রোমান সভ্যতার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা Social and Cultural Condition of Roman Civilization

শুরুতে এখানে লিখন পদ্ধতির কার্যক্রম শুরু হয়। রোমের তদানীন্তন আর্থ-সামাজিক অবস্থায় দেখা দিল মুক্ত মানুষের ব্যাপকভাবে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের প্রবণতা। তাদের এই অংশগ্রহণ দাস প্রথার প্রভাব বিস্তার করে। তাই অনে
ঐতিহাসিকগণ রোমান সভ্যতাকে আধুনিক সভ্যতার সোপান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রধান প্রধান দিকগুলো নিচে আলোকপাত করা হলো-
১. দাসপ্রথা : রোমান সভ্যতা, সভ্যতার ইতিহাসে একটা কালজয়ী ঘটনা। শৌর্য, বীর্য, সম্পদ, সমৃদ্ধি, সাম্রাজ্য জয় হয়, ক্ষেত্রে পৃথিবীর শীর্ষস্থানে থাকা রোমান সভ্যতার ইতিহাসের শুরুং খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম শতকে, ইতালি উপদ্বীপের একটি ছোট হিসেবে যে সভ্যতার যাত্রা হয়েছিল, সে সভ্যতাই হচ্ছে Classical Roman Civilization | কিংবদন্তী মতে, রোমান নগরীর প্রতিষ্ঠাতা হলেন রাজপুত্র রেমিউলাস ও যেমুস নামক ভ্রাতৃদ্বয়। গ্রিক সভ্যতার ভিত্তি দুর্বল হয়ে গেলে রোমানর মেসিডোনিয়া ও গ্রিস দখল করে নেয়। তারা অধিকৃত গ্রিকদেরকে দাসে পরিণত করে এবং দাস শ্রমের উপর ভিত্তি করে রোমকে এক শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত করে। রোমের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নেপথ্যে মূলত শীক্ত যোগায় দাস শ্রেণি । অ সকল সভ্যতায় দাসদের অবস্থা এক রকম হলেও প্রাচীন রোমে দাসদের অবস্থা ছিল ভিন্ন রকম। যে দাসদের শ্রম ঘরে রোমের অর্থনীতির চাকা সচল ছিল সে দাসদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। সমাজের সবচেয়ে নিচু স্তরে যাদের অবস্থম ছিল তাদেরকে দাস রূপে চিহ্নিত করা হতো। চাষাবাদসহ উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে দাসরা ছিল প্রধান হাতিয়ার। এ প্রসঙ্গে হব হাউস বলেন যে, “প্রাচীন রোমে দাসদের ব্যবহার করা হতো উৎপাদনের হাতিয়ার হিসিবে ।”
২. নারীর মর্যাদা : রোমান নারীদেরকে আইন-বিধি নিষেধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণে রাখা হতো। রোমান আইনের চোখে নারীর কোনে স্বাধীন সত্তা ছিল না, তাকে সর্বদা পুরুষের অভিভাকত্ত্ব মেনে নিতে বাধ্য করা হতো। রোমান আইনজীবী Gaius উল্লে করেছেন, “এমনকি প্রাপ্ত বয়স্ক রমনীর একজন অভিভাবক প্রয়োজন। কারণ নারী দুর্বল চিত্তের হয়।” রোমান নারীর আস্থার অগ্রগতি হয়েছিল মূলত রোম সাম্রাজ্যের বিস্তারের সাথে সাথে। মেয়েরা কলকারখানা, দোকান পাটে, চাকরি গ্রহণ করে এবং নারীর আইনজীবী ও ভোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারত। এ শ্রেণির মহিলার রাজনীতিতেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারত ।
৩. পরিবার ব্যবস্থা ; রোমান সভ্যতার সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্বরূপ বিবেচনা করা হয়। রোমান পরিবার গঠিত হতো পরিবারের পিতা, মাতা, পুত্র-কন্যা ও ক্রীতদাস সবাই সবাইকে সাথে নিয়েই। পরিবারের প্রধান ছিল পিতা এবং পিতার ক্ষমতা ছিল একচ্ছত্র ও সীমাহীন। পিতা ইচ্ছা করলে ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দিতে পারতেন এবং পুত্রকে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিতে পারতেন। রোমান আইনেও পিতাকে কর্তা হিসেবে, বিধাতা হিসেবে স্বীকৃত ছিল।
৪. বিবাহ ব্যবস্থা : পরিবারের ভিত্তি হলো বিবাহ। তিন ধরনের বিবাহের প্রচলন ছিল রোমান সমাজে। যথা— ক. ব্যবহার সিদ্ধ বিয়ে, খ. বিক্রয় বিয়ে ও গ. আনুষ্ঠানিক ও আচার সিদ্ধ বিয়ে ।
যে বিয়েতে দম্পতি এক বছর একত্রে বসবাস করে এক বছর পরে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃত পেত তাকে ব্যবহার সিদ্ধ বিয়ে বলা হয়। যে বিয়েতে বরকে কনের পিতার কাছ থেকে বধূ ক্রয় করতে হয় তাকে বিক্রয় বিয়ে বলা হয়। সে বিয়েতে বিশেষ আচার পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং বিশেষ এক ধরনের কেক একত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে আহার করে বিবাহ সম্পন্ন হয় তাকেই মূলত আনুষ্ঠানিক ও আচার সিদ্ধ বিয়ে বলা হয়। এ বিয়ে সাধারণত প্যাট্রিসিয়ান শ্রেণিভুক্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ৫. নৈতিক অবক্ষয় ; রোম সাম্রাজ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল নৈতিক শিক্ষা। বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল উচ্চ শ্রেণির মধ্যে। রোম সাম্রাজের একটি সাধারণ ও নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় ছিল সমকামিতা।
৬. শ্রেণি সমাজ দুটি ঐতিহ্যবাহী শ্রেণি ছিল রোমান সমাজে। যথা- ক. পেট্রিসিয়ান ও খ. প্লেবিয়ান। প্যাট্রিসিয়ানরা সিনেটসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ছিল এবং এরা রোমের অধিকাংশ ভূ-সম্পত্তির মালিক ছিল। গ্যাট্রিসিয়ানরা অভিজাত শ্রেণি হিসেবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী ছিল।
গিল্ড প্রথা : কারিগর, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা রোমান সমাজে একত্রিত হয়ে যে সংগঠন গঠন করে তাকে গিভ প্রথা বলা হতো। রোমের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গিল্ড যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
৮. কৃষি ও বাণিজ্য নির্ভর অর্থনীতি : কৃষিজীবী ছিল রোম সাম্রাজ্যের অধিবাসীরা। অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি ছিল কৃমি। দাস শ্রমের উপর ভিত্তি করে রোমান সমাজে কৃষি ও বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল। কৃষক ভূমি থেকে উৎপাত হলে তার স্থান দখল করত ক্রীতদাস। অধিকাংশ ভূমি ছিল অভিজাত শ্রেণির দখলে। শুধু চাষাবাদের জন্য দাস রাখা হতো। শুধু চাষাবাদ নয়, উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে দাসরা উৎপাদনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত।
শিক্ষা দীক্ষা : শিক্ষা দিক্ষায় বেশ উন্নত ছিল রোমান সভ্যতার জনগণ। নিয়ে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হলো- ক. দর্শন : রোমান দর্শন গ্রিক দর্শন দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। গ্রিকদের এপিকিউরিয়ান ও স্টয়িক মতবাদ রোমানদের উচ্চ শ্রেণির নাগরিকদের উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। পুক্রেটিয়াস ছিলেন এপিকিউরিয়ান মতবাদের প্রধান প্রবক্তা। তাঁর মতে প্রকৃতি অনুর সমষ্টি। তিনি আত্মার অমরত্ব ও পরকালে বিশ্বাসী ছিলেন না। সিসেরো (Cicero) ছিলেন স্টয়িক মতবাদে বিশ্বাসী। তার মতে সৎগুণই সুখের মূল ভিত্তি। পূর্ববর্তী স্টয়িক দার্শনিকদের থেকে আরও অগ্রসর হয়ে তিনি বলেন যে, রাষ্ট্রের কাজ হচ্ছে ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষা করা। সিসেরো প্রাকৃতিক কানুনকে সব কিছুর উপরে স্থান দিয়েছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, প্রাকৃতিক নিয়মের সম্পূর্ণ বসবর্তী হয়েই প্রকৃত সুখ অনুভব করা যায়। উল্লেখ্য যে, সিসেরোর প্রাকৃতিক দর্শন বা মতবাদ পরবর্তীকালে রোমান আইন প্রণয়নের মূল ভিত্তি রচনা করেছিল।
খ. ইতিহাস : রোমানরা বেশ পারদর্শী ছিল ইতিহাস রচনায়। বিভিন্ন রোমান ঐতিহাসিকদের মতে, লিভি, ট্যাসি টাস ও পুটার্কের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। লিভি এর রচিত "The History of Roman' রোমের ইতিহাস ও গৌরবময় কৃতিত্বের বিশদ বিবরণ উপস্থাপন করেছেন। প্লুটাটার্কের রচিত 'The Paralled" গ্রন্থে চল্লিশ জন বিখ্যাত রোমান ও গ্রিক নায়কদের জীবন পরিচয় লিপিবদ্ধ করেছেন। পরবর্তীকালে শেক্সপিয়ার ইতিহাস নির্ভর রচনা থেকে বহু তথ্য গ্রহণ করে রচনা করেন, 'জুলিয়াস সিজার' ও 'এন্টনি অ্যাণ্ড ক্লিওপেট্রা'।
গ. বিজ্ঞান : রোমানরা বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার প্রতি ছিল অধিক আগ্রহী যদিও রোমানরা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তেমন পারদর্শী ছিল না। নগর পরিকল্পনা, ওষুধ ইঞ্জিনিয়ারিং ও সড়ক নির্মাণ, কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহার ও বর্ষপঞ্জির সংস্করণের ক্ষেত্রে সকলের সেরা ছিল রোমানরা। প্লিনি ছিলেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানী প্লিনি তিন খণ্ডে বিশ্ব কোষ রচনা করেছিলেন। টলেমি ছিলেন ত্রিকোনমিতির পণ্ডিত। টলেমির মতে, পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট চক্র রয়েছে। রোমান বিজ্ঞানীরা ৩৬৫ দিনে সৌর তরঙ্গকে গণনা করেন এবং প্রতি চার বছর পরপর ১ দিন যোগ করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে পরিচিত স্যালন ধমনীতে রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এবং অপর খ্যাতিমান বিজ্ঞানী রূফাস যকৃত ও নাড়ির স্পন্দনের সঠিক পরিমাপ করেন। তিনি প্রথম পানিকে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করার কথা বলেন ।
১০. ধর্ম : বেথেলহাম শহরে সম্রাট অগাস্টাসের রাজত্বকালে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশু (ইশা আ:) জন্ম গ্রহণ করেন। প্রথমে স্বয়ং তিনি ও তার পূর্ব পুরুষগণ ইহুদি ধর্মাবলম্বী হলেও যিশু খ্রিষ্ট পৃথিবীতে এক নতুন ধর্মমত প্রচার করেন। হিব্রু ‘জসুয়া’ শব্দ হতে 'জেসাস' শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে। যেহেতু তিনি সমগ্র বিশ্বের অত্যাচারিত ও নিপীড়িত মানুষকে উদ্ধার করার জন্য আবির্ভূত হয়েছিলেন, সেজন্য তাকে ‘ক্রাইস্ট' বা ত্রাণ কর্তা উপাধি দেয়া হয়েছিল। যিশু ভালোবাসা, ক্ষমা ও শান্তির দূত ছিলেন। তিনি ঐশী দয়া ও প্রেম প্রচার করেছিলেন। ৩০ বছর বয়সে যিশু খ্রিষ্ট মাত্র ১৮ মাস জনসাধারণের কাছে তার ধর্মমত প্রচার করেন। সম্রাট তাহবেরিয়ান তাকে সিরিয়ার এ্যান্টিয়ক শহরে ক্রুশ বিদ্ধ করে হত্যা করেন। পরবর্তী কালে সেন্টপলের অক্লান্ত চেষ্টায় এ ধর্ম এশিয়া মাইনর, গ্রিস, রোম ও ইউরোপে বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে প্রায় সমগ্র আমেরিকা ও ইউরোপে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। পরবর্তীকালে খ্রিষ্টান জগৎ যিশুকে রাজা ডেভিডের বংশধর এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে প্রচার করেছিলেন। খ্রিষ্টানগণ এক খোদার পরিবর্তে তিন খোদাতে বা 'ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী। তাদের মতে, আল্লাহ, মেরী (মরিয়ম আঃ) এবং যিশু (ঈশা আঃ) সমানভাবে শ্রেষ্ঠ ও পুজনীয়। তারা মরিয়ম (আঃ) কে আল্লাহর স্ত্রী এবং ঈশা (আ:) কে আল্লাহর সন্তান মনে করেন। রোমানগণ প্রায় সবাই খ্রিষ্টান ধর্মে বিজ্ঞানী ছিলেন। সম্রাট কন্সটানটাইন স্বয়ং খ্রিষ্টান ধর্মগ্রহণ করে উক্ত ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্মের মর্যাদা দান করেন। ফলে রোমে খ্রিষ্টান ধর্ম ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে ।
১১. সংস্কৃতি । অনেক ঐতিহাসিকগণ, রোমানদের সভ্যতার ইতিহাসকে সংস্কৃতির উৎকর্ষের ইতিহাস হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এজন্য রোমে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছিল। ২৭ খ্রিঃপূঃ থেকে ২০ খ্রিঃপূঃ পর্যন্ত রোমে সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতা সাধিত হয়।
১২. আইন প্রণয়ন : রোমানদের বড় অবদান ছিল আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে। নিঃপুঃ ৪৫০ অব্দে ১২টি ব্রোঞ্জপাতে সর্বপ্রপ রোমান আইন সংকলিত হয়েছিল। রোমান আইন মূলত ৩টি শাখায় বিভক্ত হয়েছিল। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো- ক. বেসামরিক আইন (Jus Civille) রোমান নাগরিকদের জন্য এ আইনটি অবশ্য পালনীয়। লিখিত এবং অলিখিত উভয় অবস্থায় এ আইন বিদ্যমান ছিল। আইনের বিষয় ছিল সিনেটের মর্যাদা ও প্রিন্সের পদের ডিক্রীসমূহ রাজকর্মচারীদের নির্দেশাবলী ।
খ. জনগণের আইন (Jus Gention) : রাজনীতিবিদ সিসেরো এ আইনের জনক। এ আইন জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে সকল রোমান নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। এ আইনের বলে দাস প্রথাকে স্বীকৃতি প্রদান ব্যক্তিগত সম্পরি রক্ষণাবেক্ষণ, ক্রয় বিক্রয়ের নীতি নির্ধারণ, অংশীদারিত্ব ও চুক্তির কার্যক্রম প্রভৃতি সম্পাদিত হতো। এ আইন সা বিদেশিদের বিচার কার্য সম্পন্ন করার সময় সিভিল আইনকে প্রায়শ সাহায্য করত।
গ. প্রাকৃতিক আইন (Jus Natural) : রোমান আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল এ আইন। প্রাকৃতিক আইনে উল্লেখ আছে যে, মানুষ প্রকৃতির কাছ থেকে সমান অধিকার প্রাপ্ত এবং কোনো সরকারের অধিকার নেই এর উপর হস্তক্ষে করার। এ আইনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রবক্তা সিসেরোর মতে, প্রাকৃতি বা আইনই হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। যে শাসক আইনতে অস্বীকার করে সে নিঃসন্দেহে অত্যাচারী। পরবর্তীকালে প্রায় সকল আইন প্রবক্তা এর স্বপক্ষে মত দিয়েছেন এবং সকল নাগরিক আইন প্রণয়নের সাথে সঙ্গতি রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। রোমান আইন বিশেষ করে ধনীদের সম্পত্তি রক্ষা সম্পর্কিত আইন, আধুনিককালে ইউরোপ ও আমেরিকার এবং সে সূত্রে সমগ্র ধনতান্ত্রিক দুনিয়ার আইন ও বিচারব্যবস্থার মধ্যে নানা আকারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এক কথায় বলা যায় রোমান আইনের প্রভাব বর্তমান আধুনিক বিশ্বের সকল দেশের আইন ব্যবস্থার উপর বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয় ।
মোটকথা আধুনিক ইউরোপীয় আইনের ভিত্তিমূল হওয়া রোমীয় আইন। রোমে সর্বসাধারণের জন্য মোট ৫টি আইন প্রচলিত ছিল। এ আইনকে বলা হতো পঞ্চ অধিকার আইন। এ আইনগুলো হচ্ছে—
সন্তানের ওপর পিতার অধিকার, একে বলা হয় 'Patria Potesta' এ অধিকার বলে পিতা পুত্রকে বিক্রয় বা হত্যা করতে পারত ।
ii. স্বামী, স্ত্রীর উপর যে অধিকার ভোগ করত তাকে বলা হতো Namus স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে সন্তান লালন পালনে সমভাবে
দায়ী থাকতেন।
iii. দাসের উপর মালিকের যে অধিকার ছিল তাকে বলা হতো 'Potesta Domini
iv. স্বাধীন নাগরিকদের উপর অন্য স্বাধীন নাগরিকদের অধিকারকে বলা হতো ‘Namus Capere'।
v. সম্পত্তি রক্ষার অধিকারকে বলা হতো “Right of Domonian."
১৩. শিল্পকলা : ভাস্কর্য, স্থাপত্য ও চিত্রশিল্পে রোমানদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। গ্রিকদেরকে অনুকরণের মাধ্যমেই রোমানরা
এসব শিল্পকলা মূলত তৈরি করত। নিম্নে রোমানদের এসব শিল্পকলা নিয়ে আলোচনা করা হলো-
ক. স্থাপত্য : রোমান স্থাপত্য হলো শিল্পকলার ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্ব। রোমানগণ তাদের মেধার বাস্তব প্রয়োগ ঘটিয়ে অসংখ্য সুন্দর সুন্দর মন্দির, বিজয় স্তম্ভ, নতুন নতুন প্রাসাদ ও দাসদেরকে ব্যবহার করে অনেক রাস্তাঘাট ও মন্দির নির্মাণ করেছেন। তাদের উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য হচ্ছে- বিজয় স্তম্ভ, রাজপ্রাসাদ, মন্দির, নদীর বাঁধ, সেতু,
মিলনায়তন ও আবাসিক ভবন ইত্যাদি। তাদের স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে- কলোসিয়াম ও সম্রাট হাওয়ারাল নির্মিত প্যান্থিয়ন মন্দির। প্যান্থিছ মন্দিরটি ছিল বৃহৎ গম্বুজ সম্বলিত। গম্বুজের ব্যস ছিল ১৪৪ ফুট।
খ. চিত্র শিল্প : রোমান সমাজে দেয়াল চিত্র ছিল সর্বজন পরিচিত শিল্পকর্ম। রোমানরা তাদের খ্যাতিমান পূর্ব পুরুষ বা আদর্শ মানবমূর্তি খোদাই করতে খুব পছন্দ করত। চিত্র শিল্পের মধ্যে প্রধান ছিল মুরাল ও প্রাচীর চিত্র। রোমানদের টেবিল আচ্ছাদনের বস্ত্র, বাসন-কোসন, পর্দা পানির পাত্র, আসবাবপত্র, বিভিন্ন ধাতব দ্রব্য ছিল অত্যন্ত রুচিশীল উন্নত ও শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন।
গ. ভাস্কর্য : বাস্তববাদী ও ব্যক্তি কেন্দ্রিকতা হচ্ছে রোমান ভাস্কর্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক। রোমানরা স্বারক স্তম্ভে ও দেয়ালের গায়ে নির্মিত ভাস্কর্যে ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সুন্দর চিত্র নির্মাণ ও অঙ্কন করত। রোমক ভাস্কর্যের চরম সাফল্য হচ্ছে পূর্ণবয়া ও অক্ষে মূর্তি দ্বারা মনুষ্য প্রতিকৃতি নির্মাণ। তারা মানুষের মুখের আকৃতি, মানুষের মনোজগতের বিষয়াবলি ফুটিয়ে তোলে। রোমানরা সম্রাটকে দেব দৈব্য পুরানো বিভিন্ন চরিত্র রূপে নির্মাণ করতেন। এছাড়াও রোমানরা বিজয় মূর্তি ও রোমে বিজয়াভিজানের চিত্র খোদাই করে রাখা হতো।
সাহিত্য :
: রোমান সাহিত্য বস্তুত দর্শন-এর সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়ে সাহিত্যিক রস সৃষ্টিকে মাধুর্য মণ্ডিত করেছে। এ যুগের কৃতী সাহিত্যিকেরা হলেন-
ক. প্রখ্যাত নাট্যকার পুটাক (২৫৪-১৮৪ খ্রিঃপূঃ) ব্যাঙ্গাত্বক ও বিদ্রূপাত্মক নাটকের দক্ষ রচয়িতা চল্লিশ জন প্রসিদ্ধ রোমান ও গ্রিক নায়কদের জীবন চরিত্র রচয়িতা।
খ. নাট্যকার টরেন্স (১৯০-১৫৯ খ্রিঃপূঃ) মার্জিত রুচির পরিচয় সাধারণের বোধগম্য নাটকের দক্ষরচয়িতা ) গ. গীতিকবি হোরাস (৬৫-০৮ খ্রিঃপূঃ )
মহাকবি ভার্জিল (৭০-১১ খ্রিঃপূঃ)
৫. খ্যাতিমান লেখক ওভিড (৪৩-১৭ খ্রিপূঃ)
চ. খ্যাতিমান ইতিহাসবেত্তা ও সুলেখক লিভি (৫৯-১৭ খ্রিঃ)। তার রচনা রোমান ইতিহাস ।
ছ. বিখ্যাত বাগ্মী ও গদ্য সাহিত্য স্রষ্টা সিসেরো (১০৬-৪৩ খ্রিঃপূঃ )
জ. খ্যাতিমান উপন্যাসিক এ্যাপুলিয়াস-'এস' তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস।
ঝ. খ্যাতিমান সাহিত্য সমালোচক কুইনিটলিয়ান ।
ঞ. খ্যাতিমান ব্যঙ্গ কবিতার কবি সুভেনাল
ট. কীর্তিমান ঐতিহাসিক টেসিটাস। তার বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ 'জামানিয়া' ।
রোমান সাহিত্যিক কবিরা যেসব বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম সম্পাদন করে গছেন সেগুলোর মধ্যে মিলনাত্মক, রচনা, নাটক, গীতিকাব্য, গদ্য সাহিত্য ইত্যাদি বিশ্ব সাহিত্য ও সাহিত্য চিন্তাবিদের পাথেয় স্বরূপ। অগাস্টাসের যুগ ছিল রোমান সাহিত্যের স্বর্ণযুগ। এ স্বর্ণ যুগের শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন ভার্জিল (খ্রিঃপূঃ ৭০-১৯) ভার্জিলকেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবি ও সাহিত্যিকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তার জগৎখ্যাত কাব্যগ্রন্থ হলো ইনিড (Aenid)। রোমান সাহিত্যের অপর একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ হলো ‘On Duty’ ও ‘Tuscular Disputation' যার মূল গদ্য লেখক ছিলেন সিসেরো। সব মিলেই এসব কাব্যগ্রন্থসমূহের মূল উপজীব্য বিষয় ছিল মানব প্রেম ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]