মুখ্য শব্দ বাংলাদেশ, শিক্ষা, গণমাধ্যম, সামাজিক পরিবর্তন, স্ব-আরোপিত নিয়ন্ত্রণ।
সামাজিক পরিবর্তনে শিক্ষার ভূমিকা
শিক্ষা মানুষের আচরণগত পরিবর্তন সাধন করে। সংস্কার থেকে মুক্তির মাধ্যমে সমাজের মূল্যবোধ জাগ্রত করার
ক্ষেত্রেও শিক্ষার ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের ঐক্য ও সংহতি রক্ষার ক্ষেত্রেও শিক্ষা অত্যন্ত কার্যকর। সামগ্রিকভাবে
শিক্ষা সামাজিক পরিবর্তনের সব থেকে বড় হাতিয়ার। সামাজিক পরিবর্তনে শিক্ষা যেসব ভূমিকা পালন করে সেগুলো
নি¤œরূপ:
১) স্ব-আরোপিত নিয়ন্ত্রণ: শিক্ষা মানুষের মূল্যবোধকে সমৃদ্ধ করে। ব্যক্তিকে সচেতন, দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ হিসেবে
গড়ে তুলতে শিক্ষার ভ‚মিকা অনন্য। শিক্ষা ছাড়া ব্যক্তি তথা সমাজের প্রগতি, পরিবর্তন ও উন্নয়ন অসম্ভব। আত্মনিয়ন্ত্রণের
মাধ্যমে সামাজিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষা কার্যকর ভ‚মিকা পালন করে। শিক্ষা মানুষের কু-সংস্কার দূর করে জ্ঞানের মাধ্যমে যৌক্তিক
মানুষে রূপান্তর করে। শিক্ষিত ব্যক্তি অনাকাক্সিক্ষত এবং অশোভন কাজ থেকে দূরে থাকে। কারণ, শিক্ষা মানুষের ব্যক্তিত্ব
গঠনে সহায়ক এবং সবধরনের যৌক্তিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করে।
২) চরিত্র গঠন ও শৃঙ্খলাবোধ সৃষ্টি: শিক্ষা ব্যক্তির চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায় এবং চরিত্রকে সমুন্নত করে। উন্নত
চরিত্র গঠনের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যক্তির জীবনপ্রবাহকে সাবলিল করে। শিক্ষা উন্নত চরিত্র গঠনে এবং শৃঙ্খলাবোধ নিয়ন্ত্রনের
মাধ্যমে সামাজিক ভারসাম্য তৈরি করে।
৩) নৈতিকতার উন্নয়ন: শিক্ষা ব্যক্তির নৈতিকতাকে উন্নত ও জাগ্রত করে তোলে। ব্যক্তির নৈতিকতার বিকাশ ঘটানোর
মাধ্যমে সমাজ কাক্সিক্ষত পথে পরিচালিত হয়। ভালো-মন্দের পার্থক্য নিরূপণে সহায়তার মাধ্যমে শিক্ষা সমাজের কল্যাণ
নিশ্চিত করে।
৪) সচেতন জনগোষ্ঠী তৈরি করে: শিক্ষা বাংলাদেশের সমাজে সচেতন জনগোষ্ঠী তৈরি করে। সচেতন এ জনগোষ্ঠী
সমাজের কাক্সিক্ষত পরিবর্তনে অবদান রাখছে। মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, সুশাসন, গণতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে সোচ্চার
থাকার মাধ্যমে এই সচেতন জনগোষ্ঠী সমাজকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যায়।
৫) গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিয়ামক: সামাজিক পরিবর্তনে অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে শিক্ষা। শিক্ষা মানুষের
চরিত্র গঠন, মননশীলতা ও সুকুমারবৃত্তির উন্নয়ন ঘটায়। শিক্ষিত ব্যক্তি অবাঞ্ছিত আচরণ পরিহার করে। তাই বলা যায়,
শিক্ষা সমগ্র সমাজব্যবস্থায় অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
৬) পেশাগত উন্নয়ন ঘটায়: শিক্ষা মানুষের পেশাগত উন্নয়ন ঘটায়। একজন নিরক্ষর মানুষের পেশার সাথে শিক্ষিত
মানুষের পেশা এবং কাজের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষিত ব্যক্তি সমাজের অর্থনৈতিক
উন্নয়নেও কার্যকর ভ‚মিকা পালন করে। ফলে শিক্ষিত সমাজে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেক বেশি হয়।
৭) সামাজিকীকরণে শিক্ষা: একটি শিশু সমাজের বাঞ্ছিত আচরণ সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখে না। শিক্ষার মাধ্যমে তার
মধ্যে এ বোধ জাগ্রত হয়, সে ভালো-মন্দের পার্থক্য নিরূপণ করতে পারে। সমাজের দায়িত্বশীল সদস্য বা সুনাগরিক গড়ে
তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার ভ‚মিকা সর্বাধিক। যে সমাজে সব মানুষ শিক্ষিত তার সাথে নিরক্ষর একটি সমাজের পার্থক্য অত্যন্ত
পরিষ্কার এবং দৃশ্যমান।
৮) পারিবারিক পরিবর্তন: শিক্ষা পরিবার কাঠামোয় পরিবর্তন সাধন করে। আধুনিক ও উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি অনু পরিবারে
সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। শিক্ষিত পরিবারের আর্দশ, আচরণ, মূল্যবোধ ও আত্মমর্যাদা নিরক্ষর পরিবার থেকে অনেক পৃথক।
৯) উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রনয়ণে শিক্ষা: উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়নে শিক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্যে শিক্ষার প্রভাব
অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ যত শিক্ষিত হচ্ছে তার প্রভাব প্রভাব উন্নয়ন কর্মকান্ডে তত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১০) প্রযুক্তি, আধুনিকায়ন ও নগরায়ণকে ত্বরান্বিত করে: শিক্ষা, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিকায়ন ও নগরায়ণকে
ত্বরান্বিত করে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং এর সুফল পেতে বেশি তৎপর এবং সক্ষম থাকে। উন্নত
নগর জীবনের প্রতিও বাংলাদেশের জনগণের আগ্রহ বেশি। ফলে শিক্ষা আামদের সমাজের আমূল পরিবর্তন করে সনাতন
ব্যবস্থা থেকে আধুনিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করতে প্রতিনিয়ত সহায়তা করছে।
সামাজিক পরিবর্তনে গণমাধ্যমের ভূমিকা
আধুনিক ও শিক্ষত সমাজের অনিবার্য উপাদান ও অনুষঙ্গ হচ্ছে গণমাধ্যম। অনেক গবেষক গণমাধ্যমকে আধুনিক রাষ্ট্র
ব্যবস্থায় পঞ্চম স্তম্ভ বলে অভিহিত করেন। গণমাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য, সংবাদ, ধারণা, বার্তা, বিনোদন একসাথে বহুসংখ্যক
মানুষের উদ্দেশ্যে প্রচারিত হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয় যা সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ
ভ‚মিকা পালন করে। গণমাধ্যমের প্রধান কয়েকটি প্রচার মাধ্যম হচ্ছে:
ক. শ্রবণ মাধ্যম: রেডিও বা বেতার সর্বোৎকৃষ্ট শ্রবণ মাধ্যম।
খ. মুদ্রিত মাধ্যম: সাময়িকী, সংবাদপত্র, হ্যান্ডবিল, বুলেটিন, বই-পুস্তক ইত্যাদি।
গ. শ্রবণ-দর্শন মাধ্যম: টিভি, কম্পিউটার, ইউটিউিব ইত্যাদি।
ঘ. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: ফেসবুক, টুইটার, মোবাইল ফোনের হোয়াটস্এ্যাপ, ইমো, ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদি।
ঙ. সনাতন মাধ্যম বা গণসম্বোধন (জনসমাবেশে বক্তৃতা)।
সামাজিক পরিবর্তনে গণমাধ্যমে ভ‚মিকা সর্বজন স্বীকৃত। বস্তুত আধুনিক সমাজে কেউ গণমাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।
স্বল্পতম সময়ের মধ্যে হালনাগাদ তথ্য পেতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গণমাধ্যম মানুষের এ চাহিদা
পূরণে কার্যকর ভ‚মিকা পালন করছে। জনমত সৃষ্টির প্রধান বাহন হচ্ছে গণমাধ্যম। জনসচেতনতা তৈরিতেও গণমাধ্যামের
বিকল্প নেই। যেকোনো সমাাজিক সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা হলে তা থেকে দ্রæত উত্তরণ লাভ করা যায়। বিদ্যমান
ব্যবস্থার পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন আইন বা বিধি প্রণয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে গণমাধ্যম বিশেষ দায়িত্ব পালন করে। সন্ত্রাস,
দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের সোচ্চার ভ‚মিকা সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত কার্যকর। মাদকদ্রব্য,
চোরাচালান, যৌন হয়রানি, প্রশ্ন ফাঁস, পরীক্ষায় নকল প্রবণতা প্রভৃতি অপরাধ রোধে গণমাধ্যম শক্তিশালী ভ‚মিকা পালন
করে। সমাজে এর প্রত্যক্ষ এবং ইতিবাচক প্রভাব অনস্বীকার্য। মুক্ত গণমাধ্যম, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সুশাসন,
নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার রক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে গণমাধ্যম সোচ্চার ভ‚মিকা পালন করে। এর মাধ্যমে একটি সমাজের
অগ্রগতি, সমৃদ্ধি এবং উন্নতি ত্বরান্বিত হয়। বস্তুত একটি সনাতন সমাজের সাথে আধুনিক সমাজের পার্থক্য গড়ে দেয়
গণমাধ্যম। সুতরাং সামাজিক পরিবর্তনে গণমাধ্যমের ভ‚মিকা খুবই শক্তিশালী।
সারসংক্ষেপ
শিক্ষা সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করে। শিক্ষার মূল দর্শন হচ্ছে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন করা। সামাজিক
পরিবর্তনে শিক্ষা নিজেই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পাশাপাশি শিক্ষা এমন অনেক উপাদান সৃষ্টি করে যেগুলো
সামাজিক পরিবর্তনে ভ‚মিকা রাখে। গণমাধ্যমও সামাজিক পরিবর্তনে তাৎপর্যপূর্ণ ও সুদুরপ্রসারী ভূমিকা রাখে। গণমাধ্যম
বিভিন্ন সচিত্র প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের ধারাকে অনেকাংশে এগিয়ে নিয়ে যায়। গণমাধ্যমে বলিষ্ঠ ভূমিকার
কারণে সমাজে দুর্নীতি ও অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পায়। শুধু তাই নয় শিক্ষার গুণগতমান পরিবর্তনের কারণে মানুষের
জীবনযাত্রা তথা সামাজিক ক্ষেত্রে নতুন ভাবধারা সূচিত হচ্ছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। কোনটি সমাজব্যবস্থায় অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করে?
ক) শিক্ষা খ) নগরায়ণ
গ) শহরায়ন ঘ) শিল্পায়ন
২। শিক্ষা মানুষের কিসের উন্নয়ন ঘটায়?
ক) প্রাকৃতিক খ) পেশাগত
গ) আচরণের ঘ) ‘খ’ ও ‘গ’ উভয়
৩। নীচের কোনটি গণমাধ্যমের অংশ হিসেবে কাজ করে?
ক) নৌকা খ) টেলিভিশন
গ) মঞ্চ ঘ) ফুটবল
৪। তথ্য প্রচারের মাধ্যমকে কী বলা হয়?
ক) গণমাধ্যম খ) বিপ্লব
গ) গণতন্ত্র ঘ) স্বাধীনতা
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত