প্রতিষ্ঠান ও সংঘ বলতে কী বুঝ প্রতিষ্ঠান ও সংঘের বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রতিষ্ঠানের ধরনগুলো বর্ণনা কর

মুখ্য শব্দ প্রতিষ্ঠান, সংঘ।
প্রতিষ্ঠান
সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। সমাজ জীবনের নানাবিধ কর্মকাÐ ও জটিলতা সামাজিক
প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণের জন্যই প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব হয়। তবে প্রতিষ্ঠান শুধু
মানুষের প্রয়োজনই পূরণ করে না, মানুষের ক্রিয়াকর্মকেও নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সমাজবদ্ধ মানুষের মাঝে প্রতিষ্ঠিত
প্রথাপদ্ধতি, যা পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে উঠে। প্রতিষ্ঠান বলতে সাধারণত, কতকগুলো প্রতিষ্ঠিত কার্যপ্রণালীকে
বুঝায়। সমাজে যদি প্রতিষ্ঠিত কার্যপ্রণালী, রীতি-নীতি না থাকত, তাহলে মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে সমাজে বাস করতে পারত
না। কাজেই সমাজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষ সুষ্ঠুভাবে জীবন যাপন করতে পারে। তাই বলা যায় প্রতিষ্ঠান হলো
সামাজিক কাঠামোর এমন উপাদান যার মাধ্যমে মানুষ প্রয়োজন মিটানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম সংগঠিত, নিয়ন্ত্রিত
ও বাস্তবায়ন করে।
সুসংবদ্ধ সমাজ জীবন মানুষের কাম্য। মানুষ তার গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজন প‚রণের জন্য সমাজে কতগুলো
নিয়ম-কানুনের সৃষ্টি করে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠিত নিয়মনীতিকে প্রতিষ্ঠান বলে। কেননা প্রতিষ্ঠিত নিয়মনীতি ভিন্ন সমাজ
জীবন কখনো সুষ্ঠু ও সুশৃংখলভাবে পরিচালিত হতে পারে না। যেমন ঃ ‘বিবাহ’ নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই ‘পরিবার’ গড়ে
ওঠে। যদি বিবাহের মাধ্যমে পরিবারের সৃষ্টি না হত তাহলে নারী-পুরুষের সমন্বয়ে সুশৃঙ্খল ও নিয়ন্ত্রিত সমাজ গড়ে উঠত
না। ফলে সমাজে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিত।
ম্যাকাইভার ও পেজ তাঁদের নামক গ্রন্থে প্রতিষ্ঠানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন যে, “প্রতিষ্ঠান হলো সে সব
প্রতিষ্ঠিত কর্মপদ্ধতি যার মাধ্যমে গোষ্ঠীর কার্যাবলীর বৈশিষ্ট্য সূচিত হয়।”
সমাজবিজ্ঞানী জিসবার্ট প্রতিষ্ঠান বলতে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের জন্য কতকগুলো স্থায়ী ও স্বীকৃত কর্মপদ্ধতিকে বুঝিয়েছেন।
সুতরাং প্রতিষ্ঠান হচ্ছে প্রচলিত বিধি-বিধান ও কর্মপন্থা, যা দীর্ঘকাল যাবৎ সমাজে প্রচলিত।
প্রতিষ্ঠানের ধরনসমূহ
সমাজে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন:
১। পারিবারিক প্রতিষ্ঠান: পরিবার সমাজ জীবনের আদি ও সর্বজন স্বীকৃত একটি সামাজিক দল। বিবাহ ও ব্যক্তি
সম্পর্কের ভিত্তিতে স্বামী-স্ত্রী, পিতা−মাতা, ভাই−বোন, সন্তান-সন্ততিসহ মানুষ যেখানে একত্রে বসবাস করে তাকেই
পরিবার বলে। পরিবারের পূর্বশর্ত হলো বিবাহ। পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, কোর্টশিপ
উল্লেখযোগ্য।
২। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান: ম্যাক্স ওয়েবারের মতে, যেসব মৌলিক ব্যবস্থা ও নিয়মকানুন পণ্য উৎপাদান, ভোগ ও বন্টন
সংক্রান্ত কর্মকাÐ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে - তাকেই অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলে। মানুষ আদিম যুগ থেকেই অর্থনৈতিক
জীবন আরম্ভ করেছে। মানব সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও সমাজ কাঠামো পরিবর্তন ঘটেছে।
সম্পত্তি হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। তবে আধুনিক কালে ব্যাংক, বীমা, সমবায় ও ঋণদান সংস্থা ইত্যাদিকেও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা যায়। কারণ, সমাজস্থ মানুষের সম্পত্তি ও সম্পদ এসব
সংগঠনের মাধ্যমেই সুরক্ষিত ও প্রসার লাভ করে।
৩। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান: রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষ তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড সম্পাদন করে। সমাজের
সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মকান্ড অধিকাংশই রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। রাষ্ট্র তার বিভিন্ন বাহনের মাধ্যমে
সমাজের আইন-শৃংখলা রক্ষা, শাসন ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ, আইন-প্রণয়ন, নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য নির্ধারণসহ অনেক দায়িত্ব পালন করে। আধুনিক কালের মতো প্রাচীন গ্রিক নগর রাষ্ট্রে রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়
করা হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ হচ্ছে, সংসদ, ভোট, নির্বাচন প্রভৃতি।
৪। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমাজ জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। ধর্ম হল সর্বজনীন ও প্রাচীন
প্রতিষ্ঠান। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ নানাভাবে ধর্মের সংগে সম্পর্কযুক্ত। সমাজবিজ্ঞানীগণ মনে করেন যে, কতকগুলো সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে। মধ্যযুগে সমাজ ও রাষ্ট্র ধর্ম দ্বারা
নিয়ন্ত্রিত হতো। ধর্মীয় রীতি-নীতি, মূল্যবোধ, প্রথা-প্রতিষ্ঠান এখনো মানুষের সমাজ জীবনকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ
করে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, নামাজ, রোজা, উপাসনা, পূজা অর্চনা উল্লেখযোগ্য।
৫। শিক্ষাম‚লক প্রতিষ্ঠান: শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তির মধ্যে সুপ্ত বুদ্ধি, মেধা ও নৈতিক ক্ষমতাগুলোকে
বিকশিত করে তার ব্যক্তিত্বকে গড়ে তোলা। শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র চরিত্র গঠন করে।
যৌক্তিকতা এবং পেশাগত দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যক্তিকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে যোগ্য করে
তোলে। স্কুল, মাদ্রাস, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাস, পরীক্ষা, প্রভৃতি হলো শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ।
৬। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান: সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানুষের সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ও প্রকাশ ঘটে। সমাজ
প্রবাহের সঙ্গে মানুষের মধ্যে যে জ্ঞান ও বিচার বুদ্ধির সৃষ্টি হয় তার উৎকর্ষ সাধনের জন্য নানাবিধ সাংস্কৃতিক
প্রতিষ্ঠানেরও উদ্ভব হয়েছে এবং এসব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই মানুষের সৃজনশীল কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে
সম্পাদিত হয়। সাহিত্য সংঘ, সঙ্গীত পর্ষদ ও নাট্য সংঘ হল সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের এক একটি দৃষ্টান্ত।
সংঘ (
কোনো সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যখন কিছু লোক ঐক্যবদ্ধ হয় তখন তাকে সংঘ বলে। সাধারণ অর্থে সংঘ বলতে বুঝায় এমন একটি জনসমষ্টি যারা কোনো বিশেষ কাজ সম্পাদন করার জন্য তৎপর হয়। সমাজে বিভিন্ন ধরনের সংঘ
রয়েছে। একাধিক সংঘ একটি স¤প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
ম্যাকাইভার ও পেজ বলেন, এক বা একাধিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোনো গোষ্ঠী যখন একত্রিত হয় তখন তাকে সংঘ
বলে। তাঁরা আরো বলেন, সংঘ হচ্ছে এমন একটি গোষ্ঠী যা অভিন্ন গোষ্ঠী স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য গঠিত হয়। এ অর্থে আমরা রাষ্ট্রকে সংঘ বলতে পারি।
জিসবার্টের মতে “সংঘ হলো একটি মুখ্য গোষ্ঠী যা কোন বিশেষ বা কতক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গঠিত হয়।’’ পরিবার ও
রাষ্ট্রকে সংঘ হিসাবে বিবেচনা করা যায়। সংঘকে কোনো কর্ম সম্পাদনের বাহনও (ধমবহপু) বলা যায়। সেক্ষেত্রে সংঘ
একটি করপোরেশন সমতুল্য। সমাজ জীবনে মানুষের চাহিদা, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বিচিত্র ধরনের। একক প্রচেষ্টায় মানুষের
পক্ষে তার সব চাহিদা ও লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব। এই উদ্দেশ্যেই মানুষ সমবেতভাবে এবং সহজে সমাজ জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষগুলোকে বাস্তবায়ন করতে চায়।
সংঘ গঠনের পেছনে দ’ুটি উপাদান ক্রিয়াশীল, যথা - অভিন্ন উদ্দেশ্য এবং সংগঠিত হওয়ার ঐকান্তিক ইচ্ছা। যেমন, ফুটবল
ক্লাব, শিক্ষক সমিতি, বণিক সমিতি ইত্যাদি। সংঘ গঠনের জন্য কতকগুলো মানবীয় উপাদান যুক্ত হয় তা হলো: (ক)
একটি বিশেষ উদ্দেশ্য, (খ) সংঘের নাম ও প্রতীক, (গ) কর্তৃপক্ষ, (ঘ) সংঘের আচরণবিধি, (ঙ) সংঘের পদমর্যাদা, (চ)
সংঘের সদস্যপদ এবং সংঘের সম্পত্তি।
সংঘের বৈশিষ্ট্য: নিম্নে সংঘের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হলো:
১। সংঘের সদস্যদের উদ্দেশ্য অভিন্ন হতে হয়;
২। সংঘের সদস্য হলে তাকে ঐ সংঘের বিধি বিধান মেনে চলতে হয়;
৩। সংঘ গঠনের উদ্দেশ্য এক বা একাধিক হতে পারে;
৪। সংঘের একটি সাংগঠনিক কাঠামো থাকে;
৫। সদস্যদেরকে সংঘের গঠনতন্ত্র ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়;
৬। কোনো সদস্য সংঘের নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এমনকি বহিষ্কার পর্যন্ত করা হয়;
৭। সংঘের সদস্য হওয়া বাধ্যতামুলক নয়;
৮। সংঘের মাধ্যমে মানুষের চাহিদা পূরণের বাস্তব প্রয়াস চালানো হয়;
৯। সংঘের সদস্যদের মধ্যে স্বজাত্যবোধ থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই;
১০। বিভিন্ন সংঘ বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে (সমাজ কল্যাণ, বিনোদন, রাজনৈতিক অধিকার ইত্যাদি) গঠিত হয়;
১১। সংঘের কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য একটি কর্মনির্বাহী পর্ষদ ও গঠনতন্ত্র থাকে;
১২। সংঘ ক্ষণস্থায়ী হতে পারে, আবার দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে ।
সংঘ ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য : সংঘ এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:
১। মানুষ সংঘের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা ভোগ করে; কিন্তু প্রতিষ্ঠানে সে জন্মগ্রহণ করে।
২। সংঘের সাথে সদস্যপদের প্রশ্ন জড়িত, কিন্তু প্রতিষ্ঠান হলো সামাজিক আচরণের প্রতিষ্ঠিত রীতি-নীতি।
৩। সংঘ গঠন করতে হয়, কিন্তু প্রতিষ্ঠান সমাজ জীবনে ক্রমবিকশিত হয়।
৪। অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি আপন আগ্রহে সংঘের সদস্য হয়। কিন্তু ব্যক্তি সহজাতপ্রবৃত্তির গুণেই প্রতিষ্ঠানের সদস্য হয়।
৫। সংঘ সংগঠিত দল, আর প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট সামাজিক সম্পর্কের রূপ বিশেষ।
৬। মানুষ সংঘের সদস্য, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের সদস্য নয়।
৭। সংঘ বিভিন্ন সদস্যের নির্দেশক, আর প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কার্যপ্রণালীর নির্দেশক।
৮। সংঘ প্রতিষ্ঠান ছাড়া অপর পক্ষে প্রতিষ্ঠান সংঘ ছাড়া সৃষ্টি হয় না।
৯। বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘ গড়ে উঠে কিন্তু প্রতিষ্ঠান অনেকটা প্রয়োজনের তাগিদেই স্বাভাবিকভাবে গড়ে ওঠে।
সংঘ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্য: আমরা জানি যে, সংঘ হচ্ছে একটি ঐক্যবদ্ধ জনসমষ্টি যা এক বা একাধিক উদ্দেশ্য
বাস্তবায়নের জন্য তৎপর এবং কয়েকটি মানবীয় উপাদান থাকে। আর স¤প্রদায় হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী
জনসমষ্টি যারা তাদের অভিন্ন জীবন ধারার অংশীদার হয়ে একত্রে বসবাস করে। নিচে স¤প্রদায় ও সংঘের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করা হলো:
১। সংঘ কতকগুলি বিশেষ উদ্দেশ্য ও স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে গঠিত হয়, যেমন - ক্রীড়াসংঘ
আর স¤প্রদায় হলো এমন একটি জনগোষ্ঠী যার সদস্যরা বিশেষ কোনো স্বার্থের অনুসারী না হয়ে অভিন্ন জীবনের
প্রয়োজন মিটানোর জন্য একই এলাকায় বসবাস করে।
২। সংঘ কোনো স¤প্রদায় নয়, বরং স¤প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত একটি সংগঠন মাত্র। যেমন, একটি গ্রাম বা শহরে
অনেকগুলো সংঘ গড়ে উঠতে পারে। তাই বলা হয় স¤প্রদায় ব্যাপক আর সংঘ সীমিত সংগঠন।
৩। যেকোনো ব্যাক্তির সংঘের সদস্য হওয়া স্বেচ্ছামূলক, কিন্তু জন্মগতভাবে ও স্বতঃস্ফুর্তভাবে যেকোনো ব্যাক্তি
স¤প্রদায়ের সদস্য বলে বিবেচিত। একজন ব্যক্তি সংঘের সদস্যপদ প্রত্যাহার করতে পারে। কিন্তু স¤প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের সদস্যপদ স্থায়ী।
৪। স¤প্রদায় হচ্ছে একটি স্থায়ী সামাজিক গোষ্ঠী যার উদ্দেশ্য একাধিক বা সামগ্রিক হতে পারে। স¤প্রদায়ভুক্ত লোক
স¤প্রদায়ের মধ্যে থেকে নিজ নিজ উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে।
কিন্তু সংঘ ক্ষণস্থায়ী, তার উদ্দেশ্য ও স্বার্থের বাস্তবায়ন না হলে তা নাও টিকতে পারে।
৫। সংঘের সদস্যরা এর নীতি, আদর্শ ও নিয়ম-কানুন মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু স¤প্রদায়ভুক্ত সদস্যরা তাদের অভিন্ন
স্বার্থ ও উদ্দেশ্যকে মনে রেখে সামাজিক প্রথা, ঐতিহ্য ও রীতিনীতির মাধ্যমে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
৬। সংঘের আইনগত অবস্থান রয়েছে। প্রয়োজনে সংঘের সদস্য বা সদস্যরা সংঘের কার্যক্রম বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে
আইনের আশ্রয় নিতে পারে। কিন্তু স¤প্রদায়ের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়।
৭। সংঘের কোনো আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। কিন্তু স¤প্রদায়ভুক্ত জনগোষ্ঠী
একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বাস করতেই হবে।
৮। একজন ব্যক্তি যুগপৎ অনেকগুলো সংঘের সদস্য হতে পারে, কিন্তু একজন ব্যক্তি একটিমাত্র স¤প্রদায়ভুক্ত।
৯। সম্প্রদায়ের সমষ্টিগত চেতনা থাকে কিন্তু সংঘের থাকতেও পারে আবার নাও পারে।
উপরের আলোচনার মাধ্যমে লক্ষ করা যায় যে, সংঘের কার্যক্রমের পরিধি স¤প্রদায়ের তুলনায় সীমিত। সমাজের আংশিক
কার্য সম্পাদনে সংঘ একটি বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। অপরপক্ষে, স¤প্রদায় সুনির্দিষ্টি এলাকার জনসমষ্টির অভিন্ন
প্রয়োজন মেটাতে সচেষ্ট যা সংশ্লিষ্ঠ সমাজকাঠামো ও সামাজ ব্যবস্থার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
সারসংক্ষেপ
সমাজবিজ্ঞানের প্রাথমিক প্রত্যয়সমূহের মধ্যে প্রতিষ্ঠান একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। মানুষ তার গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের বিভিন্ন
প্রয়োজন পূরণের নিমিত্তে সমাজে কতকগুলো রীতিনীতি সৃষ্টি করে। এই ধরনের প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতি বা কার্যপ্রণালীকে
প্রতিষ্ঠান বলে। প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সামাজিক সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজের সার্বিক কর্ম-
নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করে এবং সমাজের মানুষকে সর্বদা ক্রিয়াশীল রাখে। সমাজবিজ্ঞানে সংঘও একটি গুরুত্বপূর্ণ
প্রত্যয়। একদল লোক যখন এক বা একাধিক উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে মানবীয় উপাদানযোগে সংঘবদ্ধ হয় তখন তাকে সংঘ বলে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৪.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য কি কি?
(ক) মেধা ও নৈতিক ক্ষমতার বিকাশ
(খ) সাহিত্য শিল্প কলার চর্চা করা ও এর উৎপত্তি সাধন করা
(গ) জীবনযাপনের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা
(ঘ) ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র গঠন করে
২। বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।
(ক) সম্পত্তি (খ) রাষ্ট্র
(গ) পরিবার (ঘ) ধর্ম
৩। কিভাবে সংঘের সদস্য হওয়া যায়?
(ক) অপরের ইচ্ছায়। (খ) আপন ইচ্ছায়।
(গ) জনগণের ইচ্ছায়। (ঘ) প্রচার মাধ্যমের প্রভাবে।
৪। সংঘের কী ধরনের ভিত্তি থাকা উচিত?
(ক) নীতিগত (খ) প্রথাগত
(গ) স¤প্রদায়গত (ঘ) আইনগত

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]