পোপতন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ The Growth of Popacy

পোপতন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ মধ্যযুগের ইউরোপের ইতিহাসে একটি আলোচিত অধ্যায়। পোপতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে মূলত গির্জা বা চার্চকে কেন্দ্র করে। চার্চ হলো-
খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় উপাসনালয়। অগোস্টাস সিজারের সময় রোমে খ্রিষ্টধর্মের উদ্ভব হয় এবং সম্রাট কনস্ট্যানটাইনের সময় তা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রথমদিকে চার্চকেন্দ্রিক খ্রিষ্টধর্ম ছিল সহজ-সরল ও আড়ম্বরহীন। ক্রমে নানাবিধ কর্মকাণ্ড ও অনুষ্ঠানের উপস্থিতিতে তা জটিল ও আড়ম্বরপূর্ণ হয়ে উঠে এবং চার্চ একটি সংগঠিত শক্তিতে পরিণত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ক্যাথলিক চার্চ এবং এর অধিকর্তা পোপকে ঘিরেই গড়ে ওঠে পোপতন্ত্র। পোপ হচ্ছেন খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু। মধ্যযুগের রোমের তিনি রোমান সম্রাটের মতোই অসীম ক্ষমতায় অধিকারী হয়ে উঠেন। পোপ (Pope) শব্দের উৎপত্তি গ্রিক শব্দ Papa থেকে। এর অর্থ পিতা। এ Papa থেকে Papatia শব্দের উৎপত্তি এবং তা থেকেই ইংরেজি Papaey শব্দের উদ্ভব হয়েছে, যার বাংলা অর্থ পোপতন্ত্র। পোপের কার্য সংস্থাকে পোপতন্ত্র (প্যাপসি) বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। মূলত মধ্যযুগের ইউরোপে পোপতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে এবং এর পরিপূর্ণ বিকাশেও দীর্ঘ সময় লেগেছে।
গোপতন্ত্রের উদ্ভব । খ্রিষ্ট ধর্মের প্রচারক যিশুখ্রিষ্টের জীবিতাবস্থায় তাঁর ধর্ম তেমন প্রসার লাভ করেনি। দ্বিতীয় তৃতীয় শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মূলত দারিদা ক্লিষ্ট চাকর-বাকর, ভবঘুরে মানুষ এবং অশিক্ষিত দাসরা খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু খ্রিস্টের প্রচারিত ধর্ম রোমান সাম্রাজ্যে প্রচত আলোড়ন সৃষ্টি করে। শহরে বসবাসকারী অভিজাত সম্প্রদায়ের নর-নারী, সামরি ও বেসামরিক অবস্থা সম্পন্ন ব্যক্তিদের অনেকে খ্রিষ্ট ধর্মে আকৃষ্ট হতে থাকে। খ্রিষ্টধর্ম যুদ্ধ, হানাহানিসহ সকল ধরনের জবরদস্তিমূলক কাজকে পাপ কাজ বলে অভিহিত করে এবং মানুষকে পুণ্যের পথে আসার আহ্বান জানালে রোমানগণ তাতে বিপুলভাবে সাড়া দেয়। রোমান সম্রাট কনস্টান্টিনোপলের সময় খ্রিষ্টধর্ম রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ৩১৩ খ্রিষ্টাব্দে নিলাম ঘোষণার মাধ্যমে খ্রিষ্টধর্মকে ইতোপূর্বেকার রোমান সাম্রাজ্যে প্রভাব বিস্তারকারী প্যাগান কাষ্ট বা পৌরপিতার সমান মর্যাদা প্রদान করা হয়। এরপর থেকে খ্রিষ্টধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটে এবং রোমান সাম্রাজ্যের প্রধান ধর্মে রূপান্তরিত হয়। ক্রমে রাজনীতিতেও এর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং এর ফলে উদ্ভব ঘটে পোপতন্ত্রের

গোপতন্ত্রের বিকাশ The Growth of Popacy

পোণতন্ত্রের বিকাশের অগ্রযাত্রা, পোপতন্ত্রেরই উদ্ভবের পর ধীরে ধীরে এর বিকাশের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। এ সময় পোপ সম্রাটের মতোই অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেন এবং সম্রাট বা রাজার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। পোপতন্ত্রের বিকাশ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-
১. গোপতন্ত্রের অবকাঠামো : খ্রিষ্ট ধর্মের স্তরভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান হলো পোপতন্ত্র। এগুলোকে বলা হতো চার্চ
গির্জা। গ্রামীণ চার্চের অবস্থান পোপতন্ত্রের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এ স্থানীয় চার্চের দায়িত্বে ছিলেন পুরোহিতগণ। অনেকগুলো গ্রামের চার্চের নিয়ন্ত্রণ করত নিকটস্থ শহরের প্রধান চার্চ এবং এর অধিকর্তাকে বলা হতো প্রেসবিটার। প্রেসবিটার চলতেন উর্ধ্বতন জেলা পর্যায়ের চার্চের প্রধান বা বিশপের নির্দেশে। জেলা বিশপগণ চলতেন প্রাদেশিক চার্চের প্রধান আর্চবিশপের পরামর্শক্রমে। আর্চবিশপদের নিয়ন্ত্রণ করত প্যাট্রিয়ার্কেট। রোমান সাম্রাজ্যে এরূপ ৫টি প্যাট্রিয়ার্কেট চার্চ ছিল। এর প্রধানকে বলা হে প্যাট্রিয়ার্ক। ৫ জন প্যাট্রিয়ার্ক থেকে একজনকে সর্বোচ্চ চার্চের নেতা নির্বাচন করা হতো এবং তাকেই বলা হতো পোপ । পোপতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি : খ্রিষ্টধর্মের স্তরভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান হলো পোপতন্ত্র। এগুলোকে বলা হতো চার্চ বা গির্জা। পোপতন্ত্রের সর্বনিম্ন পর্যায়ে গ্রামীণ চার্চের অবস্থান। এ স্থানীয় চার্চের দায়িত্বে ছিলেন পুরোহিতগণ। অনেকগুলো গ্রামের চার্চের নিয়ন্ত্রণ করত নিকটস্থ শহরের চার্চ এবং অধিকর্তাকে বলা হতো প্রেসবিটার। প্রেসবিটার চলতেন ঊর্ধ্বতন জেলা পর্যায়ের চার্চের প্রধান বা বিশপের নির্দেশে। জেলা বিশপগণ চলতেন প্রাদেশিক চার্চের প্রধান আর্চবিশপের পরামর্শক্রমে। আর্চবিশপদের নিয়ন্ত্রণ করত প্যাট্রিয়ার্কেট। রোমান সাম্রাজ্যে এরূপ ৫টি প্যাট্রিয়ার্কেট চার্চ ছিল। এর প্রধানকে বলা হতো প্যাট্রিয়ার্ক। ৫ জন প্যাট্রিয়ার্ক থেকে একজনকে সর্বোচ্চ চার্চের নেতা নির্বাচন করা হতো এবং তাকেই বলা হতো পোপ ।
৩. পোপতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি : খ্রিষ্টান ধর্মযাজক বা পুরোহিতদের প্রথমদিকে প্রধান কাজ ছিল গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে শিশু ও দরিদ্র জনসাধারণকে ধর্মোপদেশ প্রদান করা। তারা খ্রিষ্ট ধর্মানুসারীদের বিবাহ অনুষ্ঠান, অস্ত্যষ্টিক্রিয়া, প্রাত্যহিক অনুষ্ঠানসহ ধর্মীয় ও সামাজিক বিভিন্ন কাজে অংশ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে যখন পোপতন্ত্রের অবকাঠামো সুনির্দিষ্টভাবে গড়ে ওঠে, তখন জনসাধারণের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবন পরিচালনার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে পুরোহিতদের নিয়োগ করা হয় এবং ক্রমান্বয়ে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এসময় যারা বিশপ নির্বাচন হতেন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবে আঞ্চলিক ও প্রাদেশিক গভর্নরদের কাছে তাদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতকে রোমের বিশপ নিজেকে পোপ বলে ঘোষণা দেন। ধীরে ধীরে পোপের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে তিনি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা গ্রহণ করেন। ৪. পোপের রাষ্ট্র গঠন : নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সামন্ত রাষ্ট্রের শাসকগণ চার্চের মতাদর্শকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন। খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকের মাঝামাঝিতে ফ্রাঙ্কিস রাষ্ট্র ও চার্চের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মৈত্রী বৃদ্ধি পেতে থাকে। ৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে পিম্পিন নিজেকে ফ্রান্সের রাজা ঘোষণা করার পর চার্চকে বহু সুবিধা প্রদান করেন। এতদিন পর্যন্ত চার্চ যে সকল জমি দানগ্রাহী হিসেবে ভোগ করত, সেগুলোকে তিনি চার্চের সম্পত্তির স্বীকৃতি প্রদান করেন। এর ফলে চার্চ বা গির্জা খুব লাভবান হয়। অতঃপর রোমকে আলাদা প্রদেশ করার পর ৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে পোপের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র তথা পোপ রাষ্ট্র ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় থেকেই সেন্ট পিটারের আমলের নেভিকুলা স্বাধীনভাবে বিরাজ করতে থাকে। পোপের রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটি এখন একটি নগররাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে মর্যাদার আসন নিয়ে অবস্থান করছে এবং সমস্ত বিশ্বের খ্রিষ্টান জগতকে সেখান থেকে পরিচালিত করছে।
চার্চের স্বাধীনতা : রাজা ও চার্চের সম্পর্কের ফাটল ধরে খ্রিস্টীয় এগারো শতকে। পোপ রাজার ক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক শুরু করলে রাজা ও পোপের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ সময় ফ্রান্সের বুরগণ্ডির ক্লুনি মঠে চার্চগুলোর নৈতিক সম্মান ঊর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য একটি আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের একটি অন্যতম দাবি ছিল রাজার অধীনতা থেকে চার্চকে মুক্ত করা। ১০৭৩ খ্রিষ্টাব্দে পোপ সপ্তম গ্রেগরি কুনিয়াক কর্মসূচি সমর্থন করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেন। এ সময়ে লাটেরান সম্মেলনে গোপ নির্বাচনে রাজার হস্তক্ষেপ রহিত করার জন্য একটি নতুন নির্বাচন পদ্ধতি অনুমোদিত হয়। চার্চের সর্বোচ্চ মর্যাদাধারী ব্যক্তিগণ তথা কার্ডিনাল থেকেই পোপ নির্বাচনের ব্যবস্থা নির্ধারিত হয়। এর ফলে সম্রাট কিংবা যেকোনো শাসকের পক্ষে গোপ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার সুবিধা রহিত হয়। এ সম্মেলনেই পোপ কর্তৃক বিশপ ও মঠের অধ্যক্ষ নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ফলে চার্চ রাষ্ট্রীয় অধীনতা মুক্ত হয়ে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা লাভ করে।
চার্চ ও রাজার সম্পর্ক : চার্চের সাথে রাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে রাজা পিপিনের সময় থেকে। এ সময় জার্মান রাজাগণ চার্চ ও গোপের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে। দশম শতকে রাজা প্রথম ও দ্বিতীয় অটো চার্চকে উপহার হিসেবে প্রচুর জমি প্রদান করেন। বস্তুত চার্চের বিশপ ও মঠের অধ্যক্ষদের অনেকেই রাজাদের হাত ধরে চলতেন। চার্চে মর্যাদা প্রাপ্ত অনেকেই রাষ্ট্রের প্রশাসনিক, সামরিক এবং কূটনৈতিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের সুযোগ লাভ করে।
৭. রাজা ও গোপের দ্বন্দ্ব : পোপ সপ্তম গ্রেগরি এবং রাজা চতুর্থ হেনরির সময় থেকে চার্চের স্বাধীনতার আদেশ কার্যকর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পোপ ও রাজার মধ্যে ক্ষমতা, প্রভাব ও আত্মসম্মান নিয়ে গভীর দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পোপতন্ত্ৰ ধৰ্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে জনসাধারণকে তাদের প্রভাব বলয়ের মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা করে। পোপ সপ্তম গ্রেগরি চতুর্থ হেনরীকে ধর্ম সম্প্রদায় থেকে বহিষ্কার করে এবং রাজকীয় সম্রাট পদ থেকে বঞ্চিত করার ঘোষণা দিলে তিনি ইতালিতে এসে পোপের কাছে হাঁটু গেড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ফলে ১১২২ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ার্মসে এ স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির মাধ্যমে সম্রাট ও পোপের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]