● মূল্যবোধের সংজ্ঞা
ভ‚মিকা
যদিও সংস্কৃতির ধরন এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে ভিন্নতর, তবুও সকল সংস্কৃতিরই কিছু
সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।জর্জ মার্ডক এবড়ৎমব গঁৎফড়পশ ১৯৪৫ সালে সংস্কৃতির ৬০টি
সাধারণ বৈশিষ্ট্যকে তালিকাবদ্ধ করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল, খেলা-ধুলা,
নিকটাত্মীয়ের সাথে যৌনচর্চা পরিহার, উপহার প্রদান এবং অন্যান্য। সকল সংস্কৃতিতেই কিছু
প্রধান উপাদান রয়েছে- যেমন, ভাষা, শ্রেয়োবোধ, অনুমোদন, মূল্যবোধ প্রভৃতি। সংস্কৃতি
প্রধানত: প্রতীক, প্রতীকীগত আচরণ এবং বস্তুগত জিনিসকে অন্তর্ভুক্ত করে।
ভাষা খধহমঁধমব
আমাদের প্রতীকী ব্যবস্থার একটি বড় অংশকে নির্দেশ করে ভাষা। সুনির্দিষ্ট ও অনিয়ন্ত্রিত
অর্থযুক্ত মৌখিক ও লিখিত মাত্রা বা চিহ্নের সামাজিকভাবে গঠনকৃত ব্যবস্থাই হচ্ছে ভাষা।
ভাষা সমাজস্থ সদস্যদেরকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ, জ্ঞান এবং অতীত প্রজন্মের
অভিজ্ঞতা সংরক্ষণে অনুমোদন দেয়। ভাষাকে সংস্কৃতির সংরক্ষণাধার বলা হয়। ভাষা আমরা
কেবল অন্যের সাথেই ব্যবহার করিনা, যখন একা থাকি তখনও ব্যবহার করি।নির্দিষ্ট ভাষাগুলো
ভিন্ন হলেও, ভাষা হচ্ছে প্রতিটি সংস্কৃতির ভিত্তি। সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রে অর্থ ও প্রতীকী
প্রকাশের বিমূর্ত ব্যবস্থাই হচ্ছে ভাষা। বক্তব্য, লিখিত চরিত্র, সংখ্যা, প্রতীক এবং অমৌখিক
যোগাযোগের ইশারা-ইঙ্গিত ভাষার অন্তর্ভুক্ত।
শ্রেয়োবোধ ঘড়ৎসং
অংশীদারযুক্ত আচরণের নিয়মই হচ্ছে শ্রেয়োবোধ। সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আমরা কি করবো বা
কি করবো না তা এটি নির্দেশ করে। শ্রেয়োবোধ শিশুদের খেলা-ধুলার নিয়ম-কানুন থেকে
নিকট-আত্মীয়ের সাথে নিষিদ্ধ যৌনচর্চা ও আইনের মাঝে ব্যাপ্ত। সমাজ-প্রতিষ্ঠিত আদর্শগত
আচরণই হচ্ছে শ্রেয়োবোধ। সমাজবিজ্ঞানীরা শ্রেয়োবোধকে দু'ভাবে আলাদা করেছেন।
প্রথমত: শ্রেয়োবোধ প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিকÑ এ দু'ভাগে বিভক্ত। প্রাতিষ্ঠানিক
শ্রেয়োবোধ সাধারণত লিখিত আকারে থাকে এবং তা পালনে ব্যর্থতার জন্য রয়েছে কঠোর
শাস্তি। পক্ষান্তরে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রেয়োবোধ সাধারণত বোঝার ব্যাপার, কিন্তু যথাযথভাবে
লিপিবদ্ধকৃত নয়। শালীন কাপড়-চোপড় পরিধান অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রেয়োবোধের একটি
উদাহরণ।
দ্বিতীয়ত: সমাজে শ্রেয়োবোধের আপেক্ষিক গুরুত্বের দ্বারাও শ্রেণীবিভাগ করা যায়। এ প্রক্রিয়ায়
শ্রেণীবিভাগকৃত শ্রেয়োবোধ লোকাচার সড়ৎবং ও লোককথা ভড়ষশধিুং নামে পরিচিত। এ
প্রত্যয়টি অবশ্য এখন আর ব্যবহৃত হয় না।
অনুমোদন ঝধহপঃরড়হ
অনুমোদন হচ্ছে সামাজিকভাবে আরোপিত পুরস্কার এবং শাস্তি যার দ্বারা জনগণ শ্রেয়োবোধ
পালনে উৎসাহী হয়। অনুমোদন প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিকÑদুই-ই হতে পারে। কোন
শ্রেয়োবোধের অনুসরণ ‘হ্যাঁ'Ñ অনুমোদনকে প্রতিনিধিত্ব করে যেমন, বেতন বৃদ্ধি, পদক প্রদান,
কৃতজ্ঞতা স্বীকার। জরিমানা, হুমকি প্রদান, কারারুদ্ধকরণ ইত্যাদি ‘না'Ñ অনুমোদনের অন্তর্ভুক্ত।
শ্রেয়োবোধ অনুমোদন
হ্যাঁ না
প্রাতিষ্ঠানিক বেতন-বোনাস অবনতি
প্রশংসাগত নৈশভোজ চাকুরীচ্যুতি
পদক কারাবাস
ডিপ্লোমা বহিস্কার
অপ্রাতিষ্ঠানিক মৃদু হাসি ভ্রুকুটি
শুভেচ্ছা অবমাননা
উল্লাস সমাজ বিচ্ছিন্নতা
মূল্যবোধ ঠধষঁবং
মূল্যবোধ হচ্ছে সামাজিক আচরণের রূপের ধারণা। সমাজে মানুষের যা কিছু করা উচিৎ, যা
কিছু মঙ্গলজনক মনে করে তার আদর্শ রূপই হচ্ছে মূল্যবোধ। মূল্যবোধ নির্দেশ করে কোন
সংস্কৃতিতে জনগণ কোনটি পছন্দ করে, একই সাথে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ ও নৈতিকভাবে সঠিক
মনে করে। মূল্যবোধ সুনির্দিষ্ট হতে পারে। যেমন, পিতা-মাতাকে শ্রদ্ধা করা।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি পৃষ্ঠা-৫৯
মূল্যবোধ জনগণের আচরণকে প্রভাবিত করে এবং অন্যের কর্মের পর্যালোচনার মাত্রা হিসাবে
কাজ করে। কোন সংস্কৃতির মূল্যবোধ, শ্রেয়োবোধ ও অনুমোদনের সাথে প্রায়ই প্রত্যক্ষ সম্পর্ক
লক্ষ্যণীয়।
সমাজের মানুষ যা কিছু কা´িখত যথাযথ এবং মঙ্গলময় মনে করে তার বিমূর্ত রূপই হচ্ছে
মূল্যবোধ (জেনডেন, ১৯৯০)।
ইকুয়েডরের একটি গ্রামে দেখা যায় কৃষকরা তাদের মারাত্মক অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার্থে
হাসপাতালে যাওয়া থেকে বিরত রাখে। কারণ তারা ক্যাথলিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী যে, যদি
শিশু মারা যায় তবে সে ঐশ্বরিক করুণায় সঞ্জীবিত হয়ে স্বর্গে গমন করে এবং ঈশ্বরের
একজন দেবদূতে পরিণত হয়। একটি শিশুর মৃত্যু ছিল সেখানে উৎসব পালনের বিষয়।
সারাংশ
সমাজভেদে সংস্কৃতির ভিন্নতা সত্তে¡ও, কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য সকল সংস্কৃতিতেই
লক্ষ্যণীয়। কেননা, সংস্কৃতির মৌলিক কাঠামো সর্বজনীন। ভাষা, শ্রেয়োবোধ, অনুমোদন
এবং মূল্যবোধ ইত্যাদি হল সকল সংস্কৃতিরই প্রধান কিছু উপাদান। সুনির্দিষ্ট ও
অনিয়ন্ত্রিত মৌখিক ও লিখিত মাত্রা বা চিহ্নের সামাজিকভাবে গঠনকৃত ব্যবস্থাই হচ্ছে
ভাষা। এটি আমাদের প্রতীকী কর্মের একটি বড় অংশকে নির্দেশ করে। শ্রেয়োবোধ হচ্ছে
অংশীদারযুক্ত আচরণের নিয়ম যা সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আমরা কি করবো বা কি করবো
না তা নির্দেশ করে। শ্রেয়োবোধ আবার প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক এ দু'রকম হয়ে
থাকে। অনুমোদন বলতে সামাজিকভাবে আরোপিত পুরস্কার এবং শাস্তিকে বোঝায় যার
ফলে জনগণ শ্রেয়োবোধ পালনে উৎসাহী হয়। শ্রেয়োবোধের ন্যায় এটিও প্রাতিষ্ঠানিক ও
অপ্রাতিষ্ঠানিক হতে পারে। আর মূল্যবোধ হচ্ছে কাক্সিক্ষত, যথার্থ ও মঙ্গলের বিমূর্ত চিন্তা
যেখানে সমাজের অধিকাংশ সদস্য অংশীদার হয়।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. জর্জ মার্ডক সংস্কৃতির কয়টি সাধারণ বৈশিষ্ট্য তালিকাবদ্ধ করেছিলেন?
ক. ৫০টি খ. ৬০টি
গ. ৭০টি ঘ. ৭৫টি
২. সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আমরা কি করবো বা কি করবো নাÑ তা কে নির্দেশ করে?
ক. মূল্যবোধ খ. শ্রেয়োবোধ
গ. অনুমোদন ঘ. সবগুলো
৩. নিচের কোনটি ‘হ্যাঁ' অনুমোদনকে প্রতিনিধিত্ব করে?
ক. বেতন বৃদ্ধি খ. অবনতি
গ. বহিস্কার ঘ. চাকুরিচ্যুত
৪. পিতা-মাতাকে শ্রদ্ধা করা কিসের উদাহরণ?
ক. শ্রেয়োবোধ খ. মূল্যবোধ
গ. অনুমোদন ঘ. উপরের কোনটিই নয়।
৫. সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রে অর্থ ও প্রতীকী প্রকাশের বিমূর্ত ব্যবস্থা কি?
ক. অনুমোদন খ. মূল্যবোধ
গ. ভাষা ঘ. উপরের সবগুলো
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ভাষাকে সংস্কৃতির সংরক্ষণাধার বলা হয় কেন ?
২. সমাজবিজ্ঞানীরা শ্রেয়োবোধকে কিভাবে আলাদা করে থাকেন ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সংস্কৃতির উপাদানগুলো কি কি? বিস্তারিত আলোচনা করুন।
২. শ্রেয়োবোধ, মূল্যবোধ ও অনুমোদন বলতে কি বোঝায়? আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত