জন্মান্তরবাদের ধারণা ব্যাখ্যা কর দেহ ও আত্মার মধ্যকার পার্থক্য নির্ণয় জন্মান্তর প্রক্রিয়াটি জন্মান্তর ও কর্মফলের সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর

জন্মান্তর ও জন্মান্তরবাদ
সনাতন ধর্ম বলে যখন জীবদেহে ব্রহ্ম বা পরমাত্মা অবস্থান করেন, তখন তাকে আত্মা বা জীবাত্মা বলা হয়। যেহেতু
জীবাত্মা ব্রহ্ম বা পরমাত্মার অংশ তাই জীবাত্মার ধ্বংস নেই। জীবাত্মা অবিনশ্বর। ধ্বংস হয় দেহ। মৃত্যু মানে জীবাত্মার
দেহ আধারটির পরিত্যাগ।
মানুষ যে কর্ম করে, সে কর্মের ফল মানুষকে ভোগ করতে হয়। কখনও কখনও এ জন্মের কর্মের ফল এই জন্মেই শেষ হয়ে
যায়। আবার এ জন্মের কর্মের ফল এ জন্মে আংশিকভাবে ভোগ করা হলো, অবশিষ্ট অংশের ভোগ অসমাপ্ত রইল। তা ভোগ
করার জন্য ঐ জীবাত্মাকে আবার পৃথিবীতে জন্ম নিতে হবে। আবার এ জন্মের কর্মফল ভোগই করা হলো না, তাহলে
পরবর্তী জন্মে তা ভোগ করতেই হবে। এই যে একবার জন্মগ্রহণ করে মৃত্যুর পর আবার জন্ম গ্রহণ, তাকেই বলে জন্মান্ত র। অন্য জন্ম = জন্মান্তর।
এ প্রসঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলেছেন:
বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্য -
ন্যানি সংযতি নবানি দেহী \ (২/১৪)
অর্থাৎ মানুষ যেমন পুরাতন বসন পরিত্যাগ করে নতুন বসন পরিধান করে, তেমনি আত্মা জীর্ণ দেহ পরিত্যাগ করে অন্য
নতুন দেহ ধারণ করে।
জন্মান্তর সম্পর্কিত এ তত্ত¡কে জন্মান্তরবাদ বলা হয়।
দেহ ও আত্মার সম্পর্ক
দেহ ও আত্মার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দেহহীন আত্মা নিরাকার। তাঁকে দেখা যায় না। আত্মাকে লাভ করে দেহ সজীব
ও সচল হয়। আত্মা দেহ ছেড়ে গেলে দেহ আবার অচল ও নির্জীব হয়ে যায়। তাকেই বলা হয় মৃত্যু।
আত্মাহীন দেহ জড়। আবার দেহকে আশ্রয় করে আত্মার অভিযাত্রা। আগেই বলেছি আত্মার এক দেহ ত্যাগ এবং নতুন দেহ
ধারণের নামই জন্মান্তর।
সাধনার দ্বারা জন্মান্তর বোধ করে মোক্ষলাভ বা ব্রহ্মে জীবাত্মাকে লীন করে দেওয়া যায়। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত তা হচ্ছে না,
ততদিন জন্ম গ্রহণ করতে হবে এবং অবশ্যই মৃত্যুবরণ করতে হবে। জীব এ জন্ম ও মৃত্যুর চক্রে বাঁধা। মোক্ষলাভ বা
চিরমুক্তির পূর্বপর্যন্ত জীবকে এ চক্রের আবর্তনে আবর্তিত হতে হবেই।
জন্মান্তর ও কর্মফল
জন্মান্তরের সঙ্গে কর্মফলের সম্পর্ক রয়েছে। কর্মফলের তত্ত¡কে কর্মবাদ বলা হয়। কর্মবাদের মূল কথা হচ্ছে, বিশ্বজগৎ ব্রহ্ম
বা ঈশ্বরের প্রধান কর্মক্ষেত্র। এখানে জীবাত্মা ভাবনা, বাসনা ও চেষ্টার দ্বারা বিভিন্ন কর্ম করে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি কর্মের
রয়েছে পৃথক পৃথক ফল। সনাতন ধর্মদর্শন বলে কর্ম করলেই তার ফল উৎপন্ন হবে। আর কর্মকর্তাকে কর্ম থেকে উৎপন্ন
ফল ভোগ করতে হবে।
কর্ম দু প্রকার : সকাম কর্ম ও নিষ্কাম কর্ম। সকাম কর্ম কামনাযুক্ত। কর্মটি আমার, আমার কর্ম আমি করি, ফলাফলের ভাগীও
আমি। Ñ এই হল সকাম কর্ম। সকাম কর্ম করলে তার ফল ভোগ করার জন্য জন্মান্তর ঘটবে।
তবে নিষ্কাম কর্ম করলে কর্মের যে ফল উৎপন্ন হবে কর্মকর্তাকে তা ভোগ করতে হবে না। নিষ্কাম কর্ম হচ্ছে কামনাশূন্য কর্ম।
আমরা যত কর্ম করি সবই ঈশ্বরের কাজ। ফলাফলও ঈশ্বরের। অর্থাৎ ঈশ্বর আমাকে দিয়ে তাঁর কাজ করাচ্ছেন। ফলাফলের
দায়িত্ব আমার নয়, ঈশ্বরের। এ রকম কর্মই নিষ্কাম কর্ম। নিষ্কাম কর্মের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: ফলাকাক্সক্ষা ত্যাগ, কর্তৃত্বাভিমান
ত্যাগ এবং কর্মফল ঈশ্বরে সমর্পণ।
নিষ্কাম কর্ম করে জীব মোক্ষলাভ করতে পারে। তখন আর তার জন্ম নিতে হবে না।
জন্মান্তরবাদ ও কর্মফল বা কর্মবাদ সনাতন ধর্মের মূলীভূত বিশ্বাসের অন্তর্গত।
পাঠ সংক্ষেপ
আত্মা বা জীবাত্মা দেহ ধারণ করলে দেহ সচল ও সজীব হয়। আত্মা যখন দেহ ত্যাগ করে, তখন দেহ জড় হয়ে যায়।
তারই নাম মৃত্যু। মৃত্যুতে দেহ ধ্বংস হয়, আত্মা নয়। আত্মার ধ্বংস নেই। তবে কর্মফল ভোগের জন্য জীবাত্মাকে বারবার
জন্ম নিতে হয়। একে বলে জন্মান্তর। আর জন্মান্তর সম্পর্কিত তত্ত¡কে বলে জন্মান্তরবাদ।
জন্মান্তরবাদের সঙ্গে কর্মফল বা কর্মবাদের সম্পর্ক রয়েছে। সকাম কর্ম করলে জন্মান্তরের চক্রে আবর্তিত হতে হয়। কিন্তু
নিষ্কাম কর্ম করে অর্থাৎ ফলাকাক্সক্ষা ত্যাগ, কর্তৃত্বাভিমান ত্যাগ ও কর্মফল ঈশ্বরে সমর্পণ করলে জীবনে জন্মান্তর চক্রে আবর্তিত হতে হয় না, তখন জীব মোক্ষ বা চিরমুক্তি লাভ করে ব্রহ্মে লীন হয়ে যায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন : ১৬.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১. পরমাত্মা যখন জীবদেহে অবস্থান করেন, তখন তাকে কী বলে?
ক. প্রভু খ. ঈশ্বর
গ. জীবাত্মা ঘ. দেবতা
২. নিম্নলিখিত কোনটির ধ্বংস হয়?
ক. ব্রহ্মের খ. পরমাত্মার
গ. জীবাত্মার ঘ. দেহের
৩. আত্মার দেহ ছেড়ে চলে যাওয়ার নাম কী?
ক. জন্মান্তর খ. ব্রহ্মলাভ
গ. মৃত্যু ঘ. পুনর্জন্ম
৪. ফলের আকাক্সক্ষা ত্যাগ করে কর্ম করাকে কী বলে?
ক. সকাম কর্ম খ. নিষ্কর্ম
গ. অকর্ম ঘ. নিষ্কাম কর্ম
৫. মোক্ষলাভের উপায় কী?
ক. দীর্ঘ জীবন খ. পূজা করা
গ. নিষ্কাম কর্ম ঘ. সকাম কর্ম
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. জন্মান্তর কাকে বলে?
২. নিষ্কাম কর্ম কাকে বলে?
৩. মোক্ষ বলতে কী বোঝেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. জন্মান্তরবাদ কাকে বলে? সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
২. দেহ ও আত্মার মধ্যকার সম্পর্ক বর্ণনা করুন।
৩. জন্মান্তরবাদ ও কর্মবাদের সম্পর্ক আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]