মুখ্য শব্দ বিবাহ, একক বিবাহ, বহুস্ত্রী বিবাহ, লেভিরেট, সরোরেট, বহির্বিবাহ, অন্তর্বিবাহ,
বিবাহের গুরুত্ব।
বাংলাদেশে বিবাহের ধরন
বিবাহ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। বিবাহ পরিবার ব্যবস্থা গঠনের প্রধান মাধ্যম। বিবাহের মাধ্যমে
প্রাপ্তবয়স্ক একজোড়া পুরুষ এবং নারী পারস্পরিক পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে জš§দানকৃত সন্তানের বৈধ পিতামাতার অধিকার লাভ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধরনের বিবাহ ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশেও নানা ধরনের
বিবাহ ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের নির্ণায়কের মাধ্যমে বিবাহের শ্রেণিবিভাগ করা হয়। নি¤েœ এ সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
(১) একক বিবাহ
একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সাথে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর বিবাহকে একক বিবাহ বলে। এটি বাংলাদেশের সর্বাধিক
প্রচলিত এবং সর্বজনস্বীকৃত বিবাহ পদ্ধতি ।
(২) বহুস্ত্রী বিবাহ
একজন পুরুষের সাথে যখন একাধিক মহিলার বিয়ে হয় তখন তাকে বহুস্ত্রী বিবাহ বলে। বাংলাদেশের মুসলমান সমাজে এ
ধরনের বিবাহ ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। মূলত কৃষি নির্ভর অর্থনীতিতে কৃষি ও গৃহস্থালীর কাজকর্মের সুবিধার জন্য বহুস্ত্রী
গ্রহণের প্রচলনের উদাহরণ বাংলাদেশের সমাজে রয়েছে।
(৩) দেবর-বিবাহ বা লেভিরেট
ভ্রাতৃবিধবা বিবাহ হলো বিবাহের এমনি একটি ধরন যেখানে কোনো মহিলার স্বামী মারা গেলে মৃত স¦ামীর ভাইয়ের সাথে
ঐ মহিলার বিবাহ হয়। বাংলাদেশে এ ধরনের বিবাহ গ্রামাঞ্চলে কাদাচিৎ দেখা যায়।
(৪) শ্যালিকা বিবাহ বা সরোরেট
শালিকা বিবাহ বা সরোরেট ব্যবস্থায় কোনো পুরুষের স্ত্রী মারা গেলে মৃত স্ত্রীর বোনের সাথে ঐ পুরুষের বিবাহ হয়। এ
ধরনের বিবাহ প্রথা বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে ব্যতিক্রম হিসেবে প্রচলিত।
(৫) বহির্বিবাহ এবং অন্তর্বিবাহ
কোনো পুরুষ বা মহিলা বিবাহের জন্য তার নিজ গোষ্ঠীর বাইরে থেকে পাত্র/পাত্রী নির্বাচন করে তখন বহির্বিবাহ বলে।
অন্যদিকে কোনো পুরুষ বা মহিলা বিবাহের জন্য যদি তার নিজ গোষ্ঠীর ভেতর থেকে পাত্র/পাত্রী নির্বাচন করে তখন তাকে
অন্তর্বিবাহ বলে। বাংলাদেশে মুসলিম ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এ ধরনের ব্যবস্থা প্রচলিত আছে।
(৬) ‘কাজিন’ বিবাহ
‘কাজিন’ বা মামাতো, খালাতো, চাচাতো, ফুফাতো ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ বন্ধন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সমাজে প্রচলিত।
বাংলাদেশে দুই ধরনের ‘কাজিন’ বিবাহ প্রচলিত রয়েছে। যথা- ‘প্যারালাল-কাজিন’ বিবাহ এবং ‘ক্রস-কাজিন’ বিবাহ।
‘প্যারালাল-কাজিন’ বিবাহ হলো চাচাত ভাইবোন বা খালাত ভাইবেনের মধ্যে সংঘটিত বিবাহ। অন্যদিকে, ‘ক্রস-কাজিন’
বিবাহ হলো মামাত-ফুফাতো ভাই-বোনের মধ্যে সম্পন্ন বিবাহ।
বাংলাদেশে বিবাহের গুরুত্ব
বিবাহ হচ্ছে সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম কিংবা সাংবিধানিক আইন দ্বারা অনুমোদিত একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে পরিবার গঠিত
হয়। বিবাহের একটি অন্যতম সামাজিক অবদান হলো এই যে, এর মাধ্যমে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও একজন প্রাপ্তবয়স্ক
নারীর মধ্যে সবধরনের সম্পর্ক স্থাপন হয়। এ সম্পর্কের ফসল হিসেবে তাদের সন্তান-সন্তোদি সমাজস্বীকৃত পন্থায় পিতামাতা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশে বিবাহের গুরুত্ব নি¤œরূপ:
(১) সন্তানের বৈধ পিতা-মাতা: বাংলাদেশে বিবাহের মাধ্যমেই পরিবার সৃষ্টি হয়। বিবাহের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও
একজন নারীর মধ্যে সৃষ্ট বন্ধন থেকে যে সন্তান জš§ গ্রহণ করে সে পায় তার বৈধ পিতা-মাতা। সন্তানের লালনপালনের দায়িত্ব এই পিতা-মাতার উপরই বর্তায়।
(২) পারিবারিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা: বিবাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পারিবারিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা। তাই
বাংলাদেশে পরিবার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা এবং পারিবারিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য বিবাহের অনেক গুরুত্ব
রয়েছে।
(৩) উত্তরাধিকার সৃষ্টি: বাংলাদেশের সমাজ মূলত পারিবারিক বন্ধনের উপর টিকে আছে। তাই পারিবারিক
উত্তরাধিকার সৃষ্টির জন্য বিবাহের গুরুত্ব রয়েছে।
(৪) জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা: বৈধ উপায়ে জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষার জন্য বাংলাদেশে বিবাহের গুরুত্ব রয়েছে।
(৫) সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা: বিবাহ ব্যবস্থা না থাকলে সমাজে অবাধ যৌনাচার বেড়ে যায়, সামাজি শৃংখলা
নষ্ট এবং সামাজিক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। তাই সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিবাহের গুরুত্ব
অপরিসীম।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বাংলাদেশে পরিবারের ধরন এবং গুরুত্ব সম্পর্কে জানলাম।
সারসংক্ষেপ
পারিবারিক জীবনের সূত্রপাত হয় বিবাহের মাধ্যমে। বিবাহ হচ্ছে সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্ম কর্তৃক অনুমোদিত একটি
ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে পরিবার গঠিত হয়। বিবাহের একটি অন্যতম সামাজিক অবদান হলো এই যে, এ ব্যবস্থা যে
কোনো মানব শিশুকে সমাজস্বীকৃত পিতা ও মাতা দান করে। বাংলাদেশের সমাজে ধর্ম, বর্ণ, নৃগোষ্ঠী এবং জাতিভেদ
অসুযায়ী একক বিবাহ, বহুস্ত্রী বিবাহ, বহির্বিবাহ ও অন্তর্বিবাহ ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বিবাহের মাধ্যমে নারী পুরুষ কোন জীবনে প্রবেশ করে?
ক) সমাজ জীবনে খ) পারিবারিক জীবনে
গ) রাষ্ট্রীয় জীবনে ঘ) শিক্ষা জীবনে
২। ‘প্যারালাল-কাজিন’ কী ধরনের বিবাহ?
ক) অপরিচিত ছেলে-মেয়ের বিবাহ খ) মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোনের বিবাহ
গ) মৃত স্বামীর ভাইকে বিবাহ ঘ) চাচাত বা খালাত ভাই-বোনের বিবাহ
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত