সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধারণা ব্যক্ত কর বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের স্তরবিন্যাসের ধরন সম্পর্কে আলোচনা

মুখ্য শব্দ গ্রামীণ সমাজ, সামাজিক স্তরবিন্যাস, ভ‚মি, কৃষি, বংশ, বর্ণ, জ্ঞাতিগোষ্ঠী, শিক্ষা কৃষি বহির্ভুত পেশা।
গ্রামীণ সমাজ
বৈশিষ্ট্যগত কারণেই গ্রামীণ সমাজ অন্য যেকোনো সমাজ থেকে আলাদা। বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশ
প্রধানত গ্রামনির্ভর জনপদ। যুগ যুগ ধরে এখানে গ্রাম-সমাজ টিকে ছিলো অপরিবর্তিত রূপে। গ্রামীণ সমাজের মূল ভিত্তি
ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ সম্প্রদায়। গ্রামের মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় সব উপকরণ নিজেরাই উৎপাদন করতো। ফলে
বাইরের গ্রাম বা শহরের সাথে তাদের যোগাযোগ ছিল খুবই সীমিত। গ্রামীণ সমাজ বলতে মূলত কৃষিকাজ ও কৃষক সমাজ
নিয়ে গঠিত জনপদকে বুঝায়। চাষযোগ্য জমি, কৃষকের উঠান, লাঙ্গল-জোয়ালসহ চাষীর মাঠে গমন, আঁকা-বাঁকা কাঁচা
সড়ক কিংবা ছোট নদী আর গাছ-গাছালি, স্নেহ-ছায়া ও পাখ-পাখালির কল-কূজনে মুখরিত গুচ্ছ গুচ্ছ বাড়ি ঘর নিয়ে গ্রাম
গড়ে ওঠে। এ গ্রামের আদিবাসীরা যে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলে তা-ই মূলত গ্রামীণ সমাজ। গ্রামে শহরের
তুলনায় জনবসতির ঘনত্ব কম। ঘবষংড়হ তাঁর জঁৎধষ ঝড়পরড়ষড়মু গ্রন্থে বলেছেন, “পরিসংখ্যানগত দিক থেকে গ্রাম হচ্ছে
সে জনপদ যার জনসংখ্যা ২৫০০ জনের কম।”
গ্রামীণ সমাজ হচ্ছে শহরের যান্ত্রিক সভ্যতা থেকে দূরের একটি বিচ্ছিন্ন জনপদ; যেখানে রয়েছে চারদিকে আবাদযোগ্য
জমি, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, স্বল্প ঘনত্বের কৃষি নির্ভর জনবসতি, মোটামুটি দূরত্ব বজায় রেখে একটার পর একটা বাড়ি
প্রতিটা বাড়িতে বাস করে এক বা অনেকগুলো পরিবার (ঐড়ঁংবযড়ষফ)। অন্য গ্রাম থেকে সনাক্তকরণের
জন্য প্রতিটি গ্রামেরই রয়েছে নিজস্ব নাম ও সুনির্দিষ্ট পরিসীমা। গ্রামের জনসমষ্টির মধ্যে সম্প্রদায়ের মত স্বতন্ত্র মূল্যবোধ,
গ্রামীণ চেতনা, নিজস্বতা, পৃথক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য পরিলক্ষিত হতে পারে। গ্রামের আদিবাসীদের দ্বারা গঠিত ও
পরিচালিত সমাজই গ্রামীণ সমাজ বলে বিবেচিত হয়।
গ্রামীণ সমাজের বৈশিষ্ট্য
গ্রামীণ সমাজ কিছু বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভরশীল। তবে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এদের পরিবর্তনও হয়ে থাকে। গ্রামীণ সমাজের
মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে: ক) জনসংখ্যার স্বল্প ঘনত্ব, খ) স্বল্প মাত্রার সামাজিক স্তরবিন্যাস, গ) সামাজিক গতিশীলতা কম,
ঘ) মন্থর গতির সামাজিক পরিবর্তন, ঙ) কৃষিপ্রধান জীবন ব্যবস্থা চ) ভ‚মিস্বত্ব ব্যবস্থার আধিপত্য, ছ) স্বতন্ত্র ক্ষমতা
কাঠামো ও শ্রেণি কাঠামো, জ) সুদৃঢ় জ্ঞাতি সম্পর্ক, ঝ) স্বল্পমাত্রার প্রযুক্তি, ঞ) যৌথ পরিবারের প্রচলন। এসব বৈশিষ্ট্যের
মধ্য দিয়ে গ্রামীণ পরিবেশ ও সমাজ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়।
সামাজিক স্তরবিন্যাস
সামাজিক স্তরবিন্যাসের মূলে রয়েছে সমাজের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান অসমতা। সমাজে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে
প্রচলিত সুযোগ-সুবিধা, সম্পদ, সামাজিক অবস্থান, সম্মান এবং পদমর্যাদাকে কেন্দ্র করে সামাজিক অসমতা সৃষ্টি হয়।
অর্থাৎ সামাজিক অসমতা হলো সমাজে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে ভিন্নতা তৈরির এমন একটি প্রক্রিয়া, যার দ্বারা সামাজিক
মান-মর্যাদা, যশ ,খ্যাতি, বিত্ত-বৈভব ইত্যাদি বিকশিত হয় ও ব্যক্তি সমাজে একটি নির্দিষ্ট পরিচিতি লাভ করে। সামাজিক
অসমতা তীব্র এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করলে আমরা তাকে সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে পারি। সমাজস্থ জনগোষ্ঠীকে
বিভিন্ন উপাদানের ভিত্তিতে উঁচু-নীচু পর্যায়ে বিভক্ত করাকেই সামাজিক স্তরবিন্যাস বলে। অর্থাৎ সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো
এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা সমাজের ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে উঁচু ও নিচু স্তরে বিভক্ত করা যায়। চ. ঝড়ৎড়শরহ বলেছেন, সকল
স্থায়ী ও সংগঠিত গোষ্ঠী স্তরবিন্যস্ত। সদস্যদের ভেতর বিদ্যমান প্রকৃত সমতাসম্পন্ন স্তরবিহীন সমাজ একটি অলীক
কল্পনামাত্র, যা মানব জাতির ইতিহাসে কখনো বাস্তবায়িত হবে না।
সামাজিক স্তরবিন্যাসের সংজ্ঞা
স্তরবিন্যাস (ঝঃৎধঃরভরপধঃরড়হ) শব্দটি মৃত্তিকা বিজ্ঞান থেকে এসেছে। ভ‚-গঠনে মাটির বিভিন্ন স্তরের ন্যায় সমাজের মানুষও
বিভিন্ন শ্রেণি ও স্তরে বিভক্ত। নানা উপাদানের ভিত্তিতে সমাজের মানুষের মধ্যে যে উঁচু-নীচু বিন্যাস পরিলক্ষিত হয় সাধারণ
অর্থে তাকে সামাজিক স্তরবিন্যাস বলে। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সামাজিক স্তরবিন্যাসকে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
যেমন: জিসবার্ট (এরংনবৎঃ) তাঁর 'ঋঁহফধসবহঃধষং ড়ভ ঝড়পরড়ষড়মু' গ্রন্থে বলেছেন, “সমাজকে একটি স্থায়ী দল বা প্রকরণে
বিভক্ত করাই হচ্ছে সামাজিক স্তরবিন্যাস যেখানে একে অন্যের সাথে মানের উচ্চক্রম এবং নিম্নক্রমের ভিত্তিতে সম্পর্কিত।”
সামাজিক স্তরবিন্যাসের আলোকে সমাজে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত ছাড়াও শাসক, শোষিত, মালিকÑশ্রমিক,
ধনীÑদরিদ্র ইত্যাদি পার্থক্যমূলক শ্রেণি বা গোষ্ঠী দেখা যায়।
ডেভিস ও মুর (উধারং ধহফ গড়ড়ৎব) মনে করেন, সামাজিক স্তরবিন্যাস হচ্ছে সমাজের মানুষের মধ্যে বিভক্তি। এর মূলে
রয়েছে মানুষের বিভিন্ন কর্মপ্রক্রিয়া। অর্থাৎ কে কী কাজ করে তার আলোকে সমাজে যে ভেদাভেদ সৃষ্টি হয় তা-ই সামাজিক
স্তরবিন্যাস। তাঁদের মতে, “স্তরবিন্যাস হচ্ছে সর্বজনীন ও চিরন্তন। কেননা এটি সবকল সমাজের সদস্যদেরকে নানা
পদমর্যাদায় বিভক্তির মাধ্যমে শ্রমবিভাজন সৃষ্টি করে।”
পরিশেষে বলা যায়, বিভিন্ন উপাদান এবং সামাজিক রীতিনীতি ও প্রথার ভিত্তিতে সমাজের সদস্যদের মধ্যে যে পার্থক্য এবং
ভেদাভেদ পরিলক্ষিত হয় তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস। এখানে সামাজিক ভিন্নতা, অসমতা এবং পার্থক্য স্থায়ী, প্রতিষ্ঠিত
এবং কাঠামোবদ্ধরূপ পরিগ্রহ করে।
সামাজিক স্তরবিন্যাসের ধরন
সমাজবিজ্ঞানীরা সাধারণত সামাজিক স্তরবিন্যাসের চারটি ধরনের উল্লেখ করে থাকেন। এগুলো হচ্ছে:
১) দাস ব্যবস্থা (ঝষধাবৎু): সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রথম ধরন হচ্ছে দাস ব্যবস্থা। এখানে সামাজিক স্তরবিন্যাস হচ্ছে
দাস এবং দাস মালিকের মধ্যে।
২) এস্টেট মধ্যযুগের সামাজিক স্তরবিন্যাসের ভিত্তি হচ্ছে এস্টেট। এটি সামন্ত ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত।
এখানে সামন্ত প্রভু এবং ভ‚মিদাস ছাড়াও বেশকিছু মধ্যস্বত্বভোগীদের মধ্যে স্তরবিন্যাস বিদ্যমান ছিল।
৩) বর্ণপ্রথা : বর্ণপ্রথা হচ্ছে ভারতীয় সমাজের হিন্দু সমাজের মধ্যে প্রচলিত স্তরবিন্যাস। বর্ণপ্রথায়
প্রধানত চারটি পৃথক বর্ণের মধ্যে স্তরবিন্যাস রয়েছে। এগুলো হচ্ছে: ক) ব্রাহ্মণ খ) ক্ষত্রীয় গ) বৈশ্য এবং ঘ) শূদ্র।
৪) সামাজিক শ্রেণি : আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজের স্তরবিন্যাসে শ্রেণি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেশা, সম্পদ,
ক্ষমতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে সমাজে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নি¤œবিত্ত শ্রেণির উপস্থিতি লক্ষণীয়।
বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের স্তরবিন্যাস: সামাজিক স্তরবিন্যাসের উপর্যুক্ত ধরনগুলো চিরন্তন ও সর্বজনীন। কিন্তু
বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের স্তরবিন্যাসে নিজস্ব কিছু উপাদান রয়েছে যার ভিত্তিতে এখানে নানা ধরনের সামাজিক শ্রেণি ও
স্তরবিন্যাস পরিলক্ষিত হয়। নি¤েœ এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
ক) ভ‚মি ও কৃষিভিত্তিক স্তরবিন্যাস: গ্রামীণ সমাজে ভ‚মি ও কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে কতগুলো শ্রেণি তৈরি
হয়। এসব শ্রেণির মধ্যে সুনির্দিষ্ট ব্যবধান বা অসমতা রয়েছে। এর ভিত্তিতে তৈরি হয় গ্রামীণ সমাজের ভ‚মি ও
কৃষিভিত্তিক স্তরবিন্যাস। এখানকার ক্রমোচ্চ শ্রেণিগুলো হচ্ছে:
১) ভ‚মিহীন দিনমজুর/কৃষিমজুর: গ্রামীণ সমাজের ৪৭.৫ শতাংশ মানুষ ভ‚মিহীন (বিবিএস ২০১০)। এদের একটি
বড় অংশ কৃষিমজুর বা দিনমজুর হিসেবে জীবীকা নির্বাহ করেন। এদের কোনো ব্যক্তিগত সম্পদ নেই। যে
কারণে তারা সমাজে কোনো উঁচু পদমর্যাদা ভোগ করেন না। তারা মূলত স্বল্প মজুরিতে ধনী ও মাঝাারি
কৃষকের জমিতে শ্রম বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন।
২) প্রান্তিক চাষী: প্রান্তিক চাষীরা স্বল্প ভ‚মির মালিক এবং তারা অন্যের জমি চাষাবাদ করে। নিজের আবাদী
জমিতেই তারা তাদের শ্রম বিনিয়োগ করেন। গ্রামীণ সমাজে এ ধরনের মানুষের সংখ্যা ভ‚মিহীনের পরে।
৩) ক্ষুদ্র চাষী: প্রান্তিক চাষীদের পরই ক্ষুদ্র চাষীদের অবস্থান। যারা নিজের জমি ছাড়াও অন্যের জমি চাষাবাদ করে
জীবীকা নির্বাহ করেন। প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র চাষীকে বর্গা চাষী বলেও উল্লেখ করা হয়।
৪) মাঝারি কৃষক: যে কৃষকের ধনী কৃষকের তুলনায় কম জমি আছে, যেখানে চাষাবাদের মাধ্যমে তার পরিবারের
চাহিদা পূরণ করা সম্ভব তাকে মাঝারি কৃষক বলে। গ্রামীণ সমাজে এ ধরনের কৃষকের সংখ্যা এবং প্রভাব বিশেষভাবে উল্লখযোগ্য।
৫) ধনী কৃষক: গ্রামীণ সমাজে ধনী কৃষকের সংখ্যা হাতেগোনা। তবে তারা প্রভাবশালী। যে কৃষকের নিজের
পর্যাপ্ত জমি আছে যার কিছু অংশ তিনি নিজে আবাদ করেন আবার কিছু অংশ প্রান্তিক/ক্ষুদে কৃষকের মাধ্যমে
বর্গা-প্রথায় আবাদ করেন। এ শ্রেণির মানুষ সমাজে যেমন প্রভাবশালী, তেমনি বিত্তশালীও। কারণ, এরা
রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনেক শক্তিশালী।
৬) অনুপস্থিত ভ‚মি মালিক: নগরায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে অনেকে শহরে বসবাস করেন। এদের কেউ চাকরি
করেন, কেউবা ব্যবসা। কিন্তু উত্তরাধিকার কিংবা ক্রয়সূত্রে এদের অনেকে পর্যাপ্ত কৃষি ভ‚মির মালিক। বিভিন্ন
পার্বণ, উৎসব কিংবা উপলক্ষে তারা গ্রামে যান এবং নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন।
খ) বংশগত বা বর্ণভিত্তিক স্তরবিন্যাস: গ্রামীণ সমাজের স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে বংশগত বা বর্ণভিত্তিক স্তরবিন্যাস একসময়
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে বর্তমানের এর প্রভাব অনেক কম। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন বংশ বা জ্ঞাতিগোষ্ঠী বিশেষ
প্রভাব ও মর্যাদার অধিকারী। তারা অন্যদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। যেমন কোনো একটি অঞ্চলে ‘সৈয়দ’ বা
‘চৌধুরী’ বংশ নিজেদেরকে শ্রেয়তর বিবেচনা করতে পারে। আবার অন্য একটি অঞ্চলে ‘খান’ কিংবা ‘শেখ’ বংশের
আধিপত্য দেখা যায়। হিন্দু ধর্মে চতুর্বণ প্রথা তাদের পেশা ও মর্যাদা নির্ধারণ করে দেয়। বংশ, বর্ণ কিংবা
জ্ঞাতিগোষ্ঠী মানুষকে বিভিন্ন স্তরে বিভাজিত করে, পরস্পরের মধ্যে অসমতা তৈরি হয়। ফলে বিয়েসহ যেকোনো
সামাজিক সম্পর্ক, সামাজিক মর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
গ) ধর্মভিত্তিক স্তরবিন্যাস: বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। পাশাপাশি এখানে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ ধর্মের মানুষও
বসবাস করে। ধর্মীয় পরিচয় মানুষের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে। মুসলমান-হিন্দু, আশরাফ-আতরাফ, ব্রাহ্মণ-শূদ্র
ইত্যাদি বিভাজন তৈরি হয় ধর্মের ভিত্তিতে। অনেক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে ধর্ম এখনো মানুষের সামাজিক স্তরায়নে
প্রভাব বিস্তার করে।
ঘ) শিক্ষা ও পেশাভিত্তিক স্তরবিন্যাস: শিক্ষা এবং কৃষি বহির্ভুত পেশা গ্রামীণ সামাজিক স্তরবিন্যাসে এখন গুরুত্বপূর্ণ
ভ‚মিকা পালন করছে। গ্রামে এখন নিরক্ষর, স্বল্পশিক্ষিত, শিক্ষিত এবং উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণি-পেশার জনগোষ্ঠী
বিদ্যমান। শিক্ষিত এবং উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণির অনেকে কৃষি বহির্ভুত পেশায় নিয়োজিত। বিশেষ প্রভাব বিস্তারকারী
পেশার কে কেউ কখনো কখনো সাধারণ মানুষের উপর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করেন। সুতরাং গ্রামের
সামাজিক স্তরবিন্যাসের অন্যতম ধরন হিসেবে শিক্ষা এবং পেশা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ঙ) ক্ষমতা, রাজনীতি ও সম্পদভিত্তিক স্তরবিন্যাস: শিক্ষা ও পেশার পাশাপাশি ক্ষমতা, রাজনৈতিক কর্তৃত্ব, এবং ধনসম্পদ গ্রামীণ সামাজিক স্তরবিন্যাসে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। যিনি অনেক অর্থ-বিত্তের মালিক তিনি গ্রামের
সবার উপর কর্তৃত্ব খাটাতে পারেন। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং তাদের নিকটাত্মীয়রা
বিশেষ ক্ষমতা ও মর্যাদা প্রদান করে। সুতরাং ক্ষমতা, রাজনীতি ও ধন-সম্পদ গ্রামীণ সমাজের স্তরবিন্যাসের
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
গ্রামীণ সমাজের স্তরবিন্যাসের উপাদানসমূহ
উপর্যুক্ত আলোচনার ভিত্তিতে গ্রামীণ সমাজের স্তরবিন্যাসের বিভিন্ন উপাদান এখানে তুলে ধরা হলো:
১) কৃষিজমি: কৃষি জমির মালিকানার ভিত্তিতে গ্রামীণ সমাজে স্তরবিন্যাস তৈরি হয়। ভ‚মিহীন, প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদে
কৃষক, মাঝারি কৃষক এবং বড় কৃষক গ্রামের প্রধান প্রধান শ্রেণি যার মূলে রয়েছে ভ‚মির মালিকানা।
২) জ্ঞাতিগোষ্ঠী: বংশ, বর্ণ বা জ্ঞাতিগোষ্ঠী গ্রামীণ সমাজে স্তরবিন্যাস তৈরি করে। সম্ভ্রান্ত এবং ঐতিহ্যবাহী বংশ, যেমনহিন্দু সমাজের ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রীয়, বৈশ্য, শূদ্র মূলত বংশগত বিভাজন।
৩) ধর্ম: ধর্মের ভিত্তিতেও গ্রামীণ সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাস তৈরি হয়। যেমন মুসলিম সমাজে আশরাফ ও আতরাফ
অন্যদিকে হিন্দু সমাজে রয়েছে ব্রাহ্মণ-শূদ্র ইত্যাদি।
৪) শিক্ষা: গ্রামে নিরক্ষর, স্বল্প শিক্ষিত, শিক্ষিত এবং উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যে শ্রেণি এবং মর্যাদাগত
পার্থক্য রয়েছে। সুতরাং গ্রামীণ সমাজের সামাজিক স্তরবিন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে শিক্ষা।
৫) সম্পদ ও অর্থবিত্ত: সম্পদ এবং অর্থবিত্ত গ্রামীণ সামাজিক স্তরবিন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর মাধ্যমে সমাজে
উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নি¤œবিত্ত শ্রেণি গঠিত হয়।
৬) পেশা: গ্রামের সনাতন পেশা হচ্ছে কৃষি। নগদ অর্থ উপার্জন, সামাজিক সম্মান ও ক্ষমতা কৃষি বহির্ভুত পেশাকে
ক্রমশ জনপ্রিয় করেছে। পেশাগত ক্ষমতা, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা গ্রামের সামাজিক স্তরবিন্যাসে বিশেষ ভ‚মিকা
পালন করে।
৭) ক্ষমতা, রাজনীতি: ক্ষমতাসীন রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সমাজে বিশেষ আধিপত্য বিস্তার করে থাকে।
ক্ষমতা এবং রাজনীতি সমাজে ক্ষমতাশালী এবং ক্ষমতাহীন শ্রেণি তৈরি করে।
সারসংক্ষেপ
স্তরবিন্যাস সমাজের একটি চিরন্তন বিষয়। নানা উপাদানের ভিত্তিতে সমাজের মানুষের মধ্যে অসমতা তৈরি হয়। এর
থেকে তৈরি হয় সামাজিক স্তরবিন্যাস। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে ভ‚মি, অর্থ-সম্পত্তি, পেশা,
বংশ মর্যাদা ইত্যাদি ধরন এবং উপাদানগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। “স্তরবিন্যাস হচ্ছে সর্বজনীন, চিরন্তন” Ñ কে বলেছেন?
(ক) ম্যাকাইভার (খ) কার্ল মার্কস
(গ) ডেভিস ও মুর (ঘ) হার্বার্ট স্পেনসার
২। হিন্দু সমাজে প্রধানত কয়টি বর্ণ রয়েছে?
(ক) দু’টি (খ) তিনটি
(গ) চারটি (ঘ) পাঁচটি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]