সামাজিক ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞানের সম্পর্ক বেশ নিবিড়। নৃবিজ্ঞান মানুষের সামগ্রিক অধ্যয়ন (Total Study of man) | সামগ্রিক অধ্যয়ন বলতে মানুষের দৈহিক ও সাংস্কৃতিক উভয় দিকের অধ্যয়ন বা পাঠকেই বুঝায়। সামাজিক ইতিহাস যেখানে সমাজ ও সমাজস্থ মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রার বিশ্লেষণ নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে নৃবিজ্ঞান সমগ্র মানব জাতির উদ্ভব ও ক্রমবিকাশের আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত। নৃবিজ্ঞান যেহেতু সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ব্যাপক পর্যালোচনা করে থাকে সেহেতু সামাজিক ইতিহাসের সাথে এর সম্পর্ক থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। কেননা সামাজিক ইতিহাসেরও মূল আলোচ্য বিষয় হলো সমাজ ও সংস্কৃতি। সামাজিক ইতিহাসকে যেমন সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হয় অপরদিকে নৃবিজ্ঞানকেও সামাজিক সাংস্কৃতিক ঘটনা প্রবাহের সাধারণ সূত্রাবলি সমাজবিজ্ঞান থেকে গ্রহণ করতে হয়। সমাজ ও সভ্যতার গবেষণায় উভয়ের জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ দুটো বিষয়ের মধ্যকার সম্পর্ক নিচে বর্ণনা করা হলো-
১. আলোচ্য বিষয়গত সম্পর্ক : সামাজিক নৃবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়ের উদ্দেশ্য হলো আদিম মানুষের সভ্যতা, সংস্কৃতি অনুশীলন করা এবং মানব সংস্কৃতির ইতিহাস পর্যালোচনা করা। অনুরূপভাবে সামাজিক ইতিহাস পাঠের বিষয়ও ঐ সকল মানুষ ও তাদের সামাজিক অবস্থা। সুতরাং ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞানের মধ্যে বিষয়বস্তুগত সম্পর্ক ব্যাপক ।
২. অংশগত সম্পর্ক : সামাজিক ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞানের শাখা হিসেবেই উদ্ভব হয়েছে। উভয়ই সমাজবিজ্ঞানের
অবিচ্ছেদ্য অংশ। অতএব, সামাজিক ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞানের মধ্যে অংশগত সম্পর্ক সুস্পষ্ট।
৩. অতীত নির্ভরতা : সামাজিক ইতিহাসবিদদের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো অতীত সমাজকে উপস্থাপন করা। অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞানের কার্যক্রম বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতিই নৃবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত। অর্থাৎ উভয়ই অতীতের ঘটনা প্রবাহকেই, প্রাধান্য দিয়ে থাকে ।
৪. সামাজিক বিবর্তন : সমাজের বিভিন্ন মানুষের জীবন প্রণালির পরিবর্তন এবং সামাজিক বিবর্তন সম্পর্কে নৃবিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করে থাকে। সকল বিবর্তনের ইতিহাস, ঐতিহাসিকগণ সামাজিক ইতিহাসে সংরক্ষণ করেন। বস্তুত সামাজিক ইতিহাসের অগ্রগতি হয় নৃ-বিজ্ঞানের এসব তিথ্যের ভিত্তিতে। তাই সামাজিক ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ·
৫. পরস্পর নির্ভরশীলতা : নৃবিজ্ঞান ও সামাজিক ইতিহাস ঘটনা প্রবাহের সকল সাধারণ সূত্রাবলি সমাজবিজ্ঞান থেকে গ্রহণ করে সমাজ ও সভ্যতার গবেষণায় কাজে লাগায়। সামাজিক ইতিহাস নৃবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান থেকে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। সুতরাং সামাজিক ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞানের মধ্যে ব্যাপক সম্পর্ক বিদ্যমান ।
৬. সমাজ ও সংস্কৃতি: সমাজের উৎপত্তি, বিকাশ, বিবর্তন, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে জানার জন্য সমাজবিজ্ঞানীগণ নৃবিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে থাকেন। যেহেতু সামাজিক ঘটনা প্রবাহ সামাজিক ইতিহাসেই চিত্রিত হয়, সেহেতু নৃবিজ্ঞানীগণ তা অনুসরণ করেই সমাজ গবেষণার কাজকে সহজ করতে পারেন। এদিক থেকেও উভয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের শাখা হচ্ছে, মানব জাতিতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, সামাজিক নৃবিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সাহিত্য যা সামাজিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধশালী করেছে। এদিক থেকে বলা যায় যে, সামাজিক ইতিহাসের সাথে নৃবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ৭. অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি : সামাজিক ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞান মানব সমাজের নৃবৈজ্ঞানিক তথ্য, বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর ইতিহাস
ইত্যাদির ব্যাপক অনুসন্ধান করে থাকে। সুতরাং উভয়ের মাঝে অনেক সম্পর্ক রয়েছে।
৮. অভিন্ন লক্ষ্য : সামাজিক বিবর্তনের প্রণালি কী, সাংস্কৃতিক বিবর্তনের প্রণালি কী, সামাজিক গোষ্ঠীসমূহ, সাংস্কৃতিক প্ৰলক্ষণসমূহ ইত্যাদি বিষয়ে সামাজিক ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞান গুরুত্বের সাথে আলোচনা করে। সুতরাং সামাজিক ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞানের মধ্যে দৃশ্যমান সম্পর্ক বিদ্যমান।
সামাজিক ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য
Difference between Social History and Anthropology
এত সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও নৃবিজ্ঞান ও সামাজিক ইতিহাসের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। নিচে তা আলোচনা করা হলো- ১. মানুষ এবং তার সম্পর্কিত আলোচনাই নৃবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু। যেমন- মানুষের শারীরিক আকৃতি, জীবন প্রণালি, প্রত্নতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব ইত্যাদি নৃবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে মানুষের সমাজ এবং সমাজ সম্পর্কিত নানাবিধ উপাদান, সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে আলোচনাই সামাজিক ইতিহাসের বিষয়বস্তু ।
২. সামাজিক ইতিহাস সমাজবদ্ধ মানুষের সামগ্রিক কার্যকলাপের বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন। পক্ষান্তরে নৃবিজ্ঞান হলো মানুষ এবং
তার সংস্কৃতির বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন ।
৩. সামাজিক ইতিহাস অতীত মানুষের সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করে। আর নৃবিজ্ঞান তার পূর্বের দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন করে অতীত যান্ত্রিক সভ্যতার সমাজ সম্পর্কে গবেষণা করছে। ফলে সামাজিক ইতিহাসের সাথে নৃবিজ্ঞানের রথণা করছে। ফলে সামাজিক ইতিহাসের সাথে নৃবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য রয়েছে।
৪. বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার মধ্যে নৃবিজ্ঞান হলো মানব বিজ্ঞান আর সামাজিক ইতিহাস হলো মূল্যবোধ নিরপেক্ষ বিজ্ঞান । ৫. সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানী কোনো ক্ষুদ্রাকৃতির সমাজের আবাসিক গবেষক হিসেবে নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং অংশগ্রহণ কৌশলের
সাহায্য নেন। কিন্তু সামাজিক ইতিহাসবিদগণ সচরাচর এ ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করেন না।
৬. সমাজ ঐতিহাসিকগণ বৃহৎ সমাজ সম্পর্কে গবেষণা করেন। কিন্তু নৃবিজ্ঞানীগণ কোনো সম্প্রদায়, উপজাতি বা
জাতিগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ইত্যাদি বিষয়ে অনুসন্ধান ও গবেষণা করে থাকেন ।
৭. নৃবিজ্ঞানীদের জীববিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব ও ভাষাতত্ত্ব সম্পর্কে প্রশিক্ষণ লাভ করতে হয়। পক্ষান্তরে সমাজ ঐতিহাসিকগণকে
তেমন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয় না।
৮. সামাজিক ইতিহাস একটি তাত্ত্বিক বিজ্ঞান যার কোনো ব্যবহারিক দিক নেই। অপর দিকে নৃবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক দিকের
পাশাপাশি একটি উন্নত ব্যবহারিক দিকও রয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক ইতিহাসবিদদের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো অতীত সমাজকে উপস্থাপন করা। কিছু পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। উভয়েরই আলোচ্য বিষয় সমাজ ও সমাজস্থ মানুষ। সমাজ গবেষণার কাজে নৃবিজ্ঞানীরা যেমন সামাজিক ইতিহাসের সহায়তা নিয়ে থাকেন। তেমনি সমাজবিজ্ঞানীরাও নৃবিজ্ঞানের সাহায্য ব্যতীত পুরোপুরি অগ্রসর হতে পারে না। তাই তারা উভয়েই পরস্পর নির্ভরশীল।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত