনামে পরিচিত ছিল। পশুর সাথে লড়াইয়ের জন্য গ্ল্যাডিয়েটর স্কুল ছিল ।
৭. সরকারি ও অন্যান্য কাজে দাস : খনি, ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় কাজেও প্রচুর ক্রীতদাস নিযুক্ত করা হতো। অনেক ক্রীতদাসের মালিক ছিল রোমান রাষ্ট্র। সকল সরকারি করণিক ছিল ক্রীতদাস। ক্রীতদাস দিয়েই মূলত সরকারি পূর্ত কর্ম নির্বাহ করা হতো। রাষ্ট্রীয় ক্রীতদাসরা গণক্রীতদাস হিসেবে পরিচিত ছিল।
৮. উৎপাদনের হাতিয়ার হিসেবে দাস : ক্রীতদাস ছিল উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে, প্রচুর জীবন্ত হাতিয়ার। খুবই কম মূল্যে দাস পাওয়া যেত বলে উৎপাদকরা যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পরবির্তে ক্রীতদাসদেরকে ব্যবহার করত। তাই রোমে বৃহৎ শিল্পের বিকাশ তেমন হয়নি। কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ক্রীতদাসদের সংখ্যাই ছিল প্রায় ৮০%। ক্রীত দাসদের সংখ্যা, ব্যবস্থাপকদের মধ্যে নেহায়েত কম ছিল না।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]