ম্যানর ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য The Characteristics of Manorial System

সামন্তবাদের এক অনন্য ও উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো ম্যানর ব্যবস্থা। ম্যানর প্রথার বৈশিষ্ট্য মূলত সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। নিচে ম্যানর প্রথার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো। যথা-
১. ম্যানর প্রথা গ্রামকেন্দ্রিক : ম্যানরের কেন্দ্র ছিল গ্রাম। ম্যানরের মধ্যে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত খামার বাড়ি। কৃষকেরা এ সমস্ত খামার বাড়িগুলোটে বাস করতেন না, তারা সাধারণত রাজার কাছাকাছি দলবদ্ধভাবে কোনো কুটিরে বাস করতেন। প্রত্যেকটি কুটিরের পাশে ছিল সবজি বাগানের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ স্থান ও হাঁস মুরগির জন্য উঠান, খড়ের গাদা ও আস্তাবল যা একমাত্র গ্রামের সাথে মিলে যায় ।
২. অভিজাত শ্রেণি : এ প্রথার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো বিভক্ত সমাজব্যবস্থা। সমাজের সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন, লর্ড, সামন্ত প্রভু ও তার সমগোত্রীয়রা। এরাই ছিল ম্যানর সমাজের শাসক ও অভিজাত শ্রেণি। তবে সমগ্র ম্যানর জুড়ে এদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কিন্তু তারাই ছিল সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগী। সাধারণ কৃষক ও ভূমিদাসরা লর্ডদের নির্দেশ মানতে বাধ্য ছিল। কেউ আনুগত্য প্রকাশ না করলে তাকে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হতো। রাজার অনুমতি ব্যতীত কেউ তাদের এই উপাধি গ্রহণ করতে পারত না ।
৩. কর ও খাজনা আদায় : ম্যানর ছিল সামন্ত খাজনা আদায়ের মূল ভাণ্ডার। কারণ চাষি তার জমি চাষের জন্য সামন্ত প্রভুকে চাষযোগ্য কর ও একটি ভূমিকর প্রদানে বাধ্য থাকত। এছাড়া চারণভূমি কর, ধর্মকর, পথ ও হাট কর প্রভৃতি প্রদানে বাধ্য হতো । পিতার মৃত্যুর পর সন্তান পিতার সমুদয় সম্পত্তির কর পরিশোধেও বাধ্য হতো। এভাবে খাজনা ও কর আদায় করা হতো। ৪. স্বয়ং সম্পূর্ণ অর্থনীতি : ম্যানর প্রথা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। মানুষের জীবন ধারণের প্রায় সবকিছুই উৎপাদিত হতো। তবে কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের কোনো অংশই অন্য ম্যানরে নিতে পারত না। অর্থাৎ বিক্রি বা হস্তান্তরের বিষয়টি অনুপস্থিত। ম্যানরের মধ্যে উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রী ম্যানররাই ভোগ করত। এমনকি সামন্ত প্রভুর বা লর্ডের নির্দেশ ছাড়া কেউ ম্যানরের বাইরে বা কেউ ম্যানরে প্রবেশ করতে পারত না। ম্যানরের মধ্যেই ছিল আটা কল, তাঁত বুনন, রুটি কারখানা ইত্যাদি। তাছাড়া কামার, কুমার, মুচি প্রভৃতি ম্যানরে গড়ে উঠেছিল।
৫. মুক্ত শ্রেণি : ম্যানরের দ্বিতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত যারা ছিল এরা হলো মুক্ত মানুষ। কৃষক ও কারিগরের একটি অংশ ছিল মুক্ত মানুষ বা শ্রেণি। এরা নিজেরা সরাসরি লর্ডের জন্য শ্রম না দিয়ে লর্ডদের জন্য শ্রম দিতে নিজস্ব অর্থে ক্রীতদাস বা শ্রমিক নিয়োগ করত। লর্ডদের নির্দেশে মুক্ত মানুষের অনেকেই আদালত পরিচালনাসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতেন। সমাজে এদের অবস্থা বেশ মর্যাদাপূর্ণই ছিল।
৬. ভূমিদাস : ম্যানর সমাজে তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত ছিলেন ভূমিদাস। ভূমিদাসদের জীবন ছিল দুর্বিষহ। সমাজের সবচেয়ে নিগৃহীত
অবহেলিত ও নির্যাতিত ছিল ভূমিদাস। এরা আদালতে লর্ড বা মুক্ত মানুষের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতে পারত না। লর্ডের অনুমতি ব্যতীত এরা বাইরে যেতে পারত না। এমনকি কোনো অভিযোগ করতে পারত না। এমনকি কোনো ভূমিদাস মুক্ত শ্রেণির রমণী হলেও তার সন্তানও ভূমিদাস হতে বাধ্য হতো।
৭. ভূমি ব্যবস্থা গ্রামের বিস্তৃত অংশ ছিল ভূমি। এ ভূমির মধ্যে অন্যবাদি জমির চেয়ে আবাদি জি বেশি। ম্যানরের সামস্তভূমিকে ৬ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- ১. পর্ডের সরাসরি কর্তৃত্বাধীন খাস জমি, 2. রে জমির নিকটস্থ জমি বা খাস জমির অংশ বিশেষ। ৩. রায়তি ভূমি, ৪. তৃণভূমি, ৫. বনাঞ্চল ও যাজকের সম্পর যাজকগণ ভোগ করতেন। লর্ড একটি ম্যানরের উৎকৃষ্ট জমির ১/৩ থেকে ২/৫ অংশ পর্যন্ত নিজস্ব অধিকারে রাখতেন। ৮. লর্ড বা সামগ্রদের নির্যাতন : সামন্ত যুগে ম্যানর সমাজে গর্তরা ছিল সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। ফলে কোনো দি তার অবাধ্য হলে, কর প্রদানে ব্যর্থ হলে, আনুগত্য প্রদর্শন না করলে তাকে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হতো। আ ভূমিদাসদের প্রতি পর্ডরা অসন্তুষ্ট হলে তাদেরকে ভূমি থেকে উৎখাত করা হতো। আবার ক্ষেত্র বিশেষে অন্যায় আচরণ করলে ভূমি দাসদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো। তুলনামূলক কম অপরাধীদেরকে বিভিন্ন প্রকার গুদামে আটক রাখা হতো। এভাবে ম্যানর সমাজে কৃষক ও ভূমিদাসদের উপর নির্মম নির্যাতন করা হতো।
৯. লর্ডের প্রতি অনুগত জীবন : ম্যানর প্রথা এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে ম্যানরের সকল জনগোষ্ঠীকেই একমাত্র পার অধীনে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকভাবে অনুগত থাকতে হতো। আর এ জন্যই অনেকে বলেন যে, লর্ডের প্রতি আনুগত্য প্রয়োজনেই ম্যানর প্রথা গড়ে উঠেছিল। যেখানে সামন্ত কৃষক ও ভূমিদাস, এক কথায় নিম্নোত সকলে লর্ডের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করত।
১০. ম্যানরের ভিত্তিক লর্ডের বাসস্থান : ম্যানরের আয়তন বড় হলে লর্ডের বাসস্থান হতো দুর্গবিশেষ, গ্রামের সাথে এর দেয়াপ থাকত। আর ম্যানর যদি ছোট হতো তবে থাকত ম্যানর হাউজ। ম্যানর হাউজের নির্বাহকৃত লর্ডের খাস জমির কাছে থাকত মাটির ঢিবি।
১১. গ্রামের চার্চ ও যাজক : ম্যানরের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো গ্রাম্য চার্চ। এসব চার্চের অধীনে থাকত যাজকগণ। চার্চ সংলগ্ন স্থানেই থাকত যাজকদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল। যাজকদের আবাদি জমি গ্রামবাসীরা বিনা পারিশ্রমিকে চাষ করে দিত। কারণ তারা এ কাজকে পুণ্য মনে করত। এমনকি কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের একটা অংশ ধর্মকর হিসেবে চার্চে দান করত। যার মালিক যাজকগণ।
১২. প্রশাসনিক কাঠামো : লর্ড ম্যানরেরা প্রশাসন পরিচালনার জন্য স্টুয়ার্ড, কাইলফ এবং রিভি উপাধির কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে প্রশাসন পরিচালনা করতেন। সুতরাং বলা যায় যে, প্রত্যেকটি ম্যানরে একটি জলের ধারা বয়ে যেত- যা গ্রামের পুকুরের সাথে সংযুক্ত ছিল। লর্ডের প্রকৃত ভূ-খণ্ড থাকত এর কাছেই। এটিকে উৎকৃষ্ট জমি হতে হতো।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]