বাংলাদেশে জেন্ডার বৈষম্য বাংলাদেশে যৌতুকের কারণ ও ফলাফল আলোচনা বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের কারণ ও ফলাফল ব্যাখ্যা কর

মুখ্য শব্দ জেন্ডার বৈষম্য, যৌতুক, বাল্যবিবাহ।
জেন্ডার বৈষম্য
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এদেশের নারীরা পাশ্চাত্যের নারীদের চেয়ে কম সুযোগ-সুবিধা,
ক্ষমতা এবং স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে। তবে একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের নারীরা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি
অগ্রগতি সাধন করেছে। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষের নিজ নিজ ভ‚মিকা পালনের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত
রয়েছে। এই মতামতের কারণেই সমাজে নারী পুরুষের ভ‚মিকা পালনে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আর সেটি
শুরু হয় পরিবারেই শিশুর সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। সামাজিকীকরণের মাধ্যমে শিশুকে ছেলে আর মেয়ে শিশুতে
রূপান্তর করে এবং তার কাজে ভিন্নতা সৃষ্টি করে যা সমাজ ছেলেকে ছেলের মত এবং এর সাথে মেয়েকে মেয়ের মত
আচরণ শিখতে অনুপ্রাণিত করে থাকে। এসব কিছুই ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতা বিকাশে সারা জীবনে প্রভাব সৃষ্টি করে। মূলত
সমাজের প্রত্যাশা অনুসারে মানুষ তাদের শিশুকাল থেকে নিজেদেরকে তৈরি করে নেয় যা পরবর্তী জীবনে জেন্ডার ভূমিকা
পালনে সহায়তা করে যা জেন্ডার বৈষ্যমের সৃষ্টি করে। এ ধরনের ব্যবস্থা বহুদিন সমাজে বিদ্যমান থাকার কারণে এক সময়
সামাজিক অনুষ্ঠানে-প্রতিষ্ঠানে রূপান্তিরত হয়।
আমাদের সমাজে জেন্ডার বৈষম্যের অন্যতম কারণ হলো ছেলে শিশুর উপর গুরুত্ব বেশি দেয়া। বংশগতি রক্ষা, সম্পত্তির
উত্তরাধিকার রক্ষা এবং সম্পত্তি রক্ষা ইত্যাদি কারণে ছেলে সন্তানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই শিশু জšে§র পূর্বেই
অনেক সময় সনোগ্রাফির মাধ্যমে লিঙ্গ চিহ্নিত করে মেয়ে শিশুর ভ্রƒণ নষ্ট করে দেওয়া হয়। আধুনিক শিক্ষার প্রসারে
এধরনের প্রবণতা বাংলাদেশে হ্রাস পেলেও একেবারে কমে যায়নি।
সমাজে নারী-পুরুষ সমান মৌলিক সুবিধা ভোগ করতে পারে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েরা বঞ্চনার শিকার হয়।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ পর্যায়ের নির্দিষ্ট সময়ের পর বাংলাদেশের অনেক মেয়ে পড়ালেখা থেকে ঝড়ে পড়ে। অনেক
সময় মেয়েদেরকে পড়ালেখা করানো ভাল চোখে দেখা হয় না। পারিবারিক পর্যায়ে খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রেও মেয়েদেরকে
বঞ্চনার শিকার হতে হয়। অনেক গ্রামীণ পরিবারে মেয়েদেরকে পুরুষের পরে খাবার গ্রহণ করতে হয়ে। পরিবারে ছেলে
শিশু থাকলে তার খাবারের দিকে যতটা খেয়াল রাখা হয় মেয়েদের বেলায় তেমনটা রাখা হয় না। এখনও মেয়েদেরকে মনে
করা হয় যে তারা শক্ত বা ভারী কাজ করতে পারবে না। তাই তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ থেকে বিরত রাখা হয়।
যেমন- পুলিশ বা সেনাবাহিনীর মতো কোনো জায়গায় চাকরি করলে পরিবার বা সমাজে অনেকের আপত্তি থাকে। সম্পত্তির
মালিকানার ক্ষেত্রে মেয়েরা বৈষম্যের শিকার হয়। স্বামী বা পিতা কারো সম্পত্তিতেই মেয়েরা তাদের ন্যায্য অংশীদারিত্ব পায় না।
যৌতুক সমস্যা
যৌতুকের ধারণা বাংলাদেশে নতুন নয়। এটি বাংলাদেশে অনেক দিন ধরে চলে আসছে। বাংলাদেশের অন্যান্য সামাজিক
সমস্যাগুলোর মধ্যে যৌতুক অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে আরোপিত অযাচিত ব্যবস্থা যা যৌতুক প্রদানকারী মেয়ওে
পরিবারকে নাজুক অবস্থায় ফেলে। বাংলাদেশের হিন্দু এবং মুসলিম উভয় সমাজে যৌতুক এখন সামাজিক প্রথায় পরিণত
হয়েছে। পূর্বে যৌতুক ভয়াবহ রূপ ধারণ করলেও যৌতুক নিরোধ আইন প্রনয়ণ ও প্রয়োগের কারণে এখন আগের মতো
এতো বেশি নাজুক পরিস্থিতি নেই।
বাংলাদেশে যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি যা মানুষের স¦াভাবিক সামাজিক জীবনযাপনে বাধার সৃষ্টি করে। যৌতুক শুধু
সমস্যা নয়, বরং নানাবিধ সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে। যেমন- যৌতুকের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন,
পারিবারিক কলহের মতো সামাজিক সমস্যা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে। গস্খামীণ বাংলাদেশের প্রায় ৮০ ভাগ নারীই যৌতুক
সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে যৌতুক প্রথা প্রচলিত। এ কারণগুলো হলো:
(ক) দারিদ্র্য
(খ) অশিক্ষা
(গ) সম্পদের লোভ-লালসা
(ঘ) বহু দিনের রেওয়াজ
(ঙ) নারীর অধিকার খর্ব করা
(চ) কন্যাসন্তান জš§দান
(ছ) নারীর প্রতি অসম আচরণ
(জ) সামাজিক অসমতা ইত্যাদি
আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) ২০১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী যৌতুকের কারণে ১২৬ জন নারী হত্যাকান্ডের শিকার
হয়েছে, ১০৬ জন নারী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, ৪ জন নারী নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছে। তবে সমগ্র
বাংলাদেশের বহু নন রিপোর্টিং কেইস এই পরিসংখ্যানে নেই। যৌতুকের ফলাফল নি¤œরূপ:
(ক) পারিবারিক কলহ বৃদ্ধি
(খ) সন্তানের সামাজিকীকরণ সমস্যা
(গ) মৃত্যু
(ঘ) আত্মহত্যা
(ঙ) স্বাভাবিক সামজিক সম্পর্ক ব্যাহত
(চ) জেন্ডার বৈষম্য সৃষ্টি
(ছ) শারীরিক নির্যাতন বৃদ্ধি ইত্যাদি
১৯৮০ সালে বাংলাদেশে যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইন পাস করা হয়। ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন বলবৎ করা হয়। ২০০৩ সালে এই আইনটি সংশোধন করা হয়।
বাল্যবিবাহ
বাল্য বিবাহ বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা। ১৯২৯ সালে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ভারতীয় সমাজে বাল্য বিবাহ রোধ করা
হয়। ১৯৮০ সালের আইনে বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলের বয়সকে ২১ বছরের নীচে এবং মেয়ের বয়সকে ১৮ বছরের নীচে
ধরা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে বাল্যবিবাহ হয়ে থাকে। নি¤েœ এই কারণগুলো তুলে ধরা হলো:
(ক) দারিদ্র্য: বাংলাদেশে বিবাহ যোগ্য মেয়েকে অর্থনৈতিক বোঝা মনে করা হয়। তাই বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই
তাদেরকে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দেওয়া হয়।
(খ) অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা: পিতার অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলাতর কারণে বাংলাদেশের মেয়েদেরকে বাল্যকালেই বিয়ে দেওয়া
হয়ে থাকে।
(গ) শিক্ষার অভাব: বাংলাদেশে দারিদ্র্য পীড়িত ঘরের মেয়েরা আর্থিক অনটনের কারণে তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে
পারে না। তাই বাল্যকালেই অধিকাংশ মেয়েকেই বিয়ে দিয়ে দিতে হয়।
(ঘ) সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ও চাপ: ঘরের বিবাহ যোগ্য মেয়ে থাকলে আমাদের দেশে অনবরত চাপ আসে মেয়ের বিয়ে
দেয়ার জন্য। তাছাড়া নি¤œবিত্ত জনগোষ্ঠী তাদের উঠতি বয়সের মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা দিতে পারে না।
(ঙ) যৌন নিপীড়নের ভয়: যৌন নিপীড়নের ভয়ে অনেক সময় পিতা-মাতা তাদের মেয়ে সন্তানকে বিয়ে দিয়ে থাকে।
বাল্যবিবাহের ফলাফল
(ক) যৌতুক প্রথাকে টিকিয়ে রাখা
(খ) মাতৃমৃত্যু হার বৃদ্ধি
(গ) জনসংখ্যা বৃদ্ধি
(ঘ) শিশু মৃত্যু হার বৃদ্ধি
(ঙ) শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মেয়ে শিশুর ঝড়ে পরার হার বৃদ্ধি
(চ) মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি
(ছ) শিশুশ্রম বৃদ্ধি
(জ) শিশু পাচার ইত্যাদি।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের নানা ধরনের সামাজিক সমস্যার মধ্যে জেন্ডার বৈষম্য, যৌতুক এবং বাল্যবিবাহ অন্যতম।
সারসংক্ষেপ
বাঙালি সমাজে নারী-পুরুষের নিজ নিজ ভ‚মিকা পালনে সামাজিকীকরণের প্রভাব সুস্পষ্ট। এই মতামতের কারণেই
সমাজে নারী পুরুষের ভ‚মিকা পালনে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আর সেটি শুরু হয় পরিবারেই শিশুর
সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। সমাজে নারী-পুরুষ সমান মৌলিক সুবিধা ভোগ করতে পারে না। বেশির ভাগ
ক্ষেত্রেই মেয়েরা বঞ্চনার শিকার হয়। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর বাংলাদেশের মেয়েদের পড়ালেখা থেকে ঝড়ে পড়ার
হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি যা মানুষের স¦াভাবিক সামাজিক জীবনযাপনে বাধার সৃষ্টি
করে। যৌতুক শুধু একটি সমস্যা নয়, বরং আরও অনেক সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে। বাল্য বিবাহ বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা। ১৯৮০ সালের আইনে বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলের বয়সকে ২১ বছরের নীচে এবং মেয়ের বয়সকে ১৮ বছরের নীচে ধরা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে বাল্যবিবাহের প্রবণতা পূর্বের তুলনায় কমলেও অব্যাহত রয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১০.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বাল্যবিবাহ রোধ আইন অনুযায়ী বিয়ের ন্যূনতম বয়স?
(ক) ছেলে ২১ মেয়ে ১৭ (খ) ছেলে ২০ মেয়ে ১৮
(গ) ছেলে ২১ মেয়ে ১৮ (ঘ) ছেলে ২৪ মেয়ে ১৮
২। আসক এর ২০১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী কতজন নারী হত্যাকাÐের শিকার হয়েছেন?
(ক) ১২৬ জন (খ) ২২৬ জন
(গ) ১২৮ জন (ঘ) ১২৫ জন

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]