গিল্ডের সংজ্ঞা (Definition of Guild) গিল্ডের কাজ Function of Guild

Guild
গিল্ড (Guild) হলো এক বিশেষ শ্রেণির কর্মচারীদের সংগঠন, যারা কোনো বিশেষ বৃত্তি কর্মের দ্বারা একই সূত্রে আবদ্ধ। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মধ্যযুগীয় ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সমগ্র সামন্ততান্ত্রিক ইউরোপে শহরগুলো উত্তরোত্তর স্বায়ত্তশাসন অর্জন করতে থাকে এবং শহরের অধিবাসীরা ক্রমশ একটি সুস্পষ্ট সামাজিক শ্রেণিরূপে আত্মপ্রকাশ করে। অর্থাৎ সামন্তবাদী সমাজব্যবস্থা মধ্যযুগ ও পাশ্চাত্য দাস প্রথার শেষ পর্যায়ে যখন গড়ে ওঠে, তখন শিক্রবার ( Guild system) উদ্ভব ঘটে। বণিকেরা নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের ও অধিকার আদায়ের জন্য সামন্ত প্রভুদের বিরুদ্ধে, গিল্ড গঠন করে এবং গিল্ডের অধীনে সংঘবদ্ধ হয়। শিল্প ও বাণিজ্যের সাথে মূলত এরা সংশ্লিষ্ট থাকে। গিল্ডের প্রথম আবির্ভাব ঘটে ইংল্যান্ডে এবং চতুর্দশ শতাব্দীতে গিল্ড সংগঠন ছড়িয়ে পড়ে সারা ইউরোপে ।
গিল্ডের সংজ্ঞা (Definition of Guild) : একটি পেশাভিত্তিক শিল্প সংগঠন হলো গিল্ড (Guild)। ব্যবসায়ী ও বণিকেরা মধ্যযুগের ইউরোপে, নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ও সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য যে সংগঠন গড়ে তুলে, তাকে গিল্ড বলে।
ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) বলেন “Guild is an organization of craft workers specialized in accordance with the types of occupation."
Illustrated Oxford Dictionary” তে বলা হয়েছে, গিল্ড হচ্ছে পারস্পরিক সাহায্যের লক্ষ্যে একটি মানব সংঘ বা একটি সাধারণ লক্ষ্যে পৌছার অভীষ্ট বস্তু।
Collins Dictionary of Sociology তে বলা হয়েছে, "Guild is an association of craft workers, especially in pre- industrial societies, farmed to provide metual aid and to control craft standards and entry into the trade. G গিল্ড গড়ে উঠে এই মধ্যযুগেই। ঐতিহাসিকেরা গিল্ড গড়ে ওঠার পেছনে একাধিক উদ্দেশ্যের কথা বলেন। পণ্ডিত মহলে এ বিষয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। তবে বিতর্কের মধ্যে না গিয়ে উদ্দেশ্য হিসেবে বলা যায় যে, উৎপাদিত দ্রব্যের গুণগত মান বজায় রাখা এবং বণিক ও উৎপাদকদের স্বার্থের বিষয়টি সংরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যেই গিল্ড গড়ে উঠেছে।
গিল্ডের কাজ Function of Guild
বাণিজ্য বিকাশের ক্ষেত্রে মধ্যযুগের ইউরোপে গিল্ডগুলোর অবদানকে কোনো মতে অস্বীকার করা যায় না। বিভিন্ন বণিক ও কারিগরদের শ্রেণিস্বার্থ রক্ষা ও বৃদ্ধির জন্য গিল্ড গড়ে উঠলেও গিল্ডগুলো অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি সম্পাদন করত। যথা— ১. সামাজিক কাজ : গিল্ড সংগঠনগুলোর সমাজব্যবস্থা বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে থাকে। তাদের সামাজিক দায়-দায়িত্ব ও কাজ ছিল। গিল্ডগুলো ধর্মীয় সংগঠনের ভূমিকাও পালন করত। এই সংগঠনগুলো চার্চের সাংস্কৃতিক উৎসব যেমন পালন করত তেমনি পীড়িত ব্যক্তিদের চিকিৎসারও উপযুক্ত ব্যবস্থা করত।
২. প্রতিযোগিতা রোধ : বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে গিল্ডগুলোর সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ও কাজ ছিল, বণিক বা ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে প্রতিযোগিতামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ করা যায় তার অবসান ঘটানো। এর ফলে কোনো বণিক এককভাবে বাজারের উপর স্বীয় কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পারত না।
৩. দস্যুদের প্রতিরোধ : বাণিজ্যিক সুরক্ষা প্রদান করা হলো গিল্ডের একটি অন্যতম কাজ। তাই বাণিজ্যিক প
সমাজবিরোধীরা বা কোনো দস্যু যাতে আক্রমণ করতে না পারে তার বিহিত ব্যবস্থা করা। গিল্ডগুলো এই উদ্দেশ্য সা জন্য নিজেদের খরচে সেনাবাহিনী বা নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগ করত।
৪. সদস্যদের ঐক্য বজায় : সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে থাকে শিশু সংগঠনগুলো। তাদের দায়-দাি
সামাজিক কাজ ছিল। গিল্ডগুলো ধর্মীয় সংগঠনের ভূমিকাও পালন করত। এই সংগঠনগুলো বিজিত ব্যক্তিদের চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা করা ও চার্চের সাংস্কৃতিক উৎসবও পালন করত।
৫. বাণিজ্যিক নিয়ন্ত্রণ কাজ : বাণিজ্যিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা ছিল শহরের প্রতিটি গিল্ডের প্রধান কাজ। সব সময় ব্যবসায়ী বা বণিকদের স্বার্থ রক্ষার দিকে নজর দেওয়া হতো। তবে ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনো ব্যবসায়ীকে এক বছরের অধিক সময় স্বা হতে দেওয়া হতো না। এছাড়াও এক শহরের বাসিন্দা অন্য শহরে গিল্ডগুলো বাণিজ্য করার অধিকার দিত না।
৬. প্রশাসনিক কাজ : গিল্ডগুলো ব্যাবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করত। যেমন
শহরের মানুষের স্বার্থরক্ষা, রাজস্ব আদায়, রাস্তাঘাট, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রভৃতি কাজ করত।
পরিশেষে বলা যায় যে, উপরিউক্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা ছিল গিল্ডের প্রধান কাজ। এছাড়াও পণ্যের সঠিক মान বজায় রাখা শ্রমিকের যোগান, কাঁচামাল ও সদস্যদের সাহায্য সহযোগিতা করাও গিল্ডের কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত ছিল ।

গিল্ডের ধরন Types of Guild

সামন্তবাদী অর্থনীতির পরিমণ্ডলে আমরা প্রধানত দুই ধরনের গিল্ড দেখতে পাই। যথা—
ক. বণিক গিল্ড (Merchant Guild);
খ. কারিগর গিল্ড (Artisan Guild )।
বণিক গিল্ডকে অনেক ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক গিল্ডও বলা হয়। এছাড়াও Leiturgical Guild নামে আরও এক প্রকার গিন্তু দেখতে পাওয়া যায় ৷
ক. বণিক গিল্ড (Merchant Guild) : কোনো বিশেষ অঞ্চলে একচ্ছত্র বাণিজ্যিক কর্তৃত্ব ও অধিকার বজায় রাখা তথ্য নিশ্চিত করাই ছিল বণিক গিল্ডের প্রধান উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব। সাধারণত স্থানীয় বণিকদের মধ্যে এই সংঘের সদস্যপদ সীমাবদ্ধ থাকত। শহরের আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে একচ্ছত্র অধিকারের ফলে তা আপন বা নিজ ইচ্ছানুযায়ী যেকোনো পণ্যের মান চাপিয়ে দিতে পারত। এই সংঘ পরিমাপ ও বাটখারার বিষয়েও তদারকি করত। বিভিন্ন পেশার বণিকরাও বণির গিল্ডে সদস্য হতে পারত। এই গিল্ডের সাথে শহর বিকাশের যোগসূত্র রয়েছে বলে একে (City Guild বা Town Guild m বলা হতো। বণিক গিল্ড আবার দুই প্রকার। যথা— স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদেশি ব্যবসায়ী।
খ. কারিগর গিল্ড (Artisan Guild) : মধ্যযুগের ইউরোপে বাণিজ্য প্রসারের ফলে অতিমাত্রায় শিল্পায়ন হতে থাকে শহরগুলো এবং শিল্পায়িত শহরগুলো একাদশ শতাব্দীতে একটি নতুন কারিগর শ্রেণিরূপে আত্মপ্রকাশ করে। কর্মকার, স্বর্ণকার, বয়ন প্রভৃতি বিভিন্ন পেশায় কারিগর সংগঠিত হতে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে কারিগর গিল্ডের উদ্ভব হয়। বণিক গিল্ডের মতোই কারিগর গিল্ডের উদ্দেশ্য ছিল। কেবলমাত্র একটি বিশেষ পেশাকে কেন্দ্র করে কারিগর গিল্ড গড়ে ওঠে। যেমন- স্বর্ণকারগণ একটি গিল্ডের অধীনে সংগঠিত হতো। অনুরূপভাবে অপরাপর নির্মাণে কারিগণ নিজ নিজ পেশাভিত্তিক নিজস্ব গিল্ডের অধীনে সংগঠিত হতো। কারিগর গিল্ড ২টি নিয়মে কাজ করত। যথা—
i. কাজের অভ্যন্তরীণ নিয়ম পরিচালনা করা এবং
ii. বহিরাগতদের একচেটিয়া আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ।
বর্ণিত দুই প্রকার গিল্ড ব্যতীত আরও এক প্রকার গিল্ডের নিদর্শন পাওয়া যায়, যাকে Leiturgical Guild বলা হয়। রোমান সভ্যতা বিকাশে এই ধরনের গিল্ড বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এদের কাজ ছিল মিলিটারিদের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করা। মূলত যুদ্ধক্ষেত্রে বাহ্যিক জিনিসপত্র যেসব শিল্প কারখানায় উৎপাদন করা হতো সেসব শিল্পকারখানায় শ্রমিকেরা 'Leiturgical Guild' নামে পরিচিত। এছাড়াও সমাজবিজ্ঞানী Max Weber তাঁর Religion Guild নামে অপর একটি গিল্ডের কথা বলেছেন।
পাশ্চাত্য তথা ইউরোপীয় অর্থে ভারতীয় গিন্ত ব্যবস্থা স্বায়ত্তশাসিত না হওয়ার কারণ The Factor for which the Guilds of Pre-British Indian Could not become outonomus in the western Sense
ব্রিটিশ ভারতের গিজগুলো স্বায়তশাসন অর্জন করতে না পারায় বহুবিধ কারণ দায়ী থাক বিটিশ ভারতের গিগুলো বয়সেম্পূর্ণ অর্জন করতে না পারায় ওয়েবার বলেছেন, ইহার কারণ প্রথা, যা নগর বিকাশের ক্ষেত্রে একটা শক্তিশালী অন্তরায় ছিল। ভারতীয় শিশু ব্যবস্থা স্বায়ত্তশাসন অর্জন করতে না পারার কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
অতিবর্ণ প্রথা : জাতিবর্ণ প্রথা থেকে নিশু ব্যবস্থাকে ভারতীয় সমাজের প্রেক্ষিতে খুব একটা পৃথক করা যায় না। কেননা জাতিবর্ণ প্রথার জন্য এখানে বংশানুক্রমিক সদস্যপদ পেশা নির্ধারিত হতো। কারো পক্ষে মত পেশা পরিবর্তন করা সম্ভব ছিল না। ভারতীয় সমাজের মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবন নিয়ন্ত্রণ করত এই জাতিবর্ণ প্রথা। মানুষের অর্থনৈতিক জীবন জাতি কর্মপ্রণার গতির মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে হিন্দু সমাজের চার প্রকার জাতিবর্ণ। যার ফলে -নীচু মিলে একযুগে কোনো শক্তিশালী গিল্ড গঠন করতে পারেনি। অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র এই চার প্রকার বর্ণের ভিত্তিতে চারটি শ্রেণি বংশ পরম্পরায় ভিন্ন ভিন্ন কর্মে নিয়োজিত থাকায় ভারতে পাশ্চাত্য অর্থে স্বাতন্ত্র্যধর্মী গিল্ড গড়ে উঠতে পারেনি। Weber এর মতে Magical distance রয়েছে ভারতীয় জাতিবর্ণ ব্যবস্থায়। অপরদিকে পাশ্চাত্যে কোনো জাতিবর্ণ ব্যবস্থা ছিল না বিধায় সেখানকার গিল্ডগুলো জাতিবর্ণের প্রভাব মুক্ত থেকে গিগুলো স্বায়ত্তশাসন অর্জন করে। ২. গিল্ডের বিকল্প শক্তি হিসেবে জাতিবর্ণ ব্যবস্থা : জাতিবর্ণ ব্যবস্থা প্রাক ব্রিটিশ ভারতে গিল্ড ব্যবস্থার বিকল্প শক্তি হিসেবে
গড়ে উঠেছিল। গিল্ডের চেতনা ও জাতিবর্ণের চেতনা ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। ভারতবর্ষের গিল্ড ব্যবস্থায় City autonomy এবং Trritorial economy এর বিকাশ ঘটেনি। জাতিবর্ণ প্রথা এখানে শহর গড়ে ওঠার পূর্বেই একটি শক্তিশালী সামাজিক সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছিল। ফলে ব্রিটিশ পূর্ব ভারতের গিল্ড ব্যবস্থা পাশ্চাত্য অর্থে স্বায়ত্তশাসন লাভ করতে পারেনি। অপরদিকে পাশ্চাত্যের গিল্ড ব্যবস্থায় City autonomy এবং Territorias economy এই দুটি বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটায় ইউরোপীয় গিল্ড ব্যবস্থা স্বায়ত্তশাসন লাভ করে।
৩. ধর্মীয় প্রভাব : ভারতীয় ও ইউরোপীয় গিল্ড সাধারণত স্বায়ত্তশাসন বঞ্চিত ছিল। তবে এটা অর্জনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রভাব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ধর্মীয় রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল পূর্ব ব্রিটিশ ভারতীয় গিল্ডের কার্যকলাপ। অর্থাৎ ধর্মীয় রীতিনীতি কঠিন বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। এখানে ধর্ম পেশাকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করত। ফলে ভারতীয় গিল্ড সংগঠন পাশ্চাত্য অর্থে স্বায়ত্তশাসন অর্জন করতে পারেনি। অন্যদিকে পাশ্চাত্যে পেশার সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ফলে ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ মুক্ত ছিল পেশা। প্রত্যেক সদস্য স্বাধীন ও পছন্দমতো বৃত্তি গ্রহণ করতে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হতো না। সুতরাং এই দিক থেকে পাশ্চাত্যের গিল্ডগুলো ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ, যা ভারতীয় গিল্ডের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
৪. ব্যক্তি মালিকানা : গিল্ডের শায়ত্তশাসন লাভের একটি প্রধান শর্ত বা উপাদান হলো ব্যক্তি মালিকানার উপস্থিতি। কিন্তু ব্রিটিশ ভারতে ব্যক্তি মালিকানা ছিল সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত, এমনকি যৌথ মালিকানার অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায় নি । শত সমালোচনা সত্ত্বেও একথা বলা যায় যে, ভারতবর্ষের সমুদয় ভূমির মালিক ছিলেন রাজা বা সম্রাট। চাষাবাদের জন্য রাজা বা সম্রাট জমি বণ্টন করে দিতেন, যা থেকে কৃষকদের জীবিকা নির্বাহ হতো। তাই রাজা বা সম্রাটের চাহিদা মেটানোর জন্য ভারতে এক শ্রেণির গিল্ড ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, যা স্বাতন্ত্র্যতা অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু ইউরোপের ভূমিতে ব্যক্তি মালিকানা প্রকটভাবে স্বীকৃত ছিল, তাই সেখানে গিল্ড ব্যবস্থা স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করেছিল।
৫. সামাজিক ঈর্ষা : অর্থনৈতিক স্বার্থে মূলত গিল্ড সংগঠন গড়ে উঠত। কিন্তু ভারতীয় গিল্ডগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক স্বার্থের চেয়ে সামাজিক ঈর্ষা ও বিদ্বেষ বেশি ছিল, যা ভারতবর্ষে গিল্ডের স্বাতন্ত্র্য লাভ না করার একটি অন্যতম কারণ। অর্থাৎ অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের পশ্চাতে যদি সামাজিক ঈর্ষা ও বিদ্বেষ বজায় থাকে তাহলে কখনই গিল্ডের স্বাতন্ত্র্যতা বজায় থাকতে পারে না। স্বার্থের চেয়ে হিংসা ও বিদ্বেষই প্রাধান্য পেয়েছিল প্রাক-ব্রিটিশ ভারতীয় গিল্ডের ক্ষেত্রে। অথচ ইউরোপীয় গিল্ডগুলোর মধ্যে ঈর্ষা ও বিদ্বেষের পরিবর্তে অর্থনৈতিক স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছিল। তাই বলা যায়, ইউরোপীয় গিল্ডগুলো স্বাতন্ত্র্যতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।
৬. স্থানাস্তর গমনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা : প্রাক ব্রিটিশ ভারতের সদস্যরা বা কারিগররা নিজস্ব গ্রাম ছেড়ে অন্যানে
স্থানাস্তরগমন করতে পারতেন না। বংশানুক্রমিকভাবেই গ্রাম ত্যাগ করা নিষিদ্ধ ছিল। তাই এখানকার গিল্ডগুলো স্বাতন্ত্র্যতা লাভে ব্যর্থ হয়। পক্ষান্তরে ইউরোপের গিল্ডের সদস্য পদ জাতিবর্ণের সাথে সম্পর্কিত ছিল না। সেই জন্য তারা ইচ্ছামত স্বাধীন পেশা নির্বাচন, নির্ধারণ এবং স্থান পরিবর্তন করতে পারতেন বলে ইউরোপীয় গিল্ডগুলো স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। ৭. উত্তরাধিকার নীতি ভারতের শিশু ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণরূপে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। এই উত্তরাধিকার রীতি বিদ্যমান থাকায় কোনো ব্যক্তির পক্ষেই স্বাধীন বৃত্তি গ্রহণ করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। ফলে চতুর্বর্ণে বিভক্ত ব্যক্তিবর্গ গিল্ডের কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডে স্বাধীনভাবে অংশ নিতে পারত না। গিল্ডের কাজকর্মে অংশ নিত কেবলমাত্র বৈশ্য বর্ণের লোকেরাই। সুতরাং উত্তরাধিকার নীতি বলবৎ থাকায় ভারতবর্ষে গিল্ড পাশ্চাত্য অর্থে স্বায়ত্তশাসন লাভ করতে পারেনি। কিন্তু ইউরোপের গিন্ড ব্যবস্থায় ভারতের গিল্ডের অনুরূপ রীতি বিদ্যমান থাকায় ইউরোপীয় গিল্ডসমূহ স্বায়ত্তশাসন লাভ করেছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রগতিশীল, উদারনৈতিক চিন্তাচেতনার বিকাশ ঘটায় ইউরোপে গিল্ডগুলো স্বায়ত্তশাসন লাভ করেছিল পক্ষান্তরে ভারতে বদ্ধমুল চিন্তাচেতনা বিদ্যমান থাকায় এখানকার গিল্ড সংগঠনগুলো স্বায়ত্তশাসন অর্জন করতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে ভারতবর্ষের গিল্ডগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত তথা সুগঠিত আমলাদের অধীনে ছিল। ফলে এ ব্যবস্থায় একটি স্বাধীন কারিগর শ্রেণির বিকাশ ঘটতে পারেনি। ফলে প্রাক ব্রিটিশ ভারতে গিল্ড ব্যবস্থা পাশ্চাত্য অর্থে বা ইউরোপীয় অর্থে স্বায়ত্তশাসন অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]