মুখ্য শব্দ ক্ষমতা কাঠামো, ভ‚মি মালিকানা, বংশ মর্যাদা ও জ্ঞাতি সম্পর্ক, শিক্ষা, পেশা, রাজনৈতিক
প্রভাব, ডিলারশিপ।
ক্ষমতা হচ্ছে এক প্রকার শক্তি, যার মাধ্যমে অন্যের সিদ্ধান্ত, ইচ্ছা, মতামত, এমনকি আচার-আচরণকে প্রভাবিত
করা যায়। অন্যের উপর নিজের সিদ্ধান্ত, ইচ্ছা বা মতামতকে চাপিয়ে দেয়ার সামর্থ্যই ক্ষমতা। আর ক্ষমতা
কাঠামো হচ্ছে ক্ষমতা প্রয়োগের প্রক্রিয়া বা ব্যবস্থা। অর্থাৎ যে প্রক্রিয়া বা কাঠামোর মধ্য দিয়ে ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায়
তাকে ক্ষমতা কাঠামো বলে।
গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো
গ্রামীণ সমাজে ক্ষমতা প্রয়োগের যে শ্রেণি কাঠামো এবং ব্যবস্থা বিদ্যমান তাকে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো বলে। ড. আতিউর
রহমান তাঁর ‘বাংলাদেশে উন্নয়নের সংগ্রাম' গ্রন্থে ক্ষমতা কাঠামো সম্পর্কে বলেছেন, “শ্রেণিসমূহের অবস্থান, পারস্পরিক
সম্পর্ক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাÐে এদের ভ‚মিকা ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ সমাজে সামাজিক শক্তিসমূহ যে
কাঠামোর মধ্য দিয়ে বিকশিত হয় তাকে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো বলা যেতে পারে।”
গ্রামীণ উৎপাদন ব্যবস্থা, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থায় কারা প্রভাব ও কর্তৃত্ব স্থাপন করে, কিভাবে এ কর্তৃত্ব বিকশিত হয়Ñ
এসব মিলিয়ে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো তৈরি হয়। ক্ষমতার যেসব উপাদান উল্লিখিত বিষয়গুলো নির্ধারণ করে সেসব
উপাদানের সমন¦য়ে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
গ্রামীণ ক্ষমতার ব্যবহার, প্রয়োগ এবং বিকাশ হয় মূলত গ্রামীণ শ্রেণি কাঠামোর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে এলিট শ্রেণি ক্ষমতার
চর্চা করেন। সাধারণ মানুষের উপর ক্ষমতার প্রয়োগ হয়। অর্থাৎ ক্ষমতা কাঠামো বিন্যাসে এক শ্রেণি নিয়ন্ত্রক বা শাসকের
ভ‚মিকা পালন করেন, অন্য শ্রেণি নিয়ন্ত্রিত বা শাসিত হয়। গ্রামীণ সমাজে ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগকে কেন্দ্র করেই গ্রামীণ
ক্ষমতা কাঠামো গড়ে ওঠে।
গ্রামীণ ক্ষমতার উপাদান
সাধারণত গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যেসব শক্তি বা উপকরণ ব্যক্তিবিশেষকে ক্ষমতার অধিকারী করে তোলে
সেগুলোকে গ্রামীণ ক্ষমতার উপাদান বলে। গ্রামীণ কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে ভ‚মি হচ্ছে ক্ষমতা কাঠামোর মূল ভিত্তি। তবে
একবিংশ শতকে ভ‚মি ছাড়াও নগদ অর্থ, শিক্ষা, পেশা, ক্ষমতাসীন রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতা গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর
প্রভাবশালী উপাদান হিসেবে বিবেচিত। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, অর্থনৈতিক শক্তিই ক্ষমতার কাঠামোর প্রধান
নিয়ামক। সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদানেও পরিবর্তন এসেছে। এখানে গ্রামীণ ক্ষমতা
কাঠামোর পরিবর্তিত উপাদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
ক) ষাটের দশক: ষাটের দশকে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোয় ভ‚মিতে ব্যক্তিমালিকানা, ধর্ম, জনপ্রতিনিধিত্ব, বংশ মর্যাদা,
জ্ঞাতিত্ব ও বর্ণপ্রথা, জীবনযাত্রার মান, সামাজিক মর্যাদা ও ক্ষমতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এছাড়া মূল্যবোধ,
প্রথা, সমাজ, সংস্কৃতি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতো। ওঝা, ফকির, পির-মাশায়েখদেরও সমাজের উপর
কর্তৃত্ব পরিলক্ষিত হতো।
খ) সত্তরের দশক: সত্তরের দশকে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোয় বংশ মর্যাদা ও জ্ঞাতি সম্পর্ক, কৃষি উন্নয়নে আধুনিক
উপকরণ যেমন সেচযন্ত্রের মালিকানা, সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদির ডিলারশীপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
হিসেবে ভ‚মিকা পালন করেছিল। এছাড়া ভ‚মির মালিকানা, শহরের সাথে যোগাযোগ, ভ‚মি জরিপের সাথে সংশ্লিষ্টতা,
চর দখলের ক্ষমতা ইত্যাদি গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদান হিসাবে বিবেচিত।
গ) আশির দশক : আশির দশকে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদান হিসেবে বংশ মর্যাদা, জ্ঞাতিগোষ্ঠীর প্রভাব, ভ‚মি
মালিকানা, স্থানীয় সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টতা, সমবায় সমিতি, পুলিশ ও প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক, ডিলারশিপ,
চাকরি এবং রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি ও তার
পরিবার, ব্যবসায়ী, আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তিবর্গ, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, দালাল প্রমুখ গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোয়
বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণও গ্রামীণ
ক্ষমতা কাঠামোর অপরিহার্য উপাদান। তবে পূর্ব থেকে প্রচলিত মহাজন, সুদের কারবারি, টাউট এবং মাতব্বরদের
প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এনজিও কর্মী, ফতোয়াবাজ শ্রেণির লোকেরাও গ্রামীণ ক্ষমতা
কাঠোমোয় প্রভাব বিস্তার করে থাকে। প্রবীণ এবং বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ এখনো সমীহের পাত্র হিসেবে বিবেচিত।
আশির দশকের পর থেকে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোয় কৃষি বহিভর্‚ত আয়, নগদ টাকা, শিক্ষা, বিভিন্ন সংস্থার সাথে সংশ্লিষ্টতা
ক্রমশ প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। গ্রামে অবস্থান করে শিক্ষিত মানুষের কৃষি বহির্ভুত পেশায় যুক্ত হওয়ার প্রবণতা ক্রমশ
বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষকতা, ব্যাংকে চাকরি, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যের
সুযোগও আগের থেকে অনেক বেশি অবারিত। শিক্ষিত পেশাজীবীরা আধুনিক গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর প্রভাবশালী গোষ্ঠী।
ইমাম, মৌলভি, মাওলানা, পুরোহিত, ব্রাহ্মণ প্রমুখের সামাজিক মর্যাদা, প্রভাব ও ক্ষমতা সর্বজনবিদিত। গ্রামীণ সমাজে
মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের পরিবার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও বিশেষ সম্মান এবং প্রভাব রয়েছে। সা¤প্রতিক সময়ে
গ্রামের যারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মালিক কিংবা এর ব্যবহার জানেন তারাও গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোয় স্থান করে
নিয়েছেন। কেউ পর্যাপ্ত তথ্য দিতে পারলেও মানুষ তাকে গুরুত্ব দেয়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং স্যাটেলাইট চ্যানেলের
মালিকদের প্রভাবশালী মনে করা হয়। যুব সমাজও গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোয় নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
ড. আতিউর রহমান তাঁর ‘বাংলাদেশে উন্নয়নের সংগ্রাম' নামক গ্রন্থে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর স্বাধীন ও অধীন চলকের
ভিত্তিতে মোট ১৯টি উপাদানের উল্লেখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে: ১। ভ‚মির মালিকানা; ২। অর্থনৈতিক শক্তি; ৩। সমাজে
নেতৃত্ব; ৪। বংশ মর্যাদা ও নেতৃত্ব; ৫। বৃহৎ জ্ঞাতি গোষ্ঠীর নেতৃত্ব; ৬। ব্যক্তিগত গুণাবলি; ৭। রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক; ৮।
রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্ক; ৯। ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধিত্ব; ১০। শহরের সাথে যোগাযোগ; ১১। সমবায় সমিতি
/ (এন. জি. ও.); ১২। গ্রামীণ কর্মসংস্থানগুলোর নেতৃত্ব; ১৩। জনগণের অংশ বিশেষের নেতৃত্ব; ১৪। আধুনিক প্রযুক্তির
উপর নিয়ন্ত্রণ; ১৫। অর্থঋণ প্রদান; ১৬। চাকরি; ১৭। শিক্ষা; ১৮। সন্ত্রাস সৃষ্টির ক্ষমতা এবং ১৯। জনগণের
সমষ্টিবদ্ধতা।
বস্তুত, এই ১৯টি উপাদানই গ্রামীণ সমাজের ক্ষমতার মূল ভিত্তি। তবে এ উপাদানগুলো প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে
গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোকে সমৃদ্ধ এবং একইসাথে পরিবর্তনশীল করেছে। এর মধ্যে ভ‚মির মালিকানা মালিকানা প্রায় সব
সময়ই মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। যদিও সম্প্রতি জমি ছাড়াও নগদ অর্থ, ক্ষমতাশালী চাকরি ইত্যাদি
অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
শিক্ষার্থীর কাজ বাংলাদেশের গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদানগুলো চিহ্নিত করুন। সময়: ১০ মিনিট
সারসংক্ষেপ
সমাজ যেমন পরিবর্তনশীল, তেমনি সমাজের ক্ষমতা নির্ধারণকারী উপাদানেরও পরিবর্তন ঘটে। ষাট, সত্তর এবং আশির
দশকের সাথে আজকের ক্ষমতা কাঠামোর উপাদানে পার্থক্য রয়েছে। তবে কিছু উপাদান আছে চিরন্তন, যেমন ভ‚মির
মালিকানা, অর্থবিত্ত ইত্যাদি। আবার আধুনিক ক্ষমতা কাঠামোয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মত নতুন নতুন উপাদান
যুক্ত হয়েছে যা সমাজ কাঠামোকেও বিশেষভাবে প্রভাবিত করছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। “বাংলাদেশে উন্নয়নের সংগ্রাম” গ্রন্থের রচয়িতা কে?
(ক) ড. আতিউর রহমান (খ) আকবর আলি খান
(গ) থিওডর শানিন (ঘ) ড. ইকবাল হুসাইন
২। গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর সত্তরের দশকের প্রভাবশালী উপাদান কোনটি?
(ক) শিক্ষা ও পেশা (খ) ব্যাংকিং ব্যবস্থা
(গ) আই.সি.টি’র সক্ষমতা (ঘ) বংশ মর্যাদা ও জ্ঞাতিত্ব
৩। ড. আতিউর রহমান স্বাধীন চলক এবং অধীন চলকের সমন্বয়ে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর কতটি উপাদানের কথা
বলেছেন?
(ক) ১০টি (খ) ১৫টি
(গ) ১৯টি (ঘ) ২৬টি
৪। গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোয় প্রভাব বিস্তার করতে পারেনÑ
(র) ভ‚মি মালিক (রর) শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা (ররর) টাউট, দালাল, চর দখলকারী
সঠিক উত্তর কোনটি?
(ক) র (খ) র ও ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত