মানব সভ্যতার ইতিহাস দীর্ঘদিনের ইতিহাস। প্রায় দশ লক্ষ বছর যাবৎ এ পৃথিবীতে মানুষ বসবাস করে আসছে বলে অনুমান করা হয়। অথচ আমরা মানব সভ্যতা সম্পর্কে মাত্র সাত হাজার বছরের ইতিহাস জানতে পেরেছি। তাই এর পূর্বের সময়টাকে অনক্ষর বা প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। বর্তমান সভ্যতার দিকে তাকালে খুব সহজেই বুঝা যায় যে, এটি এক সুদীর্ঘ ক্রম বিকাশের ফল। প্রাচীন সভ্যতার উপর ভিত্তি করে যেসব সভ্যতা গড়ে উঠেছে। তন্মধ্যে রোমান সভ্যতা এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আলোকেই রোমান সভ্যতা আজো বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। নিম্নে রোমান সভ্যতার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো—
১ . রাজনৈতিক অবস্থা : প্রাচীন রোমানদের ইতিকথার প্রেক্ষাপটেই উপলব্ধি করা যায় যে, তাদের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল কৃতিত্বপূর্ণ। সেখানে ভূমির মালিকানার উপর ভিত্তি করে অভিজাত শ্রেণি গড়ে উঠেছিল এবং নীচ শ্রেণির লোকজন ছিল
তাদের শাসনাধীন। সেখানে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল। গ্রিসের ন্যায় রোমেরও রাজনৈতিক অবস্থা রাজতন্ত্র থেকে অভিজাত তন্ত্রে এবং অভিজাত তন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটে।
২. অর্থনৈতিক অবস্থা : রোমের অধিবাসীরা ছিল মূলত কৃষিজীবী। কৃষিই ছিল তাদের অর্থনীতির মূল নিয়ামক। অধিকাংশ জমি ছিল অভিজাত শ্রেণির দখলে। তারা দাসদের মাধ্যমে কৃষি খামারে উৎপাদন করত। এছাড়া মদ, লবণ ইত্যদি তৈরি করেও তারা জীবিকা নির্বাহ করত। রোমানরা কৃষি ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যেও ব্যাপক প্রসার লাভ করেছিল।
৩. দাস প্রথা : দাস প্রথা রোমান সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। রোমানরা গ্রিসদের বহু সংখ্যক দাস ইতালিতে নিয়ে আসে। এছাড়া তারা যুদ্ধবন্ধিদেরকেও দাস হিসেবে ব্যবহার করত। দাসরা খনি, রাস্তা-ঘাট, মন্দির অট্টালিকা ইত্যাদিতে কাজ করত। ধনীরা দাসদের ক্রয় করে গৃহকাজে, ব্যবসা এবং কৃষি কাজে খাটাত। এভাবে ধনীদের জীবনে যেকোনো প্রয়োজনে দাসদের ব্যবহার করত। এমনকি দাসদের উপর তারা অমানুষিক নীপিড়নও চালাত ।
৪. সামাজিক শ্রেণি : প্রাচীন রোমান সভ্যতার অন্যান্য সভ্যতার মতই প্রধান দুটি সামাজিক শ্রেণির উদ্ভব হয়েছিল। যথা- অভিজাত শ্রেণি দাসদের উৎপাদিত সম্পদ ভোগ করত এবং দাস শ্রেণি ছিল নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সুতরাং অভিজাত শ্রেণির হাতেই ক্ষমতা সীমাবদ্ধ ছিল।
৫. পরিবার ব্যবস্থা : পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থা রোমান সভ্যতায় প্রচলিত ছিল। এখানে পিতার ক্ষমতা ছিল একচ্ছত্র,
নিরংকুশ ও সীমাহীন। আইনের দৃষ্টিতে স্ত্রী, পুত্র, কন্যা সকলেই ছিল পিতার অনুগত ৷
৬. বিবাহ ব্যবস্থা : রোমান সভ্যতায় পরিবার গঠিত হতো বিবাহের ভিত্তিতে। এখানে ব্যবহার সিদ্ধ বিবাহ, বিক্রয় বিবাহ এবং চিরস্থায়ী বিবাহ প্রচলিত ছিল। বিবাহের বয়স ছেলের জন্য চৌদ্দ এবং মেয়ের জন্য বারো বছর নির্ধারিত ছিল। আর পিতা- মাতাই বিবাহ স্থির করত ।
৭. নারীর মর্যাদা : রোমান সভ্যতায় নারীর মর্যাদা বেশ উন্নত ছিল। এখানে নারীরা সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদিতে যেতে পারত এবং শিল্প-কারখানায় চাকরিও নিতে পারত। আবার উচ্চ শ্রেণির নারীরা রাজনীতি করত। ক্ষমতার রাজনীতিতে নারীর ব্যাপক অংশ গ্রহণ ছিল ।
৮. জনগণের আইন : এ আইন জাতীয় চেতনার প্রতি অমনোযোগীদের উপর প্রয়োগ করা হতো। এছাড়াও আইনের বিবেচ্য
বিষয়সমূহ ছিল ব্যক্তিগত সম্পত্তির অনুমোদন, ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য নীতি নির্ধারণ
৯. ধর্মীয় অবস্থা : রোমানদের মধ্যে প্রবল ধর্মীয় বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। তারা অলিম্পিয়া দেবতার পূজা করত। রোমানরা প্রেত্মাতায় বিশ্বাস করত এবং পুনর্জন্মে বিশ্বাস করত। তাদের প্রধান দেব-দেবীর মধ্যে জুপিটার, ভেনাস, নেপচুন, সার্টান, জুনো প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। রোমানরা পুরোহিতদের অধিক মূল্যায়ন করত। তাই পুরোহিত মন্দিরে অবস্থান করে তাদের ধর্ম-কর্ম পরিচালনা করতেন।
চিত্রশিল্প : চিত্র শিল্পের মাধ্যমে রোমানদের শিল্পকলার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। রোমানরা বাস্তবমুখী চিত্র অঙ্কনে পারদর্শী ছিল। চিত্র শিল্পের মাধ্যমে প্রধান ছিল মুরাল ও প্রাচীর চিত্র। রোমানদের টেবিল আচ্ছাদনের বস্ত্র, বাসন-কোসন, পর্দা, পানির পাত্র, আসবাবপত্র ও বিভিন্ন ধাতব দ্রব্য ছিল অত্যন্ত রুচিশীল, উন্নত ও শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন।
১১. আইন প্রণয়ন : সভ্যতার ইতিহাসে রোমানদের সবচেয়ে গৌরবজনক অবদান ছিল আইনের ক্ষেত্রে। যুক্তি ও প্রথার সমন্বয়েই রোমান আইনের সৃষ্টি। সে কারণেই এ আইনে বস্তুনিষ্ঠ কার্যকারিতা লক্ষণীয়। প্রাচীন যুগে মৌলিক আইন দ্বারাই রোমানরা তাদের সমস্যা সমাধান করত। খ্রিঃপূঃ ৪৫০ অব্দে ১২টি ব্রোঞ্জপাত্রে সর্বপ্রথম রোমান আইন সংকলিত হয়েছিল। এখানে আইনের দৃষ্টিতে সাম্যের স্বীকৃতি ছিল। রোমান আইনে তিনটি বিশেষ দিক পরিলক্ষিত হতো, যা নিম্নরূপ-
ক. বেসামরিক আইন : এ আইন জাতীয় চেতনার প্রতি অমোনোযোগীদের উপর প্রয়োগ করা হতো। এছাড়াও এ
আইনের বিবেচ্য বিষয়সমূহ ছিল ব্যক্তিগত সম্পত্তির অনুমোদন, ক্রয় বিক্রয়ের জন্য নীতি নির্ধারণ।
খ. জন আইন : এ আইন মূলত অমোনোযোগীদের উপর প্রয়োগ করা হতো। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অনুমোদন ও ক্রয়-
বিক্রয়ের জন্য নীতি নির্ধারণ ছিল এ আইনের বিবেচ্য বিষয়।
গ. প্রাকৃতিক আইন : এ আইনের মূল বক্তব্য হচ্ছে প্রকৃতিগতভাবেই সকল মানুষ সমান এবং জন্মগতভাবে লাভ করা তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষমতা সরকারের নেই। স্টয়িক দার্শনিক সিসেরো ছিলেন এ আইনের জনক। রোমান আইন ছিল নিরপেক্ষ উদার ও মানবিক। এ আইন বিধবা ও এতিমদের রক্ষার ব্যবস্থা করেছিল। কোনো দাসকে হত্যা করলে দাস মালিক আইনের চোখে খুনি বলে বিবেচিত হতো। রোমান আইন অনেক ক্ষেত্রেই দাসদের প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ ছিল। এ আইনের শিক্ষা ছিল “প্রত্যেক মানুষই জন্মগতভাবে মুক্ত” ।
১২. রোমান দর্শন : রোমান দর্শন (Roman philosophy) ছিল গ্রিক-দর্শনে প্রভাবিত। রোমান দর্শনে তবুও এর নিজস্ব স্বকীয়তা ছিল। রোমান দর্শনের ইতিহাস পর্যালোচনা অনুসারে দেখা যায় যে, প্রাচীন রোমান দার্শনিক হলেন পশ্চিমের সক্রেটিস, প্লেটো। তার সময়কালে আনুমানিক ২৬৪-১৪৯ খ্রিঃপূঃ অব্দে। কেটো প্রবর্তিত দর্শনের মূল বাণী হচ্ছে কেবলমাত্র দয়া আর পুণ্যের কল্যাণে জীবনে সুখের আগমন ঘটে। তিনিও সক্রেটিসের মতো যুক্তি, মান আর নৈতিক গুণাবলির পূজারী ছিলেন। কিন্তু তিনি গ্রিক দর্শনের ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং রোমান সভ্যতায় জন্মগত ভবিষ্যৎ শ্রী আর প্রভাব কামনা করতেন। রোমান দার্শনিক জেনো প্রবর্তন করেন স্টোয়িক মতবাদের। এ মতবাদ যদিও গ্রিক দর্শনের মতাদর্শে লালিত তবুও এর একটি বিশেষ প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা ছিল। এ মতবাদে স্বদেশ প্রেম ও নৈতিকতার চেয়ে পৌরাণিকতাকে কখনো প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। সেনেকো, এপিকটেটাস এবং সম্রাট মার্কাস প্রমুখ স্টয়িক মতবাদকে আরও সমৃদ্ধ করেন। সেনোকা ল্যাটিন ভাষায় দার্শনিক বিষয় গ্রন্থ রচনা করেন। অপরপক্ষে এপিকটেটাস গ্রিক ভাষায় দর্শন গ্রন্থ রচনা করেন। স্টোয়িক দার্শনিক মার্কাস অরোলিয়াস ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। তার মতে, আমরা দুর্ভাগ্যকে সাথে নিয়েই জন্মগ্রহণ করে থাকি। এতে নিজস্ব কোনো কর্তৃত্ব নেই। দার্শনিক লুক্রেটিস (৯৮-৫৫ খ্রিঃপূঃ অব্দ) দর্শন তত্ত্ব নিয়ে 'অন দি নেচার অব থিং' হচ্ছে তার এক অনন্য কাব্য গ্রন্থ। তার দর্শন মতে অতি প্রাকৃতিক শক্তি আমাদের ক্ষতির কারণ । প্রকৃতিই পারে এ ভয় থেকে আমাদের মুক্ত রাখতে। দেব-দেবীরা এক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ, বস্তুতান্ত্রিকতাই এ জগৎ ও জীবন প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করছে। লুক্রিটিসের এ মতবাদ এপিকিউরিয়ান মতবাদ নামে পরিচিত।
১৩. শিক্ষা ও সাহিত্য : তৎকালীন বিশ্বে রোম ছিল শিক্ষা ও সাহিত্যে যথেষ্ট উন্নত। রোমের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। তারা রোমান সাহিত্যের পাশাপাশি গ্রিক সাহিত্য ও চর্চা করত। গ্রিক ভাষা ছিল রোমানদের জন্য অবশ্য পঠনীয় বিষয়। রোমান কবি ভার্জিন 'ইনিড' নামে এক বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থ রচনা করেছিলেন এবং হোরেস গীতি কবিতা রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। রোমান সাহিত্যের অনন্য খ্যাতনামা কবি-সাহিত্যিক ও সমালোচক হলেন- টেরেন্স, ক্যাটলাস, সিসেরো ওভিড, জুভেনাল, মার্শাল প্রমুখ।
১৪. রোমান বিজ্ঞান : রোমানরা বিশুদ্ধ বিজ্ঞান ও গবেষণার চেয়ে ব্যবহারিক বিজ্ঞান অর্থাৎ প্রযুক্তি বিদ্যার প্রতি অধিক উৎসাহী ছিল। নগর পরিকল্পনা ব্যাবহারিক ঔষধ, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সড়ক নির্মাণ, বর্ষপঞ্জি সংস্কার ও পদ্ধতিগত কৃষি ক্ষেত্রে তারা ছিল সকলের সেরা। আধুনিক সমাজ যেসব জিনিসকে নতুন বলে বিবেচনা করে সেগুলো প্রকৃত পক্ষে রোমানদের উদ্ভাবন। ডেসপানিয়ানের সময় হাসপাতাল ও চিকিৎসা বিদ্যা শিক্ষায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেছিল। বিজ্ঞানী প্লিনির খণ্ডের রোমানরা বৈজ্ঞানিক গবেষণার ব্যাপক দ্বার উন্মোচন করেছিল। যেমন-
ক. সমুদ্র পৃষ্ঠে জাহাজ চলাচল প্রত্যক্ষ করে এ মর্মে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় যে, পৃথিবী গোলাকার। এ সিদ্ধান্তের প্রবর্তক
বৈজ্ঞানিক প্লিনি ।
খ. জ্যোতিষশাস্ত্র গবেষণা সংক্রান্ত গ্রন্থটির প্রণেতা বৈজ্ঞানিক টলেমী। এই বইটি জ্যোতিষ শাস্ত্র বিষয়ক বিশ্বকোষ হিসেবে খ্যাত। তবে টলেমীর মতে পৃথিবীকে কেন্দ্র করেই সূর্য ঘুরছে। পরবর্তীকালে পনেরো ও ষোলো শতকে যথাক্রমে বিজ্ঞানী কেপোরনিকাস ও গ্যালিলিও সূর্য কেন্দ্রীক পৃথিবীর গতি বিষয়ক মতবাদ প্রচার করেন। টলেমী পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন বিষয়ক পদ্ধতিও উপস্থাপন করেছিলেন।
গ. ভূমি পরিকল্পনা ও নগর পরিকল্পনায় জ্যামিতিক সূত্রের ব্যবহার।
ঘ. ক্যালেন্ডার সংস্কারক বিখ্যাত রোমান ডায়োফ্যান্টস। তিনি খ্রিঃপূঃ ৪৫ অব্দে প্রতি বছর পর পর বাড়তি একদিন
হিসেবে ৩৬৫ দিনে বছর গণনা করেছিলেন।
১৫. ইতিহাস : ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে রোমানদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। রোমান ঐতিহাসিকদের মধ্যে লিভি, ট্যাসিটাস ও পুটার্কের নাম প্রণিধানযোগ্য। বিখ্যাত এ তিন ঐতিহাসিকদের মধ্যে লিভির নামই সমধিক প্রসিদ্ধ। বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ 'রোমের ইতিহাস' লিভি রচনা করেন। তিনি এ ইতিহাস গ্রন্থে রোমের ইতিহাস ও গৌরবময় কৃতিত্বের বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। ঐতিহাসিক প্লুটার্ক তার “The Parallel' গ্রন্থে চল্লিশ জন এবং গ্রিক নায়কদের জীবনচরিত লিপিবদ্ধ করেন। পরবর্তীকালে টার্কের ইতিহাস গ্রন্থের বহুতথ্য নিয়ে শেক্সপিয়র রচনা করেন 'জুলিয়াস সিজার' ও এন্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা। ১৬. কৃষি ও বাণিজ্য : কৃষি জীবীরাই ছিল মূলত রোম সাম্রাজ্যের অধিকারী। তাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিই ছিল কৃষি। রোমান সমাজে কৃষি ও বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল দাস শ্রমের উপর ভিত্তি করে। কৃষক ভূমি থেকে উৎখাত হলে, তার স্থান দখল করত ক্রীতদাস। অধিকাংশ ভূমি ছিল অভিজাত শ্রেণির দখলে। শুধু চাষাবাদের জন্য দাস রাখা হতো। মোটকথা উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে দাসরা উৎপাদনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতো ।
১৭. রোমান শিল্পকলা : রোমান শিল্পকলা (Roman art) এর সাথে গ্রিক শিল্পকলার বিশেষ মিল দেখা যায়। তবুও রোমানদের শিল্পকলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। রোমানরা যে ভাবাদর্শ নিয়ে শিল্পকলা গড়তেন তাতে তাদের মনোভাব সম্পূর্ণই ফুটিয়ে তুলতে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তাদের শিল্পকলার মানবীয় অনুভূতির পরিচয় বিশেষ লক্ষণীয়। তাদের এসব শিল্পকলা সমকালীন সমাজ, রাষ্ট্রতথা পেশাজীবী, আর সম্রাটের চরিত্র স্পটই শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ফুটে উঠেছে। যা সাধারণ দর্শকও সহজভাবে এর ভাষা বুঝাতে সক্ষম। রোমান শিল্পকলায় সম্রাট বা রাজাগণ পৌরাণিক চরিত্রেও স্থান পেয়েছেন। ভাস্কর্যের পাশাপাশি স্থাপত্য শিল্পও রোমানরা নিজেদের বিস্ময়কর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। যেমন-
ক. কংক্রিট আর্চ ও গম্বুজ আবিষ্কার এবং এদের স্বার্থক ব্যবহার পদ্ধতি;
খ. তাদের নিজস্ব রুচিতে সৃষ্ট স্থাপত্য কর্মের মধ্যে সম্রাট হাওরিয়ালের সময় নির্মিত প্যান্থিয়ন মন্দির ও বিখ্যাত
বৃহদায়তন অট্টালিকা। কলোসিয়াম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
গ. টুসকাপি ও কম্পোজিট দুটি নতুন স্তম্ভ সুবিশাল দেব মন্দির, বিজয় স্তম্ভ, প্রাসাদ, আবাসিক ভবন, সেঁতু, বাঁধ, অর্ধচন্দ্রাকৃতির
ছাদ বিশিষ্ট বাড়ি ইত্যাদিও সুন্দরভাবে নির্মাণ করেছিলেন।
১৮. ভাস্কর্য : বাস্তববাদী ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা হচ্ছে রোমান ভাস্কর্যের সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য দিক। রোমানরাই মূলত স্মরক স্তম্ভে ও দেয়ালের গায়ে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সুন্দর চিত্র নির্মাণ ও অঙ্কন করত। রোমানরা বিভিন্ন অঙ্কিত ভাস্কর্যে গুণবান, পুণ্যবান মনোজগতের বিষয় ইত্যাদি ফুটিয়ে তুলতেন। এছাড়াও সম্রাটের বিজয় মূর্তি বিভিন্নভাবে নির্মাণ ও রোমে বিজয়াভিযানের চিত্র খোদাই করে রাখা হতো। সুতরাং বলা যায় যে, বিরাট অট্টালিকা তৈরিতে যেমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইটের অশেষ ভূমিকা রয়েছে, তেমনি বিশাল রোমান সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল দাসদের আত্মত্যাগের প্রচেষ্টায়। অভিজাত শ্রেণি দাসদের সাথে পশুর ন্যায় ব্যবহার করত। এতে তাদের বলার কিছু স্বাধীনতা ছিল না। তাদের নির্যাতনে অনেক দাসকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। তবু বলা যায়, নির্যাতনের মাধ্যমে রোমান সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হলেও জ্ঞান বিজ্ঞান স্থাপত্যে, ভাস্কর্যে এবং শিল্প সংস্কৃতিতে রোমান সভ্যতা ছিল অসাধারণ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত