সমাজবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ‘সমাজ’। তাই সমাজ বলতে কি বুঝায় সে সম্পর্কে সমাজ বিজ্ঞানের
ছ্রাত্র-ছাত্রীদের সুনির্দিষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বাস করতে গিয়ে সমাজ সৃষ্টি করেছে। মানুষ নিজের
প্রয়োজনেই সমাজের সৃষ্টি করেছে। সেজন্য সমাজে বাস করতে হলে মানুষকে সামাজিক নিয়ম-কানুন রীতিনীতি মেনে
চলতে হয়। যখন কোনো মানুষ সমাজের আইন-কানুন, মূল্যবোধ, বিশ্বাস মেনে চলেনা তখন সে সমাজের নিকট হেয়
প্রতিপন্ন হয়। বিভিন্ন দেশে সমাজের মূল্যবোধগত পার্থক্য থাকতে পারে। তবে প্রতিটি সমাজে কতগুলো সাধারণ নিয়মকানুন রয়েছে, যা সবাইকে মেনে চলতে হয়। সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজ সম্পর্কে বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
সাধারণত সমাজ বলতে পারস্পরিক সম্পর্কে বাঝায়।
সমাজবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সমাজ। শিশু জন্ম থেকে আমৃত্যু সমাজেই বাস করে, সমাজই শিশুকে
সামাজিকতা শিক্ষা দেয়। সমাজের সৃষ্টিও মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন ও অভাব পূরণের জন্য হয়েছে। সামাজিক জীব হিসেবে
সমাজের মাঝেই মানুষ তার কর্মদক্ষতাকে প্রকাশ করে এবং প্রয়োজনাদি মিটিয়ে থাকে। আবার প্রয়োজনে সমাজকে
নিয়ন্ত্রণও করে। কেননা নিয়ন্ত্রণহীন সমাজ মানুষের কাম্য নয়।
সমাজের সর্বজনস্বীকৃত কোনো সংজ্ঞা নেই। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সমাজকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন।
নিম্নে তা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল।
সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ও পেজ তাদের ’ নামক গ্রন্থে বলেছেন, "ঝড়পরবঃু রং ধ ংুংঃ অর্থাৎ সমাজ হচ্ছে এমন সব সমাজিক সম্পর্কের একটি ব্যবস্থা যার
মধ্যে আমরা জীবন যাপন করি। তিনি সমাজ বলতে সামাজিক সম্পর্কের জটিল জালকে বুঝিয়েছেন।
গিডিংস বলেন, “সমাজ হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে বিকশিত একটি সচেতন মানবগোষ্ঠী যেখানে তাদের পারস্পরিক
সচেতন আলোচনা একটি সুনির্দিষ্ট সম্পর্কে পর্যবসিত হয় এবং কালক্রমে তা একটি স্থায়ী ও জটিল সংগঠনে দৃঢ়বদ্ধ হয়।”
জিসবার্ট বলেন: " অর্থাৎ “সাধারণভাবে সমাজ হল সামাজিক সম্পর্কের
এমন একটি জটিল জাল যার মাধ্যমে প্রত্যেকটি মানুষ তার সঙ্গীদের সাথে পারস্পরিক বন্ধনে আবদ্ধ।’’
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, মানুষ তার সহজাত প্রবৃত্তি চরিতার্থের জন্য, আবশ্যকীয় বস্তু সংগ্রহের প্রয়োজনে,
জীবনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য এবং শিক্ষা ও নৈতিক উন্নয়নের জন্য জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত যে সংগঠনের উপর নির্ভরশীল
তা হচ্ছে সমাজ। বস্তুত মানুষ বেঁচে থাকার জন্য একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। আর এই নির্ভরশীলতা থেকেই সৃষ্টি হয়
মিথস্ক্রিয়া। মিথস্ক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয় সামাজিক সস্পর্ক এবং পরিশেষে গড়ে উঠে সমাজ।
সমাজের গঠন প্রক্রিয়াকে নি¤œরূপভাবে দেখানো যায়:
নির্ভরশীলতা → মিথষ্ক্রিয়া → সামাজিক সম্পর্ক → সমাজ
সমাজের বৈশিষ্ট্য
সমাজ সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে আমরা নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো পাই:
১। সমাজের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সংঘবদ্ধতা;
২। সমাজ বলতে সমাজে বসবাসরত মানুষের পারস্পরিক কার্যাবলিকে বুঝায়;
৩। সামাজিক বন্ধন ও সামাজিক সংহতি সমাজের মূল কথা;
৪। সমাজ শব্দটি এমন একটি বিম‚র্ত ধারণা প্রকাশ করে যাকে অনুভব করা যায়;
৫। সমাজ হচ্ছে সহযোগিতার সর্বোত্তম ক্ষেত্র;
৬। মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই সমাজ গড়ে ওঠে;
৭। সমাজ অনুভ‚তিক্ষম সমজাতীয় বুদ্ধিমানপ্রাণির সমষ্টি;
৮। সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক সর্বদা পরিবর্তনশীল।
৯। সমাজে প্রতিযোগিতা এবং দ্ব›দ্ব-সংঘাত ও বিরোধ পরিলক্ষিত হয়;
১০। সমাজে সামাজিক অসমতা, স্তরবিন্যাস ও শ্রেণি সম্পর্ক রয়েছে;
১১। সমাজ ব্যাপক অর্থে (বাঙালি সমাজ) এবং সীমিত অর্থে (নারীসমাজ, লেখক সমাজ) বিরাজমান;
১২। সমাজে বসবাসরত মানুষের একটি অতীত ঐতিহ্য থাকে;
১৩। সমাজ মানুষের সামাজিক সম্পর্কের জটিল জাল।
১৪। সমাজে বসবাসরত মানুষের মধ্যে সংস্কৃতি, ধর্ম এবং জীবন প্রণালী ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু একত্রে বাস করার ফলে
তাদের মধ্যে এক ধরনের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
সারসংক্ষেপ
সমাজবিজ্ঞানে ব্যবহৃত প্রাথমিক প্রত্যয়সমূহের মধ্যে সমাজ গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ হচ্ছে এমন একটি সংগঠন যা ব্যক্তি ও
গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত হয় এবং যার ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক সম্পর্ক। অর্থাৎ সামাজিক সম্পর্কের এক জটিল জালে
আবদ্ধ জনগোষ্ঠীকেই সমাজ বলা হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৪.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। ‘সমাজ’ সৃষ্টির প্রক্রিয়া কোনটি?
(ক) সামাজিক সম্পর্ক - নির্ভরশীলতা- মিথষ্ক্রিয়া - সমাজ।
(খ) মিথষ্ক্রিয়া - নির্ভরশীলতা-সামাজিক সম্পর্ক-সমাজ।
(গ) নির্ভরশীলতা - মিথষ্ক্রিয়া-সামাজিক সম্পর্ক-সমাজ।
(ঘ) সমাজ-সামাজিক সম্পর্ক - নির্ভরশীলতা মিথষ্ক্রিয়া।
২। সমাজ সৃষ্টি হয় -
(ক) মানুষের বুদ্ধি ও জ্ঞানের সমন্বয়ে
(খ) মানুষের নিজের জীবনের প্রয়োজনের তাগিদে
(গ) বন্যজন্তুর আক্রমণের আশংকা থেকে দলবদ্ধ হয়ে
(ঘ) প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত