সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের ধারণা

মুখ্য শব্দ সমাজ, পরিবর্তন, উন্নয়ন, জীবনধারা, সামাজিক কাঠামো, সামাজিক সম্পর্ক।
সামাজিক পরিবর্তন
মানব সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। প্রাচীন সমাজ থেকেই এ পরিবর্তন ক্রিয়াশীল। ফলে সমাজবিজ্ঞানের
আলোচ্যবিষয়ের মধ্যে একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রপঞ্চ হচ্ছে সামাজিক পরিবর্তন। সাধারণভাবে সামাজিক পরিবর্তন
বলতে সমাজ ব্যবস্থা বা সামগ্রিক আচরণের মৌলিক পরিবর্তনকে বুঝায়। সামাজিক পরিবর্তন বলতে সামাজিক কাঠামোর
পুনর্গঠন বা রূপান্তরকেও চিহ্নিত করা যায়। তবে ‘পরিবর্তন’ শব্দটি রূপান্তরমূলক, উৎপত্তিমূলক নয়। বস্তুত সমাজের
একটি বিশেষ রূপ থেকে অন্য একটি রূপ ধারণ করাকেই সামাজিক পরিবর্তন বলে। এ রূপান্তর কখনও স্থায়ী আবার
কখনও অস্থায়ী হয়। কখনো, দ্রæত গতির আবার কখনো মন্থর। সমাজে অনেক সময় বাহ্যিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়,
আবার কখনও অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনও দেখা যায়। পরিবর্তনশীলতার কারণেই মানব সমাজ আদিম দশা, বন্য দশা ও বর্বর
দশা অবস্থা অতিক্রম করে আধুনিক উন্নত ও যৌক্তিক সমাজে উপনীত হয়েছে। এ পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে সমাজ অনাগত
ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে। সামাজিক পরিবর্তন মূলত সমাজের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতিসহ সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তনকে বুঝায়।
সামাজিক পরিবর্তনের সংজ্ঞা
স্থান-কাল-পাত্রভেদে সামাজিক পরিবর্তন বিভিন্ন প্রকৃতির হয়। সমাজবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন সংজ্ঞায়ও এর প্রতিফলন
পরিলক্ষিত হয়। যেমন সমাজবিজ্ঞানী স্যামুয়েল কোয়েনিগ বলেছেন, “সামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের জীবনধারার
পরিবর্তন।” সমাজবিজ্ঞানী জড়নবৎঃংড়হ এর মতে, “সময়ের ব্যবধানে সামাজিক আচরণ, অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান এবং সবর্পোরি
সমাজ কাঠামোর ধরনের মধ্যে যে রদবদল হয় তাকে সামাজিক পরিবর্তন বলে।”
নৃ-বিজ্ঞানী ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, “সামাজিক পরিবর্তনের মধ্যে নিহিত থাকে সামাজিক সম্পর্কের কাঠামোর পরিবর্তন। অর্থাৎ
সামাজিক ভূমিকা ও তাদের সম্পর্কের পরিবর্তন, দল ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার সম্পর্কের পরিবর্তনই সামাজিক পরিবর্তন।”
সমাজবিজ্ঞানী করহমংষবু উধারং এর মতে, “সামাজিক পরিবর্তন হলো সমাজ কাঠামোর কার্যাবলির পরিবর্তন।”
সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভারের মতে, “সমাজের অভ্যন্তরে যে সকল সামাজিক সম্পর্কের রদবদল হচ্ছে তাই সামাজিক পরিবর্তন।” এর মতে, “সামাজিক পরিবর্তন হলো সমাজের আয়তন ও কাঠামো তথা বিশেষ বিশেষ সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পারস্পরিক সম্পর্কের পরিবর্তন।”
উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনধারা, রীতিনীতি, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, শিল্পকলা,
সাহিত্য, বস্তুগত ও অবস্তুগত এবং অবস্থানগত সকল পরিবর্তনের সমষ্টিই হচ্ছে সামাজিক পরিবর্তন। মূলত মানব সমাজের প্রাতিষ্ঠানিক রূপের পরিবতনই হচ্ছে সামাজিক পরিবর্তন।
সামাজিক উন্নয়ন
‘উন্নয়ন’ কথাটি সকল ক্ষেত্রে ইতিবাচক অর্থে প্রয়োগ করা হয়। সামাজিক উন্নয়ন বলতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবন-যাত্রার মানের
উন্নয়ন, মানব সম্পদের বিকাশ, কাম্যজনসংখ্যা, পরিবেশ ও সামাজিক খাতের পূর্বাবস্থা থেকে অপেক্ষাকৃত উন্নততর
অবস্থার পরিবর্তনকে বোঝায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবনমান, আয়ুস্কাল, মানবসম্পদ ইত্যাদি খাতে একটা দেশ উন্নয়নের কোন
স্তরে অবস্থান করছে তার চিত্র সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
মনীষী ঔধসবং গরফমষবু সামাজিক উন্নয়নকে পরিকল্পিত পরিবর্তনের প্রক্রিয়া হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে বলেছেন, “সামাজিক
উন্নয়ন হলো গতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সমগ্র জনগোষ্ঠীর মঙ্গলজনক অবস্থার উন্নয়নের
জন্য পরিকল্পিত সামাজিক পরিবর্তন আনয়নের প্রক্রিয়া।”
উন্নয়ন প্রসঙ্গে ম্যাকাইভার ও পেজ বলেন, “জীবদেহের উন্নয়ন হলো তার জীবনের উন্নতি, আর সামাজিক উন্নয়ন হলো
তার সভ্যদের মধ্যে যে জীবন আছে তার উন্নতি। তাই ব্যক্তিকে কোনভাবেই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা চলে না।”
‘সামাজিক উন্নয়ন’ প্রত্যয়টিকে তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। প্রথমত, শিল্প বিস্তারের পর থেকে সমবায়
আন্দোলন, সামাজিক কর্ম ও কমিউনিটি উৎপাদন। দ্বিতীয়ত, আধুনিকীকরণের সমার্থক হিসেবে, তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক
উন্নয়নের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে সমাজের বিস্তৃত পরিসরে উন্নয়ন ভাবনা। ষাটের দশক থেকে সামাজিক উন্নয়ন
প্রত্যয়টি ব্যবহার হচ্ছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন, দাতাসংস্থা, এনজিও প্রভৃতি প্রত্যয়টির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সারসংক্ষেপ
সমাজ পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই সমাজ আদিম অবস্থা থেকে আজকের আধুনিক অবস্থায় উন্নীত হয়েছে।
গ্রামীণ ও কৃষিভিত্তিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার স্থানে আজ শহুরে শিল্প অর্থনীতির আধিক্য। আজকের সমাজ আবার বিশ
বছর কিংবা একশ বছর পরে পুরনো হয়ে যাবে। গড়ে উঠবে নতুন সমাজ। এটিই সামাজিক পরিবর্তন। সামাজিক
উন্নয়ন প্রত্যয়টিও ঘনিষ্ঠভাবে সামাজিক পরিবর্তনের সাথে যুক্ত। তবে উন্নয়ন হচ্ছে সমাজের অগ্রগতি বা ইতিবাচক
পরিবর্তন, যেখানে অর্থনীতি এবং জীবনমান বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। সমাজ জীবনের অর্থনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক পরিবর্তনের ফলে কী হয়?
ক) জনসংখ্যাবৃদ্ধি পায় খ) জলবায়ুর পরিবর্তন হয় গ) জীবন যাত্রার মান উন্নত হয় ঘ) শিক্ষার হার বৃদ্ধি পায়
২। সমাজ পরিবর্তনের মুখ্য কারণ হচ্ছে-
ক) ধর্ম খ) সংস্কৃতি গ) প্রযুক্তি ঘ) উৎপাদন ব্যবস্থা
৩। বর্তমান বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত প্রত্যয় কোনটি?
ক) প্রগতি খ) উন্নয়ন গ) বিবর্তন ঘ) পরিবর্তন

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]