নগর সমাজের স্তরবিন্যাস সম্পর্কে আলোচনা কর নগর সমাজের ক্ষমতা কাঠামো বিশ্লেষণ কর

মুখ্য শব্দ স্তরবিন্যাস, ক্ষমতা কাঠামো, মালিকানা, পেশা, রাজনীতি, নেতৃত্ব, শিক্ষা, বসবাসের এলাকা।
বর্তমান ইউনিটের পাঠ ৬.২ এ গ্রামীণ সমাজের স্তরবিন্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে
সামাজিক স্তরবিন্যাসের মৌলিক ধারণাও ব্যক্ত করা হয়েছে। সাধারণত সামাজিক স্তরবিন্যাস হচ্ছে সমাজের
মানুষ পেশা, শিক্ষা, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ইত্যাদিও উঁচু-নিচু বিন্যাস বা বিভক্তি। বিভিন্ন অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক,
সাংস্কৃতিক ও পেশাগত উপাদানের ভিত্তিতে সমাজের কিছু মানুষ অপেক্ষাকৃত উঁচু শ্রেণিতে অবস্থান কওে; আবার কিছু মানুষ
অপেক্ষাকৃত নিচু শ্রেণিতে অবস্থান করে। সমাজস্থ মানুষের উঁচু-নিচু শ্রেণিতে অবস্থান করাই সামাজিক স্তরবিন্যাস। নগর সমাজের স্তরবিন্যাস
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রধান চারটি ধরন হচ্ছে ১) দাসপ্রথা, ২) এস্টেট, ৩) বর্ণপ্রথা এবং ৪)
সামাজিক শ্রেণি। বর্তমান নগর সমাজে দাসপ্রথা এবং এস্টেট ব্যবস্থা নেই। বর্ণপ্রথা মূলত হিন্দু সমাজ কাঠামোতে
বিদ্যমান। গ্রামে বসবাসকারী হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা যতটা বর্ণপ্রথা মেনে চলেন সে তুলনায় শহরের বর্ণপ্রথা কিছুটা
শিথিল। শহরে বসবাসকারী হিন্দু ধর্মের অনেকেই বর্ণপ্রথা পরিহার করেন। নগর সমাজের স্তরবিন্যাসে সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
ধরন হচ্ছে সামাজিক শ্রেণি। নানা উপাদানের ভিত্তিতে নগর সমাজের মানুষের মধ্যে শ্রেণি বিভাজন পরিলক্ষিত হয়।
এখানে নগর সমাজের শ্রেণিভিত্তিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১) পেশাভিত্তিক সামাজিক স্তরবিন্যাস: শহরে কৃষিবহির্ভুত নানা পেশার মানুষ বসবাস করে। তাদের মধ্যে ক্ষমতা,
মর্যাদা এবং শ্রেণিগত ভেদাভেদ রয়েছে। যেমন ক) উচ্চপদস্থ (ক্ষমতাশালী) সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদেও অধীনস্ত
সাধারণ সরকারি কর্মচারি; খ) বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক বনাম সাধারণ কর্মচারি গ) শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক
বনাম শ্রমিক শ্রেণি।
২) বাসস্থানের ভিত্তিতে সামাজিক স্তরবিন্যাস: বসবাসের ভিত্তিতে শহরের মানুষকে প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়;
বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়া। চাকরির সুবাদে অনেকে সরকারি বাসায় থাকেন। এরাও একটি বিশেষ শ্রেণি। শহরে
অনেক ছিন্নমূল মানুষও রয়েছে যারা বস্তিতেও ঠাঁই না পেয়ে ফুটপাথ, স্টেশন, রেললাইন প্রভৃতি স্থানে (ভাসমান)
রাত্রি যাপন করে। বাসস্থানের ভিত্তিতে এরা শহরের নি¤œবর্গের মানুষ।
৩) বসবাসের এলাকার ভিত্তিতে সামাজিক স্তরবিন্যাস: শহরে কিছু অভিজাত এলাকা রয়েছে। যেমন ঢাকা শহরের
গুলশান, বারিধারা, বনানী, ধানমÐি এলাকায় বসবাসকারীরা নিজেদেরকে অভিজাত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণির বলে মনে
করতে পারেন। কিন্তু যারা বস্তি, ঘিঞ্জি এবং অনুন্নত এলাকায় বসবাস করেন তাদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত এবং
নি¤œবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
৪) শিক্ষার ভিত্তিতে সামাজিক স্তরবিন্যাস: শিক্ষার ভিত্তিতে শহরে নিরক্ষর, স্বল্পশিক্ষিত, শিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিত
শ্রেণির মানুষ পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষার ফলে তাদের পেশা এবং সামাজিক মর্যাদাও পৃথক হয়ে থাকে।
৫) আর্থ-সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে সামাজিক স্তরবিন্যাস: অর্থবিত্ত, সামাজিক মর্যাদা ও অবস্থান ইত্যাদির ভিত্তিতে
শহরে উচ্চবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত, বিত্তহীন এবং ভিক্ষুক ও ভবঘুরে শ্রেণির উপস্থিতি
লক্ষ্যণীয়। সামাজিক সম্মান, মর্যাদা ও ক্ষমতার ভিত্তিতে এ শ্রেণিগুলোর দৃশ্যমান অবস্থান সর্বজনবিদিত।
নগর সমাজের ক্ষমতা কাঠামো
ক্ষমতা কাঠামোর উপাদানের সাথে নগর সমাজের সামাজিক স্তরবিন্যাসের বিভিন্ন উপাদানের সাদৃশ্য রয়েছে। বস্তুত প্রতিটি
সমাজেই এমনকিছু উপাদান থাকে যা ওই সমাজের স্তরবিন্যাস, শ্রেণি কাঠামো এবং ক্ষমতা কাঠামো নির্ধারণ করে। নি¤েœ
নগর সমাজের ক্ষমতা কাঠামোর বিভিন্ন উপাদান তুলে ধরা হলো।
১) পেশাভিত্তিক ক্ষমতা: পেশাভিত্তিক ক্ষমতার শীর্ষে রয়েছেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, যারা কর্তৃত্বের অধিকারী।
প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ এবং সশস্ত্র বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাগণ ক্ষমতা প্রয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন
করেন। সরকারি সেবা সংস্থা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাগণও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে
পারেন। পেশাগতভাবে সাংবাদিক এবং আইনজীবীদের প্রভাবও সমাজে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
২) মালিকানার ভিত্তিতে ক্ষমতা: শহরে বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির মালিকানা মানুষকে
ক্ষমতায়িত করে। এগুলোর মালিকানা একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পরিচায়ক, তেমনি অন্যের উপর নিয়ন্ত্রণ ও
কর্তৃত্ব আরোপের উপায়।
৩) রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও জনপ্রতিনিধিত্ব: রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ক্ষমতা কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। জাতীয় এবং
স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিগণও ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের অধিকারী। রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকগণও নিজ নিজ
মহল্লায় অনেক প্রভাবশালী। ক্ষমতাসীন ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকগণও ক্ষমতা কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ
অংশীদার।
৪) শিক্ষার ভিত্তিতে ক্ষমতা: অধিকাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ পেশাগত দিক থেকে ভালো অবস্থানে থাকেন।
সম্মান এবং মর্যাদার দিক থেকেও তারা অগ্রগামী। সুতরাং উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ প্রায়শ ক্ষমতাশালী হয়ে থাকেন।
৫) গণমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজ: নগর সমাজের ক্ষমতা চর্চা ও প্রয়োগের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে গণমাধ্যম এবং
নাগরিক সমাজ। প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রোনিক গণমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজ জনমত গঠন এবং সরকারের নীতি নির্ধারণে
গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন। ফলে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ বা ব্যক্তিবর্গ ক্ষমতার দিক থেকে যথেষ্ট
প্রভাবশালী।
৬) স্থায়ী বাসিন্দা: শহরের বিভিন্ন মহল্লায় যারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন তারা অন্য অনেকের তুলনায় ক্ষমতাশালী।
এদের অনেকে ওই এলাকায় পর্যাপ্ত নিজস্ব ভূমি, জ্ঞাতিগোষ্ঠী রয়েছে যা তাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমতায়িত করে।
৭) অর্থ-সম্পদ: অর্থ-বিত্তের ক্ষমতা সর্বজনীন। গ্রাম বা শহর যেকোনো স্থানে যিনি পর্যাপ্ত অর্থ-সম্পদের মালিক তিনি
ক্ষমতারও অধিকারী। ‘টাকার জোরে’ তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন।
৮) ব্যবসায়িক নেতৃত্ব: নগর সমাজে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বণিক সমিতি, ব্যবসায়িক সংগঠন,
দোকান মালিক সমিতি যেকোনো স্তরের নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ পরিসরে যথেষ্ট প্রভাবশালী।
৯) ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতা: আত্মীয়তা কিংবা পেশাগতভাবে কোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা
সংগঠনের সাথে সম্পর্ক থাকলে অনেকে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে পারেন। কোনো মন্ত্রী-এমপি’র আত্মীয়, পুলিশর‌্যাবের সোর্স, পাসপোর্ট অফিসের দালাল, স্থানীয় ক্লাবের নেতা প্রমুখ নগর সমাজের ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হয়ে উঠতে
পারেন।
১০) স্থানীয় মাস্তান: মহল্লার ত্রাস সৃষ্টিকারী মাস্তানদের সবাই সমীহ করে। যারা মাস্তানি কিংবা চাঁদাবাজী করে তাদেরকে
সবাই ভয় করে। সুতরাং অনৈতিক বা অবৈধ হলেও মাস্তা এবং চাঁদাবাজরা ক্ষমতা কাঠামোর অনিবার্য অংশীদার।
শিক্ষার্থীর কাজ নগর সমাজের ক্ষমতা কাঠামোর উপাদানগুলো চিহ্নিত করুন। সময়: ১০ মিনিট
সারসংক্ষেপ
ক্ষমতা হচ্ছে কর্তৃত্ব আরোপের উপায়। নানা উপাদানের মাধ্যমে কর্তৃত্ব আরোপ বা ক্ষমতার প্রয়োগ করা যায়। নগর
সমাজে পেশা, মালিকানা, রাজনীতি, নেতৃত্ব, অর্থ-সম্পদ ইত্যাদি ক্ষমতা প্রয়োগের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বাসস্থানের ভিত্তিতে নগর সমাজের প্রধান দু’টি শ্রেণি (স্তর) কি কি?
(ক) মালিক-শ্রমিক (খ) আশ্রয়দাতা-আশ্রিত
(গ) উচ্চবিত্ত-নি¤œবিত্ত (ঘ) বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া
২। নিচের কোন শ্রেণিটি নগর সমাজে অধিকতর ক্ষমতাশালী?
(ক) কৃষিজমির মালিক (খ) উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা
(গ) বড় জ্ঞাতিগোষ্ঠী (ঘ) তরুণ বেকার সমাজ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]