মুখ্য শব্দ যৌন নিপীড়ন, সাইবার অপরাধ, কর্মজীবী নারীর সমস্যা।
যৌন নিপীড়ন
১৯৯৫ সালে চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে নারীর প্রতি যেকোনো ধরনের সহিংসতাকে
নারী-পুরুষের মধ্যে অন্যতম সমস্যা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। উক্ত সম্মেলনে নারীর প্রতি সহিংসতা বলতে সাধারণত
জোরপূর্বক নারীর উপর শারীরিক, মানসিক অথবা যৌন নির্যাতনকে বুঝায়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, অসম সামাজিক ও
অর্থনৈতিক অবস্থা, নারীর প্রতি বৈষম্য, এবং সহিংসতার মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। নানা অজুহাতে নারীকে গৃহে
অন্তরীণ রাখা, অসম উত্তরাধিকার ভোগ করা, পরিবার এবং সামজে নারীকে হেয় প্রতিপন্ন করা, পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি
ইত্যাদি নারীর উপর সহিংসতার একেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। আর এসব সহিংসতা থেকেই লিঙ্গীয় সহিংসতা বা যৌন
নিপীড়ন জনিত সমস্যার উদ্ভব। পারিবারিক পরিমন্ডল থেকে শুরু করে সামাজিক পরিমন্ডলে, কর্মস্থলে, গণ-পরিবহনে,
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে নারীরা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। বর্তমান সময়ে তথ্য প্রযুক্তির নেতিবাচক
ব্যবহারের কারণে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নের মাত্রা বেড়েই চলছে। নারীর কোন দুর্বল দিকের সুযোগ নিয়ে অথবা কোনো
গোপন বিষয় ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে এক শ্রেণির বিকৃত মানসিকতার পুরুষ নারীর উপর যৌন নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিশেষ করে ফেইসবুকে বিভিন্ন ভাবে নারীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ছড়িয়ে দেওয়া
হচ্ছে। তবে এ ধরনের ঘটনাসমূহ বিক্ষিপ্তভাবে ঘটছে এবং এর ব্যাপকতা ততটা ভয়াবহ নয়। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিকে
কাজে লাগিয়ে গ্রাম থেকে শহর এ নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু নারী এখন আর
আগের মতো ঘরের কোণে বসে নেই, ঘরের বাইরে পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। তবে এখানে নারীরা
নিরাপদ না, সহকর্মী বা কর্মস্থলের কর্তাব্যক্তির দ্বারাও কখনো কখনো নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এছাড়াও স্কুল,
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গৃহ শিক্ষকের হাতেও নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনা বিক্ষিপ্তভাবে ঘটছে। দেশে
পর্যাপ্ত আইন থাকলেও প্রভাবশালীদের ক্ষমতা, রাজনৈতিক প্রভাব, আইন প্রয়োগে জটিলতা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব,
পুরুষের ব্যক্তিগত বিকৃত স্বার্থ ইত্যাদি কারণে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নের মাত্রা বেড়েই চলছে।
সাইবার অপরাধ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারে সাইবার অপরাধ দিনে দিনে অতিমাত্রায় পৌঁছেছে। মানুষ সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমকে ভাল কাজের চেয়ে খারাপ কাজে বেশি ব্যবহার করছে। এখন ইচ্ছা করলেই স্মার্টফোনে ইন্টারনেট
সংযোগ ব্যবহার করে কোনো মানুষ পর্ণোছবি দেখতে পারে, যার প্রভাব তার মানসিকতার উপর পড়ে। এসব ঘটনায়
প্রভাবিত হয়ে সে নানা রকম অপরাধমূলক কাজে হচ্ছে হয়। পুরুষ নিয়ন্ত্রিত ও মানসিকতাসম্পন্ন সমাজে নারীকে
মিডিয়াতে একটি পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। অশ্লীল বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে নানা ধরনের যৌন আবেদনময়ী বিজ্ঞাপন
মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় নারীকে ফাঁদে ফেলে অথবা কোনো আপত্তিকর ভিডিও
ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে নারীকে যৌন নিপীড়নে ঠেলে দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমসমূহে কোনো নারীর ছবি দেখা মাত্রই বিভিন্ন মন্তব্যে ভরে যায়। এসব মন্তব্যের মধ্যে আপত্তিকর বা অশ্লীল মন্তব্যের
সংখ্যা কম নয়। অনেক সময় এক ধরনের তরুণ তার বান্ধবী বা প্রেমিকার সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলে তা
ক্যামেরা বন্দি করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
কর্মজীবী নারীর সমস্যা
কর্মজীবী নারীর সমস্যা বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে পুরুষের
পাশাপশি নারীদেরকেও সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করা হলেও নানা কারণে তা বাধার মুখে পড়ে এবং
নারীরা পিছিয়ে পরেছে। বাংলাদেশের সংবিধান পুরুষের পাশাপাশি নারীকে বিভিন্ন সরকারি চাকরি এবং কর্মে অংশগ্রহণের
সমান সুযোগ সুবিধা প্রদানের বিধান থাকলেও কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অনেক সময় ঘরের বাইরে
চাকরি করতে অনীহা প্রকাশ করে। আধুনিককালে নারী শিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদির ফলে নারীরা ঘরের
বাইরে অর্থ উপার্জনকারী হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু এসব কর্মক্ষেত্রে নারীর জন্য রয়েছে অন্য ধরনের ভোগান্তি। নারীরা
তাদের সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব, কর্মস্থলের কর্তাব্যক্তি বা অন্য কোনো পুরুষ দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এসব নির্যাতন
মানসিক এবং লিঙ্গীয়। কখনও অশ্লীল কথা বার্তার মাধ্যমে অথবা শারীরিক স্পর্শের মাধ্যমে, আবার মানসিক চাপ
বৃদ্ধিকারক মন্তব্য করে নারীকে নির্যাতন করা হয়। বিবাহিত কর্মজীবী নারীদেরকে কখনও কখনও স্বামী বা পরিবারের অন্য
সদস্যদের গঞ্জনা শুনতে হয় শুধু চাকরি করার জন্য। নানাবিদ মানসিক চাপের মধ্যে তারা তাদের চাকরি বা কাজ চালিয়ে
যায়। এছাড়াও রাস্তা ঘাটে, ট্রেনে, বাসে বা অন্য কোনো জায়গায় নারীরা নানা ধরনের সমস্যা মোকাবলো করে থাকে।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বাংলাদেশে নারীদের প্রতি যে ধরনের সহিংসতা হয় সে সম্পর্কে জানলাম। নারীর প্রতি
সহিংসতা বিশ্বব্যাপি মোটামুটি একই ধরনের। তারপরেও আমাদের দেশের মেয়রা শত বাধা অতিক্রম করে সামনের দিকে
এগিয়ে যাচ্ছে।
সারসংক্ষেপ
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি, অসম সামাজিক অবস্থান এবং সুযোগ সুবিধার কারণে বাংলাদেশে নারীর প্রতি
সহিংসতার মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। নানা অজুহাতে নারীকে গৃহে অন্তরীণ রাখা, অসম উত্তরাধিকার ভোগ করা, পরিবার এবং
সামজে নারীকে হেয় প্রতিপন্ন করা ইত্যাদি নারীর প্রতি সহিংসতার গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। আধুনিককালে নারী শিক্ষার প্রসার, নারীর
ক্ষমতায়ন ইত্যাদির ফলে নারীরা ঘরের বাইরে অর্থ উপার্জনকারী হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু এসব কর্মক্ষেত্রে নারীর জন্য রয়েছে
অন্য ধরনের ভোগান্তি। কর্মজীবী নারীরা অনেক সময় তাদের সহকর্মী বা কর্তাব্যক্তি দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১০.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বেইজিং সম্মেলন কত সালে অনুষ্ঠিত হয়?
(ক) ১৯৮০ সালে (খ) ১৯৮৫সালে (গ) ১৯৯৫ সালে (ঘ) ২০০৫ সালে
২। বেইজিং সম্মেলন কততম নারী সম্মেলন”
(ক) প্রথম (খ) দ্বিতীয় (গ) তৃতীয় (ঘ) চতুর্থ
৩। সাইবার অপরাধের মূল উপাদান কোনটি?
(ক) ইন্টারনেট (খ) ছুরি (গ) বই (ঘ) কলম
৪। কখন থেকে বাংলাদেশের নারীদেরকে চাকরিতে প্রবেশের জন্য উৎসাহিত করে আসছে?
(ক) স্বাধীনতার আগে থেকে (খ) স্বাধীনতার পর থেকে (গ) ব্রিটিশ আমল থেকে (ঘ) পাকিস্তান আমল থেকে
<
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত