মুখ্য শব্দ বার্ধক্য সমস্যা, প্রতিকার।
বার্ধক্য সমস্যা সাম্প্রতিককালের বাংলাদেশে একটি প্রকট সামাজিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। এদেশের
নানা রকম সামাজিক সমস্যার মত বার্ধক্য সমস্যাতে অনেক রকম সামাজিক উপাদান জড়িত। বার্ধক্য সমস্যা
স্বাভাবিক জৈবিক ঘটনা যা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য অপরিহার্য যার ফলে ক্রমান্বয়ে মানুষের শারীরিক সক্ষমতা হ্রাস
পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসে।
বার্ধক্য সমস্যা
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটা ক্ষুদ্র অংশ (৬%) প্রবীণ, তবু তাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাটি বেশ উল্লেখযোগ্য (৭২ লক্ষ)
এবং প্রবীণদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশ উঁচু। ১৯১১, ১৯৫১, ১৯৮১ এবং ১৯৯১ সালে দেশে প্রবীণদের সংখ্যা ছিল (৬০
বছর এবং তদূর্ধ্ব) যথাক্রমে ১৩ লক্ষ ৭০ হাজার, ১৮ লক্ষ ৬০ হাজার, ৬০ লক্ষ ৫ হাজার এবং ৪০ লক্ষ ৯০ হাজার।
২০০০, ২০১৫ এবং ২০২৫ সালে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৭২ লক্ষ ৫০ হাজার, ১ কোটি ২০ লক্ষ ৫০ হাজার এবং ১ কোটি
৭৬ লক্ষ ২০ হাজারে দাঁড়াবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জনসংখ্যার এই বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তনের কারণে দেশের
সমাজব্যবস্থা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপর মারাত্মক পরিণতি সৃষ্টি করেছে।
বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে বার্ধক্য সমস্যা প্রকট আাকার ধারণ করেছে। যেমন-
(১) প্রকট দারিদ্র্য: বাংলাদেশে বার্ধক্য সমস্যার একটা বড় কারণ প্রকট দারিদ্র্য। এদেশের অনেক মানুষ তাদের
মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়। দরিদ্রতার কারণে মানুষ মা-বাবা বা পরিবারের বয়স্কদের ভরণপোষণ করতে
সক্ষম নয়। প্রকট দারিদ্র্যের কারণে বার্ধক্য সমস্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(২) সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের ক্রম ক্ষয়িষ্ণুতা: বাংলাদেশের সমাজে সামাজিক এবং ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে
মানুষের অনুভূতি আগের মতো নেই। মানুষ এখন সামাজিক বিষয়াবলির চেয়ে ব্যক্তিগত আনন্দ-উল্লাসের প্রতি
বেশি নজর দেয় বিধায় পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের প্রতি সহানুভূতি হ্রাস পেয়েছে।
(৩) আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন: নগরায়ন এবং শিল্পায়নের প্রভাবে বাংলাদেশে দ্রæত আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন সাধিত
হচ্ছে। ফলে মানুষ নগরকেন্দ্রিক বাসস্থানের দিকে বেশি ঝুকে পড়েছে। তাই পরিবারের বয়স্ক সদস্যদেরকে রেখে
মানুষ শুধু স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নগরে বসবাস করছে। ফলে গ্রামে থেকে যাওয়া প্রবীণ স্বজনদের বিশেষ করে
বাবা-মাকে দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছে না।
(৪) জনসংখ্যাগত পরিবর্তন: জনসংখ্যাগত পরিবর্তন বার্ধক্য সমস্যাকে আরও বেশি প্রকট করছে। জীবনযাত্রার মানের
পরিবর্তনের ফলে মানুষের আয়ু পূর্বের তুলনায় বেড়েছে, তাই সমাজে বয়স্ক মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। আর এই
বাড়তি জনসংখ্যার জন্য তেমন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা না থাকায় বার্ধক্য সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
(৫) পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব: বিশ্বায়নের ফলে পশ্চিমা সংস্কৃতি এদেশের মানুষকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে।
পশ্চিমা সংস্কৃতিতে পরিবার ব্যবস্থা আমাদের মতো কার্যকরী নয়, কিন্তু ঐসব দেশে সমাজের বয়স্ক সদস্যদের
দেখাশোনার জন্য সরকারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনা রয়েছে। আমাদের দেশে বয়স্কদের দেখাশোনার সরকারি
বেসরকারি ব্যবস্থা না থাকার কারণে বার্ধক্য সমস্যা বাড়ছে।
(৬) ঐতিহ্যবাহী যৌথ পরিবার ব্যবস্থার ভাঙ্গন: শিক্ষার প্রসার, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে নারীর ব্যাপক
অংশগ্রহণ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের উদ্ভব, চাকরির বদলি, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা ইত্যাদি কারণে গ্রামীণ যৌথ পরিবার
ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে ভেঙ্গে অনুপরিবারে রূপান্তর হচ্ছে। এসব কারণে পরিবারের লোকজন তাদের বয়স্ক সদস্যদের
ভরণপোষণ বা পাশে রাখার জন্য সুযোগ হারাচ্ছে। তাই বাংলাদেশে বার্ধক্য সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বার্ধক্য সমস্যা প্রতিকারের উপায়
(১) পরিবারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সুদৃঢ় করা: বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের
আয় সীমা বৃদ্ধি করা। ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দারিদ্রের হার কমিয়ে আনা।
(২) সামাজিক এবং নৈতিক শিক্ষার প্রতি জোর দেওয়া: সকল সমাজ এবং সকল ধর্মে তার পিতা-মাতাকে দেখ ভালের
উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। তাই সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টি ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে বাবা-মা
বয়োবৃদ্ধদের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার নানাবিধ সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি করা দরকার।
(৩) সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ: বার্ধক্য সমস্যা সমাধান কল্পে বয়স্ক সদস্যদেরকে পুনর্বাসনের জন্য ব্যাপক
হারে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
(৪) যৌথ পরিবার ব্যবস্থার ঐতিহ্য ধরে রাখা: যৌথ পরিবার ব্যবস্থা বয়স্ক সদস্যদের জন্য আশীর্বাদ। তাই বার্ধক্য
সমস্যা সমাধানের জন্য যৌথ পরিবার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে হবে। যদিও ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার
ঘোষিত জাতীয় বেতন স্কেলে বর্ধিত পরিবারের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বেতন কাঠামো ঠিক করা হয়েছে। একটি
পরিবারের ছয়জন সদস্য অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী, দুটি সন্তান এবং পিতা-মাতা কে মাথায় রেখে বেতন কাঠামো নির্ধারণ
করা হয়েছে। এটি বার্ধক্য সমস্যা সমাধানে একটি ভাল উদ্যোগ।
(৫) সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি জোরদার: বার্ধক্য সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করা
যাতে পরিবার তার বয়স্ক সদস্যদেরকে দেখাশোনা না করলেও কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয়। বাংলাদেশে কিছু
কিছু সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি সরকার ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছে।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বাংলাদেশের বার্ধক্য সমস্যার কারণ এবং প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে জানতে পারলাম।
সামাজিক পরিবর্তনের কারণে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরনও পাল্টেছে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবোধের বিকাশ, শিল্পায়ন,
নগরায়ন ও নানাবিধ কাজের ধরনের কারণে মানুষ আর আগের মতো পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ
করতে পারে না। তাই এই সমস্যা সমাধান কল্পে কার্যকর ও সর্বাত্মক সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
সারসংক্ষেপ
এদেশের নানা রকম সামাজিক সমস্যার মধ্যে বার্ধক্য সমস্যা অন্যতম। বার্ধক্য সমস্যা স্বাভাবিক জৈবিক ঘটনা যা
প্রত্যেকটি মানব দেহের জন্য অপরিহার্য যার ফলে মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে
আসে। জনসংখ্যার এই বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তনের কারণে দেশের সমাজব্যবস্থা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপর
মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনবে। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে বার্ধক্য সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। আবার
বিভিন্নভাবে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১০.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বার্ধক্য সমস্যা বাংলাদেশে কোন ধরনের সমস্যা?
(ক) সামাজিক (খ) অর্থনৈতিক (গ) রাজনৈতিক (ঘ) সাংস্কৃতিক
২। ২০১৫ সালের বাংলাদেশের জাতীয় বেতন কাঠামোতে পরিবারের কয়জন সদস্যের উপর গুরুত দেওয়া হয়েছে?
(ক) ৩ জন (খ) ৪ জন (গ) ৫ জন (ঘ) ৬ জন
<
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত