হার্বার্ট স্পেন্সারের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বল স্পেন্সারের বিবর্তনবাদ আলোচনা কর

মুখ্য শব্দ হার্বার্ট স্পেন্সার, বিবর্তনবাদ, সরল সমাজ, জটিল সমাজ, জৈবিক সাদৃশ্যবাদ।
জীবন ও কর্ম
আঠারো শতকের নতুন চিন্তাবিদগণ সমাজ অধ্যয়নের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণের উদ্ভব ঘটান। বিবর্তনবাদী
মতবাদের অনুসারীরা সমাজকে বিশ্লেষণ করেন জীব বিবর্তনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যার মূল প্রবক্তা হলেন হার্বার্ট স্পেন্সার।
তিনি বিজ্ঞানের দুটি ভিন্নতর শাখা যথা জীববিদ্যার ও পদার্থবিদ্যার সূত্র গ্রহণ করে সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তা ব্যবহার
করেন। সমাজ যে একটি ক্রমবিকাশমান বিষয় তা প্রমাণে সক্ষম হন। সমাজবিজ্ঞানে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ প্রয়োগের বিষয়টিকে আরো মজবুত করেন।
হার্বার্ট স্পেন্সার ১৮২০ সালে ইংল্যান্ডের ডার্বি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা
গ্রহণ করতে পারেননি। তবে তিনি তাঁর শিক্ষক পিতার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি রেলওয়ের চাকুরী
শুরু করেন। ১৮৪১ সাথে নতুন রেলওয়ে স্থাপনের সময় কিছু ফসিলের (জীবদেহের দেহাবশেষ) সন্ধান পান যা তাকে
ভ‚তত্তে¡র প্রতি আগ্রহী করে তোলে। পরবর্তীতে তিনি মানব জাতির উদ্ভব ও বিবর্তন সম্পর্কে আগ্রহী হন। তিনি সমাজ
বিবর্তনের ক্ষেত্রেও ঐতিহাসিক প্রক্রিয়াটি অনুধাবন করেন। স্পেন্সার বিশ্বজনীন বিবর্তনের তত্তে¡র মাধ্যমে () সমাজ বিবর্তনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া উপস্থাপন করেন। হার্বার্ট স্পেন্সারের উল্লেযোগ্য রচনাবলি হলো হার্বার্ট স্পেন্সার ১৯০৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
স্পেন্সারের বিবর্তনবাদ
সাধারণভাবে বিবর্তন হলো সহজসরল অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে জটিল অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়া। এখানে কোনো প্রকার
শক্তি প্রয়োগ করতে হয় না। প্রকৃতিগতভাবেই এই পরিবর্তন ঘটে। কোসার (ঈড়ংবৎ) এর মতে, বিবর্তন হচ্ছে
তুলনামূলকভাবে অনির্দিষ্ট হতে নির্দিষ্ট, অসংগতিপূর্ণ হতে সংগতিপূর্ণ এবং স্বাদশ্যপূর্ণ হতে বৈসাদৃশ্যে রূপান্তর). স্পেন্সার সমাজ আলোচনায় শুধু বৈজ্ঞানিক বা ধর্মীয় চিন্তাধারার
আওতায় আবদ্ধ থাকাকে সীমাবদ্ধতা বলেছেন। তাঁর ধারণা বিশ্বব্রহ্মান্ডে এমন অনেক ঘটনা বা বিষয় আছে যা সীমাবদ্ধ
জ্ঞান দ্বারা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। এ জন্য সমগ্র প্রপঞ্চকে দুই ভাগে ভাগ করেন। তা হলো জ্ঞেয় (কহড়হি) এবং অজ্ঞেয়
(টহশহড়হি)। বিশ্বপ্রভু সম্পর্কিত রহস্যের পাশাপাশি তার মনে বস্তুর উদ্ভব, অবস্থান সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগে। সকল
প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে তিনি ক্রমেই অজ্ঞেয় দর্শনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। এক সময় তিনি ব্যস্ত হন সমাজের উদ্ভব,
বিকাশ ও বিনাসের প্রক্রিয়া অনুসন্ধানে। সকল প্রাণি সমসাদৃশ্যমূলক অবস্থা থেকে বৈসাদৃশ্যের দিকে অগ্রসরমান হয়। বায়ারের এই তত্ত¡ স্পেনসারের চিন্তার জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। তিনি বায়ারের এই তত্ত¡কে সমাজ বিবর্তনের আলোচনায় নিবিষ্ট হন।
হার্বার্ট স্পেন্সার সামাজিক বিবর্তনতত্ত¡ অতিজৈব () ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি করেন। তাঁর মতে
সমাজ অজৈব থেকে অতিজৈব এ পৌঁছেছে এবং এক একটি স্তরে লক্ষ লক্ষ বছর
কেটেছে। অজৈব স্তর হলো যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব নেই। জৈব (ঙৎমধহরপ) স্তর হলো যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব
আছে। আর অধিজৈব (ঝঁঢ়বৎ ঙৎমধহরপ) স্তর হল বুদ্ধিমান প্রাণি মানুষের সৃষ্ট সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নত রূপ। হার্বার্ট
স্পেন্সার বিশ্বজনীন বিবর্তনের ধারাকে প্রবিষ্ট করেছেন সমাজ বিবর্তনে গতিরেখা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে। তাঁর মতে বিবর্তন
প্রক্রিয়া সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রে তার নির্দিষ্ট কতকগুলো ধাপ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, পরিধির বিস্তার
সংঘবদ্ধতা , সুনির্দিষ্টতা () এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতা হার্বার্ট
স্পেন্সার সামাজিক বিবর্তনের ক্ষেত্রে দুইটি পর্যায় লক্ষ করেন। তা হলো (ক) সহজ-সরল সমাজ থেকে মিশ্র সমাজে গমন
এবং (খ) যোদ্ধা সমাজ (গরষরঃধহঃ ঝড়পরবঃু) থেকে শিল্পসমাজে (ওহফঁংঃৎরধষ ঝড়পরবঃু) পবির্তন। সরল সমাজ থেকে মিশ্র
সমাজে গমন (ঞযব গড়াবসবহঃ ভৎড়স ংরসঢ়ষব ঃড় পড়সঢ়ড়ঁহফ) অনুধাবনের জন্য তিনি চার ধরনের সমাজের কথা
বলেছেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, কীভাবে সমাজ সরল অবস্থা থেকে জটিল অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। সমাজগুলো হলো:
(১) সরল সমাজ
(২) জটিল বা মিশ্র সমাজ
(৩) দ্বিগুণ জটিল সমাজ এবং
(৪) ত্রিগুণ জটিল সমাজ ।
(১) সরল সমাজ: এ ধরনের সমাজ ক্ষুদ্র, যাযাবর এবং এখানে স্থায়ী সম্পর্কের অভাব বিদ্যমান। তাদের মধ্যে খুব সামান্য
ভিন্নতা, বিশেষীকরণ এবং পূর্ণতা ছিল। এস্কিমো, ফুজিয়ান, পাপুয়ানিউগিনির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এধরনের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
(২) মিশ্র সমাজ: এ ধরনের সমাজ কৃষি নির্ভর এবং মোটামুটি স্থায়ী। অধিকাংশই পশুচারণের উপর নির্ভরশীল। এখানে
বিভিন্ন শ্রেণি দেখা যায় তবে তা পুরোহিত প্রধান, শিল্পকাঠামোর বিকাশ ঘটে যা উন্নত শ্রমবিভাজন নির্দেশ করে। উদাহরণ
হিসেবে পঞ্চম শতকের টিউটনিক জনগণ ), হোমারিক গ্রিক জনগোষ্ঠী উল্লেখযোগ্য।
(৩) দ্বিগুণ মিশ্রসমাজ: এ ধরনের সমাজ সম্পূর্ণরূপে স্থায়ী। বৃহৎ ও পরিপূর্ণ এ সমাজে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক কাঠামো,
কমবেশি জাতি-প্রথা, জটিল শ্রমবিভাজন এবং সর্বোপরি জ্ঞান ও শিল্পের বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণ হিসেবে ত্রয়োদশ
শতকের ফ্রান্স, একাদশ শতকের ইংল্যান্ড- এর সমাজ এরূপ বৈশিষ্ট ধারণ করে।
(৪) ত্রিগুণ মিশ্র সমাজ: এ ধরনের সমাজ আধুনিক সভ্য জাতির পরিচায়ক যেখানে অতিমাত্রায় বিশেষীকরণ
(ঝঢ়বপরধষরুধঃরড়হ) শ্রমবিভাজন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়।
হার্বার্ট স্পেন্সার উল্লিখিত সমাজগুলোর মধ্য দিয়ে সমাজের পরিধির বিস্তার, জটিলতা, জটিল শ্রমবিভাজন, জনসংখ্যার বৃদ্ধি,
সংস্কৃতি এবং সাধারণ সাংস্কৃতিক জটিলতার বিষয়কেই স্পষ্ট করেছেন যার দ্বারা বিবর্তন প্রক্রিয়ার সহজ সরল সমাজ থেকে
ক্রমান্বয়ে জটিল সমাজের রূপ পরিগ্রহ করে।
স্পেন্সার যোদ্ধা সমাজ থেকে শিল্প সমাজে ) পরিবর্তনে উভয় সমাজের বৈশিষ্ট্য
উল্লেখ করেন। যোদ্ধা সমাজে প্রাথমিক পর্যায়ে যুদ্ধ ছিল প্রকৃতির বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে যুদ্ধ হয় গোষ্ঠী বা সমাজের বিরুদ্ধে।
খাদ্য ও আবাস্থলের প্রয়োজনীয়তা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা সংগ্রামকে অনিবার্য করে তুলেছিল। তাই বলা হয়, সমাজ
বিকাশের প্রথম পর্যায় ছিল মূলত যোদ্ধা সমাজ। সরল এ যোদ্ধা সমাজ থেকেই ক্রমান্বয়ে শিল্প সমাজের উদ্ভব হয়। মূলত
সরল সমাজ হতে জটিল সমাজে উত্তরণ হচ্ছে সমসত্ত¡ থেকে অসমসত্তে¡ রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া। হার্বার্ট স্পেন্সার মনে
করেন, সামাজিক বিবর্তনে বস্তু, গতি ও শক্তি এই তিনটি সূত্রের সমন্বয়ে সৃষ্ট অনুসিদ্ধান্তসমূহের উপস্থিতি রয়েছে।
জৈবিক সাদৃশ্যবাদ
হার্বার্ট স্পেন্সার সমাজের বিবর্তনকে জীব জগতের বিবর্তনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি মানব সমাজকে একটি সচেতন
সত্ত¡া রূপে বিবেচনা করছেন। তাঁর মতে উদ্ভব, বিকাশ, পরিপূর্ণতা এবং কর্মপদ্ধতি সকল ক্ষেত্রেই জীবদেহের সঙ্গে সমাজের মিল রয়েছে। জীবদেহ ও সমাজের মধ্যকার সাদৃশ্য বিশ্লেষণই হলো তাঁর ‘জৈবিক সাদৃশ্যবাদ’। স্পেনসারের মতে জীবজগতের উন্মেষ ঘটে এককোষী অ্যামিবা হতে। বিবর্তনের শেষ পর্যায়ে এসে তা রূপ নেয় বহুকোষী জীব হিসেবে।
অনুরূপভাবে উদ্ভরের সময় সমাজ ছিল সরল ও অনির্দিষ্ট। পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সরল যোদ্ধা সমাজ জটিল শিল্প সমাজে
পরিণত হয়েছে। স্পেন্সার জীবদেহ ও সমাজের মধ্যে যে সব সাদৃশ্য লক্ষ করেছেন সেগুলো হচ্ছে:
(১) অজৈব সত্ত¡া থেকে পৃথক: জীবদেহ ও সমাজ উভয়ই অজৈব সত্ত¡া হতে পৃথক;
(২) কাঠামোগত জটিলতা: সমাজ ও জীবদেহের আকারগত সম্প্রসারণের সাথে সাথে তাদের কাঠামোগত জটিলতার বৃদ্ধি পায়;
(৩) কাঠামোগত পৃথকীকরণ: সমাজ ও জীবদেহের ক্ষেত্রে কাঠামোগত পৃথকীকরণ তাদের ক্রিয়াগত পার্থক্য তৈরি করে;
(৪) ধ্বংস ও টিকে থাকা: সমাজ ও জীবদেহ উভয়েরই ধ্বংস অনিবার্য, কিন্তু তাদের এককসমূহ টিকে থাকে।
হার্বার্ট স্পেনসারের মতে জীবদেহ ও সমাজ উভয়ই একটি বিশেষ ব্যবস্থায় (ঝুংঃবস) পরিচালিত হয়। এ ব্যবস্থায় সমাজ এবং জীবদেহের নিজস্ব কিছু উপাদান সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করে। বিষয়টিকে নি¤েœ ছকের মাধ্যমে দেখানো হল: ব্যবস্থা জীবদেহ সমাজ
নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা মস্তিস্ক আইন, ধর্ম, বিচার বিভাগ, পুলিশ প্রভৃতি পরিপোষণ ও পুষ্টিসাধনমূলক ব্যবস্থা
হরমোন, পৌষ্টিকনালী, পৌষ্টিক গ্রন্থি উৎপাদন ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা প্রভৃতি
বিতরণমূলক ব্যবস্থা হৃদপিন্ড অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, শ্রমবিভাগ, ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
সারসংক্ষেপ
হার্বার্ট স্পেন্সার জীববিদ্যা ও পদার্থবিদ্যার সূত্র প্রয়োগ করে সমাজ বিবর্তনবাদ তত্তে¡র ধারণা দেন। সমাজকে বৈজ্ঞানিক
উপায়ে অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। জৈবিক সাদৃশ্যবাদ তত্তে¡র মাধ্যমে কাঠামোগত ক্রিয়াবাদের ধারণা
প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। তিনি পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সমাজবন্ধন ও ঐক্যের মূল সূত্র বলে উল্লেখ করেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। ‘ঝঁৎারাধষ ড়ভ ঃযব ভরঃঃবংঃ’ ধারণাটি কে প্রদান করেন ?
(ক) স্পেন্সার (খ) ডারউইন
(গ) ওয়েবার (ঘ) নিউটন
২। বিবর্তন বলতে কী বুঝায়?
(ক) সহজ-সরল অবস্থা থেকে জটিল অবস্থায় রূপান্তর
(খ) জটিল অবস্থা থেকে সহজ-সরল অবস্থায় রূপান্তর
(গ) ধীর গতি থেকে দ্রæত গতি
(ঘ) দ্রæত গতি থেকে ধীর গতি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]