রোমান সভ্যতার ধর্ম Religion in Roman Civilization

রোমানরা গ্রিকদের মতো অনেক দেব-দেবীর পূজা করত। এসব দেব-দেবী কল্পনায় তারা মানবীয় আকৃতি প্রকৃতি ও গুণাবলি আরোপ করেছিল। তাদের গৃহে ছিল গৃহ দেবতাসহ দৈনন্দিন কাজের সহায়তাকারী অসংখ্যদেব-দেবী। তাদের আরাধ্য দেব-দেবীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি হচ্ছে—
১. দেবতা ভেষ্টা-অগ্নি দেবতা ।
২. দেবতা জুপিটার- আকাশ দেবতা।
৩. দেবতা ভেনাস প্রেম দেবতা ।
৪. দেবতা নেপচুন- সাগরের দেবতা ।
৫. দেবতা সার্টান- ফসলের দেবতা।
৬. দেবী জুনো- উর্বরতার দেবী/ গর্ভবতী হবার দেবী।
এসব দেবতা নিজ আওতায় শক্তিমান থেকে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে এ বিশ্বাস রোমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে সদ্য জাগরিত করেছিল। অর্থাৎ এ সকল দেব-দেবীর পূজা পরিবারের প্রধান অর্থাৎ পিতার নেতৃত্বে সম্পাদিত হতো। এসব পূজা সম্পাদনা প্রক্রিয়াটি বেশ ভক্তিপূর্ণ ছিল ।
প্রাথমিক রাষ্ট্রধর্ম রোমে রাষ্ট্রীয় ধর্মের প্রচলন শুরু হয়েছিল নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এটুস্থানরা প্রাথমিক প্রবর্তন করেন। তখন থেকেই ডায়না ও মিনার্ভা দেব-দেবীর প্রচলন হয়। ধর্মীয় মন্দিরগুলোতে রাষ্ট্রীয় পুরোহিত নিয়োগ করা হয় এবং তাদের ভরণ পোষণের জন্য ভূমি জয়গির দেয়া হয়। তাই বলা হয় প্রাথমিক রাষ্ট্র ধর্ম প্রবর্তনের মাধ্যমেই এটি পুনরা পুরোহিতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে ছিলেন। তখন থেকেই পুরোহিতরা ক্ষমতার অংশ হয়ে যায় এবং নির্দিষ্ট সামাজিক মর্যাদা ভোগ করতে থাকে।
অতিন্দ্রীয়বাদ। অমরত্ব লাভ করাই ছিল এ ধর্ম দর্শনের মূল কথা। রোমানরা নৃত্য করে, মোমবাতি জ্বালায়, রক্তপাত অঙ্গহানি ঘটিয়ে মহোৎসব পালন করত কেবলমাত্র অমরত্ব লাভের আশায়, পূজারিরা বিশ্বাস করত যে, তারা শয়তানের কা থেকে এসেছে শয়তানের জীবনকে পরিহার করে, অমর জীবন লাভের জন্য যার বিকল্প নাই।
অতিন্দ্রীয়বাদের গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে পূর্বাঞ্চল থেকে পাওয়া Cybele মূর্তির প্রচলন। এই Cybele এর সম্মান পবিত্র গাছের নিচে যজ্ঞাবেদী নির্মিত হতো। এখানে লোকেরা ঢোল, বাঁশি ইত্যাদিসহ ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর উৎসব পালন করত।
জনসটি সিজম : এটি একটি ধর্মীয় পদ্ধতি। যা রোমান ধর্মকে সাবলিলতা দানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনস সিজমে ধর্মকে জ্যোতির্বিদ্যায় ও দার্শনিক চিন্তা ভাবনার সমন্বয় সাধন করে জীবন প্রণালি তৈরি করা হয়েছিল। এই ধর্মীয় পদ্ধতিতে ৩০টিরও বেশি Gnostic ব্যবস্থার প্রচলন ছিল এবং প্রতিটি Gnostic এ নিজস্ব যাজক ও দীক্ষা পদ্ধতি ছিল। কোনোটির সাথে কোনোটির তেমন কোনো মিল ছিল না। এটাকে সংকরায়ন বলা হতো। অধিকাংশ Gnostic মৌলিক দুটি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অভিন্ন ছিল। যথা- ১. অবস্তুগত এবং ২. বস্তুগত ।
অবস্তুগত দর্শন হলো জ্ঞানার্জন, যার মাধ্যমে মুক্তিলাভ সম্ভব আর বস্তুগত দর্শন হলো মোহসৃষ্টির উৎস, যা আত্মাকে কলুষিত করে ও অমঙ্গল সাধন করে ।
খ্রিষ্টধর্ম : রোমে সনাতন ধর্মের পরিবর্তে খ্রিষ্টধর্মের আবির্ভাব ঘটে যিশু খ্রিষ্টের জন্মের পর। মূলত Gnostic-ই খুব দ্রুত যিশুর ভ্রাতৃত্ববোধ ও মহত্ববোধে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং খ্রিষ্টান ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করে। Tarsus ও Paul এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং পল গীর্জা স্থাপন করে। এভাবে সমস্ত রোমে পল গীর্জার সম্প্রসারণের মাধ্যমে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রসার লাভ ঘটে।
সুতরাং খ্রিষ্টীয় ধর্মের ক্ষেত্রে গ্রাম কেন্দ্রের প্রশাসক হন পাদরী, শহরের হন বিশপ ও প্রদেশে হন আর্চবিশপ এবং সকল প্রদেশের উপর পোপ নামক ধর্মীয় পদের সৃষ্টি হয়েছিল।
রোমান আইন (Roman's Law) : ৪৫০ খ্রিঃপূঃ অব্দে ১২টি ব্রোঞ্জ নির্মিত পাতে রোমানরা সর্বপ্রথম তাদের দেশের প্রচলিত লিখিত নিয়ম বা আইনসমূহ লিপিবদ্ধ করার প্রয়াস পায়। এসব লিখিত আইনে দেশি ও বিদেশিদের অধিকার বিষয়ক কোনো কিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বিচারকগণ অলিখিত আইনের আলোকে বিচারকার্য সমাধান করতে গিয়ে অভিজাত সম্প্রদায়ের চাপে পড়ে অনেক সময় প্রভাবিত হতেন। এতে সুবিচার অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণ পেতে সক্ষম হয়নি। সাম্রাজ্যিক যুগ সম্রাট অগাস্টাস ও তার উত্তরাধিকারীরা আইন প্রণয়ন আর পরিবর্তনের জন্য জুরিদের সুচিন্তিত মতামতকেই প্রাধান্য দিতেন। রোমান আইন চর্চায় সাধারণত ৩টি পর্যায়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যেমন- ক. বেসামরিক আইন (Jus Civil), খ. জনগণের আইন (Jus Gentius), গ. প্রাকৃতিক আইন (Jus Natural) । নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
ক. বেসামরিক আইন (Jus Civile) : রোমান নাগরিকদের জন্য এ আইনটি অবশ্য পালনীয়। লিখিত এবং অলিখিত উভয় অবস্থায় এ আইন বিদ্যমান ছিল। আইনের বিষয় ছিল সিনেটের মর্যাদা ও প্রিন্সে পদের ডিক্রীসমূহ ও উচ্চ রাজকর্মচারীদের নির্দেশাবলী ।
খ. জনগণের আইন (Jus Gention) : রাজনীতিবিদ সিসেরো এ আইনের জনক। এ আইন জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে সকল রোমান নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। এ আইনের বলে দাস প্রথাকে স্বীকৃতি প্রদান ব্যক্তিগত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, ক্রয় বিক্রয়ের নীতি নির্ধারণ, অংশীদারিত্ব ও চুক্তির কার্যক্রম প্রভৃতি সম্পাদিত হতো। এ আইন সাধারণ বিদেশিদের বিচার কার্য সম্পন্ন করার সময় সিভিল আইনকে প্রায়শ সাহায্য করত।
গ. প্রাকৃতিক আইন (Jus Natural) : রোমান আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল এ আইন। প্রাকৃতিক আইনে উল্লেখ আছে যে, মানুষ প্রকৃতির কাছ থেকে সমান অধিকার প্রাপ্ত এবং কোনো সরকারের অধিকার নেই এর উপর হস্তক্ষেপ করার। এ আইনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রবক্তা সিসেরোর মতে, প্রকৃতি আইনই হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। যে শাসক আইনকে অস্বীকার করে সে নিঃসন্দেহে অত্যাচারী। পরবর্তীকালে প্রায় সকল আইন প্রবক্তা এর স্বপক্ষে মত দিয়েছেন এবং সকল নাগরিক আইন প্রণয়নের সাথে সঙ্গতি রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। রোমান আইন বিশেষ করে ধনীদের সম্পত্তি রক্ষা সম্পর্কিত আইন, আধুনিককালে ইউরোপ ও আমেরিকার এবং সে সূত্রে সমগ্র ধনতান্ত্রিক দুনিয়ার আইন ও বিচারব্যবস্থার মধ্যে নানা আকারে অন্তর্ভুক্ত 'হয়েছে। এক কথায় বলা যায় রোমান আইনের প্রভাব বর্তমান আধুনিক বিশ্বের সকল দেশের আইন ব্যবস্থার উপর বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।
i. মোটকথা আধুনিক ইউরোপীয় আইনের ভিত্তিমূল হওয়া রোমীয় আইন। রোমে সর্বসাধারণের জন্য মোট ৫টি আইন প্রচলিত ছিল। এ আইনকে বলা হতো পঞ্চ অধিকার আইন। এ আইনগুলো হচ্ছে-
সন্তানের ওপর পিতার অধিকার, একে বলা হয় 'Patria Potesta' এ অধিকার বলে পিতা পুত্রকে বিক্রয় বা হত্যা করতে পারত।
ii. স্বামী, স্ত্রীর উপর যে অধিকার ভোগ করত তাকে বলা হতো Namus স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে সন্তান লালন পালনে সমভাবে
দায়ী থাকতেন ।
iii. দাসের উপর মালিকের যে অধিকার ছিল তাকে বলা হতো “Potesta Domini
iv. স্বাধীন নাগরিকদের উপর অন্য স্বাধীন নাগরিকদের অধিকারকে বলা হতো 'Namus Capere |
v. সম্পত্তি রক্ষায় অধিকারকে বলা হতো “Right of Domonian."
আইন প্রণয়নে রোমানরা চরম উৎকর্ষ সাধন করেছে। রোমান আইন ছিল নিরপেক্ষ, উদার ও মানবিক। রোমান আইনসমূহ বাইজেন্টাইন সম্রাট জ্যাস্টি নিয়ম সমৃদ্ধরূপে সংকলিত করেছিলেন তিনি। তার এক মন্ত্রীকে প্রধান করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি আইন মিশন গঠন করেন। এই কমিশনের উদ্যোগে মোট ৪টি খণ্ডে রোমান আইন সংগ্রহ ও সংস্কার হয় ।
১. Codex Justinian's : জাস্টিনিয়ানের আইন নামক একটি গ্রন্থে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রচলিত আইনগুলোসহ পরবর্তী
সম্রাটদের আইন অর্থাৎ রাজকীয় আদেশসমূহকে বিধিবদ্ধ করা হয়। এ গ্রন্থে জাস্টিনিয়ানের আদেশসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২. Digest (Digesta) বা Panaclect (Panaclecta) : আইন গ্রন্থ হিসেবে এটি ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। বিখ্যাত রোমান আইনজ্ঞদের লিখিত আইন ও পূর্ববর্তী আইন গ্রন্থের উপর মন্তব্য লিপিবদ্ধ করা ছিল এই গ্রন্থে। Digest ছিল তৎকালীন আইনের উপর সবচেয়ে বড় পাদটিকা বা মন্তব্য ।
৩. Institutes : ৫৩৪ খ্রিষ্টাব্দে ডাইজেস্ট ও ফোডেক্সকে সংশোধিত আকারে একটি বই হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছিল। যার নাম ছিল Institutes কারণ Digest বা Codex ত্রুটির ঊর্ধ্বে ছিল না। তাই এগুলোর অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিয়ে এবং এ দুটি গ্রন্থের সারমর্ম বা মূলনীতিগুলোকে Institutes নামক একটি গ্রন্থে সন্নিবেশিত করা হয়। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যেন এটাকে সহজে অধ্যয়ন করতে পারে। Codex, Digest এবং Institutes কে এক সঙ্গে, কর্পাস জরিস সিভিলিস বলা হয়ে থাকে। সকল দেশে এই আইনগুলো মধ্যযুগে ব্যবহৃত হতো।
8. The Novels : এটি ছিল একটি নতুন আইন। সম্রাট জাস্টিনিয়ান তাঁর সুদীর্ঘ রাজত্বকালে বিভিন্ন ধরনের যে সকল আইন জারি করেছিলেন এবং জাস্টিনিয়ানের ছেলে যেসব আইন প্রণয়ন করেছিলেন তার সমষ্টিই ছিল The Novels। মোটকথা হলো - Codex, Digest, Institutes এবং The Novels এই চারটি গ্রন্থ নিয়েই ছিল জাস্টিনিয়ানের আইন সংকলন। সুতরাং বলা যায় যে, বিশ্ব সভ্যতায় ইতিহাসে রোমানদের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল আইনের ক্ষেত্রে। রোমানরাই এসব একটা সুষম আইনি কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন। যা আধুনিক বিশ্বেও আইনের ভিত্তি হিসেবে কার্যকর রয়েছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]