ধর্ম কী তা বল ধর্মের সাধারণ ও বিশেষ লক্ষণ সম্পর্কে বল

ধর্ম
যার ধারণ শক্তি আছে তার নাম ধর্ম। সংস্কৃত ‘ধৃ’ ধাতুর সঙ্গে ‘মন্’ প্রত্যয় যোগ করে ধর্ম শব্দটি গঠন করা হয়েছে। আমরা
জানি প্রত্যেক বস্তুরই ধর্ম আছে। যেমন আগুনের ধর্মদহন করা। জলের ধর্ম শীতলতা। মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব। প্রকৃত মনুষ্যত্ব
না থাকলে সে পশুসমতুল্য, তাকে যথার্থ মানুষ বলা যাবে না।
আবার ধর্ম মানে ন্যায়। ধর্ম মানে বিধি-বিধান। ধর্ম শব্দটির আরও অর্থ আছে। যেমন ধর্ম মানে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে বিশেষ
পদ্ধতিতে উপাসনা। ধর্মের আরেকটি অর্থ হচ্ছে সংস্কৃতি। সব মিলিয়ে ধর্ম কথাটি যে অর্থে আমরা এখানে ব্যবহার করছি তা হচ্ছে একটি বিশিষ্ট মূল্যবোধ ও জীবনে চলার পথে বিশেষ নির্দেশিকা।
মনুসংহিতায় ধর্মের সাধারণ লক্ষণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে : বেদঃ স্মৃতিঃ সদাচারঃ স্বস্য প্রিয়মাত্মনঃ। এতচ্চতুর্বিধং প্রাহুঃ
সাক্ষাৎ ধর্মস্য লক্ষণম্ \
Ñ বেদ, স্মৃতিশাস্ত্র, সদাচার ও বিবেকের বাণী Ñ এ চারটি হচ্ছে ধর্মের সাক্ষাৎ বা সাধারণ লক্ষণ। এ চারটিকে ক্রমান্বয়ে
অনুসরণ করে ধর্মের স্বরূপ তথা ধর্মাধর্ম নির্ণয় করতে হয়।
বেদ
বেদ সনাতন ধর্মের আদি ধর্ম গ্রন্থ। বেদ শব্দটির মানে হচ্ছে জ্ঞান Ñ পবিত্র জ্ঞান। প্রাচীন ভারতীয় ঋষিদের কাছে ঈশ্বরের
যে বাণী প্রতিভাত হয়েছিল, তা বেদে সংগৃহীত হয়েছে। আমরা জানি, বেদ চারটি Ñ ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও
অথর্ববেদ। ধর্মাধর্ম নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বেদই প্রথম নির্ভরযোগ্য প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
স্মৃতিশাস্ত্র
বেদের অপর নাম শ্রুতি। বেদের পরে ধর্মাধর্ম বা কর্তব্য-অকর্তব্য বিষয়ের নির্দেশ রূপে রচিত হয়েছে স্মৃতিশাস্ত্র। যেমনÑ
মনুসংহিতা, যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতা, পরাশরসংহিতা ইত্যাদি।
সদাচার
বেদ ও স্মৃতিশাস্ত্র ছাড়াও ধর্মাধর্মের তৃতীয় প্রমাণ হচ্ছে সদাচার। সদাচার হচ্ছে সাধু-সজ্জন-মহাপুরুষদের আচরণ বা
উপদেশ। তাঁদের আচরণ বা উপদেশ অনুসারেও ধর্মাধর্ম নির্ণয় করা যায়।
বিবেকের বাণী
বেদ, স্মৃতি ও সদাচার ছাড়াও নিজের বিবেক অনুসারে ধর্মাধর্ম নির্ণয় করা বা কর্তব্যকর্ম স্থির করা যায়। নিজের বা অন্য
ব্যক্তির কিংবা সমাজের সমষ্টিগত ক্ষতি বা কষ্টের কারণ হয় এমন কাজ করা উচিত নয়। বিবেক আমদের মধ্যে সেই কল্যাণ
ভাবনা জাগ্রত করে। ধর্মাধর্ম নির্ণয়ে পক্ষপাত শূন্য ও সুবুদ্ধিযুক্ত বিবেককেও তাই ধর্মাধর্ম নির্ণয়ে চতুর্থ প্রমাণরূপে বিবেচনা করা হয়েছে।
মনুসংহিতায় ধর্মের বিশেষ লক্ষণ হিসেবে দশটি লক্ষণের কথা বলা হয়েছে :
ধৃতিঃ ক্ষমা দমোহস্তেয়ং
শৌচমিন্দ্রিয়মনিগ্রহঃ।
ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো
দশকং ধর্মলক্ষণম্ \
Ñ সহিষ্ণুতা বা ধৈর্য, ক্ষমা, আত্মসংযম, চুরি বা অপহরণ না করা, শুচিতা বা পবিত্রতা, ইন্দ্রিয়নিগ্রহ, প্রজ্ঞা, বিদ্যা, সত্য ও
অক্রোধ Ñ এ দশটি ধর্মের বিশেষ লক্ষণ।
ধর্ম অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা
ধর্ম অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে :
‘যতোবাহভ্যুদয়-নিঃশ্রেয়সসিদ্ধি স ধর্মঃ।’
Ñ যা থেকে ‘অভ্যুদয়’ ও ‘নিঃশ্রেয়স’ অর্জিত হয়, তাকে ধর্ম বলা হয়। এখানে ‘অভ্যুদয়’ বলতে জাগতিক কল্যাণ এবং
‘নিঃশ্রেয়স’ বলতে বোঝায় নিশ্চিত কল্যাণ। ধর্ম পালন করলে ইহলোকে উন্নতি হয় এবং পরলোকে মোক্ষলাভ হয়।
এ বিষয়ে মনুসংহিতাতে বলা হয়েছে :
ধর্ম এব হতো হন্তি ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতঃ।
তস্মাদ্ধর্মো ন হন্তব্যো মা নো ধর্মো হতোহবধীৎ \
Ñ ধর্ম নষ্ট হলে ধর্ম নষ্টকারীর বিনাশ ঘটে। আর ধর্ম রক্ষিত হলে ধর্মই তার রক্ষাকারীকে রক্ষা করে। তাই কখনও ধর্ম নষ্ট
করা উচিত নয়। ধর্ম নষ্ট হয়ে যেন আমদের বিনষ্টি না ঘটায়।
সুখে হোক আর দুঃখেই হোক সব সময় ধর্ম রক্ষা করে চলতে হবে। ধর্ম পথে থাকতে হবে।
আমরা মনে রাখব ধর্মবিশ্বাস, ধর্মাচার ধর্মানুষ্ঠান Ñ এ তিনে মিলে ধর্মের প্রাণ।
ধর্মের আরেকটি অর্থ হচ্ছে জগতের কল্যাণ কথা জীবসেবা। ধর্ম কেবল কিছু ধর্মানুষ্ঠান করা বা ধর্মাচার পালন করা নয়,
কেবল আত্মমোক্ষ নয়, ধর্মের উদ্দেশ্য জীব ও জগতের কল্যাণ।
ভাগবতে বলা হয়েছে, যা থেকে ঈশ্বরে ভক্তি জন্মে, তার নামও ধর্ম। ঈশ্বরে ভক্তি থেকে মানুষের আত্মা প্রসন্নতা ও মুক্তি
লাভ করে। ধার্মিক ব্যক্তি তাই সদানন্দ। সুখ ও দুঃখে তিনি থাকেন অবিচল।
কালের গতিতে সমাজ ও জীবনের ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন ঘটে। তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হয়। যুগাগত
বাস্তবতাকেও বিবেচনায় নিতে হয়। তাই ধর্মাচার ও ধর্মানুষ্ঠানেও কিছু কিছু পরিবর্তন ঘটে। সেসবের উপযোগী করে ধর্মাচার
ও ধর্মানুষ্ঠানে করণীয়, শাস্ত্রেই বলা হয়েছেÑ
কেবলশাস্ত্রমাশ্রিত্য ন কর্তব্যো বিনির্ণয়ঃ।
যুক্তিহীনবিচারেণ ধর্মহানিঃ প্রজায়তে \
অর্থাৎ কেবল শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে চললেই ধর্ম রক্ষা হয় না। সর্বক্ষেত্রে যুক্তি ব বাস্তবতা মেনে চলতে হবে। কারণ যুক্তিহীন
বিচারে ধর্মহানি ঘটে থাকে।
এখানেই সনাতন ধর্মের গতিশীল বৈশিষ্ট্য নিহিত। সনাতন ধর্ম তাই প্রাচীন হয়েও চির নবীন, নবীন হয়েও মূলীভূত
ঐতিহ্যেরও ধারক-বাহক।
পাঠ সংক্ষেপ
যা আমাদের ধারণ করে রাখে তার নাম ধর্ম। বেদ, স্মৃতিশাস্ত্র, সদাচার ও বিবেকার বাণী Ñ এ চারটি ধর্মের সাধারণ লক্ষণ।
ধর্মের ধৃতি, ক্ষমা, দম প্রভৃতি দশটি বিশেষ লক্ষণও রয়েছে। ধর্ম বলতে ন্যায় বিচার, নীতি এবং সংস্কৃতিও বোঝায়। ধর্ম
অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা হচ্ছে জাগতিক কল্যাণ ও মোক্ষলাভ। ধর্ম নষ্টকারীকে নষ্ট করে, রক্ষাকারীকে রক্ষা করে।
যুগাগত সত্যকে মেনে ধর্মাচারে ও ধর্মবোধে পরিবর্তনও ঘটাতে হয়। যুক্তিহীন বিচারে ধর্মহানি ঘটে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন: ১৬.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১. ধর্মের সাক্ষাৎ বা সাধারণ লক্ষণ কয়টি?
ক. একটি খ. দুটি
গ. তিনটি ঘ. চারটি
২. সনাতন ধর্মের আদি ধর্ম গ্রন্থ কী?
ক. বেদ খ. স্মৃতিশাস্ত্র
গ. পুরাণ ঘ. মহাভারত
৩. ধর্মের বিশেষ লক্ষণ কয়টি?
ক. চারটি খ. ছয়টি
গ. আটটি ঘ. দশটি
৪. ধর্ম থেকে অর্জিত হয় Ñ
ক. অভ্যুদয় খ. টাকা পয়সা
গ. সম্মান ঘ. বিদ্যা
৫. ধার্মিক ব্যক্তি সব সময় কেমন থাকেন?
ক. মৌন খ. ধ্যানস্থ
গ. সদানন্দ ঘ. বিষণœ
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. “‘ধর্ম’ শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়।” Ñ এ কথাটি ব্যাখ্যা করুন।
২. বিবেকের বাণীকেও ধর্ম বলা হয়েছে কেন?
৩. ‘যুক্তিহীন বিচারে ধর্মহানি ঘটে।’ Ñ কথাটি বুঝিয়ে দিন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ধর্মের চারটি সাধারণ লক্ষণের বর্ণনা দিন।
২. ধর্মের প্রয়োজনীয়তা কী? সংক্ষেপে লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]