এমিল ডুর্খেইমের জীবন ও কর্ম ডুর্খেইমের আত্মহত্যা তত্ত¡ সমাজে শ্রমবিভাজনের প্রয়োজনীয়তা ডুর্খেইমের ধর্ম বিষয়ক তত্ত¡

মুখ্য শব্দ এমিল ডুর্খেইম, সামাজিক ঘটনা, আত্মহত্যা, শ্রমবিভাজন, ধর্ম।
জীবন ও কর্ম
সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠায় যে কয়েকজন মুষ্টিমেয় সমাজবিজ্ঞানী গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছেন তাঁদের মধ্যে
অন্যতম হলো এমিল ডুর্খেইম। তিনিই প্রথম সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা, পর্যালোচনা ও আলোচনার সূত্রপাত ঘটান
যার মাধ্যমে সমাজ সম্পর্কে পঠন-পাঠনে অগ্রহী হন। হার্বার্ট স্পেন্সার ব্যক্তিকে সমাজ বিশ্লেষণের একক হিসেবে গুরুত্ব
দিয়েছেন। কিন্তু ডুর্খেইম সমাজ-সংগঠনকেই একক ধরে সমাজ বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর মতে ব্যক্তির মাধ্যমে সমাজ গঠিত হলেও সমাজই ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত করে।
ডুর্খেইম ১৮৫৮ সালে ফ্রান্সের লোরিন প্রদেশে এক ধর্মযাজক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্যারিসের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
দর্শন, সাহিত্যে শিক্ষা লাভের পর তিনি সমাজবিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। তিনি তাঁর সমাজ সম্পর্কিত ভাবনা-চিন্তা
বিভিন্ন গ্রন্থে মাধ্যমে প্রকাশ করেন। ডুর্খেইম রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে
উল্লেখযোগ্য। ১৯০২ সালে তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সামাজিক ঘটনা, আত্মহত্যা,
শ্রমবিভাজন, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত¡ প্রদান করেছেন। ১৯১৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সামাজিক ঘটনা
ডুর্খেইমের সমাজবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয় হলো সামাজিক ঘটনা। তাঁর মতে ‘সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক
ঘটনাসমূহের বিজ্ঞান’। সমাজবিজ্ঞানের কাজ হলো সামাজিক ঘটনাসমূহ অধ্যয়ন করা। সামাজিক ঘটনা বলতে কোনো
জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা, প্রবণতা, রীতিনীতি প্রভৃতিকে বুঝায়। তবে সমাজে যা কিছু আছে তার সবই সামাজিক ঘটনা
নয়। এ জন্য তিনি দুটি বিষয় গুরুতপূর্ণ। প্রথমত: যাকে সামাজিক ঘটনা বলা হবে তা ব্যক্তির উপর চাপ প্রয়োগ করতে
পারবে। দ্বিতীয়ত: যাকে ঘটনা বলা হবে তা সমাজ বা গোষ্ঠীতে বিস্তার লাভ করতে পারবে। সামাজিক ঘটনা সম্পর্ক
ধনাতœক এবং ঋণাত্বক () ধারণা আছে। তবে ঋণাত্বক ধারণা সামাজিক ঘটনা নয়। যেমন কারও
ব্যক্তিগত ঘটনা সামাজিক ঘটনা নয়। কারণ, তা অন্যের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে না এবং সমাজই এর বিস্তৃতিও ঘটে না। আবার অনুকরণ বা ফ্যাশন সামাজিক ঘটনা নয়। কারণ এগুলোর জন্য অন্যকে বাধ্য করা যায় না। তবে তিনি
বলেছেন ধনাত্বক ধারণা সামাজিক ঘটনার পর্যায়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে তিনি সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে সামাজিক ঘটনা
বলেছেন। যেমন- পরীক্ষার হল, শ্রেণিকক্ষ এগুলোর নিয়ম কানুন না পালন করলে তাকে শাস্তি পেতে হয় যা অন্যের উপর
চাপ প্রয়োগ করে। তদুপরি এগুলো পালন করা প্রয়োজন তা সমাজের অপরাপর সবাই জানতে ও পালন করতে আগ্রহী হয়
যা বিস্তৃতি ঘটায়। ডুর্খেইমের মতে সমাজবিজ্ঞানের বিশ্লেষণ ব্যক্তি থেকে নয় গোষ্ঠী থেকে শুরু করতে হবে। কারণ গোষ্ঠী
ব্যক্তির আগে। ব্যক্তি যে ব্যক্তি তা গোষ্ঠীরই সৃষ্টি যা শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই। তিনি বলেন সামাজিক ঘটনা
অবশ্যই বাহির থেকে অধ্যয়ন করতে হবে। তিনি সামাজিক ঘটনাকে প্রকৃত বস্তু হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। তাঁর মতে,
সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়নে সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে বস্তু হিসেবে দেখতে হবে। সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সুনির্দিষ্ট হতে হবে।
কোনো অস্পষ্ট বিষয় সমাজবিজ্ঞানে অধ্যয়ন করা যাবে না। বিষয়বস্তু পর্যবেক্ষণযোগ্য হতে হবে। এজন্যই সমাজবিজ্ঞানের ভিত্তি রচনায় তাঁর অবদান অনেকের চেয়ে বেশি।
আত্মহত্যা
এমিল ডুর্খেইমের মতে আত্মহত্যা একটি সামাজিক ঘটনা। তিনি সামাজিক সংহতি এবং সামাজিক সচেতনতার সাথে
আত্মহত্যা সম্পর্ক নিরূপণ করেছেন। অভিজ্ঞতাভিত্তিক ও পরিসংখ্যানগত পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি আত্মহত্যা সম্পর্কে
বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি তাঁর ঝঁরপরফব গ্রন্থে আত্মহত্যার জৈবিক, মনস্তাত্তি¡ক এবং ভৌগোলিক কারণসমূহকে যৌক্তিক
বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করে সামাজিক কারণসমূহকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন। তিনি আত্মহত্যাকে সামাজিক
সংহতির সাথে সম্পর্কিত করেন। তিনি মূলত: অন্যের যুক্তি খন্ডন করেন তারপর আলোচ্য বিষয়ে নিজের যুক্তি প্রতিষ্ঠা
করেন। তিনি আত্মহত্যাকে শ্রমবিভাজনের নেতিবাচক দিক হিসেবে ব্যাখ্যা করেন যা সামাজিক সংহতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
আত্মহত্যা প্রসঙ্গে এ্যারোন বলেন, আত্মহত্যা হলো আত্মহত্যাকারী কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইতিবাচক বা নেতিবাচ ঘটনা যা মৃত্যু ঘটায়। তাই বলা যায়
আত্মহনন করা তথা নিজের জীবন নিজের দ্বারা নিঃশেষ হওয়া হলো আত্মহত্যা। আত্মহত্যা প্রসঙ্গে ডুর্খেইম বলেন, যারা
সমাজের সাথে অতিমাত্রায় সম্পৃক্ত তারা আত্মহত্যা করে। আবার যারা সমাজ থেকে অতিমাত্রায় বিচ্ছিন্ন তারাও আত্মহত্যা
করে। একারণে বিভিন্ন ধরনের আত্মহত্যার ধারণা তিনি দেন। তিনি প্রধানত তিন ধরনের আত্মহত্যার উল্লেখ করেছেন।
এগুলো হল:
(১) আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা
(২) পরার্থপর আত্মহত্যা ) এবং
(৩) নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা ।
(১) আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা: সমাজ বা গোষ্ঠীর সঙ্গে সংহতির অভাব দেখা দিলে এ ধরণের আত্মহত্যা ঘটে। সমাজ থেকে
ব্যক্তি যখন নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করে তখন এ ধরনের আত্মহত্যা ঘটে। সচরাচর যে সকল সমাজে সামাজিক সংহতি কম
থাকে সে সকল সমাজে আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি হয়। ডুর্খেইম পরিসংখ্যানের মাধ্যমে দেখান যে,
বিবাহিতদের চেয়ে অবিবাহিতদের মধ্যে, মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে, গ্রামবাসীদের চেয়ে নগরবাসীদের মধ্যে এ
ধরনের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।
(২) পরার্থপর আত্মহত্যা: আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যার বিপরীত ধারণা হলো পরার্থপর আত্মহত্যা। কারণ ব্যক্তির সঙ্গে
সমাজের অতিমাত্রায় সংহতির কারণে এ ধরণের আত্মহত্যা দেখা যায়। এ ধরনের আত্মহত্যায় ব্যক্তি নিজের জীবনকে
প্রয়োজনের কাছে তুচ্ছ মনে করে। ফলে সমাজ তথা রাষ্ট্রের প্রয়োজনে মৃত্যু জেনেও কাজ করতে গিয়ে নিজের জীবনকে
উৎসর্গ করে। সাধারণত যেকোনো দেশের স্বাধীনতা বা স্বাধীকার আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে। আবার যুদ্ধ ক্ষেত্রে
সৈনিকগণ জীবন দান করেন, যা ঐ সমাজের সঙ্গে অতিমাত্রায় সংহতিকেই প্রকাশ করে।
(৩) নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা: যখন সমাজে ব্যক্তির উপর মূল্যবোধের প্রভাব হারিয়ে ফেলে তখন তাকে নৈরাজ্যমূলক
অবস্থা বলে। এ ধরনের পরিস্থিতি হলে ব্যক্তি তার নিজ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী আচরণ করে যা সামাজিকভাবে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি
হয় যার প্রভাবে বা কারণে অনেকে আত্মহত্যা করে। এ রকম পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করাকেই নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা
বলে। সাধারণত যেকোনো বিপ্লব বা দুর্যোগের পর এ ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যেমন ফরাসী বিপ্লব পরবর্তী
সময়ের ফ্রান্সের সমাজ ব্যবস্থা, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর এ ধরনের অবস্থা তৈরি হতে পারে।
এ ছাড়া তিনি আরো এক ধরনের আত্মহত্যার কথা বলেন, তা হলো নিয়তিবাদী আত্মহত্যা (ঋধঃধষরংঃরপ ঝঁরপরফব)। এ
ধরনের আত্মহত্যর ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুনের অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ হয়ে থাকে। নিয়ম-কানুনের অতি কড়াকড়িতে
মানুষের জীবন যখন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং নিজের জীবন হনন করে তখন তাকে নিয়তবাদী আত্মহত্যা বলে। যেমন দাস
সমাজে দাসগণ অতিরিক্ত অত্যাচার নিপীড়নে আত্মহত্যা করে। অতিরিক্ত শাসনে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে।
ডুর্খেইমের আত্মহত্যা সম্পর্কিত আলোচনায় সংহতি ( এবং নিয়ন্ত্রণের () বিশেষ প্রভাব রয়েছে।
এর মাধ্যমে আত্মহত্যার শ্রেণিকরণ নির্ধারিত হয়। বিষয়টি নি¤েœর সারণিতে তুলে ধরা হল:
বন্ধনের ধরন মাত্রা আত্মহত্যার ধরন
সংহতি নি¤œ আত্মকেন্দ্রিক
উচ্চ পরার্থপর
নিয়ন্ত্রণ নি¤œ নৈরাজ্যমূলক
উচ্চ নিয়তবাদী
শ্রমবিভাজন
শ্রমবিভাজন একটি প্রাচীন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এটা প্রথম ব্যবহার করেন এ্যাডাম স্মিথ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ এ। তিনি অর্থনীতিতে প্রত্যয়টি ব্যবহার করেন কর্ম-প্রক্রিয়া (ডড়ৎশ
চৎড়পবংং) হিসেবে। এমিল ডুর্খেইম তাঁর সমাজতাত্তি¡ক বিশ্লেষণে অত্যন্ত সফলভাবে শ্রমবিভাজন প্রত্যয়টি ব্যবহার
করেছেন। শ্রমবিভাজনকে তিনি দেখেছেন সামাজিক ঘটনা হিসেবে। তিনি তাঁর ঞযব উরারংরড়হ ড়ভ খধনড়ৎ রহ ঝড়পরবঃু
গ্রন্থে শ্রমবিভাজন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে, শ্রমবিভাজনের মাধ্যমে সমাজের সংহতি
(ঝড়ষরফধৎরঃু) নির্ধারিত হয়। শ্রমবিভাজনের দিক থেকে সামাজিক সংহতিকে তিনি দুইভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা:
(১) যান্ত্রিক সংহতি এবং
(২) জৈবিক সংহতি ।
(১) যান্ত্রিক সংহতি: আদিম সমাজের মানুষের মধ্যে বয়স, লৈঙ্গিক পার্থক্য থাকলেও কাজের পার্থক্য খুব বেশি ছিল না।
তাদের মধ্যে চিন্তা-চেতনা, আচার-আচরণ ও মূল্যবোধে সাদৃশ্য ছিল। এ সমাজকে ডুর্খেইম যন্ত্রের সাথে তুলনা করেছেন।
এ সমাজে শ্রমবিভাজন না থাকায় পারস্পরিক সম্পর্ক অনেক বেশি নির্ভরশীল ছিল। একটি ইঞ্জিন যেমন বিভিন্ন যন্ত্রের
সমন্বয় ছাড়া চলতে পারে না, তেমনি এ সমাজের সদস্যরাও বিচ্ছিন্নভাবে চলতে পারত না। ডুর্খেইমের মতে আদিম
সমাজের মানুষ দুটো কারণে ঐক্যবদ্ধ হতো। তা হলো যৌথ প্রতিরূপ (এবং দমনমূলক আইন
এ ধরনের সমাজব্যবস্থায় যান্ত্রিক সংহতি লক্ষ করা যায়।
(২) জৈবিক সংহতি: জৈবিক সংহতি হলো বৈসাদৃশ্যের ঐক্যমত। এখানে সদস্যের মধ্যে চিন্তায়, আচরণে এবং মূল্যবোধে
তেমন সাদৃশ্য থাকে না। এ ধরনের সমাজব্যবস্থা জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কারণ জীদেহে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
থাকে যার কোনো একটি বিকল হলেও জীব সচল থাকে, অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে। জৈবিক সংহতিমূলক সমাজব্যবস্থায়
কোনো একটি অংশ বা প্রতিষ্ঠান দুর্বল বা অকার্যকর হলেও সমাজ পুরোপুরি থেমে থাকে না। পারস্পরিক নির্ভরশীলতাই
শক্তির মূল উৎস। জৈবিক সংহতি সম্পন্ন সমাজ বলতে ডুর্খেইম শিল্পায়িত আধুনিক সমাজব্যবস্থার কথা বলেছেন। যেখানে
অধিক মাত্রায় বিশেষীকরণ পরিলক্ষিত হয়। জৈবিক সংহতিতে যে ধরনের আইন মেনে চলা হয় তা হলো প্রতিরোধমূলক
আইন যান্ত্রিক সংহতি হতে জৈবিক সংহতিতে উত্তরণের পিছনে যেসব উপাদান দায়ী বলে ডুর্খেইম
মনে করেছেন তা হলো জনসংখ্যার বৃদ্ধি, নৈতিকতার উন্নতি, জ্ঞানের বিস্তার বা উন্নয়ন, নগরের বিকাশ, যোগাযোগ
ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিশেষীকরণ প্রভৃতি।
ডুর্খেইমের ধর্ম বিষয়ক মতবাদ
ডুর্খেইমের অন্যতম রচনা হলো তিনি ধর্মকে একটি সামাজিক ঘটনা
হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর মতে ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার আচরণ প্রথমত সমাজ বা গোষ্ঠীর প্রতীক হিসেবে দেখা দেয়।
সমাজ সংগঠনই ধর্মীয় উদ্ভবের মূল উৎস। ডুর্খেইম ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ তত্তে¡ তথা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পূর্বে আদিম
সমাজ সম্পর্কে গবেষণা করেন। তিনি অষ্ট্রেলিয়ার অরুনটা ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠীর ধর্মীয় আচার ও বিশ্বাস পরীক্ষা করেন।
তিনি ই.বি. টেইলরের সর্বপ্রাণবাদ এবং ম্যাক্স মুলারের প্রকৃতিবাদ সম্পর্কিত ধারণা ব্যাখ্যা করে
তা ভ্রান্ত প্রতিপন্ন করেন। তাঁর মতে, এগুলো ধর্মের পবিত্র ও অলংঘনীয় (ংধপৎবফ) এবং পার্থিব তথা সমালোচনামূলক
আদর্শ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম নয়। বস্তুর ধারণা, বিশ্বাস এবং আচার আচরণের সমন্বয়ে পবিত্র ও
অলংঘনীয় গঠিত। এ ধরনের বিশ্বাস, আচার আচরণের সম্পর্ক ধর্মের উদ্ভব ঘটায়। অন্যদিকে সকল ধর্মের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো পার্থিব জগতকে নগণ্য মনে করা।
ডুর্খেইমের মতে ধর্মের কাজ যদি শুধু আচার পালন করা হতো তবে পৃথিবীতে এতদিন ধর্ম টিকে থাকতে পারত না। ধর্মের
আরো কিছু মর্মকথা আছে। ধর্মের মর্মকথা বুঝতে হলে আদিম সমাজের ধর্মীয় বিশ্বাস পর্যালোচনা করতে হবে। তিনি
ধর্মের উৎপত্তির কথা বলতে গিয়ে টোটেমবাদের কথা বলেছেন। টোটেম বলতে বুঝায় এক ধরনের বিশ্বাস কিংবা প্রথা ও
আচার অনুষ্ঠান যার মাধ্যমে কোনো কোনো বিশেষ প্রাণি বা গাছ পালার সঙ্গে একটি বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করে। তিনি
টোটেমবাদ পর্যালোচনা করে বলেন, দলবদ্ধ জীবনই ধর্মের উৎপত্তির যথার্থ কারণ। ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠান ঐ
জীবনেরই প্রতীক মাত্র। ধর্মের আসল কাজ হলো সমাজে সংহতি সৃষ্টি এবং তা রক্ষা করা।
সার-সংক্ষেপ
সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম পুরোধা হচ্ছেন এমিল ডুর্খেইম। তাঁর বহুমুখী তত্ত¡ ও গবেষণাকে কেবল সমাজবিজ্ঞানকেই
সমৃদ্ধ করেনি, সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সামাজিকক ঘটনা, শ্রমবিভাজন, সামাজিক
সংহতি, আত্মহত্যা এবং ধর্মের সমাজতাত্তি¡ক ব্যাখ্যা এ মনীষীকে স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা দান করেছে। সামাজিক ঘটনা
বলতে কোনো জনগোষ্ঠীর চিন্তা চেতনা, প্রবণতা, রীতিনীতি প্রভৃতিকে বুঝায়। তাঁর মতে সমাজের সংহতি
কী ধরনের হবে তা নির্ধারিত হয় শ্রমবিভাজনের মাধ্যমে। আবার আত্মহত্যার সাথেও তিনি সামাজিক সংহতির সম্পর্ক
দেখিয়েছেন। ডুর্খেইমের মতে ধর্মের কাজ শুধু আচার-আচরণ পালন করা নয়, ধর্মের আরো কিছু মর্মকথা আছে। ধর্মের
উৎপত্তির কথা বলতে গিয়ে তিন টোটেমবাদের কথা বলেছেন। তাছাড়া পবিত্রতা এবং অপবিত্রতার ধারণার মাধ্যমেও তিনি ধর্মের ব্যাখ্যা করেছেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। নিচের কোনটি এমিল ডুর্খেইম রচিত গ্রন্থ?
(ক) চড়ংরঃরাব চযরষড়ংড়ঢ়যু (খ) ঝঁরপরফব
(গ) ঊপড়হড়সু ধহফ ঝড়পরবঃু (ঘ) চৎরহপরঢ়ষবং ড়ভ ঝড়পরড়ষড়মু
২। সামাজিক সংহতির অভাব হলে কোন ধরনের আত্মহত্যা হয়?
(ক) আত্মকেন্দ্রিক (খ) পরার্থপর
(গ) নৈরাজ্যমূলক (ঘ) নিয়তবাদী
৩। এমিল ডুর্খেইমের ধর্ম সম্পর্কীয় আলোচনায় কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে?
(ক) পাপুয়া নিউগিনি (খ) টোডা
(গ) অরুনটা (ঘ) এস্কিমো

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]