নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ধারণা ব্যক্ত করতে পারবে

মুখ্য শব্দ নগরায়ণ, শিল্পায়ন, বর্ধিত জনগোষ্ঠী, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি।
নগরায়ণের ধারণা
‘নগরায়ণ’ শব্দটি সমাজবিজ্ঞানের আলোচিত বিষয় সমূহের মধ্যে অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্যয়। সাধারণ অর্থে
নগরায়ণ হচ্ছে কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে নগরীতে রূপান্তরের মাধ্যমে উন্নত জীবন ব্যবস্থায়
উত্তরণের একটি প্রক্রিয়া। ‘নগর’ শব্দটি অপেক্ষাকৃত গ্রাম থেকে ভিন্ন বা সক্রিয়। শ্রমের বিশেষীকরণ ও অকৃষিজ পণ্য ও
পেশার সমাহারের মাধ্যমে ‘নগর’ শব্দটি বিশেষ রূপ ধারণ করেছে। নগর শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো টৎনধহ, ল্যাটিন
শব্দ ঙৎনরং এবং গ্রিক শব্দ এড়ৎড়ফ হতে উদ্ভুত। ১৬০৯ সালে চড়ঢ়ব সর্বপ্রথম টৎনধহ শব্দটি ব্যবহার করেন। গ্রামের মানুষ
বিভিন্ন রকম কাজের সন্ধানে শহরমুখী হলে শহরের পরিসর বৃদ্ধি পায়। গ্রামের জনগোষ্ঠীর একটি অংশ শহরের দিকে
ধাবিত হয়ে বসবাসের উদ্যোগ গ্রহণ করে। অস্থায়ী কাজের পরিবেশ হতে ক্রমান্বয়ে স্থায়ী কাজের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে
ক্ষুদ্র পরিসরে বিপুল জনসমাবেশ ঘটতে থাকে। এ বর্ধিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজন উন্নত জীবনযাত্রা। এর জন্য নিরাপদ
ও স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান, রাস্তাঘাট, যানবাহন, খাদ্যসামগ্রী, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও
চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ অপরিহার্য। নাগরিক জীবন ব্যবস্থায় এ ধরনের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে তাকে
পরিকল্পিত নগরায়ণ বলা হয়। অর্থাৎ গ্রামীণ জীবনধারা হতে নগরের জীবনধারা গ্রহণের প্রক্রিয়াকে নগরায়ণ বলা হয়।
নগরায়ণের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেন। সমাজবিজ্ঞানী মিচেলের মতে,
‘নগরায়ণ হচ্ছে শহুরে হওয়ার পদ্ধতি যা কৃষি পেশা থেকে অকৃষি পেশার রূপান্তর এবং মানুষের দৈনন্দিন আচার-ব্যবহার
ও রীতিনীতির পরিবর্তন।’ সমাজবিজ্ঞানী ওয়ারেন এস. থমসনের মতে, ‘নগরায়ণ হচ্ছে কৃষি প্রধান জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর
অংশের অকৃষি কার্মকাÐ স্থানান্তর প্রক্রিয়া।’ জাতিসংঘ রিপোর্টে নগরায়ণের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘দেশের জনসংখ্যার
একটি ক্রমবর্ধমান অংশ শহরে বসবাস করার প্রক্রিয়াই হলো নগরায়ণ।’
বাংলাদেশের নগরায়ণের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। গ্রাম হতে লোক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে শহরের দিকে ধাবিত
হচ্ছে। বাংলাদেশে নগরায়ণ বৃদ্ধির কারণ হলো গ্রামের সমাজ ব্যবস্থাতে কৃষি উৎপাদন বতীত অন্য পেশা গ্রহণের সুযোগ
সীমিত। এছাড়া, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য-বস্ত্র, শিক্ষা-চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক
উৎপাদন ব্যবস্থায় নেই বললেই চলে। ফলে মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পাশাপাশি
নগরজীবনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা গ্রামীণ এলিট শ্রেণিকে আকৃষ্ট করছে। কৃষির উদ্বৃত্ত উৎপাদন ধনী কৃষকদের শহরে
স্থানান্তরে ভ‚মিকা রাখছে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে নগরায়ণের গতি ছিল অত্যন্ত ধীর। বাংলাদেশের
অভ্যূদয়ের পর থেকে নগরায়ণ দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৫১ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪.৩৪% ছিল
নগরকেন্দ্রিক। এরপর ১৯৬১ সালে এর হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫.১৯% এ। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের নগরায়ণ বৃদ্ধি
পেয়ে উন্নীত হয় ৮.৭৮% এ। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১৫.১৮% নগরে বসবাস করছে। ২০১৫ সালে
দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৪.১ শতাংশ ছিল শহরের অধিবাসী। মূলত বাংলাদেশে নগারায়ণের বৃদ্ধি প্রধানত গ্রাম ছেড়ে নগরে জনসংখ্যা স্থানান্তরেরই ফল।
শিল্পায়নের ধারণা
শিল্প বিপ্লবের একটি অপরিহার্য অংশ হচ্ছে শিল্পায়ন। একটি আর্থ সামাজিক প্রক্রিয়া হিসেবে শিল্পায়নের উদ্ভব ঘটে। জেমস
ওয়াটের বাষ্পচালিত ইঞ্জিন প্রথমে রেলগাড়িতে এবং পরবর্তীতে শিল্প-কল-কারখানার উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্য
দিয়ে ১৭৬০ এর দশকে ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্য সমাজসহ সমগ্র বিশ্বে
বিস্তার লাভ করে। সাধারণ অর্থে শিল্পায়ন হলো বিভিন্ন উৎপানমুখী কলখারখানা স্থাপন ও সেগুলোর প্রসার লাভ। অন্যভাবে
বলতে গেলে, শিল্পায়ন হলো একটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া, যেখানে কৃষিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে শিল্পভিত্তিক উৎপাদন
ব্যবস্থায় রূপান্তরের মাধ্যমে সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। মূলত শিল্পায়ন বলতে আমরা বুঝি
কৃষিজ দ্রব্যের রূপান্তর ঘটিয়ে শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন। এ উৎপাদন ব্যবস্থা অনেকটাই প্রযুক্তি ও যন্ত্রনির্ভর। কোনো দেশের
আধুনিক অর্থনীতির বিকাশ ও সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত হচ্ছে শিল্পায়ন। শিল্পায়ন হচ্ছে প্রযুক্তির সহায়তায় প্রাকৃতিক শক্তিকে কাজে
লাগিয়ে যন্ত্রশক্তির মাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
শিল্পায়নের সংজ্ঞায়
জাতিসংঘের শিল্পায়ন কমিটির মতে, শিল্পায়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নের এমন একটি প্রণালী যাতে জাতীয় সম্পদের একটি
ক্রমবর্ধমান অংশ অভ্যন্তরীণ আর্থিক সংগঠনের জন্য নিযুক্ত হয়, যা একাধারে প্রযুক্তিবিদ্যাসম্মত, আধুনিক ও বৈচিত্র্যময়।
শিল্পায়নের আলোচনায় ঔধৎু ধহফ ঔধৎু বলেন ‘শিল্পায়ন হলো এমন একটি সাধারণ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কৃষি এবং
হস্তচালিত উৎপাদন নির্ভর অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে যান্ত্রিক ও শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি ও সমাজে রূপান্তরিত হয়।’
শিল্পায়নের ফলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। প্রবৃদ্ধির হার এবং জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়। শিল্পায়নের কারণে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়। শিল্পায়নের ফলে সরকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব ভূমিকা ও কর্মপরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
নগরায়ণ ও শিল্পায়ন মালিক শ্রেণির আর্থিক উন্নতি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি শ্রমিক শ্রেণির কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। ফলে
বেকারত্ব দূর হয়। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থায় শিল্পায়নের বিকাশ সাধিত হয়। বাংলাদেশেও
সরকারিভাবে পূঁজি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হয়। ফলে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের প্রসার ঘটছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে
সামাজিক কাঠামোয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিল্পায়নের নেতিবাচক প্রভাবও লক্ষণীয়। তাই সমাজবিজ্ঞানে নগরায়ণ ও শিল্পায়ন ধারনা দু’টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। কোথায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশী?
ক) গ্রামে খ) শহরে গ) পৌর এলাকায় ঘ) জেলায়
২। বাংলাদেশের গ্রামগুলো থেকে কেন মানুষ শহরে স্থানান্তরিত হচ্ছে?
ক) গ্রামে কর্মসংস্থানের অভাব খ) গ্রামে জনসংখ্যা বেশী।
গ) গ্রামে শিক্ষার হার কম ঘ) গ্রামে স্তরবিন্যাস কম
৩। ’টৎনধহ'' শব্দটি প্রথম কখন ব্যবহার হয়?
ক) ১৬০৯ সালে খ) ১৭৫৭ সালে গ) ১৮৫৭ সালে গ) ১৯৭১ সালে
৪। শিল্পায়নের পর জীবিকার প্রয়োজনে ও চাহিদা পুরণের নিমিত্তে বাংলাদেশে কোন সমাজের বিকাশ ঘটে?
ক) গ্রামীণ সমাজের খ) সনাতন সমাজের গ) পল্লি সমাজের ঘ) শহর সমাজের

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]