মুখ্য শব্দ বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ছয়দফা, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের পূর্ণতা পায় যে মহান মানুষটির হাত ধরে তিনি হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি না থাকলে বাংলাদেশ হতো না যেমন সত্য, তেমনই বাঙালি
জাতীয়তাবাদ পূর্ণতা পেত না এটাও সত্য।
বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ: বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশের যে কয়টি ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ১৯৫৪ সালের
নির্বাচন অতি গুরুত্বপূর্ণ। শেখ মুজিবুর রহমান তখন তরুণ নেতা। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের
নেতৃবৃন্দ যুক্তফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল বিজয় অর্জন করে। আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্টের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সারা বাংলাদেশে জনসংযোগ করেন। তিনি
সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। ফলে নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল বিজয় অর্জন করে। তিনি
বাংলার মানুষকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার করে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন
করে তোলেন। ফলে জনগণের মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা প্রবল হতে থাকে। শেখ মুজিবুর রহমানের অমায়িক
আচরণ, প্রবাদতুল্য স্মৃতিশক্তি এবং সম্মোহনী বক্তব্য মানুষকে আকর্ষণ করতো। আস্থা অর্জনের মাধ্যমে তিনি মানুষকে
সংগঠিত এবং ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের অরক্ষিত অবস্থা এবং অন্যান্য বৈষম্যমূলক আচরণ বঙ্গবন্ধুকে
চরমভাবে নাড়া দেয়। এর প্রেক্ষিতে ১৯৬৬ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে তিনি লাহোরে জাতীয় সম্মেলনে ৬ দফা দাবি
উত্থাপনের লক্ষ্যে আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। কিন্তু সম্মেলনের উদ্যোক্তারা বঙ্গবন্ধুর এ দাবি প্রত্যাখ্যান
করেন। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু উক্ত সম্মেলন বর্জন করেন। ছয়দফার মূল বক্তব্য তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন। পশ্চিম
পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নত্বাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের
কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬ দফা কর্মসূচি’ শিরোনামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ
করা হয়। এই কর্মসূচি ঘোষণার ফলে আইয়ুব সরকার বঙ্গবন্ধুকে নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে এবং ষড়যন্ত্রমূলক
আগরতলা মামলার প্রধান আসামি হিসেবে দ্রæত বিচার ট্রাইবুনালে তাঁর বিচার কার্যক্রম শুরু করে। এ ন্যক্কারজনক ঘটনার
প্রতিবাদে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা আরো প্রবল হয়ে উঠে। ১৯৬৯ সালে তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান ঘোষণা করেন, পরবর্তী নির্বাচনে তিনি আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে অংশ নিবেন না। বঙ্গবন্ধু
এবং অন্য ৩৪ আসামিকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক
বিশাল সমাবেশ থেকে তাঁকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভ‚ষিত করা হয়। তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। সবার
আস্থা ও ঐক্যের প্রতীক।
১৯৭০ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রলয়ংকরী ঝড় ও জলোচ্ছ¡াস আঘাত করে। দুর্যোগে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ মারা যায়
এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুহারা হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তখন অসহায় মানুষের দিকে নজর না দিয়ে নিজেদের
ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্যোগ-দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের প্রতি
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ফলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অনেক বৃদ্ধি পায়। ১৯৭০ সালের
নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে প্রাদেশিক
পরিষদের ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৮৮ টিতে জয় লাভ করে এবং জাতীয় পরিষদের পূর্ব পাকিস্তান অংশের ১৬৯ টি
আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে জয় লাভ করে। মূলত বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার কারণে এদেশের জনগণ বাঙালি জাতীয়তাবাদী
চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ভরাডুবি নিশ্চিত করে।
নির্বাচনে জয়লাভ করলেও বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতায় বসতে দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে গণতান্ত্রিক
আন্দোলন পরিচালনা করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণই মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদের মুক্তির সনদ যা প্রকৃত পক্ষে
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ডাক। এ ভাষণের গুরুত্ব ও প্রভাব বিবেচনা করে ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে “বিশ্ব
ঐতিহ্য দলিল” বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। ঐদিনের ভাষণে বাঙালি জাতি উপলব্ধি করেছিল, যুদ্ধের মাধ্যমেই চূড়ান্ত বিজয়
অর্জন করতে হবে।
২৫ মার্চ কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পূর্বেই বঙ্গবন্ধু দৃঢ়চিত্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষ দেশের জন্য পরিবার পরিজন ছেড়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রাণপণ যুদ্ধ করে বীর
মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ স্বাধীন করেন। এ যুদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে, বঙ্গবন্ধু নামে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়েই সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এটিই
জাতীয়বাদ বিকাশের সর্বোচ্চ শিখর। এখানে বঙ্গবন্ধুই মূল চরিত্র।
সারসংক্ষেপ
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের দৃশ্যমান ভ‚মিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৬ সালের ছয়দফা বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে চেনার সুযোগ করে
দেয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নের্তত্বাধীন
আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। এ বিজয় বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে অনন্য উচ্চতায়
নিয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের মুক্তির সনদ। মূলত এটিই বাংলাদেশের স্বাধীনতার
মূল ঘোষণাপত্র। ঐদিনের ভাষণে বাঙালি জাতি উপলব্ধি করেছিল যে, যুদ্ধের মাধ্যমেই চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে হবে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৫.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন।
১। ১৯৭০ এর নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ কয়টি আসন পায় Ñ
(ক) ২৬৬ টি (খ) ২৬৮ টি
(গ) ২৮৮ টি (ঘ) ২৯৮ টি
২। সম্প্রতি ইউনেস্কোর “বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল” হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে কোন ভাষণ-
(ক) বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ (খ) বঙ্গবন্ধুর ২৫ মার্চের ভাষণ
(গ) বঙ্গবন্ধুর ১৪ ফেব্রæয়ারির ভাষণ (ঘ) বঙ্গবন্ধুর ১৯ মার্চের ভাষণ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত