সমাজবিজ্ঞানীদের অবদান বর্ণনা করতে পারবে

মুখ্য শব্দ অগ্রপথিক সমাজবিজ্ঞানী, সমাজতাত্তি¡ক মতবাদ, সমাজতাত্তি¡ক অবদান।
সমাজবিজ্ঞান এমন একটি বিজ্ঞান যা সামাজিক বিষয়ের সাধারণ অথবা বিশেষভাবে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির
সম্পর্কের বিজ্ঞান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সমাজবিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে অধ্যয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন
সময়ে সমাজবিজ্ঞানীগণ অবদান রেখেছেন। তাঁদের সমাজতাত্তি¡ক চিন্তা ও দর্শন সমাজবিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে।
সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে যাঁদের অবদান সবেচেয়ে বেশি তাঁদের মধ্যে ইবনে খালদুন, অগাস্ট কোঁৎ, হার্বার্ট
স্পেন্সার, এমিল ডুর্খেইম, কার্ল মার্কস, ম্যাক্স ওয়েবার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইবনে খালদুন সমাজের সঠিক ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে সমসাময়িক সমাজের সমাজ সংস্কৃতি রীতিনীতি সম্পর্কে জানার
প্রয়োজন অনুভব করেন। এ জন্য তিনি সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কিত পাঠের প্রতি গুরুত্ব দেন। সমাজ সম্পর্কিত গ্রন্থ না পেয়ে
নিজেই সমাজবিজ্ঞান রচনায় মনোযোগী হন যা সংস্কৃতির বিজ্ঞানের রূপ পরিগ্রহ করে। রাষ্ট্রের উত্থান পতনের সাথে
সামাজিক সংহতি কিভাবে সম্পর্কিত তা আসাবিয়াহ প্রত্যয় দ্বারা প্রকাশ করেন। ‘আল-মুকাদ্দিমা’ তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ।
সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন অগাষ্ট কোঁৎ। তিনি সমাজকে নিয়ে নতুন একটি বিজ্ঞানের
প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন যা সমাজবিজ্ঞান বলে পরিচিত। তিনি মানব বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের তিনটি স্তরের কথা বলেন যা
দ্বারা সমাজের তিনটি বিবর্তন ধারা প্রকাশ পায়। দৃষ্টবাদে যা কিছু সত্য, বাস্তব, পরীক্ষাযোগ্য তার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।
বিজ্ঞানের সোপানক্রমে সমাজবিজ্ঞানকে সবার উপরে স্থান দিয়েছেন কারণ সমাজবিজ্ঞান একটি সমন্বিত বিজ্ঞান।
সমাজবিজ্ঞানী হার্বার্ট স্পেন্সার সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়নে পদার্থবিদ্যা এবং জীববিদ্যার সূত্র প্রয়োগের কথা বলেছেন। তাঁর মতে
জীব জগতে যেমন বিবর্তন হয় তেমনি সমাজও বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সহজ সরল অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে জটিল অবস্থায়
উপনীত হয়েছে। জৈবিক সাদৃশ্যবাদে সমাজকে জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, জীবদেহে যেমন
বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কর্মক্ষম থেকে সচল থাকে তেমনি সমাজের বিভিন্ন দল, প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা পারস্পরিক কর্মকাÐ ও
মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজকে সচল রেখেছে।
এমিল ডুর্খেইম সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক ঘটনার বিজ্ঞান বলেছেন। সামাজিক ঘটনা বলতে তিনি কোনো জনগোষ্ঠীর
সমষ্টিগত চিন্তা-চেতনা, প্রবণতা ও রীতি-নীতি প্রভৃতিকে বুঝিয়েছেন। সামাজিক ঘটনা সমাজের যৌথ প্রতিরূপের মাঝেই
নিহিত। আত্মহত্যা বিষয়ক আলোচনায় তিনি মনস্তাত্তি¡ক, ভৌগোলিক প্রভৃতি কারণকে নাকচ করে সামাজিক কারণসমূহের
উপর গুরুত্ব প্রদান করেছেন। সামাজিক বন্ধনের মূলসূত্র আবিষ্কারের লক্ষ্যে তিনি সমাজে শ্রমবিভাজনের গুরুত্ব সম্পর্কে
আলোচনা করেন। ডুর্খেইমের মতে, ধর্ম কেবল অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাসই নয় বরং এর সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে। ধর্ম
মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং সামাজিক শৃঙ্খলায় ভ‚মিকা রাখে।
কার্ল মার্কস বস্তুবাদী সমাজচিন্তাবিদ হিসেবে পরিচিত। ঐতিহাসিক বস্তুবাদে তিনি সমাজ তথা ইতিহাসকে দ্বা›িদ্বক পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করেছেন। উৎপাদন পদ্ধতিকে সমাজের মৌল কাঠামোর (Basic Structure সঙ্গে তুলনা করেছেন যা
উপরিকাঠামোকে Super Structure প্রভাবিত করে। সমাজের চালিকা শক্তি হিসেবে উৎপাদন পদ্ধতির গুরুত্ব আলোচনা
করেছেন। তাঁর মতে, মানব সমাজের ইতিহাস হচ্ছে শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস। বিভিন্ন সমাজে শ্রেণি সংঘাত এবং
সংগ্রামের কারণেই নতুন সমাজ সৃষ্টি হয়। শ্রেণি সম্পর্কিত আলোচনায় তিনি শ্রেণি সংগ্রামের কারণ এবং এর নানাবিধ
বিষয় তুলে ধরেছেন। পুঁজিবাদী সমাজে শ্রমিক শ্রেণি কিভাবে তাদের উৎপাদিত পণ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঐ সমাজেই
বসবাস করে তা তার শ্রমের বিচ্ছিন্নতাবোধ সম্পর্কিত ধারণার মধ্যে পাওয়া যায়। শ্রমিক শ্রেণি তাঁর শ্রমের মাধ্যমে সৃষ্ট
উদ্বৃত্ত মূল্য কিভাবে পুঁজিপতি শ্রেণি শোষণ করে তা উদ্ধৃত্ত মূল্য তত্তে¡ আলোচনা করেছেন।
সমাজবিজ্ঞানের নিজস্ব পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন ম্যাক্স ওয়েবার। তিনি আদর্শ নমুনার মতবাদে বলেছেন, কোনো
বিষয়বস্তু একটি মানসিক চিত্র যার মাধ্যমে ঐ বিষয়বস্তুর বাস্তব দিকগুলো মূর্তমান হয়ে ওঠে। আমলাতান্ত্রিক ধারণায় তিনি
একটি আদর্শ ধরনের আমলাতন্ত্রের কথা বলেছেন যা সামাজিক উন্নয়ন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। তাঁর মতে, ক্ষমতা
হলো অন্যের মতামত তথা সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার সক্ষমতা। যখন তার বৈধতা থাকে তখন তাকে কর্তৃত্ব বলে।
পুজিঁবাদ সম্পর্কিত আলোচনায় ম্যাক্স ওয়েবার কার্ল মার্কসের বিপরীত ধারণা প্রদান করেন। মার্কস যেখানে বলেছেন, সমাজের মৌল কাঠামো Basic Structure উপরি কাঠামোকে Super Structureপ্রভাবিত করে ম্যাক্স ওয়েবার সেখানে
বলেছেন, কেবলমাত্র মৌল কাঠামোই নয় বরং কখনও কখনও উপরিকাঠামোও মৌল কাঠামোকে প্রভাবিত করে। এ ক্ষেত্রে
তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মীয় নীতিমালা পুজিঁবাদ বিকাশে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞানীদের উপর্যুক্ত চিন্তা, অনুসন্ধান, গবেষণা, তত্ত¡ ও মতবাদ সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও
বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে।
সারসংক্ষেপ
সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোঁত ১৮৩৯ সালে সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু করলেও এর বিকাশে অন্যান্য
সমাজতাত্তি¡কের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের মধ্যে ইবনে খালদুন, হার্বার্ট স্পেন্সার, এমিল ডুর্খেইম, কার্ল মার্কস,
ম্যাক্স ওয়েবার উল্লেখযোগ্য। সমাজকে নিজস্ব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা তাঁদের রচনার মধ্য
দিয়েই সবেচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। ফলে সমাজবিজ্ঞান একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। কোন সমাজবিজ্ঞানী সমাজকে জীবদেহের সাথে তুলনা করেছেন?
(ক) ম্যাক্স ওয়েবার (খ) হার্বার্ট স্পেন্সার
(গ) কার্ল মার্কস (ঘ) এমিল ডুর্খেইম
২। ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ধারণা কে প্রদান করেন?
(ক) ইবনে খালদুন (খ) ম্যাক্স ওয়েবার
(গ) কার্ল মার্কস (ঘ) অগাস্ট কোঁত
৩। আদর্শ নমুনা হলো-
(ক) মানুষের আচরণ (খ) পরিসংখ্যানিক গড়
(গ) সামাজিক সমস্যা (ঘ) একটি মানসিক চিত্র

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]