বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কারণ ও প্রতিকারের উপায় আলোচনা কর

মুখ্য শব্দ বাংলাদেশ, জঙ্গিবাদ, কারণ, প্রতিকার।
জঙ্গিবাদ
বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যাগুলোর মধ্যে জঙ্গিবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও জঙ্গিবাদ ইস্যুটি
গুরুত্বের সংঙ্গে দেখা হয়। এ সমস্যা পরিবার, সমাজ থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। জঙ্গিবাদ হচ্ছে এমন একটি উগ্র
মতবাদ যেখানে সশস্ত্র কিছু মানুষ অন্যের উপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে তৎপর হয়। তারা নিজেদের দর্শন, আদর্শ ও
অভিপ্রায়কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্বিচারে মানুষকে জিম্মি কিংবা হত্যা করে। গণতন্ত্র কিংবা সমাজতন্ত্রের বিপরীতে
জঙ্গিবাদে ধর্মের নামে রাষ্ট্র পরিচালনার আদর্শে বিশ্বাস করা হয়। রাশিয়ার সাথে আফগানিস্তানের যুদ্ধ, ইরাকে মার্কিন
আগ্রাসন, আল-কায়েদার উত্থান, মিশরে ব্রাদারহুড বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের বিস্তারে ভ‚মিকা রেখেছে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ
উত্থানে জামায়াত-শিবির, জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম প্রভৃতিকে দায়ী করা হয়। ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর
সমাবেশে এবং ২০০১ সালে রমনার বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের আত্মপ্রকাশ
ঘটে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সাথে জঙ্গিবাদ এবং
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের যোগসাজস রয়েছে। ২০০৫ সালে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলার ঘটনা সবাইকে
হতবাক করে দেয়। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকার গুলশানে একটি রেস্টুরেন্টে হামলার মাধ্যমে জঙ্গিরা নতুন করে
আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারের পিছনে নানা কারণ জড়িত। কারণগুলো হলো:
(১) সামাজিক কারণ: অনেক সময় দরিদ্রতা, বেকারত্ব, শিক্ষার অভাব, ভুল শিক্ষা, সমাজের প্রতি দায়িত্বহীনতার
অভাব, সামাজিক মূল্যবোধ ইত্যাদির প্রভাবে মানুষ জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে।
(২) রাজনৈতিক কারণ: জঙ্গিবাদের পেছনে রাজনৈতিক কারণও অনেক সময় সমানভাবে দায়ী। কেননা, বিভিন্ন
রাজনৈতিক গোষ্ঠী তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য জঙ্গিদেরকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করে অথবা রাজনৈতিক
প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য নতুন ধরনের জঙ্গি সৃষ্টি করে।
(৩) অর্থনৈতিক কারণ: মানুষের চাহিদা বা জীবনধারণের জন্য সম্পদের অপ্রতুলতা থেকেও জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হয়।
সাধারণত অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের সদস্যদেরকে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো টার্গেট করে। অর্থনৈতিক
অসচ্ছলতার সুযোগ নিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো তরুণ বা যুবকদেরকে তাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নানা ধরনের
আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করে।
(৪) পারিবারিক শিক্ষার অপ্রতুলতা: আধুনিক যুগে অনেক পরিবারের স্বামী-স্ত্রী উভয়েই তাদের কাজের জন্য বাড়ির
বাইরে অবস্থান করেন, সন্তানদের তেমন সময় দেন না। এরকম পরিস্থিতিতে সন্তানের স্বাভাবিক সামাজিকীকরণ
বাধাগ্রস্থ হয় এবং একসময় এসব সন্তান জঙ্গিবাদের মতো অসামাজিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে।
(৫) তথ্য প্রযুক্তির প্রভাব: তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্কের সাথে
স্থানীয় যুবক এমনকি রক্ষণশীল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুভূতিসম্পন্ন মানুষকে সম্পৃক্ত করে।
জঙ্গিবাদ প্রতিকারের উপায়
(১) পারিবারিক অনুশাসন: কঠিন পারিবারিক অনুশাসন মানুষকে যেকোনো ধরনের অসামাজিক কাজ থেকে বিরত
রাখে। তাই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে পারিবারিক অনুশাসনের মাধ্যমে মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য উৎসাহিত
করতে হবে।
(২) বেকারত্ব হ্রাস: অনেক সময় বেকারত্ব থেকে মানুষ জঙ্গিবাদের মত মরণ নেশায় পা বাড়ায়। তাই নতুন নতুন
কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষ অর্থনৈতিক সুরক্ষা দিতে হবে ।
(৩) সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর গুরুত্বারোপ: সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয়
রীতিনীতি মানুষকে সঠিক পথ চলতে সাহায্য করে। তাই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
(৪) পারিবারিক দায়িত্বশীলতা: অনেক সময় দেখা যায় জঙ্গিরা আত্মঘাতী হয় এবং তাদের পরিবারের প্রতি কোনো
পিছুটান থাকে না। পিছুটান না থাকার কারণে তারা বিভিন্ন অসামাজিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। তাই
পারিবারিক দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পেলে মানুষ জঙ্গিবাদ থেকে সরে আসবে।
(৫) রাষ্ট্রের কঠোর নজরদারি: রাষ্ট্রের কঠোর নজরদারির মাধ্যমে উগ্র এবং ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
(৬) জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রচারণা: বিভিন্ন কর্মসূচি ও গণমাধ্যম ব্যবহার করে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ
বিরোধী জনমত গড়ে তোলা যায়। পরিবার থেকে রাষ্ট্র- প্রতিটি স্তর এবং ক্ষেত্রে জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণা
অব্যাহত রাখতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। পাশাপাশি যারা ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত
হয়ে পড়েছে তাদেরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে সমাজের মূলধারায় পুনর্বাসন করতে হবে।
এছাড়াও আইনের যথাযথ প্রয়োগ, সার্বক্ষণিক মনিটরিং, সচেতনতা বৃদ্ধি, ইতিবাচক মনোভাব তৈরি, সুশিক্ষা, আইনের শাসন ইত্যাদির মাধ্যমে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সারসংক্ষেপ
জঙ্গিবাদ বলতে অস্ত্রধারী গোষ্ঠীকে বুঝায়। একসময় জঙ্গি বলতে এমন একশ্রেণির জনগোষ্ঠীকে বুঝানো হতো যারা
তাদের স্বাধীনতা বা অধিকার আদায়ের জন্য যুদ্ধ করতো। বিভিন্ন কারণে জঙ্গিবাদ হয়ে থাকে। যেমন-সামাজিক কারণ,
রাজনৈতিক কারণ, অর্থনৈতিক কারণ, ধর্মীয় কারণ, পারিবারিক শিক্ষার অপ্রতুলতা, তথ্য প্রযুক্তির প্রভাব ইত্যাদি।
বিভিন্নভাবে জঙ্গিবাদ প্রতিকার করা সম্ভব। যেমন-পারিবারিক অনুশাসন, বেকারত্ব হ্রাস, সামাজিক এবং মূল্যবোধের উপর
গুরুত্বারোপ, পারিবারিক দায়িত্বশীলতা ইত্যাদি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১০.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কারণ?
ক) সামাজিক খ) অর্থনৈতিক
গ) রাজনৈতিক ঘ) উপরের সবগুলো
২। দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল কবে?
ক) ২০০৩ সালে খ) ২০০৫ সালে
গ) ২০০৬ সালে ঘ) ২০০৭ সালে
উত্তরমালা :
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.১ ঃ ১। ঘ ২। ক ৩। ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.২ ঃ ১। গ ২। ঘ ৩। ক ৪। খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.৩ ঃ ১। গ ২। ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.৪ ঃ ১। ক ২। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১০.৫ ঃ ১। ঘ ২। খ
চ‚ড়ান্ত মূল্যায়ন ঃ ১। খ ২। ক ৩। গ ৪। ক ৫। ঘ
ক. বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (গঈছ)
১। সাম্প্রতিককালের অন্যতম সামাজিক সমস্যা হচ্ছেÑ
(ক) বাল্যবিবাহ (খ) সাইবার অপরাধ
(গ) দারিদ্র্য (ঘ) দুর্নীতি
২। বাংলাদেশে যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইন পাস হয় কত সালে?
(ক) ১৯৮০ সালে (খ) ১৯৯০ সালে
(গ) ২০০০ সালে (ঘ) ২০১০ সালে
খ. বহুপদি সমাপ্তিসূচক বহুনির্বচনী প্রশ্ন
৩। বাংলাদেশে বার্ধক্য সমস্যার মূলে রয়েছেÑ
(র) দারিদ্য
(রর) গড়আয়ু বৃদ্ধি
(ররর) আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন
সঠিক উত্তর কোনটি?
(ক) র ও রর (খ) রর ও ররর (গ) র ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
গ. নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৪ ও ৫ নং প্রশ্নের উত্তর দিন।
দেশে পর্যাপ্ত আইন থাকলেও প্রভাবশালীদের ক্ষমতা, রাজনৈতিক প্রভাব, আইনের ফাঁক-ফোকর, আইনের অপপ্রয়োগ,
সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, ব্যক্তিগত স্বার্থ ইত্যাদি কারণে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নের মাত্রা বেড়েই চলছে।
৪। উদ্দীপকে কোন সমস্যার কথা বলা হয়েছে?
(ক) নারীর সামাজিক নিরাপত্তার অভাব (খ) দারিদ্র্য
(গ) দুর্নীতি (ঘ) বাল্যবিবাহ
৫। উদ্দীপকে সমস্যাকে কিভাবে প্রতিহত করা যায়?
(ক) আইনের কার্যকর প্রয়োগ (খ) নারীর ক্ষমতায়ন
(গ) সামাজিক প্রতিরোধ (ঘ) সবগুলোই সঠিক
ঘ) সৃজনশীল (কাঠামোবদ্ধ) প্রশ্ন:
উদ্দীপকটি পড়–ন এব নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন।
সাামজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক সমস্যারও পরিবর্তন হয়। আগে বাংলাদেশের প্রধান সামাজিক সমস্যাগুলোর
মধ্যে ছিল বেকার সমস্যা, জনসংখ্যা সমস্যা, যৌতুক, নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, মাদকাসক্তি ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে
নারীর সামাজিক নিরাপত্তাজনিত সমস্যা, যৌন নিপীড়ন, সাইবার অপরাধ, জেন্ডার বৈষম্য, যৌতুক ও বাল্যবিবাহ, বার্ধক্য
সমস্যা, জঙ্গীবাদ গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত।
১) বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের ৫টি সামাজিক সমস্যার নাম লিখুন ১
২) নারীর সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার ক্ষেত্রগুলো কি কি? ২
৩) বার্ধক্য সমস্যা প্রতিকারের উপায় বর্ণনা করুন। ৩
৪) বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ দমনে ১০ দফা সুপারিশ ব্যক্ত করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]