ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি যে বিজয় অর্জন করে তার প্রেক্ষাপট রচিত হয় মূলত ১৯৪৭ সালে ভারত
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই। প্রায় দুইশো বছরের ব্রিটিশ শাসনের পর ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় যেখানে
পূর্ববাংলাকে পাকিস্তানের একটি অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেশ বিভাগের পর পরই পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী প্রথম
আক্রমণ করে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষার উপর। বাংলার বদলে উর্দুকে এ অঞ্চলের রাষ্ট্রভাষা করার
ব্যাপারে শাসক গোষ্ঠী বেশ তৎপর হয়ে উঠে। কিন্তু সাহসী বাঙালিদের ক্রমাগত প্রতিরোধ ও প্রতিকারের প্রতিফলন ঘটে
যোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ঘোষিত আন্দোলনের মাধ্যমে। নিরীহ আন্দোলনকারীদের জীবনের বিনিময়ে একপর্যায়ে
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি
দিতে বাধ্য হয়। মূলত ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ আরও বেশি শক্ত অবস্থানের উপর দাঁড়ায়।
এরপর ১৯৫৪ এর সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফন্টের বিজয়, ১৯৬৬ এর ৬ দফা ও ১১ দফা দাবি, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান সব
মিলিয়ে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শোষণ নিপীড়ন, নির্যাতন ও অবজ্ঞার বিরুদ্ধে সমগ্র বাঙালি জাতি ও অন্যান্য ক্ষুদ্র
নৃগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ায়। এর প্রতিফলন ঘটে ১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিপুল
বিজয় অর্জনের মাধ্যমে। অবশেষে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ এবং নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস ব্যাপী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। মুখ্য শব্দ ভাষা আন্দোলন, ২১ ফেব্রæয়ারি, ১৯৫২ সাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়, বাঙালি
জাতীয়তাবাদ, রাষ্ট্রভাষা।
ভাষা আন্দোলন
ভারতবর্ষের জনগণের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার অবসান এবং
পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পর তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী প্রথম বাঙালির ভাষার উপর তীব্র আঘাত হানে। মূলত
১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম আঘাতটা আসে ভাষার উপর। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী
জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে ঢাকার একটি সমাবেশে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করেন। অবশ্য তার পূর্বে ১৯৪৭ সালে
করাচীর একটি জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। কিন্তু ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। সে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ
শহীদুল্লাহসহ অনেক বুদ্ধিজীবী প্রকাশ্যে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান।
১৯৪৭ সালের ৮ ই ডিসেম্বর বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্রসমাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাঙ্গনে এক সমাবেশের আয়োজন করেন। তমদ্দুন মজলিশের অধ্যাপক নূরুল হক ভূইয়ার নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ
গঠিত হয়। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রæয়ারি করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে
বিরোধী দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ইংরেজি এবং উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি
দানের জন্য একটি প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু গণপরিষদের অবাঙালি পাকিস্তানি সদস্যরা এর সমালোচনা করেন। বাংলাকে
রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন পরিচালনার জন্য শামসুল আলমের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ
গঠিত হয়। ১১ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ধর্মঘটের দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,
শওকত আলী, কাজী গোলাম মাহবুব, শামসুল হক, অলি আহাদ, আব্দুল ওয়াহেদ প্রমুখ গ্রেপ্তার হন।
১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক নাগরিক সমাবেশে ঘোষণা দেন যে, উর্দু এবং
একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। ২৪ শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে আয়োজিত আরেকটি সমাবেশেও
তিনি একই ঘোষণা দেন। কিন্তু উপস্থিত ছাত্ররা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের জš§ হওয়ার
পর আওয়ামী লীগ তাদের মেনিফেস্টোতে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের বিষয়টিকে গুরুত্বের সংঙ্গে তুলে ধরে। ১৯৫০
সালের ১১ মার্চ আবদুল মতিন এর নেতৃত্বে ঢাকা ব্শ্বিবিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৫২ সালে খাজা
নাজিমুদ্দীন ঢাকায় আসেন। তিনিও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যে জের ধরে
ছাত্রসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালিত হয়। ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের
নেতৃত্বে এক সভায় কাজী গোলাম মাহবুবকে আহŸায়ক করে ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়।
এই পরিষদ ২১ ফেব্রæয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, জনসভা এবং বিক্ষোভ মিছিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু
সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে ছাত্রদের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সংকল্পে অঁটুট থাকে।
‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ চাই শ্লোগানে ছাত্র-শিক্ষক, পেশাজীবী, সাধারণ মানুষ মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। পুলিশ মিছিলে
অতর্কিত লাঠিচার্জ শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে সেদিন
রফিক (রফিক উদ্দিন আহমদ), জব্বার (আবদুল জব্বার), বরকত (আবুল বরকত), সালাম (আবুদস সালাম) ও অহিউল্লাহ
নামের এক শিশু নিহত হয়। ভাষা আন্দোলনের এ তীব্রতায় সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার বিষয়ে নমনীয় হয়।
১৯৫৪ সালের ৭ মে গণপরিষদে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়। ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ
বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ অবদান রেখেছে তার মধ্যে- ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন,
১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নি¤েœ বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশের উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো:
(১) ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন: বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ভাষা আন্দোলন।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের মাধ্যমে ভারতবর্ষ ভাগের পর পাকিস্তান অংশের সাথে
বাংলাকে যুক্ত করা হয়। তার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে এদেশের নাম রাখ হয় পূর্ব পাকিস্তান। সমস্ত
পাকিস্তানের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের (শতকরা ৫৬ ভাগ) ভাষা ছিলো বাংলা। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী
উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার নীল নকশার ষড়যন্ত্র শুরু করে। আর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে
পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন সময় উর্দুকে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়। তবে এদেশের সমগ্র
জনগোষ্ঠী তাদের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে এবং প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে। অবশেষে ১৯৫২ সালের এদেশের ছাত্রশিক্ষক এবং জনতার সাথে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর পাকিস্তান সরকার বাঙালিদের দাবী মানতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬
সালের শাসনতন্ত্রে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভাষা আন্দোলনের এ ঘটনার মাধ্যমে বাঙালি
জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়।
(২) ১৯৫৪ সালের নির্বাচন: ১৯৫৪ সালের নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। পাকিস্তানি
শাসকগোষ্ঠী তাদের হীন ষড়যন্ত্র চরিতার্থ করার লক্ষ্যে আর্থ-সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে শোষণ শুরু করে। কিন্তু
এদেশের বাঙালি নেতৃবৃন্দ তাদের শোষণের ছক বুঝতে পেরে রাজনৈতিকভাবে আরও সচেতন ও প্রতিবাদী হয়ে
উঠেন। অতপর ১৯৩৫ সালের ভোটার তালিকার ভিত্তিতে ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষমতাসীন
মুসলিম লীগের সাথে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে
ইসলাম, গণতন্ত্রী দল এবং খিলাফতে রব্বানি পার্টির সমন্বয় গঠিত যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। এই নির্বাচনে
যুক্তফ্রন্ট ৩০৯ আসনের মধ্যে ২২৮ টি আসন লাভ করে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফলে বোঝা যায় বাঙালি
জাতীয়তাবাদী চেতনা কতটা সুদৃঢ় ছিল।
(৩) ১৯৬৬ সালের ৬ দফা: পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপর শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং
এদেশের মানুষকে সমস্ত প্রকার বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুৃ শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ৬ দফা
কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই দাবি উত্থাপনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পাকিস্তানী শোষণের প্রকৃত মাত্রা বুঝতে পারে
এবং নিজেদের স্বার্থের ব্যাপারে আরও সচেতন ও সোচ্চার হয়ে উঠে। ৬ দফা কর্মসূচির মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ
বিকাশের সকল রসদ বিদ্যমান ছিল। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে এর বাস্তবে প্রতিফলন ঘটেছিল।
(৪) ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান: বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে। ১৯৬৮ সালের ছাত্র অসন্তোষ গণআন্দোলনে রূপান্তরিত হয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিপক্ষে তীব্র
প্রতিবাদে রূপ নেয়। ঢাকার রাজপথ রূপান্তরিত হয় মিছিলের নগরীতে। গভর্নর হাউস ঘেরাও হলে পুলিশের সাথে
জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই সূত্র ধরে আন্দোলন আরও জোরদার হয়। এসময় শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি
এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। গণঅভ্যুত্থানের
মুখে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এটি বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে আরও একটি অনন্য ঘটনা।
(৫) ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন: ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাদের বিকাশের ক্ষেত্রে অনন্য
অবদান রাখে। দীর্ঘদিনের শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ আরও বেশি সোচ্চার হয়ে উঠে। ১৯৭০ সালে
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রলয়ংকরী ঝড় ও জলোচ্ছ¡াস আঘাত করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তখন অসহায়
মানুষের দিকে নজর না দিয়ে নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার বিষয়ে ব্যস্ত থাকে। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান দুর্যোগগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। যার ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদী
চেতনা আরও সুদৃঢ় হয়। ১৯৭০ এর নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে প্রাদেশিক
পরিষদের ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৮৮ টি আসনে এবং জাতীয় পরিষদের (পূর্ব পাকিস্তান) ১৬৯ টি আসনের মধ্যে
১৬৭ টি আসনে জয় লাভ করে। এতে প্রমাণিত হয় যে, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাবাদের
মাধ্যমে গঠিত ঐক্য ও সংহতি কতটা সুদৃঢ় হয়।
(৬) বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ: বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের
ভাষণ এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এ ভাষণের মাধ্যমে তিনি কেবল মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত এবং অনুপাণিত করেননি, এ
জনপদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে জাগ্রত করেছেন। গুরুত্ব এবং প্রভাব বিবেচনা করে ইউনেস্কো
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চেও ভাষণকে “বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল” বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
(৭) ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ: ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যেকটি ঘটনা বাঙালি
জাতীয়তাবাদ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এর চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সমগ্র বাঙালি জাতি নিঃসঙ্কচিত্তে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ দিনের শোষণ,
বঞ্চনা ও নিপীড়নের ফলে পুঞ্জিভুত ক্ষোভের বিষ্ফোরণ ঘটে অগ্নিঝরা মুক্তিসংগ্রামে মধ্য দিয়ে। ২৩ বছরের সংগ্রামের
মধ্য দিয়ে মুক্তির এ মঞ্চ প্রস্তুত করেন বাঙালির অবিসাংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তাঁর আহŸানে অকুতোভয় সাধারণ মানুষ জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। দীর্ঘ নয়
মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং প্রায় দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এ যুদ্ধ
বাঙালি জাতীয়তাবাদকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। বস্তুত বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে মুক্তিযুদ্ধই সবচেয়ে প্রভাবশালী উপাদান, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
সারসংক্ষেপ
বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে যে সবচেয়ে প্রথম প্রভাব ফেলে সেটি হলো ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলন
জাতীয়তাবাদ বিকাশের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ, আন্দোলন-সংগ্রাম ইত্যাদি বাঙালি
জাতীয়তাবাদ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। উদাহরণস্বরূপ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয়, ১৯৬৬
সালের বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঘোষিত ৬ দফা কর্মসূচি, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ
এবং অবশেষে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৫.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন।
১। ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হয় কত সালে?
(ক) ১৯৫২ সালে (খ) ১৯৬২ সালে
(গ) ১৯৫১ সালে (ঘ) ১৮৫২ সালে।
২। যুক্তফ্রন্ট কয়টি দল নিয়ে গঠিত হয়-
(ক) ৩ টি (খ) ৪ টি
(গ) ৫ টি (ঘ) ৬ টি।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]