বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে একুশ দফার গুরুত্ব বর্ণনা কর বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ছয় দফার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর

মুখ্য শব্দ পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিম পাকিস্তান, একুশ দফা, ছয় দফা।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ক্ষেত্রে একুশ দফা এবং ছয় দফা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে। পাকিস্তানের শোষণ,
বৈষম্য ও বঞ্চনার বিপরীতে এর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অধিকারের দাবি তোলা হয়েছিল। একুশ দফা
ও ছয় দফা মূলত রাজনৈতিক কর্মসূচি। কিন্তু এর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক মুক্তিকে ত্বরান্বিত
করা হয়েছিল। চ‚ড়ান্ত বিচারে এগুলো এদেশের রাজনৈতিক মুক্তি তথা স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল। এখানে আমরা
পর্যায়ক্রমে একুশ দফা এবং ছয় দফা সম্পর্কে আলোচনা করবো।
একুশ দফা
একুশ দফা ছিল মূলত ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার। এ ইশতেহার নির্বাচনে জয়লাভে যেমন গুরুত্বপূর্ণ
অবদান রাখে, তেমনি বাংলাদেশের অভ্যুদয়েও এর ভ‚মিকা রয়েছে। মূলত দফাগুলোর মধ্যেই বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বীজ
রোপিত হয়েছিল। দফাগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
(১) বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবী;
(২) বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি ও সকল খাজনা আদায়কারী স্বত্ব উচ্ছেদ ও রহিত করে উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে
বণ্টন করার দাবী। খাজনার পরিমাণ হ্রাস এবং সার্টিফিকেট জারির মাধ্যমে খাজনা আদায় প্রথা রহিত করার ব্যবস্থা;
(৩) পাটব্যবসা জাতীয়করণ করে তা পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে আনা হবে এবং মুসলিম লীগ শাসনামলের পাট-
কেলেঙ্কারি তদন্ত ও অপরাধীর শাস্তির ব্যবস্থা করা;
(৪) কৃষিক্ষেত্রে সমবায় প্রথা প্রবর্তন এবং সরকারি অর্থ সাহায্যে কুটিরশিল্পের উন্নয়ন সাধন করা;
(৫) পূর্ববঙ্গকে লবণশিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে এবং লবণ-কেলেঙ্কারির তদন্তও অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা;
(৬) কারিগর শ্রেণির গরিব মোহাজেরদের কর্মসংস্থানের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ;
(৭) খাল খনন ও সেচব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে বন্যা ও দুর্ভিক্ষ রোধের সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়া;
(৮) পূর্ববঙ্গে কৃষি ও শিল্প খাতের আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশকে স্বাবলম্বী করা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ওখঙ)
মূলনীতি মাফিক শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করা;
(৯) দেশের সর্বত্র অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন এবং শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করা;
(১০) শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার, মাতৃভাষায় শিক্ষাদান, সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের মধ্যকার বৈষম্য বিলোপ
করে সকল বিদ্যালয়কে সরকারি সাহায্যপুষ্ট প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে;
(১১) ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনসহ সকল প্রতিক্রিয়াশীল আইন বাতিল করে সবার জন্য উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য করা;
(১২) শাসন পরিচালনা ব্যয় হ্রাস করা; যুক্তফ্রন্টর কোনো মন্ত্রী এক হাজার টাকার বেশি বেতন গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত;
(১৩) দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ-রিশ্ওয়াত বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
(১৪) জননিরাপত্তা আইন, অর্ডিন্যান্স ও অনুরূপ কালাকানুন বাতিল, বিনাবিচারে আটক বন্দির মুক্তি, রাষ্ট্রদ্রোহিতায়
অভিযুক্তদের প্রকাশ্য আদালতে বিচার এবং সংবাদপত্র ও সভাসমিতি করার অবাধ অধিকার নিশ্চিত করা;
(১৫) বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে পৃথক করা;
(১৬) বর্ধমান হাউসের পরিবর্তে কম বিলাসের বাড়িতে যুক্তফ্রণ্টের প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থল নির্ধারণ করা হবে এবং বর্ধমান
হাউসকে প্রথমে ছাত্রাবাস ও পরে বাংলা ভাষার গবেষণাগারে পরিণত করা;
(১৭) রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ ঘটনাস্থলে শহীদ মিনার নির্মাণ এবং শহীদদের পরিবারবর্গকে
উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া;
(১৮) একুশে ফেব্রæয়ারিকে শহীদ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা;
(১৯) লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত সকল বিষয় পূর্ববাংলা
সরকারের অধীনে আনয়ন; দেশরক্ষাক্ষেত্রে স্থলবাহিনীর হেডকোয়ার্টার পশ্চিম পাকিস্তানে এবং নৌবাহিনীর
হেডকোয়র্টার পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপন; এবং পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্রনির্মাণ কারখানা স্থাপন ও আনসার বাহিনীকে সশস্ত্র
বাহিনীতে পরিণত করা;
(২০) কোন অজুহাতে মন্ত্রিসভা কর্তৃক আইন পরিষদে অবস্থানের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার
ছয় মাস পূর্বে মন্ত্রিসভা পদত্যাগপূর্বক নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা;
(২১) যুক্তফ্রন্টের আমলে সৃষ্ট শূণ্য আসনে তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং পর পর তিনটি উপনির্বাচনে
যুক্তফন্ট-প্রার্থী পরাজিত হলে মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করা।
মূলত যুক্তফ্রন্টের একুশ দফা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে প্রাথমিক বীজ রোপন করে। এরপরে এর পূর্নাঙ্গ রূপ পায় বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার কর্মসূচির মাধ্যমে।
ছয় দফা
১৯৬৬ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাহোরে বিরোধী দলের জাতীয় সম্মেলনে ৬ দফা দাবি
উত্থাপনের চেষ্টা করেন। সম্মেলনে উত্থাপনে ব্যর্থ হয়ে তিনি ছয়দফার মূল বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন। ১৯৬৬ সালের
১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি ‘আামাদের বাঁচার দাবি: ৬ দফা কর্মসূচি’ শিরোনামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ
করেন। ছয় দফা কর্মসূচি মূলত বাঙালি জাদীয়তাবাদী আন্দোলনের এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সবচেয়ে প্রভাব
বিস্তারকারী কর্মসূচি। নি¤েœ দফাগুলো তুলে ধরা হলো:
(১) লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে
সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে;
(২) ফেডারেল সরকারের হাতে থাকবে শুধু দুটি বিষয়, প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্ক, এবং অপর সব বিষয়
ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত রাজ্যসমূহের হাতে ন্যস্ত থাকবে;
(৩) পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি পৃথক অথচ সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়
তাহলে সমগ্র পাকিস্তানের জন্য ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটিই মুদ্রাব্যবস্থা থাকবে, একটি ফেডারেল
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও দুটি আঞ্চলিক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থাকবে। তবে এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পুঁজি যাতে পশ্চিম
পাকিস্তানে পাচার হতে না পারে তার ব্যবস্থা সম্বলিত সুনির্দিষ্ট বিধি সংবিধানে সন্নিবিষ্ট করতে হবে;
(৪) দুই অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পৃথক হিসাব থাকবে এবং অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা রাজ্যের হাতে থাকবে। তবে
ফেডারেল সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা দুই অঞ্চল থেকে সমানভাবে কিংবা উভয়ের স্বীকৃত অন্য
কোনো হারে আদায় করার ব্যবস্থা;
(৫) দুই অংশের মধ্যে দেশিয় পণ্য বিনিময়ে কোনো শুল্ক ধার্য করা হবে না এবং রাজ্যগুলো যাতে যেকোন বিদেশি রাষ্ট্রের
সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে সংবিধানে তার বিধান রাখা;
(৬) প্রতিরক্ষায় পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে আধা-সামরিক রক্ষীবাহিনী গঠন, পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র কারখানা
স্থাপন এবং কেন্দ্রীয় নৌবাহিনীর সদর দফতর পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপন করা।
উপরের আলোচিত একুশ দফা এবং ছয় দফা বিশ্লেষণ করলে একটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এগুলো
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করেছে। একুশ দফার মাধ্যমে আন্দোলনের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়
ছয় দফার মাধ্যমে তা চূড়ান্ত রূপ নেয় এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তা সফল হয়।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের উšে§ষ এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে একুশ দফা এবং ছয় দফার গুরুত্ব অপরিসীম। একুশ দফা
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে যা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ভূমিকা পালন করে। বস্তুত যুক্তফ্রন্টের একুশ
দফা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে প্রাথমিক বীজ রোপন করে। এরপরে এর পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার কর্মসূচির
মাধ্যমে। ছয় দফা কর্মসূচি মূলত বাঙালি জাদীয়তাবাদী আন্দোলনের এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী কর্মসূচি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৫.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (√) দিন।
১। একুশ দফা কবে ঘোষিত হয়েছিল?
(ক) ১৯৪৮ সালে (খ) ১৯৫১ সালে
(গ) ১৯৫৪ সালে (ঘ) ১৯৬৬ সালে
২। ছয় দফা অনুযায়ী ফেডারেল সরকারের হাতে রাখার প্রস্তাব করা হয়Ñ
(র) প্রতিরক্ষা
(রর) বাণিজ্য
(ররর) বৈদেশিক সম্পর্ক
(রা) স্বরাষ্ট্র
কোনটি সঠিক?
(ক) র (খ) র ও রর (গ) র ও ররর (ঘ) রর ও রা
৩। ‘আামাদের বাঁচার দাবি: ৬ দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক পুস্তিকাটি কবে প্রকাশিত হয়?
(ক) ২১ ফেব্রæয়ারি ১৯৬৬ (খ) ০১ মার্চ ১৯৬৬
(গ) ১৮ মার্চ, ১৯৬৬ সাল (ঘ) ২৬ মার্চ ১৯৬৬

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]